আগের পর্ব পড়তে: [] [] [] [] [] [] [] [] [] [১০] [১১] [১২] [১৩] [১৪] [১৫]

মৈদাম

পিরামিড দেখতে লোকে মিশরে যায়। পা এবং পকেটের জোর বেশি থাকলে অনেকের পছন্দ মেহিকো। উত্তর আমেরিকা মহাদেশের কালাকমুল বায়োস্ফিয়ারে (Calakmul Biosphere Reserve) অবস্থিত মায়া সভ্যতার সময়কার পিরামিড দেখতে হলে মেহিকো না গেলেই নয়। আর নিতান্তই ছোট আকারের পিরামিড দেখতে হলে দক্ষিণ কোরিয়ার পথে প্রান্তরে ঘুরে বেড়াতে হবে। ১৩৯২ থেকে ১৯১০ পর্যন্ত জোসেওন (Joseon) বংশের যে রাজারা কোরিয়া শাসন করতেন তাঁদের সমাধি দেশের অন্ততঃ ১৮টি জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছে। চূড়ান্ত বিচারে সব পিরামিডই তো রাজা-রানির সমাধিগৃহ। কিন্তু আহোম রাজাদের সমাধিগৃহ যা স্থানীয় ভাষ্যে মৈদাম বলে পরিচিত দেখতে যায় কতজন?

মৈদাম দেখতে হলে চরাইদেউ যেতে হবে। সে আবার কোথায়? অসমের শিবসাগর জেলার অন্যতম মহকুমা ছিল চরাইদেউ। ১৫ আগস্ট ২০১৫ থেকে চরাইদেউ আলাদা জেলা। ভূগর্ভস্থ তেল আর প্রাকৃতিক গ্যাসের সুবাদে জেলার সদর শহর সোনারি অবিশ্যি দেশের শিল্প মানচিত্রে বহুদিন ধরেই সুপরিচিত। 

শিবসাগরে বিমানবন্দর নেই। কাজেই ট্রেনে অথবা জাতীয় সড়ক ধরে শিবসাগর আসতে হবে। এখান থেকে শিমলুগুড়ি যাওয়ার রাস্তায় সোনারির দিকে কমবেশি তিরিশ কিলোমিটার পথ পরিক্রমা করলেই চরাইদেউ-এর বিশাল তোরণ। তোরণের উপর বড় বড় অক্ষরে লেখা– সুকাফা নগর।

Chaolung Sukaphaa
চাওলুং সুকাফা, আহোম রাজবংশের প্রথম রাজা।

রেলিং দিয়ে ঘেরা সুরক্ষিত সমাধি স্থল। টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশ করলেই নজরে পড়ে লাল পাথরের জাফরি গাঁথা একটি অষ্টভুজাকৃতি ছোট্ট মন্দির। স্থানীয় ভাষ্যে যার নাম লেঙডন মন্দির। লেঙডন দেবতাদের রাজা। ১২২৮ থেকে ১৮২৬ পর্যন্ত সিংহাসনে আসীন আহোম রাজারা নিজেদের লেঙডনের উত্তরসূরি বলে বিবেচনা করতেন। আহোম রাজারা বংশের প্রাচীন প্রজন্মের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্যই নাকি চরাইদেউ-এর প্রবেশ পথেই স্থাপন করিয়েছিলেন স্বর্গ-মর্ত্যের অধীশ্বর লেঙডনের মন্দির। লেঙডনের সঙ্গে সম্পর্কের সূত্রেই নাকি আহোম রাজারা নিজেদের নামের শেষে ফা উল্লেখ করতেন। ‘ফা’ শব্দের অর্থ অধিপতি। আহোম রাজবংশের প্রবর্তক প্রথম রাজার নাম সুকাফা।

পরিক্রমা শুরু করলে ডাইনে-বামে যেদিকে নজর যায় সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে অর্ধ-গোলাকার মৃত্তিকা স্তুপ। অনেকটা বৌদ্ধ স্তুপের আকারে নির্মিত ঘাসাচ্ছাদিত মাটির স্থাপত্য। প্রতিটি সমাধি-স্তুপের অর্থাৎ মৈদামের অভ্যন্তরে রয়েছে একেকজন রাজার সমাধি। চরাইদেউ-এর সদর দরজা থেকে শুরু করে বহু দূরে আবছা আবছা নজরে আসা নাগা পাহাড় পর্যন্ত বিস্তৃত প্রায় ৭০০ একর জমির ওপর স্থাপিত হয়েছে ৪২টি মৈদাম। অর্থাৎ আহোম রাজবংশের ৪২ জন রাজার সমাধি।

Maidam at Charaideo in Assam
চরাইদেও-এর এক নম্বর মৈদাম। কোন রাজার জানা যায়নি।

আহোম রাজত্বে রানিরা কি অবহেলিত? মোটেও নয়। চরাইদেউ থেকে বেরিয়ে শিমলুগুড়ি যাওয়ার পথে তিন-চার কিলোমিটার এগোলেই রাস্তার বাঁ পাশে পড়ে দৌলবাগান চা বাগিচা। এই চা বাগিচার শেষ সীমানা থেকে শুরু করে নাগা পাহাড় পর্যন্ত ছড়িয়ে রয়েছে অনেকগুলি মৈদাম। আকারে অনেক ছোট। লোকশ্রুতি এইসব মৈদামের গর্ভে শায়িত রয়েছে আহোম রানিদের সমাধি। আহোম রাজত্বের বিভিন্ন জায়গায় সবমিলিয়ে শ’দেড়েক মৈদামের হদিশ পাওয়া গেলেও শুধুমাত্র চরাইদেউতে অবস্থিত রাজকীয় মৈদামগুলিই যথার্থ ভাবে সংরক্ষিত।

আকারে ছোট বড় হলেও প্রতিটি মৈদামের স্থাপত্য রীতি প্রায় একই রকম। ইটের দেওয়াল গেঁথে ঘিরে রাখা এক খণ্ড অষ্টভুজ আকারের জমি। এই দেওয়ালই আসলে মৈদামের ভিত। সবচেয়ে বড় ভূখণ্ডের পরিসীমা ৩৬০ মিটার। অর্থাৎ অষ্টভুজ ভূখণ্ডের এক একটি বাহু কমবেশি ৪৫ মিটার দীর্ঘ। দেওয়ালের উচ্চতা ১ মিটার হলেও প্রস্থ কিন্তু ১ মিটার ছাড়িয়ে গেছে। ইটগুলিও দেখার মতো। নানান মাপের ইট। সবচেয়ে বড়টির দৈর্ঘ্য ২৫ সেন্টিমিটার। আর সবচাইতে ছোট ইটটির উচ্চতা সাড়ে তিন সেন্টিমিটার। সবমিলিয়ে অন্ততঃ ছয় রকমের ইট প্রতিটি মৈদাম তৈরির সময় ব্যবহার করা হয়েছিল। এমন বিভিন্ন মাপের ইট ভারতীয় উপমহাদেশের অন্য কোনও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে নজরে পড়ে কি? 

Ahom Kings burial ground
মৈদামের প্রবেশপথ।

দেওয়াল ঘেরা এই ভূখণ্ডের মধ্যে গড়ে উঠেছিল মৈদামের গর্ভগৃহ। প্রয়াত রাজার মরদেহর সঙ্গে তাঁর পাত্র-মিত্র মায় পরিচারক এবং পোষ্য প্রাণীও মৈদামের গর্ভগৃহে স্থান পেত। কাঠ ও হাতির দাঁতের কারুকার্য করা শবাধারে অলঙ্কার-রত্নাদিও সাজিয়ে রাখা হত বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। কথিত আছে ব্রিটিশ আমলে বিদেশি সৈন্যরা বেশ কয়েকটি মৈদামের গর্ভগৃহে রাখা মূল্যবান সম্পদ লুট করে নিয়ে যায়। এখনও পর্যন্ত যে দু’-তিনটি মৈদামের ভেতরে ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব সর্বেক্ষণের বিশেষজ্ঞরা প্রবেশ করতে পেরেছেন তার থেকে এই ধারণাই স্পষ্ট হয় যে বহুকাল ধরে চলতে থাকা লুঠতরাজের লোকশ্রুতি মোটেও কাল্পনিক নয়। 

সযত্নে নির্মিত মৈদামের গর্ভগৃহে প্রয়াত রাজা এবং তাঁর সঙ্গীসাথীদের যথাযথ মর্যাদায় সমাধিস্থ করার পর তার উপরে চাপিয়ে দেওয়া হত মাটি। মৈদামটি অর্ধ-গোলাকৃতির আকার না পাওয়া পর্যন্ত মাটি চাপানো চলত। নির্মাণ সম্পূর্ণ হলে মৈদামের চূড়োয় স্থাপিত হত একটি ছোট্ট মণ্ডপ যার নাম চৌ চালি । চৌ চালিতে প্রদীপ জ্বালিয়ে মৃতের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করার প্রচলন ছিল। 

এখনকার মতো সে যুগেও রাজা বা প্রশাসনিক প্রধানের মৃত্যু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দুঃসংবাদ প্রকাশ্যে প্রচারিত হত না। রাজার প্রয়াণের পর রাজপরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যবৃন্দ এবং রাজসভার মন্ত্রী-পাত্র-মিত্র অর্থাৎ যাঁরা ডাঙ্গরীয়া নামে স্বীকৃত, তাঁরা সমবেত হয়ে নতুন রাজা নির্বাচনের পর একই সঙ্গে প্রচারিত হত রাজার প্রয়াণের দুঃসংবাদ ও নতুন রাজা নির্বাচনের শুভ বার্তা।

নতুন রাজার প্রথম কাজ ছিল পূর্বসূরীর মরদেহ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কী ধরনের শবাধার নির্মাণ করা হবে তা নির্ধারণ করা। সমান্তরাল ভাবে চলত অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সংক্রান্ত ক্রিয়াকর্মাদি এবং মৈদাম নির্মাণের কাজ। 

মৈদাম নির্মাণের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল জমি নির্বাচন। জমি বাছাই হয়ে গেলে শুরু হত ভূমির শুদ্ধিকরণ। নির্বাচিত ভূ-খণ্ডের ওপর সোনা-রূপার মুদ্রা ছড়িয়ে দিলেই ভূমি শুদ্ধ হয়ে যায় বলে প্রচলিত বিশ্বাস। অতঃপর মৈদামের গর্ভগৃহে অবস্থিত সমাধি নির্মাণের সূচনা। 

সমাধি কক্ষ, যা কারেং-রুয়াং-ডাং নামে পরিচিত, সাধারণত শাল কাঠ দিয়ে তৈরি তিন-চার কামরা বিশিষ্ট একটি কক্ষ। আহোম রাজের সূচনাপর্বে আবশ্যিক ভাবে শাল কাঠের কারেং-রুয়াং-ডাং নির্মাণ করার প্রচলন থাকলেও পরবর্তী সময়ে ইট-পাথরের তৈরি কারেং-রুয়াং-ডাং নির্মিত হয়েছিল। ১৬৯৬-এ আহোম রাজা সুপাতফা ওরফে গদাধর সিংহের মৃত্যুর পর তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র সুখরুংফা ওরফে স্বর্গদেও রুদ্র সিংহ ইট-পাথরের একটি দ্বিতল কারেং-রুয়াং-ডাং নির্মাণ করিয়েছিলেন। 

মৈদামের গর্ভগৃহে অবস্থিত কারেং-রুয়াং-ডাং এত প্রশস্ত আকারে নির্মাণের মূল কারণ, প্রয়াত রাজার সঙ্গে তাঁর পরিচারক-পরিচারিকা তো বটেই এমনকি তাঁর পোষ্য প্রাণীদেরও সমাধি দেওয়া হত। ক্ষেত্র বিশেষে হাতি-ঘোড়াও নাকি সমাধিতে স্থান পেত। আহোম রাজা প্রতাপ সিংহ যিনি ১৬০৩ থেকে ১৬৩৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেছেন, তাঁর মা মারা যাওয়ার পর যে মৈদাম তৈরি হয় তার গর্ভগৃহে শবাধারের সঙ্গে পাঠানো হয়েছিল চারটি হাতি, দশটি ঘোড়া এবং সাতজন মানুষ।  

Charaideo Maidams top view
প্রয়াত রাজার সঙ্গে তাঁর পরিচারক-পরিচারিকা তো বটেই এমনকি তাঁর পোষ্য প্রাণীদেরও সমাধি দেওয়া হত।

রাজবাড়ির রীতিনীতি প্রজারা অনুকরণ করে। সারা বিশ্বে এমনটাই দস্তুর। কাজেই সাধারণ মানুষ মারা গেলেও তাঁর বাড়িতে গাঁথা হত মৈদাম। স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ মানুষের জন্য নির্মিত মৈদাম আকারে রাজা-রানির মৈদামের তুলনায় অনেক ছোট। আর সেইসব মৈদামে রাজবাড়ির অনুকরণে জীবিত মানুষ অথবা প্রাণী পাঠানো হত কিনা তার খবর পাওয়া যায়নি। 

কালের প্রবাহে মৈদাম গুরুত্ব হারিয়েছে। তবে একেবারে গুরুত্বহীন হওয়ার আগেও একটা পর্যায় ছিল। ১৭৫১ থেকে ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করার পর মারা গেলেন আহোম রাজ রাজেশ্বর সিংহ। মরদেহ সৎকারের জন্য তাঁর উত্তরসূরি লক্ষ্মী সিংহ তিন সদস্যের মন্ত্রিসভা অর্থাৎ ডাঙ্গরীয়া-র সঙ্গে আলোচনায় বসলেন। সিদ্ধান্ত হল প্রয়াত রাজার মরদেহ ব্রহ্মপুত্রর তীরে দাহ করা হবে। এবং সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয় অর্থাৎ মরদেহ দাহ করা হয়। রাজকীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার প্রচলিত প্রথা পরিবর্তনের প্রক্রিয়া দেওধাই বা পুরোহিতদের পছন্দ নয়। দেওধাইদের উদ্যোগে সর্বত্র অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ল। রাজতন্ত্রের সঙ্গে পুরোহিততন্ত্র সাধারণত সখ্যতা বজায় রাখতে অভ্যস্ত। পৃথিবীর সব দেশেই এমনটাই প্রচলিত রীতি। তার ব্যতিক্রম হলেই শুরু হয় নানারকমের অশান্তি। নতুন রাজা লক্ষ্মী সিংহ অশান্তি দূর করতে আগ্রহী। কিছুদিন বাদে বিষয়টি একটু থিতিয়ে যাওয়ার পর দেওধাইদের সঙ্গে রাজবাড়ির আলোচনার মাধ্যমে একটা সমাধান সূত্র খুঁজে পাওয়া গেল। চরাইদেউ-তে প্রয়াত রাজার মৈদামের স্থান পূর্বনির্ধারিত। রাজার নশ্বর দেহ দাহ করার পর ভষ্মাবশেষ পূর্বনির্ধারিত স্থানে সমাধিতে রেখে তার উপরে গড়ে তোলা যায় মৈদাম। 

এমন সহজ সমাধান সূত্র মেনে নিয়ে কিন্তু রাজেশ্বর সিংহের মৈদাম নির্মাণ করা গেল না। কারণ, রাজেশ্বর সিংহের নশ্বর দেহ দাহ করার পর ভষ্মাবশেষ সংরক্ষণ করা হয়নি। অতএব আবার শুরু হল আলাপ-আলোচনা। কিঞ্চিৎ জটিল হলেও বেরিয়ে এল নতুন সমাধান। সোনা এবং কুশ দিয়ে রাজেশ্বর সিংহের দু’টি মূর্তি তৈরি করা হল। কুশের মূর্তিটিকে দাহ করে তার ভষ্মাবশেষ সযত্নে সংগ্ৰহ করে চরাইদেউতে নিয়ে গিয়ে স্বর্ণমূর্তির সঙ্গে একত্রে সমাধিস্থ করে তার উপরে গড়ে তোলা হল রাজেশ্বর সিংহের মৈদাম। 

প্রচলিত সামাজিক প্রথা পরিবর্তন বা সংস্কারের প্রচেষ্টা স্থান-কাল নির্বিশেষে পৃথিবীর সর্বত্র প্রাথমিক পর্যায়ে প্রত্যাখ্যাত হয়। এটাই বোধ হয় চিরায়ত বিধি। আহোমেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। পরবর্তী সময়ে আহোম রাজত্বের অবসানের পর নানাবিধ কারণে ভষ্মাবশেষ সমাধিতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা বাতিল হয়ে গেলেও আহোম রাজবংশের কোনও কোনও শাখা-প্রশাখার উত্তরসূরিরা নিয়ম রক্ষার তাগিদে মরদেহের ভষ্মাবশেষ সাদামাটা ভাবে সমাধিস্থ করার আয়োজন করে থাকেন। এমনকি আহোম রাজত্বের প্রভাব যে সমস্ত এলাকায় ছিল সেখানেও সাধারণ মানুষের মধ্যে এই পদ্ধতির প্রচলন এখনও রয়েছে। 

ছবি সৌজন্য: Wikipedia

Amitabha Ray Author

প্রশিক্ষিত প্রযুক্তিবিদ ও পরিচিত পরিকল্পনাবিশারদ। পড়াশোনা ও পেশাগত কারণে দেশে-বিদেশে বিস্তর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। তার ফসল বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় বই। জোয়াই, আহোম রাজের খোঁজে, প্রতিবেশীর প্রাঙ্গণে, কাবুলনামা, বিলিতি বৃত্তান্ত ইত্যাদি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *