গতকালের আঁধার থেকে বাইরে এসে
চোখ ঘষতে ঘষতে দেখলাম,
চারপাশে ফুল আর ফুল,
বেঁচে থাকা বসন্তের মতো, তখনই
আজ আবার বেঁচে থাকবার হল সাধ
আজ আবার মরে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা হল
যে বিখ্যাত গানটি থেকে এই অনুবাদ, সেটি ১৯৬৬-৬৭ বর্ষের ১৪তম ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অনুষ্ঠানে মনোনীত হয়েছিল শ্রেষ্ঠ গায়ক, শ্রেষ্ঠ সুরকারের জন্য। মনোনীত ব্যক্তিদের নাম যথাক্রমে লতা মঙ্গেশকর এবং শচীনদেব বর্মন। মূল হিন্দি গানটির প্রথম দু‘লাইন “আজ ফির জিনে কি তমন্না হ্যায়, আজ ফির মরনে কা ইরাদা হ্যায়।” বহু জনমত সত্ত্বেও লতা এবং শচীনকর্তা দুজনেই পুরস্কৃত হননি সেদিন। পুরস্কার জিতে নিয়েছিলেন মোহম্মদ রফি ও শংকর-জয়কিষণ, “বাহারোঁ ফুল বরসাও” গানটির জন্য। কিন্তু বলার অপেক্ষা রাখে না, হিন্দি ছবির ইতিহাসে এই গান নারীর আপন শর্তে বেঁচে নেওয়ার ভাষ্যের প্রেক্ষিতে সর্বকালের সেরা গানগুলির একটি।
ছবির নাম ‘গাইড’, ১৪তম ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অনুষ্ঠানে যা জিতে নিয়েছিল সাত-সাতটি শিরোপা, বিভিন্ন বিভাগে। গাইডের সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় স্তরের পুরস্কার না পেলেও, ওই বছরই অর্থাৎ ১৯৬৭-তে বিএফজেএ পুরস্কার (বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড) পেয়েছিলেন শচীনদেব বর্মন। গাইডের মূল গল্পটির লেখক আর.কে নারায়ণ। ১৯৬৫-তে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবির মোট দশটি গানের রচনাকার শৈলেন্দ্র, যিনি তাঁর ১৭ বছরের সংক্ষিপ্ত বলিউড-কেরিয়ারে হিন্দি ছবির জন্য গান লিখেছেন নশোরও বেশি। এবং ১৯৪৯-এ শৈলেন্দ্রর জীবনে গীতিকার হিসেবে কাজ করা প্রথম ছবির নাম ‘বরসাত‘। সেখানেও মুখ্য সংগীতশিল্পী ছিলেন লতা মঙ্গেশকর। পাঁচ ও ছয়ের দশক জুড়ে শৈলেন্দ্রর গীতিকবিতায় লতাজির কণ্ঠে গাওয়া বহু গান ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। গুলজার তাঁর একাধিক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, শৈলেন্দ্র বলিউডের শ্রেষ্ঠ গীতিকারদের একজন। হিন্দি ছবির গানে হিন্দি ও ঊর্দুর সাবলীল সংমিশ্রণের ধারার সূত্রপাত মূলত শৈলেন্দ্রর হাত ধরেই।

জন্ম ১৯২৩, অবিভক্ত পঞ্জাবের রাওলপিন্ডি শহরে৷ মাতৃপিতৃ প্রদত্ত নাম– শংকরদাস কেশরীলাল। তাঁর বেড়ে ওঠা মথুরায়। সেখানেই স্কুলের বন্ধু হিসেবে পাওয়া, হিন্দি ভাষার বিখ্যাত কবি ইন্দ্র বাহাদুর খারে-কে। শৈলেন্দ্রর জীবনকথা থেকে জানা যায়, শৈশব-কৈশোরে প্রায়শ এই দুই নবীন কবি ক্লাস কেটে ঝিলের ধারে বসে একে অন্যকে নিজেদের কবিতা শোনাতেন। পিতার আকস্মিক কর্মহীনতা তাঁদের বড় পরিবারকে দারিদ্র্যের মধ্যে এনে ফেলে। দলিত পরিবার থেকে উঠে আসা এই তরুণের প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা খুব বেশিদূর এগোয় না। চব্বিশ বছর বয়সে, ১৯৪৭-এর দেশভাগের পর শংকরদাস এসে পৌঁছন তৎকালীন বোম্বে শহরে। সেন্ট্রাল রেলওয়েতে অ্যাপ্রেনটিসের কাজ পেয়ে যান। যোগ দেন আইপিটিএ-তে (ইন্ডিয়ান পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশন)। কলম থেকে একে একে বেরোতে থাকে আগুন ঝরানো কবিতা।

অধিকার বুঝে নেওয়া প্রখর দাবিতে লেখা সেই বিখ্যাত স্লোগান, “হর জোর জুলুম কে টক্কর মে/ হরতাল হমারা নারা হ্যায়” যে শৈলেন্দ্ররই রচনা, আজকের হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তান বোধ করি তা ভুলতে বসেছে। দেশভাগের যন্ত্রণা সৃষ্টি করেছিল আরেকটি বহুপঠিত কবিতা– জ্বলতা হ্যায় পঞ্জাব। একটি মুশায়েরায় বসে রাজ কাপুর শৈলেন্দ্রকে কবিতাটি পাঠ করতে শোনেন। রাজ কাপুর তখন তাঁর পরিচালনায় প্রথম ছবি ‘আগ‘-এর কাজ করছেন। তিনি চেয়েছিলেন ‘পঞ্জাব জ্বলতা হ্যায়‘ কবিতাটি ‘আগ‘ ছবিতে ব্যবহার করতে। মুশায়েরার শেষে রাজ কাপুর দেখা করেন শৈলেন্দ্রর সঙ্গে। তৎক্ষণাৎ অগ্রিম হিসেবে পাঁচশ টাকা দিতে চান। কিন্তু প্রতিবাদী তরুণকবি মূলধারার ছবির জন্য তাঁর কবিতাকে পণ্য করতে রাজি হলেন না। ফলত, শৈলেন্দ্র সেদিন প্রস্তাব ও অর্থ দুইই প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। রাজ কাপুর তবুও বলে যান, যদি কখনও শৈলেন্দ্রর সিদ্ধান্ত বদলায়, সে যেন আসতে দ্বিধা না করে।
শৈলেন্দ্রর ১৭ বছরের সংক্ষিপ্ত বলিউড-কেরিয়ারে হিন্দি ছবির জন্য গান লিখেছেন নশোরও বেশি। এবং ১৯৪৯-এ শৈলেন্দ্রর জীবনে গীতিকার হিসেবে কাজ করা প্রথম ছবির নাম ‘বরসাত‘। সেখানেও মুখ্য সংগীতশিল্পী ছিলেন লতা মঙ্গেশকর। পাঁচ ও ছয়ের দশক জুড়ে শৈলেন্দ্রর গীতিকবিতায় লতাজির কণ্ঠে গাওয়া বহু গান ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। গুলজার তাঁর একাধিক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, শৈলেন্দ্র বলিউডের শ্রেষ্ঠ গীতিকারদের একজন।
শৈলেন্দ্রকে শেষমেশ যেতেই হয়। তাঁর স্ত্রী তখন আসন্নপ্রসবা। হাসপাতালের বিল মেটানোর মতো অর্থ ছাব্বিশ বছর বয়সী পিতার কাছে নেই। মনে পড়ল রাজ কাপুরের প্রস্তাব। শৈলেন্দ্র গিয়ে পৌঁছন স্টুডিওতে। রাজ স্রেফ সাহায্য করতে চাইলে শৈলেন্দ্র বলেন, তিনি কাজের বিনিময়ে অর্থ চান। রাজ কাপুর তখন ‘বরসাত’ ছবিটি নির্মাণ করছেন। মুখ্য গীতিকার প্রায় শৈলেন্দ্ররই সমবয়সী আর এক তরুণ, হসরত জয়পুরী। রাজ কাপুর কেবল দুটি গান শৈলেন্দ্রকে লিখে দিতে বলেন। শৈলেন্দ্র তৎক্ষণাৎ সেটে বসেই লিখে দেন। ‘পাতলি কমর হ্যায়’ এবং ‘বরসাত মে হমসে মিলে’ — দুটি গানই চূড়ান্ত জনপ্রিয়তা পায়। গান দুটি গাওয়ানো হয় অন্য এক নবীনা শিল্পীকে দিয়ে, যিনি চারের দশকের প্রথমদিকে বলিউডে কাজ করতে আসেন। এবং মাত্র তিন বছরের মধ্যেই বলিউডের হিন্দি গানে একটি অপরিহার্য নাম হয়ে ওঠেন। লতা মঙ্গেশকর। ১৯৪৭-৪৮-৪৯ এই তিন বছরে প্রায় তিরিশটি ছায়াছবির গানে নারীকণ্ঠ হিসাবে শোনা যায় বছর আঠেরো-উনিশের এই মেয়েটিকে।
পাঁচ ও ছয়ের দশক জুড়ে শৈলেন্দ্রর লেখা শতাধিক কথায় গান গেয়েছেন লতা মঙ্গেশকর। এবং উল্লেখযোগ্য বিষয় এই যে, যখন নারীকণ্ঠে মূলত বিখ্যাত হত নরনারীর প্রেম ও বিরহের গান, তখন শৈলেন্দ্র লতার কণ্ঠের জন্য লিখে দিয়েছেন বেঁচে থাকার, বেঁচে নেওয়ার গান, জীবনের ও জীবনদর্শনের গান। ১৯৬০-এ মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দিল আপনা অউর প্রীত পরায়ি‘ ছবিতে পাঁচটি গান শৈলেন্দ্রর লেখা। তার মধ্যে চারটিই লতাজীর কণ্ঠে। “অজীব দাস্তাঁ হ্যায় ইয়ে”-র মতো অসামান্য কাব্যরসের ব্যবহার মূল ধারার হিন্দি ছবির গানে খুব কমই দেখা গেছে।
এ আলোর সাথে সাথে, প্রদীপের থেকে
কেন ধোঁয়া উঠে আসে
স্বপ্নই দেখি,
যতবার ঘুম ভেঙে স্বপ্নের থেকে উঠি জেগে,
বড় আশ্চর্য এ কথকতা…
মুকেশের কণ্ঠে, রাজ কাপুরের ‘আওয়ারা’ (১৯৫১) ছবির জন্য লেখা ‘আওয়ারা হুঁ’ গানটি শুধু এ দেশেই নয়- চিন, সোভিয়েত, গ্রিস, টার্কি, মধ্যপ্রাচ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। অনূদিত হয় অসংখ্য ভাষায়। রাজ কাপুর, শৈলেন্দ্র এবং শংকর জয়কিষণের এই জুটি একের পর এক উল্লেখযোগ্য গান উপহার দিয়েছে দেশকে। শোনা যায়, মাওসেতুং-এর অন্যতম পছন্দের গান ছিল এটি (I am a vagabond)। ভৌগোলিক সীমা অতিক্রম করে, ভবঘুরের এই গান, গানের মর্মার্থ, স্পর্শ করতে পেরেছিল আপামর পৃথিবীর শ্রমিক ও প্রান্তিক মানুষকে।

শৈলেন্দ্র কেবল সুরকার শংকর-জয়কিষণের সঙ্গেই নয়, কাজ করেছেন শচীনদেব বর্মন, কিশোর কুমার, রৌশন, অনিল বিশ্বাস, রাহুলদেব বর্মন, এমনকি রবিশংকরের সঙ্গেও। এমনই একজন বাঙালি গীতিকার-সুরকার, ঘটনাচক্রে যাঁর জন্মও ১৯২৩-এ, শৈলেন্দ্রর সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন একাধিক হিন্দি ছবিতে। তিনি বাংলা সঙ্গীতের প্রাণপুরুষ সলিল চৌধুরী। পাঁচ ও ছয়ের দশকের সাদাকালো যুগে সলিল চৌধুরীর লেখা ও সুর দেওয়া বাংলা গান ব্যবহৃত হচ্ছিল হিন্দি ছবিতেও। হিন্দি ভাষায় গানগুলি লিখছিলেন শৈলেন্দ্র, হসরত জয়পুরী, মজরু সুলতানপুরী, কাইফি আজমি, সাহির লুধিয়ানভি, পরবর্তীতে গুলজার ও আরও অনেকে। শৈলেন্দ্রর কথায় ও সলিলের সুরে এমন কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হিন্দি ছবির নাম- দো বিঘা জমিন (১৯৫৩), জাগতে রহো (১৯৫৬), মধুমতী (১৯৫৮), উসনে কহা থা (১৯৬০), পরখ (১৯৬০)। এই প্রত্যেকটি ছবিতেই গান গেয়েছেন লতা মঙ্গেশকর।

সলিল চৌধুরীর প্রথম সঙ্গীত পরিচালনার কাজ ‘দো বিঘা জমিন’ (১৯৫৩) শুরুই হয়েছিল শৈলেন্দ্র এবং লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে। এই জুটি অক্ষুণ্ণ থেকেছে শৈলেন্দ্রর মৃত্যু পর্যন্ত। মধুমতী ছবির গান তৈরির সময়ে দুই গীতিকার একসঙ্গে হেঁটেছেন খান্ডালা পাহাড়ের পথে পথে। মানুষের মুখে মুখে ফেরে লতাজীর গাওয়া মধুমতী ছবির গান “আজা রে পরদেশী।” সাল ১৯৫৬ — বাংলার প্রবাদপ্রতিম নাট্যব্যক্তিত্ব শম্ভু মিত্রের পরিচালনায় ‘একদিন রাত্রে‘ ছবিটি মুক্তি পেল। ছবিটির হিন্দি রূপায়ণও হল ওই বছরই। হিন্দি ছবির নাম ‘জাগতে রহো’, পরিচালক শম্ভু মিত্র ও অমিত মৈত্র, প্রযোজক রাজ কাপুর। ‘জাগতে রহো’-র জন্য শৈলেন্দ্র লেখেন পাঁচটি গান এবং লতা মঙ্গেশকরের গলায় ছিল একটিই- জাগো মোহন প্যারে (বাংলা: জাগো মোহন প্রীতম)। ভৈরব রাগাশ্রয়ী এই গান এতটাই বহুশ্রুত যে অধিক পরিচিতির প্রয়োজন পড়ে না।

অর্থাৎ বাংলায় কথা ও সুর দিচ্ছেন সলিল, সেই গানের হিন্দিটি তৈরি করছেন শৈলেন্দ্র, এবং বাংলা ও হিন্দি দুটিতেই কণ্ঠ দিচ্ছেন লতা– এমন দৃষ্টান্ত একাধিক। ১৯৬০-এ মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পরখ‘ ছবিটিই দেখা যাক। ভুবনভোলানো কণ্ঠের সেই গান “ও সজনা, বরখা বাহার আয়ে”, অথবা “বনসি কিঁউ গায়ে।” মূল বাংলাগুলিতে সলিল লিখছেন “না যেও না, রজনী এখনও বাকি”, এবং “বাঁশী কেন গায়।” সলিলের গানের হিন্দি রূপান্তর আরও বহু কবি-গীতিকার করেছেন দশকের পর দশক জুড়ে। কিন্তু শৈলেন্দ্র এমন এক গীতিকার যিনি কবিতার শব্দ ও গানের বাণীকে পৃথক করতে পেরেছিলেন সফলভাবে। গুলজার তাঁকে আখ্যা দিয়েছেন ‘জনতার কবি‘ হিসেবে। এই জনতার ভাষাই কাছাকাছি এনেছিল সলিল ও শৈলেন্দ্রকে। ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির মতাদর্শ ও আইপিটিএ-এর সক্রিয় সদস্যপদ এই দুই চিন্তকের মধ্যেকার যোগসূত্র।
শৈলেন্দ্র ও সলিল- দুটি মানুষকেই কাজের পরিসরে, বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে প্রত্যাখ্যাত হতে হয়েছে একাধিকবার। মধুমতীর গান তৈরির সময়ে প্রাথমিক পর্যায়ে সঙ্গীত পরিচালক হিসাবে ডাকা হয়েছিল শচীনকর্তাকে। তখন তিনি অন্য ছবির কাজে ব্যস্ত থাকায় সলিল চৌধুরীকে বেছে নেওয়া হয়। দিলীপ কুমারের তীব্র আপত্তি ছিল এই নির্বাচনে। কেননা সলিল তখনও বলিউডের ‘ফ্লপ‘ সুরকার। শৈলেন্দ্র বলে বসেন, সলিল সুর না দিলে তিনিও কাজ করবেন না। চাপের মুখে পড়ে প্রযোজককে কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়। এবং বাকিটা ইতিহাস। শচীনদেব ‘মধুমতী’র গান শুনে সলিলকে ডেকে বলেন, এরপরেও যদি এরা তোমাকে ফ্লপ বলে, তো সোজা কলকাতা ফিরে যাবে।

শৈলেন্দ্রর প্রযোজনায় প্রথম ছবি ‘তিসরি কসম’ মুক্তি পেয়েছিল ১৯৬৬ তে। ছবিটি বক্স অফিসে সাফল্যের মুখ দেখেনি। সে সময়ে তাঁর আর্থিক সচ্ছলতা ছিল, খ্যাতি ছিল। কিন্তু কাজের পরিসরে যাঁদের সুহৃদ বলে ভেবেছিলেন, তাঁদের হাত ছেড়ে যাচ্ছিল ক্রমশ। ১৯৬৬-তে তাঁর মৃত্যুর পর, ‘তিসরি কসম’ একাধিক পুরস্কার পায়, সমালোচকদের স্বীকৃতি লাভ করে। এসবকিছু দেখার আগেই, মাত্র ৪৭ বছর বয়সে শৈলেন্দ্রর আকস্মিক মৃত্যু হয়। সলিল চলে যান ১৯৯৫-এ। আর এই একই পারিজাতের গাছে গাছে ঘুরে গান গেয়ে চলা কোকিলটিকে ভারতীয় সংগীত হারাল অতি সম্প্রতি। আক্ষরিকই যুগের অবসান। কিন্তু, তবুও মানব থেকে যায়। শৈলেন্দ্র আর সলিল, লতার কণ্ঠের মাধ্যমে যে ইতিহাস রচনা করে গেছেন, এই দেশ, এই পৃথিবী সেসব মনে রাখবে ততদিন, যতদিন ব্রহ্মাণ্ডে সঙ্গীত থাকবে, কাব্য থাকবে।
*হিন্দি গানের অনুবাদ: লেখক
*কৃতজ্ঞতা: স্ক্রোল, দ্য প্রিন্ট, বিবিসি, সংসদ টিভি, রূপা পাব্লিকেশন, শ্রীধর উপাধ্যায়, দেবোপম দাশ
*ছবি সৌজন্য: Sihouette Magazine, Bollywoodirect.medium, Cinemaazi
অবন্তিকা পাল। জন্ম ১৭ জুন ১৯৮৬, হাওড়া। কলকাতার স্থায়ী বাসিন্দা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে জে.বি.রায়. স্টেট আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ ও হসপিটাল থেকে আয়ুর্বেদ চিকিৎসাশাস্ত্রে স্নাতক। স্নাতকোত্তর স্তরে মনস্তত্ত্বের পাঠ দ্বিতীয় বর্ষে অসমাপ্ত থেকে গেছে। তবে লেখার পরিসরে সমাজবিজ্ঞান ও মানবাধিকার চর্চা অব্যাহত। কবিতার সঙ্গে নৈকট্য আশৈশব। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ২০১৩-তে। ২০১৭-এ প্রথম প্রবন্ধের বই। প্রথম সারির বাংলা দৈনিক, একাধিক জনপ্রিয় পত্রিকা ও ওয়েবম্যাগাজিনে তাঁর নিবন্ধ প্রকাশিত হয় নিয়মিতভাবে। সিএএ-বিরোধী আন্দোলনের সময়ে কবি ফৈজ আহমেদ ফৈজ-এর সর্বজনবিদিত 'হম দেখেঙ্গে' (দেখে নেবো আমরাই) কবিতাটির বাংলা অনুবাদ করে অবন্তিকা জাতীয় স্তরের সংবাদমাধ্যমেও জায়গা করে নিয়েছেন।
প্রারম্ভিক পর্যায়ে শৈলেন্দ্র ছিলেন সমাজতান্ত্রিক আদর্শে উদ্বুদ্ধ। IPTA ‘র সাথে যোগাযোগ, এরপর রাজকাপুরের সঙ্গী হয়ে পরে সলিলে অবগাহন। আদর্শ বাদী গীতিকার, না হলে তিসরী কসম ছবির মতো গান কে লিখেছে? শেষ জীবন ভীষন মানসিক কষ্ট আর হতাশায় কাটে। ওনাকে প্রনাম।