samosa pav
সিঙ্গাড়া পাও। ছবি wikimedia commons।

কলকাতার অলিতে গলিতে যারা দুটাকার চপ, তিনটাকার সিঙ্গাড়া ,কচুরি চেখে দেখেছে কিংবা পকেট ফ্রেন্ডলি টেরিটি বাজারে চাইনিজ ব্রেকফাস্ট সেরেছে, তারা জানে এই কলকাতার পথে ঘাটে লুকিয়ে আছে কত সুস্বাদু খাবারের খনি কিন্তু কলকাতা ছেড়ে মুম্বই পৌঁছনোর পরে বাঙালি জিভ যেমন বাংলা বলতে না পেরে ছটফট করে তেমনই সস্তায় হরেকরকমের এই খাবারের অভাবও বোধ করে মুম্বইতে কি স্ট্রিট ফুড নেই? আলবাত আছে রাস্তার দোকানের ধারে লোকে ভিড় করে আছে দেখে একদিন উঁকি মেরে দেখলাম গরম গরম সিঙ্গাড়া ভাজা হচ্ছে দুইখান সিঙ্গাড়া চাইতেই, একখানা পাউরুটির (পাও ) ভেতরে লাল আর সবুজ চাটনি মাখিয়ে, সিঙ্গাড়াটা চেপে চুপে ভরে দিল তার মধ্যে অনেকটা বার্গারের মত করে এর নাম সামোসা পাও মুম্বইয়ের স্ট্রিট ফুডের প্রাণ হল এই পাও খাও গলিগুলির নাম পাও গলিও রাখা যেত সিঙ্গাড়া ভরা পাও (সামোসা পাও), চপ ভরা পাও (বড়া পাও), তরকারির সঙ্গে পাও (পাও ভাজি), চানাচুরের ঝোলের সঙ্গে পাও (মিসেল পাও), আলু মাখা, বাদাম, বেদানা ভরা পাও(দাভেলি), এরকম বহুবিধ পাও মুম্বইয়ের প্রধান স্ট্রিট ফুড যে সব এলাকায় নন ভেজ খাবার পাওয়া যায় সেখানে ওমলেট পাও কিংবা কিমা পাও, চিকেন কাঠি কাবাব ভরা পাও, এসবও মেলে পর্তুগিজদের সঙ্গেই এই পাওয়ের ভারতে আগমন বলে মনে করা হয়। পরে গোয়া থেকে এই পাও মুম্বই এসে পৌঁছয় ইরান থেকে আসা পার্সিরাও পরবর্তী সময়ে পাওকে নিজেদের খাদ্যতালিকায় ঠাঁই দেয় পথচলতি লোকের চটজলদি পেট ভরাতেও এই পাও-এর জুড়ি মেলা ভার। রাস্তার স্টল বা স্টেশনের দোকান থেকে ১০ টাকায় একটা পাও, কিনে নিলেই কম খরচ আর কম সময়ে কিছুক্ষণের জন্য পেট ভরিয়ে নেওয়া যায় ব্যস্ত শহরের সঙ্গে বড় মানানসই এই খাবারটা Rustoms Icecream parlourএদিকে পাওয়ে আমার বড় অরুচি, কালেভদ্রে ওমলেট পাও খেলেও বাকিগুলো মুখে রোচে না মুম্বইয়ের বাজারে বেশ কিছুদিন হন্যে হয়ে এগরোল, চাউমিন খুঁজে দেখেছি, পাওয়া যায় না এমন নয়, তবে দামের হিসেবে তা আর বাজেট ফুড থাকে না এখানে রোলেরই মত একখানা জিনিস মেলে বটে, তার নাম ফ্র্যাঙ্কি। কিন্তু ভেজ হোক বা নন ভেজ, ফ্র্যাঙ্কি স্বাদে কখনওই আমাদের চেনা রোলের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে না পাও ছাড়া মুম্বইতে দক্ষিণী খাবারেরও রমরমা দেখেছি ঠেলা গাড়িতে মশলা ধোসা, চিজ মশলা ধোসা বা মাঞ্চুরিয়ান ধোসা বা উত্তপম,বেশ পছন্দের খাবার আমার এছাড়াও,নানাবিধ স্যান্ডউইচ যেমন ভেজিটেবল স্যান্ডউইচ, গ্রিলড স্যান্ডউইচ ,চিজ স্যান্ডউইচ, এখানকার মানুষদের পছন্দের খাবার আর কাজে বেরোনো মানুষকে দেখেছি পথে কাটিং চায়ে আর এক প্যাকেট পার্লে জি দিয়ে ব্রেকফাস্ট সারতে, চায়ের সঙ্গে বাটার পাও বা কুড়মুড়ে মাস্কা পাও খাওয়াও বেশ প্রচলিত

মুম্বইতে বেশ কিছু পার্সি  কলোনি আছে দাদর স্টেশনের খুব কাছেই আছে এরকম একটি পার্সি কলোনি পার্সি খাবারের মধ্যে মাটন ধানশাক বা কিমা পাও বেশ জনপ্রিয়এছাড়াও একবার খেয়েছিলাম পার্সি রেসলার ওমলেট,পাঁচ ছটা ডিম দিয়ে তৈরি পেহেলওয়ানি ওমলেট বা পার্সি কিমার স্বাদ আজও মুখে লেগে আছে পার্সি খাবার চেখে দেখতে চাইলে ফ্যান্সি রেস্তোরাঁ গ্র্যান্ডমামা ক্যাফে বা সোডা বটল ওয়াটারওয়ালা ছাড়াও মুম্বইতে আছে বেশ কিছু ছোট বড় ক্যাফে, যেমন মাহিমের ক্যাফে ইরানি চায়,দাদরের ক্যাফে 792 বা কুলার অ্যান্ড কোং, কিংবা চাইলে পৌঁছে যেতে পারেন দাদর পার্সি ইয়ুথ অ্যাসেম্বলি স্ন্যাক সেন্টারে চার্চগেট স্টেশন থেকে মেরিন ড্রাইভ হেঁটে যেতে গেলে পথে পড়ে অতি প্রাচীন পার্সি পরিবারের আইসক্রিমের দোকান কে রুস্তমস। মরসুম অনুযায়ী টাটকা ফল থেকে বানানো আইসক্রিম এদের মূল ইউএসপি। গরমকালে পাকা আমের থেকে তৈরি আইসক্রিমের লোভে ঘন্টা দুয়েকের পথ আমি,বহুবার অনায়াসে পেরিয়ে গিয়েছি

chicken baida roti wikimedia commons
চিকেন বয়দা রুটি। ছবি wikimedia commons।

মুম্বইতে আমার আরেক ধরণের প্রিয় খাবারের কথা না বললে এই বর্ণনা সম্পূর্ণ হবে না বান্দ্রা স্টেশনের পাশে প্রচুর ছোট ছোট ক্যাফে আছে, মূলত মুসলিম পরিচালিতএসব ক্যাফেতে সস্তায় বেশ সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায় রুটি, ভেজা ফ্রাই/ভেজা মশলা ফ্রাই/লিভার ফ্রাই আর ক্যারামেল কাস্টার্ড, সব মিলিয়ে একজনের ১৫০ টাকায় পেটপুরে খাওয়া নানারকম খাবার পাওয়া যায় এখানে,তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য,আমাদের চেনা মোগলাইয়ের ধাঁচে তৈরি বয়দা রোটি ছোট ছোট এই বয়দা রোটির ভেতরে থাকে চিকেনের পুর, আর ডিমের গোলায় চুবিয়ে সেটা ভাজা হয় বান্দ্রা, মাহিম,  কালিনা, মুহম্মদ আলি রোড, এসব জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্রচুর এমন দোকান। নন-ভেজ খাবার খেতে হলে তাই এসব এলাকায় ঢুঁ মারতেই হবে। পছন্দের একটি দোকানের কথা বলেই শেষ করি গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়াতে ঘুরতে গিয়ে এখন ২৬/১১ পরবর্তী সময়ে অনেকেই লিওপোল্ড ক্যাফেতে সংরক্ষিত গুলির দাগ দেখতে যায় ওই লিওপোল্ড ক্যাফের পেছন দিকে বিখ্যাত দোকান বড়ে মিঞা, কিন্তু বড়ে মিঞা আমার পছন্দ নয় এক্কেবারে,বরং তার থেকে একটু এগিয়েই বাগদাদি আহা ! বাগদাদির ওই বিশাল প্লেট ভরা রুটি(খবুস) আর খিচড়ার কথা লিখতে গিয়েই জিভে জল এসে গেল মুম্বইতে হালিমকে বলে খিচড়া রোজ নয়, সপ্তাহের দুদিন পাওয়া যায় খিচড়া, এছাড়াও মাটন ফ্রাই, চিলি বাফ রোজই পাওয়া যায় আলাদা করে অর্ডার করা যায় পটেটো ফ্রাই মাংসের চর্বিতে ভাজা ওই আলুর টানে কতবার যে ছুটে গেছি হিসেবে নেই খেয়ে দেয়ে রাতের মুম্বই সিটি চিনতে চিনতে ফিরে এসেছি চার্চগেট স্টেশনেঐখান থেকেই ছাড়ে আমার মুম্বইয়ের ঘরে ফেরার ট্রেন

দেবলীনার জন্ম রানাঘাটে এবং কর্মস্থল মুম্বই। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নোতকোত্তর করেছেন। বর্তমানে এক বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত। ভালোবাসেন গান গাইতে এবং পেটপুজো করতে।

One Response

  1. অসাধারণ! মুম্বাই ছেড়ে এসেছি আজ প্রায় ৩৩ বছর আগে। তবে সেখানে বাঙালির খাবারের সমস্যার কথা পড়ে নিজের অজান্তেই হেসে নিলাম কয়েকবার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *