জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি থেকে একের পর এক প্রতিভার বিস্ফোরণ নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। তারই মধ্যে রবীন্দ্রনাথকে আলোচনার বাইরে রেখে, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরকে এক বিস্ময়কর প্রতিভাবান হিসেবে আলাদা করাই যায়, যাঁকে বহুমুখী প্রতিভা বললেও যেন ঠিক বলা হল না মনে হয়। জ্যোতিরিন্দ্রনাথের বহুবিধ মানসিকতা তাঁকে নিয়ে গেছে একের পর এক প্রকাশের ক্ষেত্রে। সেখানে, ধরনের যা রকমফের ঘটেছে তা সত্যিই অবাক করার মতো। শুধু নিজেকে নিয়েই যে তিনি সর্বদা ব্যস্ত ছিলেন এমন নয়। অন্যের প্রতিভাকে মেলে ধরার ব্যাপারেও স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন, যার সর্বোজ্জ্বল উদাহরণ তাঁর বারো বছরের ছোট ভাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবির প্রতিভা-সাম্রাজ্যকে প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথই, যা বহু আলোচিত।
রবীন্দ্রনাথ নিজেও বারবার বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখ করেছেন, তাঁর সৃষ্টিজগতে এগিয়ে চলার সূচনাপর্বে ‘নতুনদা’ বা ‘জ্যেতিদাদা’-র অনুপ্রেরণা ও শিক্ষাদানের কথা। যদিও দু’জনের সম্পর্ক শেষজীবনে গিয়ে বেশ খানিকটা ঘা খেয়েছিল, তবু দু’জনেই যে দু’জনের অন্তরের বাইরে কোনওদিন যাননি, তারও নিদর্শন আছে। যেমন, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ যখন জীবনের শেষদিকে রাঁচির মোরাদাবাদি পাহাড়ের ওপর ‘শান্তিধাম’ নির্মাণ করে বাস করছেন, তখন রাঁচি শহরে চাকুরিরত বসন্তকুমার চট্টোপাধ্যায় তাঁর কাছে গিয়ে তাঁরই মুখ থেকে শুনে এক স্মৃতিকথাধর্মী গ্রন্থ রচনা করেন, যা ‘জ্যোতিরিন্দ্রনাথের জীবনস্মৃতি’ নামে প্রকাশিত হয় ১৯২০ সালে। বসন্তবাবু এ কাজটি করে বাঙালির যে কী অভাবনীয় উপকার করেছিলেন, তা বলার অতীত। এই বইয়েই জ্যোতিরিন্দ্রনাথের মুখ থেকে শোনা যায়, তার লেখা ‘সরোজিনী’ নাটকে ব্যবহৃত ‘জ্বল জ্বল চিতা দ্বিগুণ দ্বিগুণ/ পরাণ সঁপিবে বিধবাবালা…’ গানটি রবীন্দ্রনাথের লেখা। নাটকটি লেখা হয় ১৮৭৫ সালে। রবীন্দ্রনাথের তখন চোদ্দো বছর বয়স। সম্ভবত এটিই তাঁর লেখা প্রথম গান। সুরটি অবশ্য নাট্যকারেরই। নাটকে রাজস্থানী-রমণীর চরিত্রে অভিনেত্রীদের নৃত্যসহযোগে গাওয়া গানটির সঙ্গে ‘চিতারোহণ’-এর দৃশ্যটি আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল। প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন বিনোদিনী দাসী। গানের প্রধান কণ্ঠ ছিল তাঁরই। এতদিন সবাই জানতেন, এমনকী অনেকগুলি সঙ্গীত-সংকলনেও ছিল, গানটি জ্যোতিরিন্দ্রনাথের রচনা। শেষ বয়সে তিনি অকপটে আসল রচনাকারের নামটি না বললে, কেউ একথা জানতেই পারতেন না।

আবার এরই পাশাপাশি বলা যায়, রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের যোগাযোগ থাকলেও সম্পর্ক যখন আগের মতো মসৃণ নয়, তখনও নিজের গানের শুদ্ধতার ব্যাপারে চরম অস্বস্তির কথা বলার জন্য তাঁর নতুনদাকেই মনে পড়ছে রবীন্দ্রনাথের। ১৯১৪ সালের ৩ জুন রামগড় থেকে একটি চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ লিখছেন—
‘ভাই জ্যোতিদাদা,
…গান অনেক তৈরি হয়েছে। এখনো থামছে না…প্রায় রোজই একটা না একটা চলছে। আমার মুস্কিল এই যে সুর দিয়ে আমি সুর ভুলে যাই। দিনু [দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর] থাকলে তাকে শিখিয়ে দিয়ে বেশ নিশ্চিন্ত মনে ভুলতে পারি। নিজে যদি স্বরলিপি করতে পারতুম কথাই ছিল না। দিনু মাঝে মাঝে করে কিন্তু আমার বিশ্বাস সেগুলো বিশুদ্ধ হয় না। সুরেন বাঁড়ুজ্যের [বিষ্ণুপুর ঘরানার সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি রবীন্দ্রনাথের অনেক গানের স্বরলিপি করেছিলেন] সঙ্গে দেখাই হয় না… কাজেই আমার খাতা এবং দিনুর পেটেই সমস্ত জমা হচ্ছে। এবার বিবি [ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণী] সেটা কতক লিখে নিয়েছে।…
এ তো স্বাভাবিক। রবীন্দ্রনাথ কী করে ভুলবেন তার সঙ্গীত-সৃষ্টির সূচনাপর্বের প্রধান অনুপ্রেরণাদাতা ও প্রত্যক্ষ সাহায্যকারীকে? বিশেষ করে, শুদ্ধ স্বরলিপির বিষয়ে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের কথা, এই অস্বস্তির মুহূর্তে তাঁর মনে আসাই স্বাভাবিক। কারণ, ‘আকার-মাত্রিক-স্বরলিপি’র (যে স্বরলিপি-পদ্ধতি আজও চলছে) আবিষ্কারক জ্যোতিরিন্দ্রনাথ যখন ১৮৯৭ সালে এই পদ্ধতিতে করা ১৬৮টি গানের স্বরলিপি সংকলন— ‘স্বরলিপি-গীতিমালা’ চারখণ্ডে প্রকাশ করলেন ‘ডোয়ার্কিন অ্যান্ড সন্স’ থেকে, সেখানে দেখা গেল, সর্বাধিক ১০৭টি গান স্থান পেয়েছে রবীন্দ্রনাথের (বাকিগুলি ছিল অক্ষয় চৌধুরী, দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্বর্ণকুমারী দেবী ও জ্যোতিরিন্দ্রনাথের নিজের লেখা)। প্রসঙ্গত, এই গ্রন্থে উল্লিখিত রবীন্দ্রনাথের গানগুলির মধ্যে অন্তত কুড়িটির ক্ষেত্রে সুরকার হিসেবে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের নাম দেখা গেলেও, পরবর্তীকালে বিশ্বভারতী প্রকাশিত বিভিন্ন রবীন্দ্রসঙ্গীত-সংকলনে তাঁর নামটি বাদ পড়ে যায়। কারণ অজ্ঞাত। যদিও সে বিষয়ে কিছু আলোচনা করাই যায়, কিন্তু এ নিবন্ধের উদ্দেশ্য তা নয়।
তবে একটা কথা সত্যি, রবীন্দ্র-জ্যোতিরিন্দ্র সম্পর্ক রঙবেরঙের স্তরে বিভক্ত, যার মধ্যে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের স্ত্রী কাদম্বরী দেবীর (রবীন্দ্রনাথের ‘নতুন বৌঠান’) অন্যতম ভূমিকা রয়েছে। এ নিয়ে পণ্ডিতমহলে বিস্তর আলোচনা ও লেখালেখি হয়েছে। তবে আজকাল কিছু কিছু লেখক এই সম্পর্ক নিয়ে যে মুখরোচক মনগড়া গল্প ফেঁদে সস্তায় নাম কিনছেন, সেসবের সঙ্গে গভীরতা বা চিন্তাশীলতার কোনও সম্পর্ক নেই।
মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পঞ্চম পুত্র (সন্তান হিসেবে সপ্তম) জ্যোতিরিন্দ্রনাথ জন্মেছিলেন ১৮৪৯-এর ৪ মে (২২ বৈশাখ, ১২৫৬ বঙ্গাব্দ)। প্রথাগত পড়াশুনা বলতে গুরুমশাইয়ের পাঠশালা, সেন্ট পলস স্কুল, মন্টেগু’স অ্যাকাডেমি, হিন্দু স্কুল হয়ে কেশব সেনের ক্যালকাটা কলেজ থেকে এন্ট্রান্স পাশ। এরপর প্রেসিডেন্সি কলেজে অল্প কিছুদিন পড়াশুনা করে আনুষ্ঠানিক ছাত্ৰজীবনে ইতি। আসলে, ঠাকুরবাড়ির এই সন্তানটি মেধা ও সৃষ্টিশীলতার এত প্রাচুর্য নিয়ে জন্মেছিলেন যে, প্রথাগত লেখাপড়া সেখানে গৌণ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর একটা মিল চোখে পড়ে। মেজদা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর জ্যোতিরিন্দ্রনাথকে খুবই অনুপ্রাণিত করেছিলেন। মূলত তাঁরই প্রভাবে রক্ষণশীলতা ভেঙে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ।

১৮৬৮ সালে কাদম্বরী দেবীর সঙ্গে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের বিয়ে হয়। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি থেকে স্ত্রীকে নিয়ে দু’জনে দু’টি ঘোড়ায় চেপে ময়দানে হাওয়া খেতে যেতেন প্রতিদিন বিকেলে, যা বাঙালি পরিবারে তখন চিন্তারও অতীত। অপেশাদার থিয়েটারের যুগ থেকে পেশাদার থিয়েটারের আদিকাল অবধি, একটা পর্যায়ে নাট্যকার-অভিনেতা-প্রযোজক-পরিচালক হিসেবে জ্যোতিরিন্দ্রনাথকে আমরা পাই। নিজের বাড়িতে তৈরি করেছিলেন ‘জোড়াসাঁকো নাট্যশালা’। ইংরেজি তো বটেই, ফরাসি, সংস্কৃত, মারাঠি ভাষায় অত্যন্ত দক্ষ বলে এইসব ভাষা থেকে অনেক নাটক, কাব্য, গদ্য বাংলায় অনুবাদ করেছেন। তার বেশকিছু বই হিসেবেও প্রকাশিত হয়েছে। ‘ভারতী’, ‘বীণাবাদিনী’, ‘সঙ্গীত প্রকাশিকা’ ইত্যাদি পত্রিকা সম্পাদনায় মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন।
সঙ্গীতব্যক্তিত্ব হিসেবে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের কথা নতুন করে বলবার দরকার পড়ে না। অজস্র গান লিখেছেন, সুর দিয়েছেন যেমন নিজের গানে তেমনি অন্য গানেও, যার মধ্যে রবীন্দ্রনাথের গান সবচেয়ে বেশি। নাটকের জন্যেও গান লিখেছেন অনেক। রবীন্দ্রনাথের ‘বাল্মীকি-প্রতিভা’-র সমগ্র সুর-কাঠামোটি তো জ্যোতিরিন্দ্রনাথেরই নির্মাণ, একথা তিনি নিজেই বসন্তকুমার চট্টোপাধ্যায়কে বলেছেন। সঙ্গীতস্রষ্টা রবীন্দ্রনাথের প্রাথমিক চালিকাশক্তি যে ছিলেন তাঁর নতুনদা, একথা ‘জীবনস্মৃতি’-সহ অনেক জায়গায় উল্লেখ করেছেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথই। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ পিয়ানো, এস্রাজ, টেবিল হারমোনিয়াম-সহ বাজাতে পারতেন একাধিক বাদ্যযন্ত্র।

আর শিল্পী হিসেবে তো তার মুন্সিয়ানা ছিল আন্তর্জাতিক মানের। সহস্রাধিক ছবি এঁকেছেন। স্কেচ করায় জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ছিলেন সিদ্ধহস্ত। মানুষের মুখের অসংখ্য স্কেচ করেছিলেন তিনি। শিলাইদহে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা হয় লালন ফকিরের। তাঁর একটি ছবি এঁকেছিলেন তিনি। এটিই একমাত্র প্রামাণ্য দলিল, যেখান থেকে আমরা ধারণা করতে পারি, লালন সাঁই দেখতে কেমন ছিলেন। ১৯১১-১২ সালে রবীন্দ্রনাথ যখন ইংল্যান্ডে, তখন তাঁর কাছে থাকা জ্যোতিরিনাথের স্কেচের একটি খাতা, প্রখ্যাত চিত্রকলা বিশেষজ্ঞ উইলিয়াম রদেনস্টাইনকে তিনি দেখান। স্কেচগুলি দেখে মুগ্ধ হয়ে রদেনস্টাইন রবীন্দ্রনাথকে বলেন, ‘…তোমার দাদা তোমাদের দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ চিত্রী। আমাদের দেশে প্রথম শ্রেণীর ড্রয়িং যাঁরা করেন, তাঁদের সঙ্গেই ওঁর তুলনা হতে পারে।’ পরে রদেনস্টাইনের উদ্যোগে ও তাঁর লেখা ভূমিকাসহ বাছাই করা পঁচিশটি স্কেচ নিয়ে ‘Twenty-five Collotypes from the Original Drawings by Jyotirindranath Tagore’ নামে একটি গ্রন্থ ১৯১৪ সালে প্রকাশ করেন লন্ডনের হ্যামারস্মিথ প্রকাশনা সংস্থা।
এরপর আসে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের স্বদেশচেতনার কথা। বিভিন্ন সময়ে তাঁর একাধিক কর্মকাণ্ড থেকে প্রকাশ পায় দেশের প্রতি ভালোবাসা। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য, জোড়াসাঁকো নাট্যশালা, হিন্দুমেলা, সঞ্জীবনী সভা, সারস্বত সমাজ, ভারতীয় সঙ্গীত সমাজ, দেশাত্মবোধক নাটক-গান-প্রহসন রচনা এবং অবশ্যই স্বদেশী জাহাজ কোম্পানির ব্যবসা। এবার শেষের প্রসঙ্গ ধরেই বিস্তারিত আলোচনায় আসব। অর্থাৎ, স্বদেশী চেতনাবিশিষ্ট কর্মদ্যোগী জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যবসায়িক সত্তার কথা, যা তুলনামূলকভাবে কম আলোচিত বিষয়। তাছাড়াও বিজ্ঞান জগতের কিছু অদ্ভুত বিষয়ের প্রতি জ্যোতিরিন্দ্রনাথের আগ্রহের কথাও উল্লেখ্য।
১৮৭৭ সাল। ‘সঞ্জীবনী সভা’ ও ‘ভারতী’ পত্রিকা (সম্পাদনা ও প্রকাশ) নিয়ে খুবই ব্যস্ত জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর। মূলত, ‘সঞ্জীবনী সভা’-কে কেন্দ্র করে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের মধ্যে স্বাদেশিকতার ভাবনা তীব্র হয়। ‘ভারতী’-তে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রবন্ধ নিয়ে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ তাঁর ভগ্নিপতি (স্বর্ণকুমারী দেবীর স্বামী) জানকীনাথ ঘোষালের রামবাগানের বাড়িতে নিয়মিত আলোচনায় বসতেন কয়েকজনের সঙ্গে। জানকীনাথ ছিলেন কংগ্রেসকর্মী। তাঁর সংস্পর্শে এবং হিন্দুমেলা ও সঞ্জীবনী সভা ইত্যাদির সঙ্গে পরপর প্রত্যক্ষ সংযোগে এক স্বদেশী ভাবনা থেকে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের মনে ইচ্ছে জাগে, ইংরেজদের দেখিয়ে দেওয়া দরকার যে, বাঙালিও ব্যবসা করতে পারে। এ অবশ্য নতুন কিছু নয়, পরাধীন ভারতে বহু শিক্ষাবিদ, শিল্পী-সাহিত্যিক স্বদেশচেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ব্যবসার মাধ্যমে স্বাবলম্বী হবার বার্তা দিয়েছিলেন। স্বোপার্জিত অর্থ একটা জাতির মেরুদণ্ড তৈরির অন্যতম প্রধান উপাদান, এই আত্মবিশ্বাসই ছিল এসব উদ্যোগের মূল লক্ষ্য। পরবর্তীকালে, আমরা দেখলাম বাংলার চিন্তাশীল মহল থেকে সাধারণ বাঙালি পর্যন্ত, ব্যবসা করা থেকে দূরে চলে গেলেন। একের পর এক ভারতবিখ্যাত বাঙালি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ধুঁকতে ধুঁকতে অবলুপ্ত হয়ে গেল। সে এক ভিন্ন প্রসঙ্গ।

যাইহোক, ১৮৭৭ সালে জানকীনাথ ঘোষালের সঙ্গে যুগ্মভাবে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ পাটের ব্যবসা শুরু করলেন। কলকাতার হাটখোলায় খোলা হল পাটের আড়ত। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ অবশ্য বেশিদিন যুক্ত ছিলেন না এই ব্যবসায়। পাটের বাজার মন্দা হতেই তিনি আড়ত বন্ধ করে দিলেন। কিন্তু লাভ তিনি ভালোই করেছিলেন। এর বেশি এই ব্যবসার বিষয়ে খুব একটা জানা যায় না। পাটের ব্যবসায় সাফল্যের ফলে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের উৎসাহ আরও বৃদ্ধি পেল। তার নজর গেল নীলের ব্যবসার দিকে। এর পেছনে কারণ ছিল। সময়টা ১৮৭৮। জ্যোতিরিন্দ্রনাথের বয়স ২৯ বছর। তখন তিনি শিলাইদহে। পাবনা-কুষ্টিয়া অঞ্চলে জমিদারি দেখাশোনা করতেন। এই সময় রবীন্দ্রনাথও ছিলেন তাঁর সঙ্গে। শিলাইদহ ও তার আশেপাশে একসময় অনেক নীলকর সাহেব থাকতেন। ফলে ছিল বেশ কিছু নীলকুঠি। প্রসঙ্গত, এর অনেক আগেই ব্রিটিশরা নীলের ব্যবসা বন্ধ করেছে। শিলাইদহের নীলকুঠিটাই তখন জ্যোতিরিন্দ্রনাথের কাছারিবাড়ি। এর পাশেই পরিত্যক্ত অবস্থায় তখনও ভ্যাট হিসেবে পড়ে ছিল এককালে নীলের রস জ্বাল দেবার কতগুলো পাত্র। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ সেগুলি সারিয়ে একই কাজে লাগালেন। এমনকী ওই ভ্যাটে জল যোগানোর জন্যে পদ্মা থেকে কাছারিবাড়ি (যা তখন নতুন নীলকুঠি) অবধি একটা খাল পর্যন্ত কাটিয়ে ফেললেন। যে কাজেই তিনি হাত দিতেন, তাকে ঘিরে তাঁর উন্মাদনা যে চরমে উঠত, এ তারই এক প্রমাণ।
নীলের ব্যবসা ভালোই চলতে লাগল। শুধু তাই নয়, নীল-ব্যবসার ইতিহাস, নীলের প্রস্তুতি ইত্যাদি সম্বন্ধে রীতিমতো পড়াশুনাও করেছিলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ। এর ফলস্বরূপ, ‘ভারতী’-তে ‘নীলের বাণিজ্য’ নামে একটি প্রবন্ধও লিখে ফেললেন। এ সম্বন্ধে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ বলছেন—
‘তখন বুঝিয়াছিলাম চাষার ভাবনা কত! কখনও জল এবং কখনও রৌদ্রের জন্য যে কি আকুলভাবে আমি প্রতীক্ষা করিতাম তাহা বর্ণনাতীত— কিন্তু এটা কবির দৃষ্টিতে দেখা নয়। তখন ঈপ্সিত সময়ে মেঘ আসিলে মনে হইত একজন যেন প্রাণের বন্ধু আসিয়াছে; বন্ধুকে দেখার মতই আনন্দ পাইতাম। এ আনন্দে কাব্যরসের লেশমাত্র ছিল না। এইরূপে চার পাঁচ বৎসরেই আমার নীলের চাষে খুব উন্নতি হইল।…’
অথচ কয়েকদিনের মধ্যেই ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হল তাঁকে। কারণ বাজার হঠাৎ মন্দা হয়ে গিয়েছিল। জার্মানরা তখন রাসায়নিক পদ্ধতিতে নীল তৈরি করতে আরম্ভ করেছে। এ সম্বন্ধে বিস্তারিতভাবে লেখা বেরলো ‘নেচার’ পত্রিকায়। ভারতে ঢুকতে লাগলো এই রাসায়নিক নীল, যার দামও কম। অতএব, জৈবিক নীলের বাণিজ্য কীভাবেই বা চলবে? তবে, এই ৪/৫ বছরের ব্যবসায় ভালোই লাভের মুখ দেখেছিলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ। স্বদেশপ্রেমী হয়েও তাঁর ‘নীলের বাণিজ্য’ প্রবন্ধের শেষে কিছু কথা লেখেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ, যা নিয়ে প্রশ্ন জাগে—
‘অনেকে ক্রমাগত এই বলিয়া আক্ষেপ করেন যে, ইংরাজেরা আমাদের দেশ হইতে অজস্র ধনরত্ন লুটিয়া লইয়া যাইতেছেন, কিন্তু তাহাদের জানা উচিত যে, উদ্যোগী পুরুষকেই লক্ষ্মী আশ্রয় করেন। আমাদের লক্ষ্মী আমাদিগকে ত্যাগ করিয়া যে বিদেশীয়দিগকে আশ্রয় করিতেছেন, তাহার কারণই এই যে আমরা অযোগ্য, আমাদের নিজের দোষেই আমরা তাঁহার প্রসাদ হইতে বঞ্চিত হইয়াছি।’
সামগ্রিকভাবে কথাগুলি যুক্তিপূর্ণ হলেও, নীলের ব্যবসাকে কেন্দ্র করে ভারতীয় চাষীদের মৃত্যুমুখে ঠেলে দেওয়া, নীলকর সাহেবদের বর্বরোচিত অত্যাচার, দেশজুড়ে ভারতীয় ঐশ্বৰ্যের অবাধ লুটপাটের মতো ইংরেজদের জঘন্য কার্যকলাপের বিষয়টি সত্যিই কি জ্যোতিরিন্দ্রনাথের নজর এড়িয়ে গেল? এ ঘটনা সত্যিই বিস্ময় জাগায়!
নীলের ব্যবসা থেকে হাতে এল বেশ ভালোরকম মুনাফা। জ্যোতিরিন্দ্রনাথের তখন ব্যবসার নেশা ধরে গেছে। হঠাৎ ‘এক্সচেঞ্জ গেজেট’ কাগজের একটি বিজ্ঞাপন তাঁর নজরে এল— একটি জাহাজের খোল নিলাম হবে। রয়্যাল এক্সচেঞ্জে গিয়ে সাত হাজার টাকায় নিলামে সেটি কিনে নিলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ। গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার দেখে বললেন, খোলটি মজবুত। একে একটি ভালো জাহাজে পরিণত করা যাবে। জাহাজও তৈরি হল। তখন (১৮৮২-৮৩) কলকাতা থেকে খুলনা অবধি রেললাইন বসানোর কাজ চলছে। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠিক করলেন তাঁর জাহাজ চলবে খুলনা থেকে বরিশাল অবধি। জাহাজটির নাম দিলেন ‘সরোজিনী’। ভেসে পড়ল জাহাজ। তিনিই প্রথম বাঙালি জাহাজ-ব্যবসায়ী হিসেবে ইংরেজ কোম্পানিদের সঙ্গে লড়ে যাবেন, এই ভেবে তৃপ্ত হলেন। যদিও তথ্য অনুযায়ী, ভবানীপুরের এক ‘বাবু’ কৃষ্ণচন্দ্র চৌধুরী এর আগে কলকাতা থেকে কালনা অবধি জলপথে জাহাজের ব্যবসা চালু করেছিলেন। সম্ভবত সেদিক থেকে ইনিই প্রথম বাঙালি জাহাজ-ব্যবসায়ী। এই খবরটি বেরোয় ‘সুলভ সমাচার’-এর ২১ জুন (১৮৭৯) সংখ্যায়।

যাইহোক, জ্যোতিরিন্দ্রনাথের জাহাজ-ব্যবসা ভালোই চলতে লাগল। যদিও, প্রথম জাহাজ ‘সরোজিনী’-কে প্রস্তুত করে জলে নামতে যথেষ্ট দেরি হওয়ায়, এর ফাঁকে ব্রিটিশ ‘ফ্লোটিলা’ কোম্পানী একই রুটে তাদের জাহাজ চালু করে দেয়। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ এরপর আরও চারটি জাহাজ কিনলেন। নাম দিলেন— ‘বঙ্গলক্ষ্মী’, ‘স্বদেশী’, ‘ভারত’ ও ‘লর্ড রিপন’। ব্যবসা তরতর করে জাহাজের মতোই এগিয়ে চলল। স্বদেশী জাহাজ নিয়ে জনগণের মধ্যে সাড়া পড়ে গিয়েছিল। ইংরেজ কোম্পানির জাহাজের পাশে যখন জ্যোতিরিন্দ্রনাথের জাহাজ ছাড়ার জন্যে দাঁড়িয়ে থাকত, তখন যুবকেরা চিৎকার করে যাত্রীদের বলতেন… ‘আমাদের কথাটি একবার শুনুন তারপর যে জাহাজে ইচ্ছা হয় যাবেন। আপনারা বাঙালি, বাঙালির জাহাজ থাকতে কেন আপনারা ইংরাজদিগের জাহাজে যাবেন? দেশের টাকা দেশে থাকে এটা কি প্রার্থনীয় নয় ?…’ ইত্যাদি। এমনকী, একটি বিরাট সভার আয়োজন করে স্থানীয় জনগণ স্বদেশী জাহাজ-ব্যবসায়ী জ্যোতিরিন্দ্রনাথকে সম্বর্ধনাও দিয়েছিলেন। সেখানে নাম-সংকীর্তনের ঢঙে স্বদেশী গান গাওয়া হয়। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ এই ব্যবসার মাধ্যমে এক জাতীয়তাবোধের বাতাবরণ তৈরি করতে সমর্থ হয়েছিলেন।
১৮৭৭ সালে জানকীনাথ ঘোষালের সঙ্গে যুগ্মভাবে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ পাটের ব্যবসা শুরু করলেন। কলকাতার হাটখোলায় খোলা হল পাটের আড়ত। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ অবশ্য বেশিদিন যুক্ত ছিলেন না এই ব্যবসায়। পাটের বাজার মন্দা হতেই তিনি আড়ত বন্ধ করে দিলেন। কিন্তু লাভ তিনি ভালোই করেছিলেন। পাটের ব্যবসায় সাফল্যের ফলে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের উৎসাহ আরও বৃদ্ধি পেল। তার নজর গেল নীলের ব্যবসার দিকে।
কিন্তু ফ্লোটিলা কোম্পানি ক্রমেই ভাড়া কমাতে লাগল। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ পাল্লা দিতে লাগলেন। অবশেষে হার মানলেন। ঋণের বোঝা বাড়ল। ফ্লোটিলা কোম্পানির পক্ষ থেকে উত্তরপাড়ার প্যারীমোহন মুখোপাধ্যায় জ্যোতিরিন্দ্রনাথকে প্রস্তাব দিলেন, জাহাজ কোম্পানিটি ফ্লোটিলা-কে বেচে দেওয়ার জন্য। কিছু টালবাহানার পর জ্যোতিরিন্দ্রনাথ নিরুপায় হয়ে তাই করলেন। মোটা টাকাও পেলেন। কিন্তু তাতেও তাঁর বিশাল পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করতে পারলেন না। পারিবারিক বন্ধু তারকনাথ পালিত ত্রাতার ভূমিকায় এসে পাওনাদারদের বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ঋণ আদায় থেকে বিরত করলেন। জ্যোতিরিন্দ্রনাথও স্বস্তি পেলেন। এখানেই ইতি ঘটল ব্যবসায়ী জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের।
ঠাকুরবাড়িতে দেবেন্দ্রনাথের সেজছেলে হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছিল বিজ্ঞানে অগাধ ব্যুৎপত্তি। তাঁরই প্রভাবে ভাই জ্যোতিরিন্দ্রনাথেরও গড়ে উঠেছিল বিজ্ঞানমনস্কতা। অধিকাংশক্ষেত্রেই যেমন ‘ফলিত বিজ্ঞান’-কে আশ্রয় করেই মূলত বিজ্ঞানের ধারণা সীমাবদ্ধ হয়ে যায়, জ্যোতিরিন্দ্রনাথের মতো অনন্ত-জগতসন্ধানীদের তা ছিল না। তিনি প্রথমে ‘প্ল্যানচেট’-এর প্রতি আগ্রহী হন। অবশ্য কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর বিশ্বাস চলে যায়। প্ল্যানচেটকে তিনি পরে বলতেন, ‘Plain Cheat’। এরপরে, দুটি ভিন্ন ধরনের চরিত্রানুমান বিদ্যার প্রতি জ্যোতিরিন্দ্রনাথের আগ্রহ জন্মায়। প্রথমটি ‘ফিজিয়নমি’ বা ‘মুখচেনা’। অর্থাৎ, মানুষের মুখ দেখে তার চরিত্র বোঝার চেষ্টা। এই বিদ্যাচর্চার জন্য জ্যোতিরিন্দ্রনাথ বিভিন্ন ধরনের মানুষের মুখ স্কেচ করেন, যার মধ্যে ছিল ইয়ানি, আলি শেখ, সালারুদের মতো জেলখাটা দাগী অপরাধীরা। ‘বালক’ পত্রিকায় (বৈশাখ ১২৯২ বঙ্গাব্দ) তিনি ‘মুখচেনা’ নামে একটি প্রবন্ধও লেখেন। এছাড়া, তিনি চর্চা করেছিলেন ‘শিরোমিতি বিদ্যা’ বা ‘ফ্রেনোলজি’ নিয়ে। অর্থাৎ, মানুষের মস্তিষ্কের ধরন দেখে চরিত্রের অনুমান। এ বিষয়েও জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ‘সাধনা’ (আষাঢ় ১২৯৯ বঙ্গাব্দ) পত্রিকায় লেখেন প্রবন্ধ— ‘আধুনিক মস্তিষ্কতত্ত্ব ও ফ্রেনোলজি’।
অথচ এইরকম একজন বর্ণময় প্রতিভাবান মানুষ শেষজীবনে হয়ে গেলেন নির্জন-প্রবাসী, নিঃসঙ্গ। রাঁচির মোরাদাবাদি পাহাড়ের ওপর ‘শান্তিধাম’ তৈরি করে কাটালেন জীবন। জীবদ্দশাতেই হয়ে গেলেন অনেকটা অবহেলিত, অবমূল্যায়িত। এ বিষয়ে নিঃসন্দেহে তাঁর অব্যক্ত যন্ত্রণা ছিল অন্তরে। প্রাণাধিক প্রিয় ভাই রবি একবারও যাননি রাঁচিতে। রবির বিশ্বজোড়া খ্যাতির আলোয় ছায়ায় ঢেকে গেছেন তাঁর এককালের অন্যতম সহচর নতুনদাদা। ঠাকুরবাড়ির অন্য কেউও সেভাবে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি। গোড়ার দিকে বড়দাদা দ্বিজেন্দ্রনাথ, মেজদাদা সত্যেন্দ্রনাথকে বাদ দিলে, শেষদিকে কেবল ভ্রাতুষ্পুত্র-ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরা দেবী, সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো হাতেগোণা কয়েকজনই যোগাযোগ রাখতেন। তাঁর যাবতীয় বই, লেখা তাই সব এঁদেরই দিয়ে যান জ্যোতিরিন্দ্রনাথ। আজও কি তিনি অবমূল্যায়িত ও অনেকাংশেই বিস্মৃত নন? বেঁচে থাকতেই তাই বিস্মরণের অভিমানে জগৎ-সংসার পরিবার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ। সে কথা বোঝা যায় বসন্তকুমার চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাতের বিবরণেই। বসন্তবাবু যখন জ্যোতিরিন্দ্রনাথের রাঁচির বাড়িতে গিয়ে তাঁর মুখে তাঁরই জীবনকাহিনি শুনতে চান, বোধহয় তা অবিশ্বাস্য ঠেকেছিল ‘জ্যোতিদাদা’র। বসন্তবাবুকে শুধিয়েছিলেন— ‘আমাকে আপনারা রবি ভাবেননি তো?’ বসন্তবাবু জানান, ভুল করে নয়, সত্যিই শুধু জ্যোতিরিন্দ্রনাথের জীবনকাহিনি শোনার জন্যই এসেছেন। ১৯২৫ সালের ৪ মার্চ ‘শান্তিধাম’-এ চিরশান্তি লাভের আগে এটুকু তৃপ্তি অন্তত নিয়ে যেতে পেরেছিলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ, যে আলাদা করে তাঁর কথাও কেউ শুনতে চেয়েছে।
তথ্যঋণ :
১. বসন্তকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রণীত ‘জ্যোতিরিন্দ্রনাথের জীবন-স্মৃতি’ (সম্পাদনা প্রশান্তকুমার পাল, সুবর্ণরেখা, ২০০২)।
২. ‘জ্যোতিরিন্দ্রনাথ’—সুশীল রায় (জিজ্ঞাসা, এপ্রিল, ১৯৬৩)।
৩. ‘স্মৃতিসম্পুট’–ইন্দিরাদেবী চৌধুরাণী (রবীন্দ্রভবন, বিশ্বভারতী, শান্তিনিকেতন, আগস্ট ২০০০)।
৪. ‘দিনেন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কের খতিয়ান’— শোভন সোম (আনন্দ পাবলিশার্স, সেপ্টেম্বর ১৯৯৪)।
ছবিঋণ:
জন্ম ১৯৬৫-তে কলকাতায়। বেড়ে ওঠা চন্দননগরে। স্কুল জীবন সেখানেই। কলকাতার সিটি কলেজ থেকে স্নাতক। ছোটো থেকেই খেলাধূলার প্রতি আগ্রহ। গান শেখাও খুব ছোটো থেকেই। তালিম নিয়েছেন রামকুমার চট্টোপাধ্যায়ের কাছেও। দীর্ঘদিন মার্কেটিং পেশায় যুক্ত থাকার পর, গত বারো বছর ধরে পুরোপুরি লেখালেখি, সম্পাদনার কাজে যুক্ত। পুরনো বাংলা গান, সিনেমা, খেলা ইত্যাদি বিষয়ে অজস্র প্রবন্ধ লিখেছেন। আনন্দবাজার পত্রিকা, এই সময়-সহ বহু পত্রপত্রিকায় নিয়মিত লেখেন। সম্পাদিত বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য উত্তমকুমারের "হারিয়ে যাওয়া দিনগুলি মোর", হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের "আনন্দধারা", রবি ঘোষের "আপনমনে", মতি নন্দীর "খেলা সংগ্রহ"। লিখেছেন "সংগীতময় সুভাষচন্দ্র" বইটি। সাত বছর কাজ করেছেন "মাতৃশক্তি" ও "জাগ্রত বিবেক" পত্রিকায়। বর্তমানে নিজস্ব লেখালিখি ও সম্পাদনা নিয়ে ব্যস্ত।