এমনও সময় আসে, যখন মুঠোফোন বাড়িতে রেখে
পিঠের ব্যাগে স্বপ্ন বোঝাই করে
যেদিকে দু’চোখ যায় চলে যেতে ইচ্ছে হয়।
আচমকাই ঝাঁপ দিতে ইচ্ছে হয় চলন্ত নৌকো থেকে
ঝপাং শব্দে চমকে গিয়ে কারা যেন বলে ওঠে-
গেল, গেল!
স্বপ্নরা বেশ সাঁতারু। স্রোতের বিপরীতে উজিয়ে গেছে তখন অনেকটা
মিষ্টি জল খেতে খেতে গুবগুব শব্দে
ওই বুঝি কলসি ভর্তি হল কানায় কানায়!
অতল বেশ হালকা-পুলকা লাগে
শান্ত, নিশ্চিন্ত এক হাত টেনে নিয়ে চলেছে কোথায় যেন…
আর অনর্থক পরিশ্রম করে স্বপ্নগুলো ভেসে উঠছে কোন্‌ আঘাটায়!

#

যে শহরে আমি নেই আর, সেখানেই বেড়ে উঠবে আমার ছেলে
ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে যাবে ওর রোজ
ট্রেন ফেল করে চলে যাবে ভুল কলেজে
ফ্রিজের খোলা পাল্লা দিয়ে সেঁদিয়ে যাবে একটা তাগড়াই টিকটিকি
দুধওলা নিয়ম করে সেঁকো বিষ মিশিয়ে দেবে দুধে-
উড়তে উড়তে তখন আমি পালাতে চাইব
আর আটকে যাব কেবলের তীব্র যানজটে।

আমার চিৎকারে মৃত সিগনাল জ্বলে উঠলে
শয়ে শয়ে হেভি লোডেড ট্রাক আমাকে পিষে মারতে ছুটে আসবে
যে শহরে আমি নেই, সেই শহরের পেটের ভেতর
আবার জন্ম নেবে রাশি রাশি ছাতার পাখি
কলহমুখর তাদের মাঝে ভাষা হারানো আমি ফিরে আসব।

#

সিঁড়ির গোপন জানলায় ছেঁড়া পর্দার মতো ঝুলতে ঝুলতে
মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে একতলার বাথরুমের ঘুলঘুলির দিকে চেয়ে থাকব।
স্নানের শব্দ উঠেছে ওখানে,
এক ঝলক হাওয়ায় ভেসে আসছে সাবানের গন্ধ আর শ্যাম্পুর বুদ্বুদ…
কতদিন যেন স্নান করা হয়নি আমার…
কতকাল যেন সাবানের ফেনায় পিছলে যাইনি…
রোঁয়া ওঠা এই টুটিফাটা শরীরে পুরু মার্বেল ঘষার ধুলো জমেছে
ঘুড়ি ওড়ানোর তীক্ষ্ণ চায়না সুতো গলায় পেঁচিয়ে-
এক সুতোর ব্যবধানে
খিলখিল করে অনর্গল হাসতে হাসতে
এক ঝলক ভয় ছুড়ে দিই নিচের ঘুলঘুলিতে।
এক্সহস্ট ফ্যানের ব্লেড স্তব্ধ!
তীব্র অ্যামোনিয়া ছেঁড়া পর্দা অতিক্রম করে চলে গেল!

তুষ্টি হুগলি জেলার শেওড়াফুলির বাসিন্দা এবং বোটানিতে স্নাতক। গদ্য ও কবিতা লেখায় সমান আগ্রহ। প্রকাশিত কবিতার বইয়ের সংখ্যা তিন - ভিজে যাওয়া গাছ, ব্ল্যাক ফরেস্ট ও এরিসেডের আয়না। গদ্যের বইয়ের নাম পদাবলি।

2 Responses

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *