আগের পর্বের লিংক: খলিল জিব্রানের দ্য প্রফেট-এর অনুবাদ: [কথামুখ] [প্রেম] [বিবাহ] [সন্ততি] [দান ও দাক্ষিণ্য] [পান-ভোজন] [কাজ-কারবার] [দুঃখ ও সুখ]
ঘর-বসত
এই নগরের চৌহদ্দির মধ্যে বাড়ি বানাবার আগে, বিজনে নিজের কল্পনার কুঞ্জ গড়ে তোল।
তোমারই মধ্যে, তোমার গোধূলিতে যেমন আছে ঘরে ফিরতে উৎসুক একজন, তেমনই আছে এক ভ্রামকও, যে সবসময় দূরতম এবং একা।
এই ঘর বসত আসলে তোমারই দেহের এক বৃহত্তর রূপ।
সূর্যের আলোয় তার বৃদ্ধি, স্থির অন্ধকারে তার ঘুম; এবং যা একেবারেই স্বপ্নহীন নয়। তোমার বাড়িটাও কি স্বপ্ন দেখে না? আর তার সেই স্বপ্নে সেটিও কি শহর ছেড়ে চলে যায় না ওই উপবন বা পর্বতচূড়ায়?
যদি পারতাম, তোমাদের ওই বাড়িগুলিকে বীজ বপনকারীর মতো নিজের মুঠোয় একত্র করে, আবার তা ছড়িয়ে দিতে অরণ্য এবং তৃণক্ষেত্রে।
যখন সমস্ত উপত্যকাটাই হবে তোমার সরণি, এবং ওই সবুজ পথগুলিও হবে যত কুঞ্জপথ, যেখানে দ্রাক্ষাবন জুড়ে হয়তো একে অপরকে খুঁজে বেড়াবে, আর পোশাকে সুগন্ধি মেখে ঘরে ফিরবে তোমরা।
কিন্তু এসব কিছুই তো ঘটেনি এখনও।
পূর্বপুরুষেরা তোমাদেরকেও পরস্পরের নিকটবর্তী করছেন তাঁদের আশঙ্কায়। কিন্তু এই আশঙ্কা আরও কিছুকাল তাঁদেরও বহন করতে হবে। কারণ আরও কিছুকাল, এই নগর প্রাচীর বিচ্ছিন্ন করে রাখবে মাঠ থেকে তোমাদের ওই চুল্লির উঠোনগুলিকে।
ওহে অরফালেসের মানুষ, আমাকে বলতো, যে তোমাদের ওই ঘর বসতে কী এমন আছে? কী এমন আগলে রাখছ, খিল আঁটা ওই দরজাগুলি দিয়ে?
পুরোপুরি উদ্দীপিত হয়ে শান্তিতে আছ তো, যা উন্মুক্ত করছে তোমাদের সক্ষমতা?
স্মরণার্থে পাওয়া, সেই অস্পষ্ট আভাসিত খিলানগুলি তোমাদের আছে তো, যা মনের উচ্চতা মাপায়?
আছে তো সেই সৌন্দর্য, যা হৃদয়কে রওনা করিয়ে দেবে, কাঠ বা পাথর দিয়ে বানানো মনোহারি জিনিস সকল পার করে, পবিত্র ওই পাহাড়টির দিকে?
বলতো আমাকে, তোমাদের বাড়িতে কি এগুলি আছে?
নাকি আছে শুধুই স্বাচ্ছন্দ্য আর স্বাচ্ছন্দ্যের তাড়না, যা নিঃসাড়ে ঘরে ঢুকে প্রথমে অতিথি, ক্রমে গৃহস্থ, আর শেষে প্রভু হয়ে দাঁড়ায়?
এবং চিরকাল, এই তাড়নাই হয়ে দাঁড়ায় তোমাদের দমনকারী ও নিয়ন্ত্রক, আর তোমার বৃহত্তর আকাঙ্ক্ষাগুলিকেও বঁড়শি আর চাবুকের শাসনে তা পুতুল বানিয়েছে।
তার হাতগুলি তাই স্পর্শে রোমের মতো মোলায়েম হলেও হৃদয়টি কিন্তু লোহার মতোই দুর্ভেদ্য আর কঠিন।
এই জন্যেই তোমাকে সে ঘুম পাড়ায়, যাতে তোমারই বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে সে তোমাকে বিদ্রূপ করতে পারে , তোমার রক্তমাংসের শরীরী মর্যাদার।
উপহাস করে তোমার সুষম বোধগুলির এবং পলকা ধমনীর মতো তাকে শুইয়ে রাখে কাঁটা গাছের বীজে।
তোমার আত্মার উন্মাদনাকে, সত্যিই তো হত্যা করে চলে এই আরামের তৃষ্ণা, আর তারপরই দেঁতো হাসি হেসে সে হেঁটে যায় তোমার শবযাত্রায়।
এই যে তোমরা স্থান-জাত এবং চূড়ান্ত বিশ্রামেও অশান্ত, তোমরা তাই না পড় ফাঁদে, না হয়ে ওঠ পোষমানা।
নোঙর না হয়ে তোমার বাড়িটি যেন এক দিকদর্শী মাস্তুল হয়ে ওঠে ।
ক্ষতের প্রলেপের মতো এক ঝকমকে ঝিল্লি না হয়ে , এটি যেন হয়ে ওঠে তোমার চোখের পল্লব যা সুরক্ষা দেবে তোমাকে।
দরজা দিয়ে ঢোকবার সময়, ডানাজোড়া মুড়ে যেন ঢুকো না; দীর্ঘতায় ছাদে মাথা ঠেকে যাবে ভেবে শিরও ঝুঁকিও না যেন; আর ঘরের দেওয়ালগুলি চিড় ধরে ভেঙে পড়বার ভয়ে দমবন্ধ করেও থেক না তুমি।
সেখানেও তুমি বসবাস করবে না, যেখানে ওই মৃত মানুষেরা জীবিতদের জন্যে সৌধ বানিয়েছে।
যতই বিশাল আর জাঁকজমকপূর্ণ হোক, জানবে যে তোমার বসত কখনই না পারবে তোমার রহস্যময় সত্তাকে ধরে রাখতে। আশ্রয় দিতে পারবে না তোমার এই কাতরতাকে।
কারণ, তোমার মধ্যে যা অসীম, তা কিন্তু ধরা আছে ওই আকাশ-আবাসে, যার দরজাটি হল ভোরের কুয়াশা আর জানলাগুলি তার গান ও রাতের নৈঃশব্দ্য।
আড্ডা আর একা থাকা,দুটোই খুব ভাল লাগে।
লিখতে লিখতে শেখা আর ভাবতে ভাবতেই খেই হারানো।ভালোবাসি পদ্য গান আর পিছুটান।
ও হ্যাঁ আর মনের মতো সাজ,অবশ্যই খোঁপায় একটা সতেজ ফুল।