বাইরে দেদার হাওয়া। ছাদে দাঁড়িয়ে আমার সারমেয়কুল। গেসুবাবা, মিশিবানু, প্যান্ডি-বুড়ি আর কিনশাসা। আজ রবিবার। স্নানের দিন। ওদের শ্যাম্পু করাই, আর নিজে ভিজি। আপাদমস্তক। এত ছটফট করে। ওদের শ্যাম্পু করা লোম উড়ে যাচ্ছে পশ্চিমে। ছাদে শ্বশুরমশাইয়ের মিনি বাগিচায় আমের মুকুলের গন্ধ। কিনশাসা ছোট্ট। দুষ্টু। হঠাৎ এক লাফে একটা ছোট ডাল মুখে। ছাদময় মুকুল। বকুনি। ছাদ থেকে নির্বাসিত। 

একটা পাহাড় কিনব ভাবি ওদের জন্য। বা একটা দিগন্তবিস্তৃত সমুদ্র সৈকত। সুদূর পুরুলিয়ার উঁচু টিলার ওপর খেলতে থাকা ছোট্ট দেশি কুকুরটির গাল ছুঁয়ে যাওয়া হাওয়ার জন্যই বুঝি পলাশ ফোটে। ওরা ঝরে গেলে, যে মুখে করে তুলে নেয় ওদের। অচিরেই ছিঁড়ে কুটিকুটি করে। সে ফুল শুকায়, অঘোরপুরের ডুংরিতে।

মধ্যগতিতেই নদী সবথেকে সুন্দর অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ তৈরি করে। আমার আইসিস কখনও নদী দেখেনি। মাঝবয়সে অকালে চলে গেল সে। নিজেদের বাড়ির গাড়ির চাকার নীচে। কয়েক মুহূর্তের অসাবধানতায়। ডাক্তারখানায় নিয়ে যাওয়ার পথে একবার হেঁচকি। সব শেষ। আমি অফিসে ছিলাম। হঠাৎ অকারণেই বিষম খেলাম। সবথেকে প্রাণোচ্ছল মানুষরা মুষড়ে পড়লে পৃথিবীর দুঃখ হয়। আকাশের গায়ে ছড়িয়ে থাকা মেঘের ফাঁকে ফাঁকে সেই মনখারাপের দীর্ঘতম শ্বাসের শব্দ শোনা যায়। আমরা কান পাতি না তাতে। 

Doglovers
আমি মানুষের পায়ের কাছে কুকুর হয়ে বসে থাকি

ভোররাতে আইসিসের চারটে বাচ্চা হয়েছিল। আমরা রাত জাগতাম পালা করে। আইসিসের পেটে তখন ইয়া ব্যান্ডেজ। সিজ়েরিয়ান সেকশন। খুব কষ্ট। বাচ্চাগুলোকে রাতভর সামলাতে হত। আঁতুড়ঘরের বাইরে বিন-ব্যাগে বসে বই পড়তাম। কবিতার বই। গদ্যেরও। ভাবনার পিঠে প্রতিভাবনা হয়ে নীতিকবিতার পক্ষপুট থেকে কবিতায় কুকুরের উত্তরণ ঘটাতে আমার কাছে আসতেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়-

আমি মানুষের পায়ের কাছে কুকুর হয়ে বসে থাকি
তার ভেতরের কুকুরটাকে দেখবো বলে।

বুঝি ক্রমশ মানুষসত্তার ভেতরে কুকুরের অনিবার্য অস্তিত্বকে মেনে নিয়েছেন কবি। কুকুর আর তখন তাচ্ছিল্যের লাগসই উদাহরণ থাকে না। সুনীলের সূত্রে হয়ে ওঠে আমারও সত্তাসঙ্গী। মহাভারত থেকে মার্কেজ়… কোথায় নেই কুকুর?

মুকু আসত সক্কালবেলায়। গেসুদের মর্নিংওয়াকের সঙ্গী হিসেবে অনেকটা পথ যেত। তারপর দাঁড়িয়ে থাকত গেটের বাইরে। কোনও কোনওদিন গেটের ভিতরে। লনে দৌড়। এক লাফে বিছানায়। ইস্‌, নেড়ি যে! তা হোক। গেসুদের বন্ধু কিনা। দু’ তিনটে টোস্ট বিস্কুট। কুড়মুড় শব্দ। আবার গেটের বাইরে। একদিন ড্রেনে পড়েছিল। কিছু খাচ্ছিল না। ডাক্তার-পথ্যি কাজে এল না। চলে গেল। ওই মেঘেদের ওপারে।

Dogs
কুকুর আমাদের পুরো জীবন নয়, তবে তারা আমাদের জীবনকে পূর্ণ করে তোলে

কুকুর কেন চলে যায়? 

‘কত দেরি হয়ে গেল ভুলো তবু বাড়ি এল না, সন্ধ্যে হয়ে গেল, রাত হয়ে গেল। দাদু তাস খেলতে যাবার আগে বললেন, খুঁজতে যাবার কিছু দরকার নেই, কেউ তোদের নেড়িকুত্তা চুরি করবে না, খিদে পেলে সুড়সুড় করে নিজেই বাড়ি ফিরবে দেখিস।… ‘রুমুর গলার কাছটা কীরকম ব্যথা ব্যথা করছিল; কখন ভুলোর খাবার সময় হয়ে গেছে, বারান্দার কোনায় ভুলোর থালায় দুধরুটিগুলোকে নীলমতো দেখাচ্ছে, পিঁপড়েরা এসেছে।’

লীলা মজুমদারের ‘হলদে পাখির পালক।’ সেরিব্রাল লেখিকা। ভুলোরা চলে গেলে আমাদেরও গলার কাছটা কীরকম ব্যথা ব্যথা করে। ঢোঁক গিলতে গেলে লাগে। কে যেন বলেছিলেন, কুকুর আমাদের পুরো জীবন নয়, তবে তারা আমাদের জীবনকে পূর্ণ করে তোলে।

আইসিসের সঙ্গে গেসুবাবার মিলন হয়ে গিয়েছিল ভুল করে। পাগের সঙ্গে বিগল। বাচ্চা হলে হত ‘পাগ্‌ল’। সবকটা মরে গেল। বাগানে তাদের কবর দেওয়া হয়েছিল। আইসিস সুর করে কাঁদত আর খুঁজে বেড়াত। ওর দুঃখ ভোলাতে আনা হল মিশিবানুকে। খুব খুশি। সবসময় আগলে রাখত। কিন্তু মিশিবানু রিট্রিভার। একমাসেই পালিত মা’কে ছাড়িয়ে গেল। গতরে।

Doglover 2
ঘরঘর আওয়াজ করে চোখ বুজে আসত আরামে। আহ্লাদে

আইসিস ছিল উদাস প্রকৃতির। ছাদ থেকে একদম নীচে তাকিয়ে থাকলে যাদের মৃত্যুভয় করে না, তারা সেই শববাহী শব্দকে মিলিয়ে যেতে শোনে, ভোরে। সে শব্দের এক অদ্ভুত ছন্দ আছে। চিলেকোঠায় একেবারে একা থাকলে সে ছন্দ দিব্যি শোনা যায়। একা একা ঘুরে বেড়াত আইসিস। “আইসিস, খেতে আআআআআয়য়…” ডেকে ডেকে হাল্লাক। সে নিরুত্তর। অনেকক্ষন পরে হয়তো হেলতে দুলতে ঘরে। গলায় হাত বুলিয়ে আদর করে যেতে হবে অবিরাম। ঘরঘর আওয়াজ করে চোখ বুজে আসত আরামে। আহ্লাদে। 

আমার গেসুবাবাদের রেখে সপ্তাহখানেকের ছুটিতে যাই কোলাখাম, লামাগাঁও, লোলেগাঁও। হোম স্টে। গরমাগরম চিকেন কারি। ধোঁয়া ওঠা ভাত। হুহু করা ঠান্ডায়। তারা বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে থেকে দেখতে পায় কাঞ্চনজঙ্ঘা। স্বপ্নের মধ্যে বানায় সাঁকো, তিস্তার ওপর দিয়ে যা চলে গিয়েছে অজানায়। এরই মধ্যে কেউ ঢেউ তৈরি করে, কেউ বালি দিয়ে বানায় দুর্ভেদ্য ক্যাসল্‌। ঘুমের মধ্যে হাত-পা ছোঁড়ে। বুঝি স্বপ্ন দেখছে এক সুবিশাল বুগিয়ালের। দৌড়চ্ছে। র‍্যাপিড আই মুভমেন্টের সময়ই তো আমরা যাবতীয় স্বপ্ন দেখি।

আইসিসের মেয়ে প্যান্ডি। আদুরে। ছিঁচকাঁদুনি। বাবা কোলে নিয়ে টিভি সিরিয়াল দেখেন। সে-ও শিখেছে। মেলোড্রামা। কিছু ভুল করে বকুনি খেলেই এক ছুটে বাবার ঘরে। সোজা কোলে। প্যান্ডির স্পেশাল ট্রিটমেন্ট। অলওয়েজ়। স্পেশাল শ্যাম্পু। স্পেশাল হাড্ডি। সপ্তাহান্তে বাড়ি ফিরি। দস্যিপনা সইতে হয় প্রথম কয়েক মিনিট। লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে আঁচড়িয়ে একাকার। বাথরুমে গিয়ে স্নান করি। নগ্ন শরীর জুড়ে নামে জল। জ্বালা করে লাভ-স্ক্র্যাচে। স্নান সেরে সুদল্‌ লাগাই। কোলনও। লাভ বাইটস্‌-এর অপেক্ষা সারারাত।

Sleeping with Pet Dogs
লাভ বাইটস্‌-এর অপেক্ষা সারারাত

অপেক্ষায় ঘুমিয়ে পড়ি। সে হয়তো ক্লান্ত। বা ঋতুস্রাবের সময়। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায়। গেসুবাবা চেটে যাচ্ছে আমার কান, গলা, মুখ। ক্লান্তিহীন। উঠে বাথরুমে যাই। ব্যালকনিতে গিয়ে আকাশের দিকে তাকাই। কী এক অপার মুগ্ধতা কাজ করে! মিহি অন্ধকার। দৃষ্টিবিভ্রম হয়। ভোর হয়ে গেল নাকি? আকাশে চাঁদ। জানালা দিয়ে মধ্যরাতের শীতল বাতাস আসে। পাল্লা দিয়ে নাক ডাকে গেসুবাবা আর সহধর্মিণী। আমি পাশ ফিরে শুই। 

ঘুম আসে না। কখন যেন গায়ে গা লাগিয়ে মশারির বাইরে মিশিবানু এসে দাঁড়ায়। রাত জেগে আমরা মনখারাপের শব্দ শুনি। আমি ঘুমিয়ে পড়লে মিশিবানু বেকুবের মতো জেগে থাকে আর ভাবে, প্রতিরাতে উলটোদিকের বহুতলের সবচেয়ে উঁচুতলার ওই একটাই ঘরে আলো নেভে না কেন?

সেই মিশিবানু একদিন মা। এক ছেলে। দুই মেয়ে। কবে যেন শান্ত হয়ে গেছে সে। একটা মা-মা ভাব এসেছে। আমার রাইটার্স ব্লক চলাকালীন দিনের পরদিন তাকিয়ে দেখি বাচ্চাগুলোর খুনসুটি। কুঁইকুঁই আওয়াজ। আর পটি পরিষ্কার করি। কয়েক প্যাক টিস্যু পেপার শেষ। এই সুবিশাল হৃদয়-ভ্যাকিয়ুমকে ভরাট করে দেয় মিশিবানুর বাচ্চারা। এই বসন্তের রাইটার্স ব্লক সযত্নে লালন করছে লেখা, জঠরে। তারা সময় বুঝে বেরিয়ে আসবে ঠিক। চোখ বুজে থাকা শিশুর মতো।

Gesubaba the Pug
বাড়ির দেওয়ালে অ্যাক্রিলিক দিয়ে ওদের আঁকি

গতরাতে ঘুমনোর পর কি ঝড়বৃষ্টি হয়েছিল? সকালে ওদের বেল্ট পরিয়ে হাঁটতে বেরোই। ঝরাপাতা পাড়িয়ে ওরা অনেকটা পথ চলে যায়। ডাকলে পেছনে তাকায়। ওদের চোখের দিকে তাকালে মনে হয় ফাল্গুনের এই আবছা আলোয় জড়িয়ে আছে, কতকালের, কত অকথিত কাহিনি। এই সকালে এতটুক শারীরিক মানুষিক প্রশান্তি পাই, যা নিজেকে আরও বেশি প্রাণবন্ত করে তোলে। হেঁটে ফিরে এসে রোশনিকে ডেকে তুলি ঘুম থেকে। বেকারি বিস্কুট সহযোগে গুডরিক রোস্টেড ফাইন দার্জিলিং টি। বিস্কুটের সিংহভাগে চারপেয়েদের অধিকার।

Pan-D the Dog
‘কুকুর হইতে সাবধান’ লিখতে পারি না

আদিখ্যেতা। বাড়ির দেওয়ালে অ্যাক্রিলিক দিয়ে ওদের ছবি আঁকি। ‘গেসুবাবা লিভস্‌ হিয়ার।’ ‘কুকুর হইতে সাবধান’ লিখতে পারি না। ওরা যে আমার আত্মজ। জিগর কা টুকড়া। রোজ চিকেনের জিগর-কলিজা সেদ্ধ হয় কুকারে। চেটেপুটে সাফ। শেষ পাতে ডেসার্ট হিসেবে লিভ-৫২। ভেট-এর প্রেসক্রিপশন। অব্যর্থ।

সোমবার কলকাতার উদ্দেশে। অফিস। গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার আগে ঘুষ দিতে হয়। চিকেন স্টিক। ক্যালসিয়াম বোন। অফিস শেষে কলকাতার ফ্ল্যাটে। গাড়ি থামলেই কোত্থেকে যেন দৌড়ে আসে ছাতু আর টপ্পা। ফ্ল্যাটবাড়ির নীচে আস্তানা। গাড়িতেই রাখি চিকেন স্টিক। দিলে, তবে ছাড় পাওয়া যাবে। যেখানেই যাই, পকেটে রাখি বিস্কুট। তারা যে বুঝতে পারে! ঠিক কাছে এসে ঘন হয়ে দাঁড়ায়। লেজ নাড়ে। চোখে আকুতি। 

আহ্‌, কুকুরের চোখের দিকে তাকালে নাকি খুনিও সন্ন্যাস নিতে পারে। ‘পাতাললোকে’ হাতোড়া ত্যাগী বলে– “ইফ আ ম্যান লাইকস্‌ ডগস্‌, হি ইজ আ গুড ম্যান; ইফ আ ডগ লাইকস্‌ ম্যান, হি ইজ আ গুড ম্যান।” কবিতায় আশ্রয় খুঁজতে হয়। এই জগৎ সংসারে। টীকাকরণের লাইনে। অক্সিজেন সিলিন্ডারের অপ্রতুলতায়।

An Itching Dog
কুকুর অধিকার করে নিয়েছে একবিংশ শতকের মানুষের বেদনার্ত হৃদয়

কুকুরের কাজ কুকুর করেছে
কামড় দিয়েছে পায়
তা বলে কুকুরে কামড়ানো কিরে
মানুষের শোভা পায়?

নীতিকাব্যের ঘ্রাণে ভরা এই কবিতা আজ হয়তো আর প্রিয় কবিতাবাচ্য থাকে না। কিন্তু বুঝি কুকুর অধিকার করে নিয়েছে একবিংশ শতকের মানুষের বেদনার্ত হৃদয়। জাপানের সেই কুকুর স্মারকস্তম্ভের কথা এসে পড়ে। অচিরেই।

আকিতা ব্রিডের ছোট্ট হাচিকোকে জাপানের এক রেলস্টেশনে খুঁজে পান একজন। ভদ্রলোকের দেখে মায়া হয়। হাচিকোকে কোলে তুলে তার মালিকের জন্য অপেক্ষা করেন। ওদেশে তো আর এমন বেওয়ারিশ কুকুর হয় না। সবার কেউ না কেউ মালিক থাকে। টাইম পাসেস বাই বাট নোবডি কামস টু ক্লেইম। শেষপর্যন্ত ভদ্রলোক স্টেশন মাস্টারকে নিজের ফোন নাম্বার দিয়ে হাচিকোকে বাসায় নিয়ে আসেন। স্ত্রীকে ম্যানেজ ট্যানেজ করেন এই বলে, ফোন পেলেই আসল মালিককে ফেরত দেবেন।

ফোন আর আসে না। ভদ্রলোকই হাচিকোর মনিব বনে যান। ইনফ্যাক্ট, সেটাই তিনি চাইছিলেন। হি ওয়জ় ইন লাভ উইথ হিম! হাচিকো বড় হয়ে ওঠে। প্রতিদিন স্টেশন পর্যন্ত মনিবকে ছেড়ে আসে, আবার বিকালে ফিরতি ট্রেন এলে তাকে আনতে ছুটে যায়। একদিন বিকালের ট্রেনে মনিব আর ফেরে না। হাচিকো স্টেশনে অপেক্ষা করে করে ফিরে আসে। পরদিন আবারও যায়। এভাবে প্রতিদিনই। সে তো আর জানে না যে, মনিব সেদিন অফিসে স্ট্রোক হয়ে মারা গেছে! 

Man and Dogs
ঘরময় সিক্ত সারমেয়ের গন্ধ

হাচিকো পাগলের মতো স্টেশনে অপেক্ষা করতে থাকে। দীর্ঘ দশ বছর স্টেশনে অপেক্ষা করে বৃদ্ধ হয়ে ওখানেই মারা যায়। ওর মৃত্যুদিনটিকে জাপানে ‘ডগস ডে’ হিসেবে পালন করা হয়। যেখানে মানব-মানবীর প্রেম এসে তার বিশ্বস্ততার শপথ নেয় কুকুরের বিশ্বস্ততার স্মৃতিতে। কুকুর তখন মনিব-ভৃত্যের বিশ্বস্ততার বৃত্ত ভেদ করে প্রেমের চিরন্তন পর্যায়ে উন্নীত হয়।

প্রকৃতি এখন মাস-দিনের নিয়ম মেনে চলে না। এখন একটাই ঋতু। কোভিডকাল। তবুও অপেক্ষা করছি যদি মুষলধারে বৃষ্টি নামে। পুরো জৈষ্ঠ্য মাসের আম-জাম-কাঁঠাল-জামরুল-লিচুপাকা গরমের মধ্যে শিশির অথবা ভেজা ঘামের মতো সামান্য বৃষ্টি হয়েছিল, তাও এক-আধদিন; শ্রাবণে একটু বেশি হলেও, তা প্রকৃতির সমুদ্রসম চাহিদার তুলনায় এক ডোবার মতো। 

সারাদিন-সারারাত নির্ঘুমে অপেক্ষায় থাকি– আসুক ঝড়-বৃষ্টি-তুফান, মেঘের সমারোহে বর্ষা সূচনা করুক স্বরূপে সত্যিকারের শুভাগমন, আসুক ছায়াঘন দিন; শুষ্ক প্রান্তর, নদী-নালা খালে-বিলে জাগুক প্রাণোচ্ছ্বাস। কদম, কেয়া, জুঁই, গন্ধরাজ, হাসনুহানা বিচিত্র বর্ণগন্ধের উৎসবে শুরু হোক মেঘ, বৃষ্টি আর আলোর মেলা। ওরা ভিজে আসে। বকুনি খেতে খেতে টাওয়েলে গা মোছে। ঘরময় সিক্ত সারমেয়ের গন্ধ। আমার গেসুবাবা-মিশিবানু। প্যান্ডি-কিনশাসা। লেজ নাড়ে। ভেজা গাল চেটে দেয়। পরিপূর্ণতার এক ‘ওমে’ নিজেকে জড়াই। 

*লেখার মধ্যে ব্যবহৃত সব অলঙ্করণ: লেখক
*লেখার মধ্যে ব্যবহৃত সব আলোকচিত্র: লেখকের ফেসবুক পেজ থেকে

দ্যুতিমান দুঁদে আইপিএস অফিসার। বর্তমানে হাওড়ায় ডিসিপি সদর পদে কর্মরত। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালেখি ছাড়াও ওঁর স্নাতক স্তরের ভূগোলের রিমোট সেন্সিং ও ভূ-জলবিদ্যার ওপর দু'টি বই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাদৃত। সাপ্তাহিক বর্তমান পত্রিকায় ধারাবাহিক কলাম লেখেন। এবং দ্যুতিমান শিল্পী। অ্যাক্রিলিক ও কোলাজ মাধ্যমে মূলত কাজ করেন। অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস-সহ বহু জায়গায় প্রদর্শনী হয়েছে। বই-পত্রপত্রিকায় অলঙ্করণ করেন নিয়মিত। ছবি আঁকা, বই পড়া ছাড়া শখ বেড়ানো, পাখির ছবি তোলা আর ম্যারাথন দৌড়নো।

3 Responses

  1. মর্মস্পর্শী, বুদ্ধিদীপ্ত লেখা। ছবিগুলোও খুব সুন্দর – লেখকের কুকুরের প্রতি গভীর ভালোবাসা ফুটে উঠেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *