আজ আমাদের সকলের প্রাণপ্রিয়া Mangifera Indica র বিশেষ দিন, প্লিজ ঘাবড়ে যাবেন না। সকলের জন্য বিশেষ দিন হয়, আর এমন সুন্দরী গুণবতী, রূপ রসের আধার যে তার বিশেষ দিন উদযাপিত হবে না তাই কখনও হয়!! আচ্ছা বেশ, আর জটিল কঠিন ধাঁধায় ঘোরাব না, সহজ সরল ভাষায় বলতে গেলে ২২শে জুলাই আমাদের জাতীয় ফল আমের দিন, অর্থাৎ “জাতীয় আম দিবস” (National Mango Day)। আমজনতার অবগতির জন্য জানিয়ে রাখি ভারতের জাতীয় ফল কিন্তু আম। এই দেবভোগ্য ফল অমৃত সমান, ভীষণভাবে সমাদৃত আপামর ভারতবাসীর কাছে। কোথাও তা উজ্জ্বল সোনালী রঙে দীপ্তিময়, কোথাও কমলা আভার জৌলুসে গর্বিত, কখনও তার রূপের জেল্লায় গুমর অনেক,কখনও তার সুবাস দামী ফরাসি সুগন্ধীকে হার মানায়। 

আমের ইতিহাস

আকার, মাপ, মিষ্টত্ব, রং, স্বাদ, আঁটির মাপ, খোসার ধরন অনুযায়ী আমের বহু প্রকারভেদ আছে, তা সবাই জানেন। কিন্তু এই আমের আসল জন্মস্থান মানে উৎপত্তিস্থল কোথায়! আমাদের দেশেই, আজ্ঞে হ্যাঁ পাঁচ হাজার বছর আগে আম সাম্রাজ্যের অভ্যুত্থান হয়েছিল এই দেশেই| মূলত ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মায়ানমার সমেত দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে মূলত ১২০০ শতাব্দীতে এই দেবভোগ্য ফলের প্রচার ঘটে| আম ভারত,পাকিস্তান, ফিলিপিনসের জাতীয় ফল। বাংলাদেশে জাতীয় গাছ হলো আমগাছ| ভারত থেকে পারস্য এবং আরব হয়ে আম পূর্ব আফ্রিকার দেশ গুলোতে পৌঁছয়। ১৪০০ শতাব্দীতে মরক্কোর বিশ্বপরিব্রাজক ইবন বতুতার হাত ধরে এই ফল দেশ দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়ে| পরবর্তীকালে পর্তুগীজ বণিকেরা ভারতের গোয়া থেকে পশ্চিমে নিয়ে যায় এই অমৃত ফল। পূর্ব থেকে পশ্চিম আফ্রিকা,পশ্চিম আফ্রিকা থেকে ব্রাজিল ভ্রমণ করে ষোলোশ সপ্তদশ শতাব্দীতে।

mango national fruit of India
ভারতের জাতীয় ফল আম

আমের উপকারিতা ও গুণাবলী

আম শুধু মাত্র দেখতে এবং খেতে সুন্দর ফল নয়,এর অজস্র পুষ্টিগুণ আছে। ভিটামিন, মিনারেলস, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসে এ ঠাসা এই ফল। সেইসঙ্গে অ্যান্টিক্যানসার, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বর্দ্ধক, হজম এবং চোখের স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষ উপকারী এটি। প্রতি বছর গড়ে প্রায় পঁচিশ মিলিয়ন টন আম উৎপন্ন হয় ভারতে যা পৃথিবীতে সর্বাধিক। আমকে স্টোন ফ্রুট বলা হয় এর ভেতরে একটিমাত্র শক্ত বীজ থাকার কারণে। যাই হোক এমন আম নিয়ে লিখতে বসলে আমায়ন হয়ে যাবে যে সপ্তকান্ডে শেষ হবে না। তবে আমি আজ পঞ্চপদে আমরস এনেছি| পঞ্চ ব্যঞ্জন হতে পারে আর শেষ পাতে পঞ্চ ম্যাঙ্গো হবে না কেন শুনি!

বাজারে আম মার্চ এপ্রিল থেকে আসতে না আসতেই আমার আমের টক, ঝোল, ডাল ,চাটনি খাওয়া চলে। আর মে মাসে আম টুকটুকে পেকে গেলে বাজারে আসলেই কেনা পর্ব খাওয়া পর্ব রান্না পর্ব শুরু হয়ে যায় যা দিব্যি আগস্ট অবধি হেসেখেলে চলে| হিমসাগর থেকে শুরু করে ল্যাংড়া, দসেরি, চৌসা, গোলাপখাস, আম্রপালি, তোতাপুরি, আলফানসো, লক্ষ্মণভোগ, ফজলি সবরকম আমের আমদানি আমার ঘরে চলতে থাকে।

mango
এই ফলের যেমন রূপ তেমন গুণ

ছোটবেলার স্মৃতিচারণ

গরমের ছুটিতে মামাবাড়ি এলে দিদাকে দেখতাম গাছের আম (আমার দাদু লাগিয়েছিলেন বহু বছর আগে) কাঁঠাল, নারকেল সব পাড়িয়ে রাখত আমায় নানারকম পদ রেঁধে খাওয়াবে বলে।নারকেল নাড়ু বানিয়ে নানারকম কৌটো আর বয়াম ভরে রেখে দিত দিদা| সঙ্গে আমের মিষ্টি আচার, টক ঝাল মশলা দেওয়া আচার, আম তেল, মুড়কি ইত্যাদি গচ্ছিত রাখত আমি এসে কখন তার সদগতি করব সেই আশায়। আর আমি ছোট থেকে মিষ্টি প্রিয়। হাত বাড়ালেই গাছ, সেই গাছপাকা হিমসাগর কেটে আম দুধ চিঁড়ে মুড়ি খই মেখে যে অমৃত তৈরি হত, কখনও বা কাঁঠালের রস দিয়ে ইয়া বড় কাঁসার জামবাটিতে খেতে যে কী আনন্দ হত। তাছাড়াও ছিল দুধভাত আম, আমসত্ত্ব দিয়ে মেখে খাওয়া। আহা মনে পড়লে এখনই খেতে ইচ্ছে করবে ফের| দিদা একটা প্রমাণ সাইজের ঝুড়িতে আমগুলোকে বলয়ের মতো আলাদা আলাদা স্তরে সাজিয়ে রাখত| যে আম একটু আগে পাড়া হত, সেগুলো চালের ড্রামে রেখে ম্যাজিকের মতো পাকিয়ে ফেলত| আমার শিশুমনের কাছে দিদা তখন ম্যাজিসিয়ান|

আরও পড়ুন: রকমারি কোপ্তাকারি

যাক অনেক গল্প হলো এবার একটু রান্নাবান্না নিয়ে ক্লাস হোক বরং| আজ আমি তোমাদের জন্য নিয়ে এলাম আমের পাঁচটা সুস্বাদু রেসিপি যা যেকোনও অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণে উৎসবে ঘরোয়া পার্টিতে বা এমনিতেই ছুটির দিনে বানিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিতে পারো|

mango mousse
ম্যাঙ্গো মুস

১) ম্যাঙ্গো মুস (Mango mousse)

উপকরণ:

১) বড় দেখে একটা মিষ্টি ভালো আম

২) এক কাপ ক্রিম

৩) ১/৩ কাপ কনডেন্সড মিল্ক

প্রণালী:

কোনও গ্যাস ওভেন ছাড়াই এই সুস্বাদু dessert টা করে ফেলা সম্ভব। প্রথমে আম ভালো করে ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে কুরিয়ে নিতে হবে শাঁস টাকে। তারপর আলাদা করে রেখে দিতে হবে একটা বাটিতে|

এবার ফেটানো ক্রিম (whipped cream) নিয়ে তার সাথে কনডেনসড মিল্ক (condensed milk) মিশিয়ে ভালো করে হ্যান্ড ব্লেন্ডার এ ফেটিয়ে নিতে হবে একদম ফাঁপা হওয়া পর্যন্ত। যাতে ক্রিম ফুলে চূড়ো চূড়ো হয়ে ওঠে। এবারে ওই আলাদা করে রাখা পাল্পকে ভালো করে এতে মিশিয়ে একটা পাইপিং ব্যাগে (piping bag) ভরে নিতে হবে। এবার আপনার পছন্দ মতো গ্লাস বা যেকোনও আকারের পাত্রে ওটাকে ভরে নিতে হবে। ফ্রিজ এ দু’ঘণ্টা মতো রেখে ঠাণ্ডা করে নিয়ে পরিবেশন করুন ফ্রেশ ম্যাঙ্গো স্লাইস বা  স্কুপ দিয়ে।

ম্যাঙ্গো চিজ কেক (Mango cheesecake)
ম্যাঙ্গো চিজ কেক

২) ম্যাঙ্গো চিজ কেক (Mango cheesecake)

উপকরণ:

১) মাসকারপোনে (Mascarpone) অথবা রিকটা চিজ বা (Ricotta cheese)। নিতান্তই না পেলে জল ঝরানো দই এবং পনির

২) গুঁড়ো দুধ 

৩) দুধ

৪) গুঁড়ো চিনি

৫) অল্প ভ্যানিলা এসেন্স বা এলাচ গুঁড়ো

৬)একটা বড়ো আমের শাঁস

৭) কিছু আমের টুকরো সাজানোর জন্য

৮) ডাইজেস্টিভ বিস্কিট

৯) মাখন

১০) কনডেন্সড মিল্ক

mango cheesecake
ঠাণ্ডা করে ওপরে ইচ্ছে মতো গারনিশ করুন

প্রণালী:

প্রথমেই ১০ থেকে ১২ টা ডাইজেসটিভ বিস্কিট ভালো করে গলানো মাখন দিয়ে গুঁড়ো করে নিতে হবে মিক্সিতে। এবার বেকিং প্যানের নীচে তেল বা বাটার ব্রাশ করে ঐ বিস্কিটের মিশ্রণের একটা স্তর তৈরি করে ফ্রিজে কিছুক্ষণ রেখে সেট করে নিন| বা বেক করে নিন অল্প কিছুক্ষণ| এবার মাস্কারপোনে বা রিকোটা চিজ পেলে ভালো| নিতান্তই না পেলে ঘরে দইয়ের জল ঝরিয়ে হাং কার্ড (hung curd) বানিয়ে নিন| সেটার জন্য প্রথমে টক দইকে একটা মলমলের কাপড়ে পুঁটলির মতো বেঁধে ওপরে ভারী কিছু চাপা দিয়ে বড়ো ডেকচিতে একটু উঁচু করে বসিয়ে রাখুন যাতে অতিরিক্ত জলটা বেরিয়ে যায়|

দু’ঘন্টা পর রেডি হয়ে যাবে হাং কার্ড| তখন তাতে এক কাপ পনির,কনডেন্সড মিল্ক হাফ কাপ, অল্প (তিন চামচ) মতো গুঁড়ো দুধ আর দুধ (পাঁচ চামচ) এবং স্বাদমতো গুঁড়ো চিনি মেশান| যেহেতু কনডেন্সড মিল্ক দিচ্ছেন তাই খুব বেশি চিনির প্রয়োজন নেই| ব্যাটার যেন পাতলা না হয়, বেশ ঘন থাকে| এবার হ্যান্ড ব্লেন্ডারে খুম মসৃণ করে মেশান| আগে আলাদা করে রাখা আমের পাল্প মেশান| চাইলে খুব সামান্য ভ্যানিলা এসেন্স বা এলাচ গুঁড়ো মেশাতে পারেন| আমি সামান্য ভ্যানিলা এসেন্স মিশিয়েছি|

এবারে প্যানে ডাইজেসটিভ বিস্কিটের লেয়ারের ওপর এই মিশ্রনটা ঢেলে দিন| দিয়ে প্যানটাকে অল্প ঝাঁকিয়ে করে নিন যাতে ভেতরে একটুও হাওয়া না থাকে|

স্টিমারে জল দিয়ে একটা স্টিলের স্ট্যান্ডের ওপর প্যানটাকে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে মুড়ে বসিয়ে ঢাকা দিন| ৪০ মিনিট পর নামিয়ে ফেলুন এবং ঠাণ্ডা করে ওপরে ইচ্ছে মতো গারনিশ করুন| আমি আম, পেস্তা বাদাম এবং আমারই গাছের গোলাপের পাপড়ি দিয়ে সাজিয়েছি|

টু ইন ওয়ান আম ক্ষীর প্রাণহরা
টু ইন ওয়ান আম ক্ষীর প্রাণহরা

৩) টু ইন ওয়ান আম ক্ষীর প্রাণহরা

এটি একদমই আমার নিজস্ব মানে সিগনেচার রেসিপি| এই মিষ্টি বানাতে গিয়ে আপনি চাইলে আরও দু’ধরনের মিষ্টি বানাতে পারেন– এক হলো নারকেল কোরা দেওয়া আম ক্ষীর এবং দ্বিতীয়টি হলো ছানার কাঁচাগোল্লা গোলাপজলের ফ্লেভার দেওয়া প্রাণহরা আর দুটোকে মিলিয়ে যে পরম সুস্বাদু মিষ্টিটি হবে তার উপকরণ রেসিপি সবটুকুই নীচে লিখলাম|

উপকরণ: আমক্ষীরের জন্য

১)  একটা বড়ো আম বা দুটো মাঝারি আম

২)  ছোট এক কাপ নারকোল কোরা 

৩) জ্বাল দেওয়া দুধ দুই বড়ো কাপ 

৪) চিনি স্বাদমতো 

৫) একটা তেজ পাতা

৬) এক চিমটে নুন

৭) ঘি

উপকরণ: সন্দেশের জন্য

১) ঘরে বানানো টাটকা ছানা এক থেকে দেড় লিটার দুধের

২) গোলাপ জল

৩) গুঁড়ো চিনি

৪) ঘি

৫) সামান্য এলাচ গুঁড়ো

প্রণালী:

প্রথমে আমক্ষীরের জন্য আম রস বানিয়ে নিতে হবে। একটা বড়ো আম বা দুটো মাঝারি আমের থেকে ভালো করে শাঁস কুরিয়ে নিতে হবে। এবারে কড়াইতে এক চামচ ঘি দিয়ে তাতে জ্বাল দেওয়া দুধ, এক কাপ নারকোল কোরা দিয়ে তেজপাতা দিয়ে ভালো করে জ্বাল দিয়ে ঘন করে প্রয়োজন মতো চিনি এবং এক চিমটে নুন দিয়ে নামিয়ে নিন| এবার এটাকে ঠাণ্ডা করতে হবে|

Mango kheer
আম ক্ষীর

এবারে দ্বিতীয় ধাপ

ঘরে বানানো ছানা ভালো করে বেটে নিতে হবে এলাচ গুঁড়ো দিয়ে, তারপর তার মধ্যে পরিমাণ মতো গুঁড়ো চিনি দিয়ে কড়াইতে সামান্য ঘি দিয়ে পাক দিয়ে নিতে হবে| যখন শুকিয়ে আসবে তখন তাতে খালিকটা গোলাপ জল দিয়ে নামিয়ে ঠান্ডা হতে দিতে হবে|

তৃতীয় ধাপ

এবারে ঐ ছানার মন্ডটাকে হাত দিয়ে নৌকার খোলের মতো বা আধখানা কাটা সেদ্ধ ডিমের মতো আকার দিয়ে ভেতরে আগে থেকে বানানো আম ক্ষীর দিয়ে দিতে হবে| অনেকটা আদ্ধেক কাটা কুসুমসহ ডিমের মতো দেখাবে|

যেমন অসাধারণ দেখতে হয় মিষ্টিটা তেমন অসাধারণ খেতে| এটা খাইয়ে বাড়ির সকলকে মোহিত করে দিতে পারেন|

ম্যাঙ্গো ফিরনি mango firni
ম্যাঙ্গো ফিরনি

৪) ম্যাঙ্গো ফিরনি (mango firni)

উপকরণ:

১) ১ টা বা ২ টা আম

২) দুধ ১ লিটার জ্বাল দেওয়া

৩) চিনি পরিমাণ মতো

৪) বাসমতি চাল একটু গুঁড়ো করে নেওয়া (পুরো মিহি নয়,আধভাঙা)

৫) সামান্য কেশর

৬) পেস্তা 

৭) আমন্ড

৮) কনডেন্সড মিল্ক

৯) এলাচ গুঁড়ো 

প্রণালী:

প্রথমে একটি পাত্রে দুধ জ্বাল দিতে শুরু করে দিন| মোটামুটি একটু ফুটে এলে তাতে ঘিয়ে ভাজা বাসমতি আধভাঙা চাল দিয়ে ফোটাতে থাকুন| মোটামুটি ভালো সেদ্ধ হয়ে এলে আমের পাল্প দিয়ে প্রয়োজন মতো চিনি দিয়ে নাড়ুন, খুব সামান্য নুন, আমন্ড গুঁড়ো, অল্প এলাচ গুঁড়ো, কনডেন্সড মিল্ক, সামান্য গোলাপজল ও কেশর থাকলে দিয়ে একটু দিন (কেশর অপশানাল ম্যাঙ্গো ফিরনির জন্য)| বেশ জমাট বেঁধে এলে যে পাত্রে সার্ভ করবেন তাতে ঢেলে সেট হতে দিন|

চাইলে ফ্রিজে কিছুক্ষণ রাখতে পারেন| ঠান্ডা হলে কুচোনো ড্রাই ফ্রুট দিয়ে পরিবেশন করুন|

ম্যাঙ্গো জেলি কেক (Mango jelly cake)
ম্যাঙ্গো জেলি কেক (Mango jelly cake)

৫) ম্যাঙ্গো জেলি কেক (Mango jelly cake)

উপকরণ:

১) ময়দা

২) দুধ

৩) ডিম

৪) ম্যাঙ্গো বড়ো দুটো বা তিনটে

৫) বেকিং পাউডার

৬) বেকিং সোডা

৭) ভ্যানিলা এসেন্স

৮) গুঁড়ো চিনি

৯) নুন এক চিমটে

১০) সাদা তেল

১১) মাখন

১২) চিনি

১৩) পাতিলেবু

১৪) কাজু

১৫) খুব সামান্য বেকিং সোডা

১৬) ভিনিগার

প্রণালী:

প্রথমে শুকনো উপাদান বা ড্রাই ইনগ্রেডিয়েন্টস আর লিকুইড ইনগ্রেডিয়েন্টস মেপে সমান অনুপাতে দিতে হবে। লিকুইড এর মধ্যে দুধ, সাদা তেল, ডিম, মাখন, ম্যাঙ্গো পাল্প| আর ড্রাই এর মধ্যে ময়দা, বেকিং পাউডার, গুঁড়ো চিনি দিয়ে ভালো করে ফেটিয়ে নিতে হবে। অল্প ভ্যানিলা এসেন্স ও এক চিমটে নুন দিয়ে। সবশেষে একটু বেকিং সোডা আর খুব সামান্য ভিনিগার দিয়ে গ্যাস এ বা ওভেন এ বসিয়ে দিতে হবে।

প্রণালী: ম্যাঙ্গো জেলি 

কিছুটা ম্যাঙ্গো পাল্প চিনি দিয়ে ভালো করে কড়াইতে জ্বাল দিয়ে ঘন জেলির মতো করে একটু পাতিলেবুর রস দিয়ে নাড়তে হবে। থকথকে হয়ে গেলে ঠান্ডা করতে দিতে হবে। পরে কেক বেক হয়ে গেলে সাজাতে হবে।

এবার কেক যেমন করে বেক করতে বসনো হয় সেভাবেই বাটার পেপার দিয়ে বেকিং প্যানে মিশ্রণটা ঢেলে দিতে হবে।

গ্যাস এ করলে ডেকচি বা কড়াইতে স্ট্যান্ড বসিয়ে তার ওপর প্যানটা বসিয়ে ঢেকে দিতে হবে মিডিয়াম ফ্লেমে। ৪০-৪৫মিন পর নামিয়ে ফেলবেন। মাঝে একবার কেকের ভেতরে কাঠি দিয়ে দেখে নেবেন। ভেতরে বেকড হয়ে গেলে নামিয়ে নেবেন।

কেক ঠান্ডা হয়ে গেলে আড়াআড়ি করে দুটো বা তিনটে গোল চাকতি র মতো কেটে প্রতিটা চাকতির ওপর আগে থেকে বানিয়ে রাখা জেলি টা পাউরুটিতে মাখন লাগানোর মতো করে মাখিয়ে দেবেন। দুই বা তিনটে লেয়ার করতে পারেন। সবকটা লেয়ার সাজানো হয়ে গেলে ওপরে জেলির মাখিয়ে,কাজু কুচি দিয়ে সাজিয়ে দেবেন। যেমন সুন্দর দেখতে হয় তেমন সুন্দর খেতে হয় এটা।

………………………..

আমায়ণের পঞ্চকান্ডর সবশেষে একটি ফুড আর্ট দিয়ে আমার গল্প শেষ করছি|

“আমসত্ত্ব দুধে ফেলি
তাহাতে কদলী দলি
সন্দেশ মাখিয়া দিয়া তাতে
হাপুস হুপুস শব্দ
চারিদিক নিস্তব্ধ 
পিঁপিড়া কাঁদিয়া যায় পাতে….”

mango food art

পাকা কলা গোল গোল করে কেটে, তাতে আমসত্ত্ব আর ছানার সন্দেশ দিয়ে বাঁ দিকে সাজিয়ে রেখেছি। ডান দিকে নিজে হাতে তৈরি আমসত্ত্বকে ফুলের মতো সাজিয়ে চারদিকে পাকা আমের টুকরো দিয়ে পাপড়ির মতো করে সাজিয়ে নিয়েছি। হালকা গরম দুধ নিয়ে খেতে বসতেই কোথা থেকে যেন রাশি রাশি পিঁপড়ের আগমন। কিন্তু পিঁপড়েরা বাটি অবধি পৌঁছনোর আগেই সাফ। অতএব পিঁপিড়ার কাঁদিয়া যাওয়া ছাড়া গতি রইল না।

কবির লেখাকে বাস্তবায়িত করিয়া নিছকই নির্মল আনন্দের সন্ধান লাভের প্রচেষ্টায় এই “ফুড আর্ট”।

ছবি সৌজন্য: সৌমী সরকার ও Pixabay

Soumi-Sarkar

আঁকা, ফুড আর্ট ও রান্নাবান্না সৌমীর প্যাশন। গাছপালা, প্রকৃতি ভালোবাসেন। যেকোনও সৃজনশীল কাজে আনন্দ পান। বিজ্ঞাপণ ও বিপণন নিয়ে পড়াশুনা করেছেন। লেখালেখি করতে পছন্দ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *