এই বিভাগে প্রকাশিত প্রবন্ধের মতামত, দৃষ্টিভঙ্গি, বিশ্লেষণ ও আলোচনা লেখকের ব্যক্তিগত। প্রবন্ধের কোনও বক্তব্যের জন্য বাংলালাইভ ডট কম পত্রিকা দায়বদ্ধ নয়।


কৃষি আইন সংস্কারের ক্ষেত্রে কয়েকটি ক্ষতিকারক জল্পনা বিষয়ক ব্যাখ্যা: দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে যে কৃষি আইন সংস্কার হল তার অনেকগুলো দিক এখনো বিতর্কের বিষয়। কৃষিপণ্য সংক্রান্ত উত্‍পাদন এবং বাজারের সঙ্গে যুক্ত  বিভিন্ন  ব্যক্তি সংগঠন এবং প্রতিষ্ঠান নানারকম প্রশ্ন তুলছেন। এই প্রশ্নগুলি প্রধানত বিপুল সংখ্যক ভাগচাষি ক্ষুদ্র চাষি এবং দরিদ্রতর চাষিদের কথা ভেবেই উত্থাপন করা হচ্ছে যাদের পক্ষে কৃষিপণ্য বাজারে ন্যায্য অধিকার আদায় করা সম্ভব হয়না। 



  • দীর্ঘ সময় ধরে অসম উপার্জন ক্রমাগত অবনতির দিকেই গিয়েছে। এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে আসে: ভারতের ক্ষুদ্র চাষির (যারা দু হেক্টারের কম পরিমাণ জমিতে চাষ করে) যারা সারা দেশের মোট কৃষকের ৮৬% হওয়া সত্ত্বেও মাত্র ৩৩% চাষযোগ্য জমির অধিকারী, এই নতুন আইন তাদের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলবে? 
  • সংস্কার পরবর্তী এই নতুন কৃষি আইন যতরকম সুবিধা ও লভ্যাংশ প্রবাহের কথা বলে, তার কতখানি ক্ষুদ্র চাষি পর্যন্ত পৌঁছবে বা আদৌ পৌঁছবে কিনা সে সম্পর্কে এই আইন নীরব। 
  • বেসরকারি / অবাধ পুঁজিবাদী বিনিয়োগের ক্ষেত্র প্রসারিত করা, নতুন আইনে প্রস্তাবিত লাভ ও সুবিধাগুলির বিষয়ে (দ্বিগুণ আয়, নিশ্চিত এবং বর্ধিত মূল্য), বৃহত্‍ সংখ্যক ক্ষুদ্র ও ভাগচাষিদের বঞ্চিত করতে পারে।
  • এই নতুন আইন উচ্চ মূল্যের বাজারমুখী কৃষিপণ্য উত্পাদনের চেষ্টা করতে পারে এবং প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য উত্‍পাদন সম্পর্কে নিরুত্সাহিত করতে পারে, যা সারা দেশের খাদ্য ও পুষ্টি সংক্রান্ত নিরাপত্তা সাংঘাতিক ভাবে বিপর্যস্ত করে তুলবে। তাহলে ক্ষুদ্র চাষিদের লাভ কোথায়?
  • ক্ষুদ্র চাষিদের প্রদেয় ঋণ তাদের প্রতিকূল পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। এপিএমসির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়া সত্ত্বেও চাষিরা বিভিন্ন দালালচক্র এবং মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের কবলিত হন। চাষের বিভিন্ন পর্বে তারা কৃষকদের ঋণ প্রদান করেন এবং ফসল বিক্রয়ের সময় সুদসমেত আদায় করেন। ক্ষুদ্র চাষিরা যখন চুক্তিভিত্তিক চাষে অঙ্গীকারবদ্ধ হন, তখন বিভিন্ন পদ্ধতিগত এবং আইনগত সমস্যা তাদের ক্ষেত্রে বিপুল বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এর ফলে চুক্তি অনুযায়ী চাষের নানা সমস্যা সমাধানের প্রায় অযোগ্য হয়ে ওঠে।


  • নতুন আইন হওয়া সত্ত্বেও পূর্ববর্তী এপিএমসি পরিকাঠামো এবং কার্যকারিতা অপরিবর্তিত রয়েছে। আইনে পরিস্কার করে বলা হয়নি এই পুরাতন পরিকাঠামো কীভাবে কৃষকদের সুবিধা প্রদান করতে পারে? এপিএমসি বহির্ভূত বাজারে লেনদেনের ক্ষেত্রে কারা নথিপত্র এবং তথ্য সংগ্রহ করবেন তা বলা নেই।
  • যদিও সরকারের তরফে মৌখিকভাবে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য সম্পর্কে আশ্বাস প্রদান করা হয়েছে কিন্তু এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যায় না। ন্যূনতম সহায়ক মূল্য গণ বিতরণ পদ্ধতি (পিডিএস)-এর সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত ফলে, এ ক্ষেত্রে দেশের খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি যথেষ্ট সঙ্কটজনক হয়ে উঠতে পারে।
  • কৃষিক্ষেত্রে আধুনিকীকরণ (একক অথবা চুক্তিভিত্তিক চাষ) ফসলের গুণগত মানের অবক্ষয় (জেনেটিক ইরোসন) এবং উত্পাদনের বৈচিত্র্য খর্ব করার দোষে অভিযুক্ত। সুতরাং সংস্কার পরবর্তী নতুন আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে অবশ্যই নিশ্চিত করা দরকার যাতে আরো বেশি অবক্ষয় এবং কৃষির আরো বেশি বৈচিত্র্য বিনাশ না ঘটে। যদি এই বিষয়গুলি রোধ করা না যায় তাহলে প্রাকৃতিক সম্পদ এবং ব্যবহারযোগ্যতা ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাবে।
  • নতুন আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে সুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ এবং মূল্য়ায়ন প্রয়োজন যাতে পরবর্তী দু তিন বছর ধরে এই আইনে প্রস্তাবিত লভ্যাঙ্ক বৃদ্ধি বজায় থাকে। তাহলে প্রয়োজন অনুসারে বিজ্ঞানমুখী পরিবর্তন ও সংশোধন আনা সম্ভব হবে।
  • এই নতুন আইন উচ্চ মূল্যের বাজারমুখী কৃষিপণ্য উত্পাদনের চেষ্টা করতে পারে এবং প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য উত্‍পাদন সম্পর্কে নিরুত্সাহিত করতে পারে, যা সারা দেশের খাদ্য ও পুষ্টি সংক্রান্ত নিরাপত্তা সাংঘাতিক ভাবে বিপর্যস্ত করে তুলবে। তাহলে ক্ষুদ্র চাষিদের লাভ কোথায়?
  • ক্ষুদ্র চাষিদের প্রদেয় ঋণ তাদের প্রতিকূল পরিণতিক দিকে নিয়ে যেতে পারে। এপিএমসির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়া সত্ত্বেও চাষিরা বিভিন্ন দালালচক্র এবং মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের কবলিত হন। চাষের বিভিন্ন পর্বে তারা কৃষকদের ঋণ প্রদান করেন এবং ফসল বিক্রয়ের সময় সুদসমেত আদায় করেন। ক্ষুদ্র চাষিরা যখন চুক্তিভিত্তিক চাষে অঙ্গীকারবদ্ধ হন, তখন বিভিন্ন পদ্ধতিগত এবং আইনগত সমস্যা তাদের ক্ষেত্রে বিপুল বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এর ফলে চুক্তি অনুযায়ী চাষের নানা সমস্যা সমাধানের প্রায় অযোগ্য হয়ে ওঠে।
  • নতুন আইন হওয়া সত্ত্বেও পূর্ববর্তী এপিএমসি পরিকাঠামো এবং কার্যকারিতা অপরিবর্তীত রয়েছে। আইনে পরিস্কার করে বলা হয়নি এই পুরাতন পরিকাঠামো কীভাবে কৃষকদের সুবিধা প্রদান করতে পারে? এপিএমসি বহির্ভূত বাজারে লেনদেনের ক্ষেত্রে কারা নথিপত্র এবং তথ্য সংগ্রহ করবেন তা বলা নেই।



  • যদিও সরকারের তরফে মৌখিকভাবে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য সম্পর্কে আশ্বাস প্রদান করা হয়েছে কিন্তু এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যায় না। ন্যূনতম সহায়ক মূল্য গণ বিতরণ পদ্ধতি (পিডিএস)-এর সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত ফলে, এ ক্ষেত্রে দেশের খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি যথেষ্ট সঙ্কটজনক হয়ে উঠতে পারে।
  • কৃষিক্ষেত্রে আধুনিকীকরণ (একক অথবা চুক্তিভিত্তিক চাষ) ফসলের গুণগত মানের অবক্ষয় (জেনেটিক ইরোসন) এবং উত্পাদনের বৈচিত্র্য খর্ব করার দোষে অভিযুক্ত। সুতরাং সংস্কার পরবর্তী নতুন আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে অবশ্যই নিশ্চিত করা দরকার যাতে আরো বেশি অবক্ষয় এবং কৃষির আরো বেশি বৈচিত্র্য বিনাশ না ঘটে। যদি এই বিষয়গুলি রোধ করা না যায় তাহলে প্রাকৃতিক সম্পদ এবং ব্যবহারযোগ্যতা ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাবে।
  • নতুন আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণ এবং মূল্যায়ন প্রয়োজন যাতে পরবর্তী দু তিন বছর ধরে এই আইনে প্রস্তাবিত লভ্যাঙ্ক বৃদ্ধি বজায় থাকে। তাহলে প্রয়োজন অনুসারে বিজ্ঞানমুখী পরিবর্তন ও সংশোধন আনা সম্ভব হবে। 
  • ইসিএ আইন সংক্রান্ত: এই বিষয়টি এখনো পরিস্কার নয়, ব্যবস্থাপক গণ কীকরে উত্পাদিত কৃষিজাত দ্রব্যের পণ্যায়ন অথবা বিক্রয়ের ক্ষেত্রে মূল সম্ভার এবং গোপন সম্ভারের মধ্যে তফাত্‍ করতে পারবেন। বেশিরভাগ উন্নত দেশে কৃষিজাত দ্রব্যের গোপন সম্ভার আদৌ থাকে না। এই বিষয়টি স্বল্পবিনিয়োগক্ষম ব্যবসায়ী এবং উত্পাদক সংস্থাগুলির ওপর প্রতিকূল প্রভাব ফেলবে। এ ছাড়াও এই আইন অনুযায়ী, পরিস্থিতি সাপেক্ষে সঞ্চিত কৃষিদ্রব্যের পরিমাণের সীমা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে যা শেষ পর্যন্ত অনিশ্চয়তার মধ্যে কৃষিক্ষেত্রকে ঠেলে দিতে পারে। 
  • ভারতীয় অর্থনীতিতে প্রায় প্রতিটি উল্লেখযোগ্য সংস্কারের বিষয়ে জনমনে অনিশ্চয়তা এবং উদ্বেগ দেখা যায়। যেমন ডব্লুটিও, ব্যাঙ্ক জাতীয়করণ, ১৯৯১ অর্থনৈতিক সংস্কার, জিএসটি, নোটবন্দি, ইত্যাদি। দরিদ্র এবং দুর্বল জনগণের কথা চিন্তা করে, তাদের সুরক্ষার জন্য এবং সার্বিকভাবে দেশের নাগরিকদের আশঙ্কামুক্তির জন্য সরকারের উচিত্‍ সুরক্ষার আয়োজন করা।

ছবি সৌজন্যে Pexels

     

ড. সুমনকুমার মুখোপাধ্যায় একজন অর্থনীতিবিদ ও শিক্ষাবিদ। সুদীর্ঘ ৪৬ ধরে তিনি অধ্যাপক এবং গবেষক হিসেবে বিভিন্ন দেশী বিদেশি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন যার মধ্যে এক্সএলআরআই, আইআইএসডব্লুবিএম, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ কলকাতা, আইআইটি দিল্লি, উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও সুমন কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের একাধিক উপদেষ্টা পর্ষদের সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি সেন্ট জেভিয়ার্স কলকাতা, সেন্ট স্টিফেনস দিল্লি ও দিল্লি স্কুল অফ ইকনমিকসের প্রাক্তনী। বর্তমানে অ্যাডভাইসরি বোর্ড অন অডুকেশন, গভর্নমেন্ট অফ ওয়েস্ট বেঙ্গলের সদস্য, চেয়ারম্যান ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং অ্যান্ড বিজনেস কমিউনিটির সদস্য, ফেডারেশন অফ স্মল অ্যান্ড মিডিয়ম ইন্ডাস্ট্রিজের সদস্য, ওয়েস্ট বেঙ্গল ইকনমিকস সাব কমিটি, বিসিসিঅ্যান্ডআই, এমসিসিঅ্যান্ডআই, অ্যাসোচ্যাম ইত্যাদি বোর্ডের সদস্য। তিনি সেনার্স-কে নামক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ের গবেষকদের সংগঠনের আজীবন সদস্য। বর্তমানে ভবানীপুর গুজরাটি এডুকেশন সোসাইটি কলেজের ডিরেক্টর জেনেরাল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *