ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বোধহয়। চোখ খুলতে দেখলাম আমগাছটার নীচে বেদিটার উপর বসে আছি। কতক্ষণ ঘুমিয়েছিলাম কে জানে। তবে মাথাটা এখন বেশ হাল্কা লাগছে। বিশেষ করে আগে যেরকম অসহ্য যন্ত্রনা হচ্ছিল, এখন যেন সব গায়েব। ও, আমার পরিচয়টা দেওয়া হয়নি। আমার নাম ভূতনাথ ভড়। তবে আমি দেবাদিদেব নই। শিবঠাকুরের কোনও গুণই আমার চরিত্রে নেই। আমি নিতান্ত নিরীহ গোবেচারা গোছের একজন মানুষ। 

অবিশ্যি নামের বিশেষ দরকারও নেই আমার। আসলে আমি একজন নেপথ্য লেখক বা ইংরিজিতে যাকে বলে ঘোস্ট-রাইটার। আমার কাজ অন্য বিখ্যাত লেখকের হয়ে গল্প, উপন্যাস লিখে দেওয়া। লেখাটা আমার, নামটা তাঁর। এতে টুকটাক ভালই আয় হয়- পৃষ্ঠা বাবদ প্রতি আড়াইশো শব্দে ৫০০/- টাকা। আমার মতো একা মানুষের দিব্বি চলে যায়। হ্যাঁ, আমি অকৃতদার। প্রথমে যে স্বনামে লেখার চেষ্টা করিনি তা নয়। তবে সব পত্র-পত্রিকা থেকে আমার লেখা বহুবার বাতিল হওয়ায় কেমন যেন ধারণা হল, ভূতনাথ ভড় নামে কোনও লেখক হতে পারে, এটাই কেউ মেনে নিতে পারছে না।

তখন আইডিয়াটা দিল নকুড়দা। মানে নকুড়চন্দ্র হোড়। আমার মতোই নকুড়দাও স্বনামে লেখায় অকৃতকার্য হয়ে, নেপথ্য লেখক হয়ে বেশ করে-কর্মে খাচ্ছিল। তার দেখানো পথেই আমি গত তিন বছরে বেশ খানিক লেখালেখি করে ফেলেছি। বিশেষ করে কিশোরদের জন্য ভূতের গল্প লেখায় আমার একটা বিশেষ পারদর্শিতা তৈরি হয়েছে বলা যায়।

ভালোই চলছিল। সমস্যা শুরু হল গত মাস থেকে। হঠাৎ করেই যেন আর নতুন প্লট মাথায় আসছে না। কিছু লিখতে পারছি না। নকুড়দা বলল, এটাকে নাকি রাইটার্স ব্লক বলে। আসলে কী বলুন তো? কত আর ভূতের গল্প লেখা যায়? অন্য ধারার লেখা যে লিখব, সে স্বাধীনতা কোথায়? অদ্ভুত ব্যাপার, ভূতের গল্প লিখে অভূতপূর্ব সাফল্য পাওয়ায় আমার কাছে শুধু ভূতের গল্প লেখারই ফরমায়েশ আসতে লাগল। তাই ক্রমেই আমার লেখকসত্তার ভবিষ্যৎ তমসাচ্ছন্ন হতে শুরু করল।

 

আরও পড়ুন: এককের ভূতের গল্প: নাইটো

 

এরই মধ্যে একটি পত্রিকার শারদীয়া সংখ্যার জন্য এক বিখ্যাত লেখক বায়না দিলেন, আমাকে কলকাতার কোনও একটা গোরস্থান নিয়ে একটা বড় ভূতের গল্প লিখতে হবে। দশ দিনের মধ্যে লেখা জমা দেওয়ার কথা। তবে এবার ভূতের গল্পটা ভয়ের নয়, হাসির হতে হবে। ভাবুন একবার! আবদারের শেষ নেই। এমনিতেই ভূত ব্যাপারটা, যাকে বলে ফাজ়ি লজিক, তাই ভূত নিয়ে ফাজলামি মোটেই ভালো লাগে না। কিন্তু কী আর করা। অতএব রিসার্চ করতে আমি লোয়ার সার্কুলার রোডের গোরস্থানে হাজির হয়েছি। 

ঘুরে ঘুরে দেখে ক্লান্ত হয়ে একটা গাছতলায় সমাধিবেদির উপর বসে পড়েছিলাম। রোদে ঘুরে কিনা জানি না, মাথাটা অনেকক্ষণ খুব দপদপ করছিল। গায়েও কেমন জ্বর জ্বর ভাব। একটু পরেই বুক ধড়ফড় শুরু হল। তাই জন্যেই আরও আমগাছটার তলায় বসা। বিরাট পঁচিশ একর জমির উপর গোরস্থান। কিছু আমগাছ আমফানে পড়ে গেলেও এখনও কয়েকটা অবশিষ্ট। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি, নিজেই জানি না। অবিশ্যি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম নাকি ফিট হয়ে পড়ে গেছিলাম কে জানে। তবে এখন সম্বিত ফিরতে দেখছি পুরো ফিট বোধ করছি!

তখনই চোখে পড়ল, আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু আলাপী হাসি হাসছে সিড়িঙ্গে মার্কা একটা লোক। গায়ে কালো জোব্বা মতন কী একটা, বয়সের ভারে সামান্য ঝুঁকে আছে সামনের দিকে।
– খুশ্‌ আমদী! আমাকে দেখে লোকটা বলল। আমি অবাক হয়ে উপরে আম গাছটার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম
– এই সিজনে আম?
– আরে নহি। আমি উর্দু জুবানে ওয়েলকাম্‌ বললাম।
– অ…। আমি আম ছেড়ে অমায়িক হাসি। মনে মনে ভাবি এই কবরস্থানের দেখভাল করে নিশ্চয়ই, নইলে ওর আর ওয়েলকাম্ বলার কী আছে? লোকটা বোধহয় আমার মনের কথা আন্দাজ করতে পেরেই বলল
– নহি নহি…। হামি এই গোরস্থানে থাকি না। এই পুরো খালটার সঙ্গে আমার অনেককালের সম্বন্ধ।
– খাল?
আমি খাবি খাই। এখানে খাল কোথায়?
– ইসি কারণ আপকি লিখি হুয়ি কাহানি মে ইতনা ধার নেই আজকাল।
লোকটা হিন্দি বাংলা মিশিয়ে বলে।
– ভূতকাল সম্বন্ধে লিখাপড়া না করে ভূতের কাহানি লিখলে তো ফাঁক রয়ে যাবেই, জনাব।

Priest
সিড়িঙ্গে মার্কা একটা লোক, গায়ে কালো জোব্বা মতন।

লোকটা জানল কি করে যে আমি লিখি? আমি তো ঘোস্ট-রাইটার! না আমার নাম থাকে কোথাও, না আমার ছবি ছাপা হয়। আর লোকটা কোন খালের কথা বলছে? এ তো খটখটে শুকনো লোয়ার সার্কুলার রোড!! আবার বুঝি লোকটা আমার মনের কথা বুঝে যায়।
– এই পুরা সড়কটা, করিব সাত মিল লম্বাই মে, এক জমানা মে মারহাট্টা ডিচ খাল ছিল। ইয়ে খোদা হুয়া থা বর্গি হমলা সে বচনে কে লিয়ে। আরে হামনে হি তো বর্গি সিপাহসালার ইয়ানি সেনাপতি ভাস্কর পণ্ডিতকো খতম কিয়া থা! হামার নাম আছে মুস্তফা খাঁ। আপনাদের ইতিহাসে সব কিছু লিখা আছে। লেকিন ফির একদিন হামার ভি ইন্তেকাল হয়ে গেল আউর হামি ভি ভূত হয়ে গেলাম। এর অনেক পরে তো এই খাল বুজিয়ে রাস্তা হল, নাম হল লোয়ার সার্কুলার রোড। এখন আবার নাম হয়েছে আচারিয়া জগদীশচন্দ্র বোস রোড…
লোকটা একগাল হেসে ঘোষণা করে।

ওদিকে আমি মনে মনে ভাবছি, লোকটা পাগল না পাজামা? ভুলভাল বকছে! ভূতের গল্প লিখি বলে আমার এমন অবস্থা হয়নি যে ভর দুপুরে, সূর্য যখন মধ্য গগনে তখন আমি ভূত নিয়ে হ্যালুসিনেট করব! ভূতের গল্পের একটা পরিবেশ চাই। গা ছমছমে অমাবস্যার নিশুতি রাত না হলে তেনারা বেরোন না এ তো সবাই জানে। নিজেকে চিমটি কেটে দেখতে যাই, স্বপ্ন দেখছি কিনা। নাঃ। বেশ জোরে লাগে। আরও চমকে উঠি, আমার গা-টা একেবারে কনকনে ঠান্ডা। যাকগে বাবা, জ্বরের ঘোরে ভুল দেখছি, তা নয় তাহলে। ওদিকে লোকটা অনর্গল বকে যাচ্ছে–
– আরে বাবা লিখতে গেলে আপনাকে তো জানতে হোবে। এই যে গোরস্থানের কাছেই জোড়া গির্জা আছে, বলেন তো ওটার নাম জোড়া গির্জা কেন আছে?
– কেন আবার, দুটো চার্চ আছে তাই। আমি যথেষ্ট বিরক্ত হয়ে উত্তর দিই। 
– নো, নো মাই সান! ইউ স্ট্যান্ড টু বি কারেক্টেড…! 

ঘুরে দেখি চার্চের নাম শুনে দুটো পাদ্রি গোছের লোক, এই গরমে লং কোট পরে, উল্টোদিক থেকে আবির্ভূত হয়েছে। একজন টকটকে ফর্সা, মুখে অজস্র কাটা দাগ। আর একজন আমার চেয়েও কালো। তবে বেশভূষা সাহেবি কেতায়। ওই ইংরেজ গোছের লোকটা কাটা কাটা সাধু বাংলায় বলে চলল–
– উহার শুধু দুটো চূড়া আছে। আগে এই চার্চটা লেবুতলায় মানে যাহাকে টোমরা সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার বলো, উখানে ছিল। অ্যান্ড দেয়ার ইট ডিডনট হ্যাভ এনি টাওয়ার। লোকে উহাকে ন্যাড়া গির্জা বলিটো। হোয়েন রিবিল্ট হিয়ার, টু টাওয়ার্স ওয়ার মেড। বাট দেয়ার ইজ ওনলি ওয়ান চার্চ মাই সান, নট টু।
– আপনি?
আমি জ্ঞানের চোটে এবং অকারণ নাক গলানোতে বিরক্ত হয়ে উষ্মা প্রকাশ করি।

South-Park-Street-Cemetery-1
ভূতের গল্পের একটা পরিবেশ চাই

সাহেব বললেন, 
– দ্য নেম ইজ ম্যাকনাটেন, স্যার উইলিয়াম হে ম্যাকনাটেন। ইন দ্য ইয়ার ১৮৪১ আই ওয়জ় কিল্ড বাই ওয়ান অফ মুস্তফা খাঁ’স ব্রাদারহুড আফগান রেবেলস, মাই ফেস এন্ড বডি ওয়্যার কাট টু পিসেস।
সাহেব উল্টোদিকে দাঁড়ানো মুস্তফার দিকে নির্দেশ করে বলে। তারপর একটু দম নিয়ে আবার শুরু করে।
– দেন আফগান ইস্যু ওয়াজ নো লেস্‌ দ্যান কারেন্ট ডে টালিবান প্রবলেম। বাট দিস সেন্ট জেম্‌স চার্চ ওয়জ় বিল্ট মাচ্‌ আফটার মাই ডেথ ইন ১৮৬২।
– ইয়ার্কি হচ্ছে? ভরদুপুরে আমাকে ভূতের ভয় দেখানোর চেষ্টা?
আমি রেগে তেড়েফুঁড়ে উঠি।
– না না। আপনি শান্ত হোন।
এবার ওই কালো গোছের সাহেবি পোশাক পরা লোকটা পরিষ্কার বাংলায় বলে–
– আমার মৃত্যুর প্রায় একশো বছর পরে, টু বি প্রিসাইজ়, নাইন্টি সিক্স ইয়ার্স লেটার, কুবলার রস বলে এক নারী যে থিয়োরি দিয়ে গেছেন, তাতে বলা হয়েছে ফাইভ স্টেজেস্‌ অফ গ্রিফ বা দুঃখের পাঁচ ধাপের প্রথম ধাপ হল, ইংরিজিতে যাকে বলে- ডিনায়াল। অর্থাৎ সমস্যাকে অস্বীকার করা। এরপর যথাক্রমে রাগ, তারপর দরাদরি করে নিয়তির লেখন বদলানোর চেষ্টা, তারপর বিষণ্ণতা এবং পরিশেষে গ্রহণ বা স্বীকার করা। সো টেক ইট ইজি মাই সান।

এই পুরা সড়কটা, করিব সাত মিল লম্বাই মে, এক জমানা মে মারহাট্টা ডিচ খাল ছিল। ইয়ে খোদা হুয়া থা বর্গি হমলা সে বচনে কে লিয়ে। আরে হামনে হি তো বর্গি সিপাহসালার ইয়ানি সেনাপতি ভাস্কর পণ্ডিতকো খতম কিয়া থা! হামার নাম আছে মুস্তফা খাঁ। আপনাদের ইতিহাসে সব কিছু লিখা আছে। লেকিন ফির একদিন হামার ভি ইন্তেকাল হয়ে গেল আউর হামি ভি ভূত হয়ে গেলাম। এর অনেক পরে তো এই খাল বুজিয়ে রাস্তা হল, নাম হল লোয়ার সার্কুলার রোড। এখন আবার নাম হয়েছে আচারিয়া জগদীশচন্দ্র বোস রোড

আমি এবার পুরো ঘেঁটে গেছি। এ কি পাগলের প্রলাপ? নাকি রেডিও বা টেলিভিশন চ্যানেল থেকে আমাকে ‘বকরা’ বানানোর অপচেষ্টা? আশপাশে টিভি ক্যামেরা খোঁজার চেষ্টা করি। ওদিকে লোকটার থামার কোনও লক্ষণ নেই।
– যাই বলুন, বাংলা সাহিত্যের এই দৈন্যদশা দেখে সত্যি খুব কষ্ট হয়। হয়তো আমারই আরও যত্ন করে বাংলায় আরও কিছু লিখে রেখে যাওয়া উচিত ছিল। আসলে প্রথম জীবনে মাতৃভাষাকে নেটিভদের ভাষা হিসেবে দূরে সরিয়ে রাখা খুবই অন্যায় হয়েছিল। কিন্তু তা বলে এখনকার লেখা তো একদম রোচে না হে পথিকবর। এই যেমন আপনি ভূতের গল্প লেখেন, অথচ বাংলাতে কতরকমের ভূত আছে আপনার জানা আছে?

– এ আর এমন শক্ত কি? আমি ক্ষেপে উঠে চ্যালেঞ্জটা নিয়ে গুনতে শুরু করি।
– মামদো, গেছো, শাকচুন্নি, বেঘোভূত, ব্রহ্মদত্যি, ডাইনি, কন্ধকাটা, জলপিশাচ, রাক্ষস-খোক্কস, বেতাল, যক্ষ, জিন…
আমি হাঁফিয়ে উঠি।
– হুঁ! গত তিন বছর ধরে শুধু ভূতের গল্প লিখছি মশাই। প্রায় একশোর কাছাকাছি আমার ভূতের গল্পের ইস্তেহার আর আমাকে নিয়ে আপনারা মস্করা করছেন?
– ব্যস্‌? হয়ে গেল? লোকটা বিন্দুমাত্র বিচলিত নয়।
– আমি কিন্তু জীবৎকালে বিশেষ ভূতের ভার্স রচনা করিনি। তবু ইদানীংকালে সাহিত্যের জন্য আমাদের স্পুকবুকে কিছু নোট নিয়ে রেখেছি। আচ্ছা বলুন তো– দামোরি কি? বেশোভূত, অতসিভূত, কানাভূলো, প্রাপ্তি, শিকল-বুড়ি, বোবা, গুদ্রবঙ্গা, ধানকুদ্রা– এদের কারুর নাম কি আপনি শুনেছেন? এরা কিন্তু সবাই বাংলা সংস্কৃতির ভূত। সুতরাং… খালি লিখলে চলবে? পড়তে হবে, জানতে হবে। তবেই না ভালো সাহিত্য হবে! নইলে তো বিস্তর ফাঁক। 

Tomb_of_Michael_Madhusudhan_Dutta
মাইকেলের সমাধির সামনে আমার মতন দেখতে একটা লোক পড়ে আছে

– মিঃ মাইকেল ডাট, ইউ আর মেকিং আওয়ার নিউ গেস্ট আনকমফর্টেবল।
ইংরেজটা বলে ওঠে এবার।
– চিয়ার আপ মাই ডিয়ার ভূটনাথ, উই হ্যাভ প্ল্যান্ড আ নাইস ওয়েলকাম ফর ইয়ু…
– কী ছ্যাবলামো হচ্ছে অ্যাঁ?
আমি এবার ভয়ানক চটে যাই।
– নাঃ। আপনি সবে সেকেন্ড স্টেজে এলেন দেখছি। ভাই মুস্তফা, ইহাকে লইয়া যাও দেখাইতে– তাহা হইলে যদি বিশ্বাস হয়।
মুস্তফার দিকে ইঙ্গিত করে মাইকেল ডাট্‌ নামক ব্যাক্তিটি। 

অতঃপর যা ঘটল, তার জন্য আমি বিন্দুমাত্র তৈরি ছিলাম না। আমাকে নিয়ে যাওয়া হল মাইকেল মধুসূদন দত্তের সমাধির কাছে। সেখানে গিয়ে চমকে উঠে দেখি, বিলকুল আমার মতন দেখতে একটা লোক সমাধির কাছে পড়ে আছে। মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা আর রক্ত বেরিয়ে শুকিয়ে গেছে। দেহে প্রাণ নেই। আশেপাশে কিছু লোক স্ট্রেচার এনে দেহটা শববাহী শকটে তুলতে ব্যস্ত। বলাবলি করছে – হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক মনে হয়। আমি প্রতিবাদ করে উঠি সজোরে… না, না! এ হতে পারে না! আমার এখনও অনেক লেখা বাকি আছে। আমাকে আর একটু সময় দিন… প্লিজ। 

একটি পত্রিকার শারদীয়া সংখ্যার জন্য এক বিখ্যাত লেখক বায়না দিলেন, আমাকে কলকাতার কোনও একটা গোরস্থান নিয়ে একটা বড় ভূতের গল্প লিখতে হবে। দশ দিনের মধ্যে লেখা জমা দেওয়ার কথা। তবে এবার ভূতের গল্পটা ভয়ের নয়, হাসির হতে হবে। ভাবুন একবার! আবদারের শেষ নেই। এমনিতেই ভূত ব্যাপারটা, যাকে বলে ফাজ়ি লজিক, তাই ভূত নিয়ে ফাজলামি মোটেই ভালো লাগে না। 

মাইকেল সাহেব আমার কাঁধে হাত রেখে শান্তস্বরে মুচকি হেসে বললেন,
– যাক। থার্ড অ্যান্ড ফোর্থ স্টেজ। চিন্তা কোরো না বৎসে। আমাদের জগতে তুমি স্বনামে সাহিত্য রচনা করতে পারবে। এখানে তোমাকে ঘোস্ট-রাইটার হতে হবে না। বরং তোমার ওই দুনিয়া থেকে এই দুনিয়ায় উত্তরণের এক্সপিরিয়েন্সটা লিখে জমা করে ফেল। আমিই সম্পাদক কিনা, তোমার নামেই নাহয় প্রকাশ করে দেব!

ছবি সৌজন্য: Pixabay, Wikimedia Commons

Kuhoki alias Souvik Maiti

‘কুহকী’ তাঁর ছদ্মনাম। এ নামেই প্রকাশিত হয়েছে “একলব্য অতঃপর ও অন্যান্য গল্প" বইটি, যা পাঠকের ভালোবাসা পেয়েছে। কুহকীর জন্ম ১৯৭৫-এ কলকাতায়। আইআইটি থেকে ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার, বর্তমানে একটি বহুজাতিক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত। বিজনেস ম্যানেজমেন্ট পেশা হলেও দেশবিদেশের সিনেমার বিশেষ অনুরাগী। নেশা, সাহিত্যচর্চা ও ছবি আঁকা।

7 Responses

  1. লীলা মজুমদার বলতেন ভূত মানে নেই হয়ে আছে। কুহকীর ‘উত্তরণ ‘ সেকথাই মনে করিয়ে দিল। যদিও বারবার ভুত কথাটি এসেছে কিন্তু এই গল্প সে অড়ে ভূতের গল্প নয়। ম্যাজিক রিয়েলিজম। ঝর্ঝরে গদ্যভাষা, টানটান ঘটনা ও মেদহীন সংলাপ। মনগ্রাহী ও চিত্তাকর্ষক। এই লেখকের আরও লেখা পড়তে চাই

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *