কোলে আঁকড়ে ধরা কুকুরছানা স্যামি। কপালের ওপর ঝামরে পড়েছে সোনালি চুলের গোছা। ছোট্ট ঠোঁটের কোনে হাল্কা হাসির আভাস। টেলিভিশনের শব্দ শুনলেই ছুটে যায় পাশের ঘরে। নেটফ্লিক্স দেখতে ভালোবাসে যে! বয়স মোটে নয়। কিন্তু কাজে? তাতে সে মোটেই ছোট নয়! ইশকুলে যায় না। ভাবলেন বুঝি ফাঁকিবাজ? আজ্ঞে না, সে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে! নেদারল্যান্ডসের এইন্ডহোভেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র সে! সব ঠিক থাকলে ডিসেম্বরেই ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি পেতে চলেছে এই খুদে। পৃথিবীর কনিষ্ঠতম স্নাতক হিসেবে রেকর্ড গড়তে চলেছে বেলজিয়ামের লরেন্ট সাইমনস। 

বিস্ময় বালক। সঙ্গত কারণেই এই নামে তাকে ডাকা হচ্ছে আজকাল। প্রথাগত হাইস্কুলের পড়া এক বছরে শেষ করে ফেলার পরেই শিক্ষকরা নড়েচড়ে বসেছিলেন তার ক্ষুরধার বুদ্ধি আর তাক-লাগানো আই কিউ (১৪৫) দেখে। লরেন্টের কাছে অবশ্য এই সবই “নরম্যাল অ্যান্ড কুল।“ হাইস্কুলের পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বেড়া টপকে ঢুকে গিয়েছে সে। এবং তিন বছরের পাঠ্যক্রম ন’মাসে শেষ। আপাতত কম্পিউটার সার্কিটের মাধ্যমে কৃত্রিম অঙ্গ তৈরি করার কাজে মগ্ন খুদে বিজ্ঞানী। প্রকল্পের নাম “ব্রেন অন চিপ”। বায়োমেডিক্যাল এবং ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সমন্বয়ে কাজ চালাচ্ছে লরেন্ট। সার্কিটে তৈরি এই কৃত্রিম মস্তিষ্কে কৃত্রিম নিউরন বসিয়ে তাদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে তাদের ওপর নানা ওষুধের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে। 

শুনে আঁতকে উঠছেন তো? নাহ। লরেন্টের মুখচোখ দেখে সেসব বোঝার উপায় নেই। আপাতত সে অপেক্ষা করছে বড়দিনের ছুটির। হাসিমুখেই জানায়, “এই তো এরপরে পিএইচডি শুরু করব। কিন্তু এখন ছুটি চাই। স্যামির সঙ্গে খেলব আর নেটফ্লিক্স দেখব।“ এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকেরা তো লরেন্টের কথা বলতে গিয়ে বিশেষণের অভাবে হিমশিম খাচ্ছেন। অভাবনীয়, অকল্পনীয়, অসম্ভব – কোনও কিছুতেই ধরা যাচ্ছে না তার প্রতিভা এবং বিস্ময়কর ক্ষমতাকে। 

এইন্ডহোভেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর জেয়র্ড হালশফ তো বলেই দিলেন, “যে গতিতে ওর মাথা চলে, আমাদের ভাবনার বাইরে। আমাদের সবচেয়ে ভালো ছাত্রের মেধার অন্তত তিনগুণ ওর মেধা। আমাদের অধ্যাপকেরা সকলেই খুব উত্তেজিত ওর কাজ দেখে। আমাদের পক্ষে ব্যাপারটা খুব স্বতন্ত্রও বটে কারণ এমনটা তো এখানে আগে ঘটেনি!আর শুধু কি হাইপার ইন্টেলিজেন্স? ওর স্বভাবটাও যে ভালোবেসে ফেলবার মতো!“ 

কিন্তু তার বয়সী আর পাঁচজন যখন প্রাইমারি স্কুলের গন্ডি পেরোয়নি, তখন একা একা লাগে না কি লরেন্টের? রোলনেক জাম্পারটা গলায় পেঁচিয়ে আত্মমগ্ন লরেন্ট বলে, “প্রাইমারি স্কুলকে আর মিস করি না। তবে বন্ধুদের কথা মনে পড়ে।“ তবে স্মৃতিভারকে মোটেই নিজের কাজে প্রভাব ফেলতে দিতে রাজি নয় সে। খুদে ইঞ্জিনিয়ার এখনই তার পরবর্তী লক্ষ্যে স্থির।

লিখতে শিখেই লুক থ্রু! লিখতে লিখতেই বড় হওয়া। লিখতে লিখতেই বুড়ো। গান ভালবেসে গান আর ত্বকের যত্ন মোটে নিতে পারেন না। আলুভাতে আর ডেভিলড ক্র্যাব বাঁচার রসদ। বাংলা বই, বাংলা গান আর মিঠাপাত্তি পান ছাড়া জীবন আলুনিসম বোধ হয়। ঝর্ণাকলম, ফ্রিজ ম্যাগনেট আর বেডস্যুইচ – এ তিনের লোভ ভয়ঙ্কর!!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *