রাজস্থানের লোকেরা যতোই হামবড়াই করুক তাদের মাওয়া আর পিঁয়াজ কচুরি নিয়ে, কচুরি একটা বিশুদ্ধ বঙ্গীয় স্বর্গীয় খাদ্য! সুশ্রুতের ভেষজ শাস্ত্রের পুঁথির ওপর ভাষ্য সর্বপ্রথম লেখা চক্রপাণিদত্ত ছিলেন বঙ্গদেশের। তাঁর লেখা ‘দ্রব্যগুণ’ কচুরির আর ডালপুরির কথা বলেছে। কচুরির সংস্কৃত নাম পূরিকা। এর প্রস্তুতপ্রণালিতে বলেছে মাষকলাই বেটে তার সঙ্গে নুন, আটা আর হিং মিশিয়ে ময়দার লেচিতে পুর দিয়ে বেলে তেলে ভেজে পূরিকা বানাতে হয়। ‘দ্রব্যগুণ’-এ উল্লিখিত এর গুণাবলি অনেক – এটা “মুখরোচক, মধুর রস, গুরু, স্নিগ্ধ, বলকারক, রক্তপিত্তের দূষক, পাকে উষ্ণ বায়ুনাশক ও চক্ষুর তেজোহারক।” চিকিৎসাশাস্ত্র সংক্রান্ত ভারত মিশ্রের সংস্কৃত পুঁথি ‘ভাবপ্রকাশ’-এও এই ‘পূরিকা’র উল্লেখ আছে। ফলে বোঝা যায় এই পূরিকার জনপ্রিয়তা শুধু বঙ্গদেশে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা উত্তর ভারতে।
আর সেই ছড়িয়ে পড়া থেকেই উত্তর ভারতের বোলবোলাও আর কচুরি নিয়ে দাবি! কচুরির কথা বাদই দিলাম, যে ডালপুরির সংস্কৃত নাম “বেষ্টনিকা” আজ সেটাও ছড়িয়ে পড়েছে সারা উত্তর ভারতে! অধুনালুপ্ত কৃষ্ণনগরের গোবর্ধনের ডালপুরির কথা তো বাদই দিলাম। পারবে কেউ আমাদের ব্যান্ডেল-কাটোয়া রুটের ট্রেনে বিক্রীত ডালপুরি বানাতে?
তথ্যের কচকচানি অনেক হল। এবার একটু কচুরি পরিক্রমা করা যাক। সকলের সুবিধার্থে এই শহর কলকাতার মধ্যেই ঘোরাঘুরি হোক! তারাপীঠ, সাঁইথিয়া, নলহাটি, ফুল্লরা, কঙ্কালিতলা, অট্টহাস ইত্যাদি বাংলার শক্তিপীঠ আর দেবসাধনার ক্ষেত্রগুলো যেমন রাঢ় অঞ্চল, বিশেষ করে বীরভূম আর তার আশপাশে ভিড় করেছে, কলকাতার কচুরির পূণ্যস্থলগুলো তেমন মানিকতলার আশেপাশে! মানিকতলার মোড়ের ঘড়িকে এপিসেন্টার করে সপ্তাহ-ব্যাপী একটা কচুরি-পরিক্রমা করাই যাক না!
ঘড়িবাড়ির ছায়ার তলায় ‘দেশবন্ধু’ দিয়েই পরিক্রমা শুরু করা যাক। মানিকতলা বাজারের একপাশে বিডন স্ট্রিটের মোড়ে এই মিষ্টির দোকানের কচুরিকে একসময় স্কটিশ চার্চ-বেথুনের ছাত্র-ছাত্রীরা ‘হেরোইনের কচুরি’ বলত, কারণ একবার খেলে বারবার ফিরে যেতে হতো কচুরির টানে! ইদানীং এই দোকান ইডলি-ধোসা-ধোকলা সবকিছু একসঙ্গে বিক্রি করতে শুরু করে কৌলীন্য অনেকটা হারালেও কচুরির স্বাদের জন্যে অনেকে এখনও ভিড় করে।
ঘড়িবাড়ি থেকে পশ্চিম দিকে হেঁটে গেলে দু’শো গজেরও কম দূরে রামমোহন সরণি আর বিবেকানন্দ রোডের সংযোগস্থলে রোজ সকালে ভিড়। যত না বাস ধরার জন্যে, তার চেয়ে অনেক বেশি নিউ গুপ্তা সুইটসের ক্লাব কচুরির জন্যে। বিবেকানন্দ রোড ধরে আরও কিছুটা এগিয়ে গিয়ে গিরিশ পার্কের পাশে কারুকাজ করা জোড়াসাঁকো-র গেট দিয়ে ঢুকে পড়ে মদন চ্যাটার্জি লেন ধরে কয়েক পা হাঁটলেই কৌশলের দোকান। সারাদিন ভিড় লেগে রয়েছে। সকাল বেলায় এই দোকানে পাওয়া যায় গুটকে কচুরি আর বিকেলে সাধারণ কচুরি। সঙ্গে খোসা সমেত আলুর একটা তরকারি। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউতে ফেরত গিয়ে এই গেটের প্রায় বিপরীতে মুক্তারামবাবু স্ট্রিট গিয়ে যেখানে বিধান সরণিতে মিশেছে, ডানদিকে বীণা সিনেমার পাশে এক নাম-গোত্রহীন দোকানে ঠিক একই রকম সকালে গুটকে কচুরি আর বিকেলে কচুরি আর আলুর তরকারি পাওয়া যায়। মদন চ্যাটার্জি লেনের দোকানের মতো জনপ্রিয় না হলেও এদের নামডাক নিতান্ত কম নয়!

‘দেশবন্ধু’র পাশে বিডন স্ট্রিট, মানে হালের অভেদানন্দ সরণি ধরে কিছু দূর এগিয়ে গেলে হেদুয়া বা আজাদ হিন্দ বাগ। ট্রামলাইন পার করে কয়েক কদম গেলে ডানদিকে হরি ঘোষ স্ট্রিট ঢুকে গিয়েছে, যেখানে দুই ভাই শিবে আর মদনের দোকান। শিবের দোকান সকালে খোলে আর সেখানে পাওয়া যায় গুটকে কচুরি। মদনের দোকান বিকেলের। সেখানে পাওয়া যায় সাধারণ কচুরি। শিবের দোকানে উপরি প্রাপ্তি গরম জিলিপি। জোড়াবাগান, দর্জিপাড়া, গরাণহাটার অনেক প্রাচীন কচুরি প্রেমীকে এখানে নিত্যিদিন দেখা যায়। দুই ভাই নিজেদের মধ্যে সকাল আর বিকেল ভাগ করে নিয়ে এমন ভাবে তাদের বিজনেস মডেল সাজিয়েছে যে অন্য কোনও মিষ্টির দোকান ভুলেও শুধু কচুরি বেচে মোক্ষলাভের স্বপ্ন দেখে না ওই চৌহাদ্দিতে! হরি ঘোষ স্ট্রিট ধরে আরও এগিয়ে হাতিবাগান মোড়ে পৌঁছে হাতিবাগান বাজারের গায়ে গদা’র কচুরি রাস্তায় দাঁড়িয়ে খায়নি, এইরকম উত্তর কলকাতাবাসী কিছু বছর আগেও বিরল ছিল। সামান্য স্থান পরিবর্তন করেছে, কিন্তু গুণমানের কোনও পরিবর্তন স্বাদে পাইনি গত ত্রিশ বছরে।
ঘড়িবাড়ি থেকে দক্ষিণে গেলে চারশো গজের মধ্যেই সুকিয়া স্ট্রিটে কচুরি-প্রেমীদের মহা-তীর্থ ‘গীতিকা।’ দোকানের শো-কেসে বিভিন্ন ভাজা মিষ্টির সমারোহ দেখে না-ঘাবড়ে পাশ দিয়ে দোকানের ভেতরে ঢুকে পড়ুন। কপাল ভালো থাকলে এক ফালি সরু বেঞ্চিতে (জব চার্নকের আমলের হলেও অবাক হব না) বসার জায়গা পেয়ে যেতে পারেন। যদি পেয়ে যান, বিস্ময়াবিষ্ট হয়ে দেখবেন উদাসীন যন্ত্রের মতো একজন কচুরি বেলে চলেছে আর একজন ভেজে চলেছে। সারা বছর ধরে হিংয়ের আর শীতকালে কড়াইশুঁটির কচুরি। যদি নিতান্তই ভেতরে বসার জায়গা না পান, রাস্তায় রেলিংয়ে হেলান দিয়েই কচুরি খেয়ে ফেলুন। এই দোকানের এঁটো শালপাতার সংখ্যার জন্যে কলকাতা কর্পোরেশন দোকানের সামনে একটা ময়লা ফেলার ঠেলাগাড়ি রেখে দিয়েছে সারাদিনের জন্যে! দেবী-পিঠে যেমন দেবী ছাড়া ভৈরবও থাকেন, তেমনই নিউ গুপ্তা’র সামনে গাঙ্গুরাম বা ‘গীতিকা’র উল্টোদিকে নন্দলাল ঘোষের মিষ্টির দোকান। সেখানেও কচুরি পাওয়া যায়, এবং তারাও “হাম কিসিসে কম নেহি”!

মানিকতলা মোড়ের পূর্বদিকে কাঁকুড়গাছি মোড়ের পেছনে একটা গলি নিজের নাম হারিয়ে নাস্তাগলি হিসেবেই এখন পরিচিত। এই নামকরণের কারণ, এই গলির একটা দোকান যেখানে প্রাতঃভ্রমণকারী থেকে অফিস-গমনকারী সক্কলের ভিড় লেগে থাকে বেলা অবধি। সেই দোকানের গুটকে কচুরি আর তার সঙ্গে জালেবি খাওয়ার জন্যে। এই কাঁকুড়গাছি মোড় থেকে ফুলবাগান যাওয়ার পথে হরিয়ানা সুইটসের কচুরি — এরাও সকালবেলা গুটকে কচুরি আর বিকেলে সাধারণ কচুরি। দামটা একটু চড়ার দিকে। কিন্তু এর স্বর্গীয় স্বাদের কাছে বস্তুবাদী চিন্তাভাবনা নস্যি হয়ে উড়ে যাবে!
কিন্তু রাঢ়ভূমির বাইরে কি শক্তি-পীঠ নেই? আলবাৎ আছে! সারা ভারতীয় উপমহাদেশে আছে! এই বাংলাতেই তো খানাকুল থেকে জলপাইগুড়ি থেকে তমলুক, অনেক জায়গাতেই তো ছিটিয়ে আছে! তেমনই এই শহরের কচুরি ভোজন-পীঠ ছড়িয়ে আছে চারিদিকে।
শ্যামবাজার মোড়ে শ্রীহরি’র দোকানে কচুরির সাথে খোসা সমেত আলুর তরকারি, বাগবাজারে পটলার দোকানে কচুরি-আলুর দম, কলেজ স্ট্রিটের পুঁটিরামে কচুরি/রাধাবল্লভি ছোলার ডাল, এস এন ব্যানার্জি রোডে রিগাল সিনেমার বিপরীতে শ্রীকৃষ্ণ আর তার পাশের দোকানে কচুরির সঙ্গে সবুজ লংকার চাটনি, ভবানীপুরের শ্রীহরিতে কচুরি-ছোলার ডাল, দেশপ্রিয় পার্কের বিপরীতে মহারানি আর মহারাজার দোকান– কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম, কচুরির ভোজন-পীঠ ছড়িয়ে আছে। যেমন সব শিল্পী তেমনই তাদের সঙ্গতকারী!
কিছু দোকান সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে হারিয়ে গিয়েছে। কলকাতার ভোজন-রসিকরা আজও দীর্ঘশ্বাস ফেলেন কলেজ স্ট্রিট বাটার কাছে লজ্জারামের দোকান বা নকুড়ের দোকান ছাড়িয়ে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ে পড়ার আগেই মৃত্যুঞ্জয়ের দোকানের কচুরির স্বাদের কথা ভেবে। মৌলালি-এস এন ব্যানার্জি রোডের মোড়ে মতিলাল সাউয়ের দোকান তো হাওড়া স্টেশনের বড় ঘড়ি, পার্ক স্ট্রিটের এশিয়াটিক সোসাইটি’র সিঁড়ির মতো একটা ল্যান্ডমার্ক হয়ে উঠেছিল! অবাক চোখে দেখতাম বস্তা চাপা দিয়ে উনুনে আলুর খোসা সমেত তরকারি হয়ে চলেছে সবসময়। বস্তা চাপা দিত যাতে তাড়াতাড়ি হয়। আর ফোড়নের গন্ধে যাতে দোকান-ভর্তি ক্রেতার অসুবিধে না হয়। হলফ করে বলতে পারি, ওই দোকানে কচুরি খেতে গিয়ে কেউ জিভে ছ্যাঁকা খায়নি, একবারও হয়নি! এত বিক্রি ছিল যে পাঁচ-দশ মিনিট অন্তর তেলের টিনের ড্রাম ভর্তি টাটকা তরকারি যোগান দিতে হত, তাই তরকারি সবসময়ই আগুন-গরম থাকত। কচুরির এই মহাপীঠ বন্ধ হয়ে যেতে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা অনেকেই স্বজনহারার কষ্ট পেয়েছিলেন। কারণ আমাদের মতো ওই অঞ্চলে ইস্কুলে যাওয়া ছেলেমেয়েরা ইস্কুল পাশ করার পর এই দোকান ছিল ইস্কুলের দিনগুলোকে ফিরে পাওয়ার ঠিকানা।
কচুরি-বন্দনা মন্দির? অজস্র। গলিতে গলিতে। ঠিক যেমন মাথা ছোঁয়ানোর মন্দির মসজিদ আছে এই শহরের অন্দরে-কন্দরে। প্রিয় কবির লাইন একটু এদিক-ওদিক করে বলি “চেখে দেখতে শিখুন/কচুরির গুণ দিনের রাতের মাথায়/ আরেকটা কলকাতায় সাহেব আরেকটা কলকাতায়!
পুনশ্চ- নিরামিষ কচুরির সুলুকসন্ধানে যে কঠোর আমিষাশীরা গোমড়া হয়ে আছেন, তাঁদের জন্য জানাই যে মানিকতলা ঘড়িবাড়ির অদূরে স্বামী বিবেকানন্দের বসতবাটির পেছনের গলিতে চমৎকার মাছের কচুরি পাওয়া যায়!
পেশার তাগিদে সার্ভিস সেক্টর বিশেষজ্ঞ, নেশা আর বাঁচার তাগিদে বই পড়া আর আড্ডা দেওয়া। পত্রপত্রিকায় রম্যরচনা থেকে রুপোলি পর্দায় অভিনয়, ধর্মেও আছেন জিরাফেও আছেন তিনি। খেতে ভালোবাসেন বলে কি খাবারের ইতিহাস খুঁড়ে চলেন? পিনাকী ভট্টাচার্য কিন্তু সবচেয়ে ভালোবাসেন ঘুমোতে।
Osadharon
Darun…sushadu lekha motilal er kochurir moto…nostalgic….likhte giye ki sab kochurir dokane giye chakte holo….tahole to darun bypar…rath dekha ar kola becha ek sathe….chaliye jao
রসনা তৃপ্তির ব্যাপারে উত্তর ও মধ্য কলকাতা দক্ষিণের তুলনায় বেশ এগিয়ে। আমার অবশ্য পুঁটিরাম ছাড়া অন্য থেকে স্বাদ নেওয়া হানি। তবে ভবানীপুর থানার বিপরীতে শ্রীহরি র কচুরি ও ছোলার ডাল তোর লেখায় জায়গা পেয়েছে। দক্ষিণে আমার আরেক পছন্দ নামহীন এক নিরামিষ কচুরির ঠেক দেবেন্দ্র ঘোষ রোড এ। নেতাজী ভবন মেট্রোর পাশের গলিতে। এখানে সম্পূর্ণ নিরামিষ কচুরি সাঠে আলুর সবজি বা ছোলার ডালের option থাকে। তবে সকাল ১১ টার
পরে গেলে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
অসাধারণ লেখা।
ঘ্রাণে নাকি অর্ধেক ভোজন হয়! লেখকের কলমে অর্ধেকের বেশি ভোজন হয়ে গেল! জীভে জল আনা লেখা! দুর্দান্ত!
অনেক দিন ধরে ভাবছিলাম কচুরি খাবো তবে হয়ে উঠছিলনা। আর লোভ সামলানো গেল না। কালকেই খাব। দারুণ লিখেছিস ভাই।
Anobodyo lekha, vishan informative। South Kolkata baad gyalo। Porer lekhate dekhte pele khub valo hoy।
Darun porikroma – north Calcutta centric khabar to – kochuri is somewhat related to bonediana – janina Keno money hoy … I miss this item the most in today’s bengali marriage receptions
দারুন মজা লাগলো পড়ে . গীতিকাতে যেদিন যাবো বোলবো আমার ভাই তোমাদের পৃথিবী বিখ্যাত করে দিয়েছে – তোর পরিক্রমায় সঙ্গী হয়ে দেখলাম দু একটা ছাড়া সব কটাই চেখে দেখেছি যেগুলোতে যাইনি এবার যেতে হবে আর খেতে হবে. তোর খাদ্য পরিক্রমা যুগ যুগ জিও – অনেক অনেক শুভেচ্ছা তোর যাত্রাপথে .
নয় ছয় রাজা রামমোহন সরণিতে যখন সন্ধেগুলো কাটত, গীতিকা, নন্দলাল এবং অবশ্যই গুপ্তার কচুরি ছাড়া সন্ধেগুলো আলুনি ছিল… এখনও ওই চত্বরে গেলে নিয়ম করে কোনও একটায় ঢুঁ মারতেই হয়… গুপ্তায় প্রথম পেয়েছিলাম ছোট বা ক্লাব কচুরি… এই লেখার কয়েকটা দোকানে যাওয়া হয়নি, খেয়ে ফেলব নিশ্চিত, আগামী কিছু সপ্তাহে… সেই জন্য আলাদা করে ধন্যবাদ… এমন কচুরিয়ানা যুগ যুগ জিও… 🙂 এরপর একটা তেলেভাজা নিয়ে হোক, নেতাজি, কালিকা এবং আরও বহু নাম-না-জানা কিন্তু জিভে-জল-আনা… অপেক্ষায়… 🙂