সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের পর থেকেই কাশ্মীর কার্যত স্তব্ধ। বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা, এটিএম। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটেও ঝুলছে তালা। দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে থাকা উপত্যকার মানুষজন জানাচ্ছেন, বহু চেষ্টা করেও তাঁরা যোগাযোগ করে উঠতে পারছেন না প্রিয়জনদের সঙ্গে। পশ্চিমবঙ্গের ছবিটাও আলাদা নয়। কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় পেশাগত প্রয়োজনে বাসা বাঁধা কয়েক হাজার কাশ্মীরি পড়েছেন মহাবিপদে। বিশেষত, ছাত্রছাত্রীদের সমস্যা সবচেয়ে তীব্র। ইন্টারনেট পরিষেবা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিজনেরা টাকা পাঠাতে পারছেন না। সদ্য সমাপ্ত ভর্তির মরশুমে কলকাতার একাধিক নামজাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে শহরে এসেছেন কয়েকশো কাশ্মীরি তরুণতরুণী। এখনও পর্যন্ত তাঁদের অধিকাংশই থাকার ব্যবস্থা করে উঠতে পারেননি। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ভর্তির মরশুম শেষ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু হস্টেলের আসন বরাদ্দ এখনও শুরু হয়নি। এই পরিস্থিতিতে বিপদে পড়া কাশ্মীরি ছাত্রছাত্রীদের পাশে দাঁড়ালেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ এবং পড়ুয়াদের একাংশ।


সম্প্রতি ভর্তি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বৈঠক করেছেন যাদবপুরের কর্মসমিতির সদস্যরা। সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে কাশ্মীর থেকে আসা পড়ুুয়াদের জন্য হস্টেলের আসন বরাদ্দ সংক্রান্ত নিয়ম শিথিল করা হবে। সাধারণত, যাদবপুরে ভর্তি হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ছাত্র বা ছাত্রীকে নির্দিষ্ট কিছু নথিপত্র-সহ হস্টেলের জন্য আবেদন করতে হয়। দূরত্ব, সংশ্লিষ্ট পড়ুুয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা ইত্যাদি খতিয়ে দেখে কর্তৃপক্ষ হস্টেলে থাকার অনুমতি দেন। বিষয়টি কিছুটা সময়সাপেক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, গোটা প্রক্রিয়াটি মিটতে প্রায় মাস দেড়েক সময় লাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শীর্ষ আধিকারিক জানান, কাশ্মীরের ছাত্রছাত্রীদের জন্য এই বছর আপাতত ওই নিয়ম শিথিল করা হল। উপত্যকা থেকে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের এখনই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হস্টেলে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন রজত রায়ের কথায়, “আমরা খবর পাচ্ছি কাশ্মীরের ছেলেমেয়েরা অনেকেই আর্থিক সমস্যার মধ্যে পড়েছেন। উপত্যকায় ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় পরিজনেরা টাকাপয়সা পাঠাতে পারছেন না। এ ছাড়াও আরও কিছু অনভিপ্রেত সমস্যার আশঙ্কাও রয়েছে। সে কারণেই এই সিদ্ধান্ত।” ডিন জানান, আপাতত কিছু দিন এই ব্যবস্থা চলবে। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।


বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, সদ্য শুরু হওয়া শিক্ষাবর্ষে যাদবপুরে হস্টেলের জন্য আবেদন করেছিলেন প্রায় ২০ জন কাশ্মীরি ছাত্রছাত্রী। সব মিলিয়ে যাদবপুরে কাশ্মীর থেকে আসা ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১০০। কর্তৃপক্ষের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন তাঁরা। ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র বশির আহমেদের বাড়ি শ্রীনগরে। এ বছরই ওই বিভাগেই ভর্তি হয়েছে তাঁর ছোট ভাই ফারুক। বশির জানান, তাঁদের পারিবারিক কাপড়ের ব্যবসা রয়েছে। শ্রীনগরে ৮০ বছরের দোকান। গত কয়েক দিন যাবত পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। সাধারণত মাসের শুরুতেই হাতখরচের টাকা পাঠাতেন বাবা, কিন্তু এই মাসে সব কিছুই বন্ধ। তাঁর কথায়, “আমি হস্টেলে থাকি, তাই সমস্যা কম। কিন্তু ভাই কোথায় যাবে, কী করে চলবে, কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে সমস্যা কিছুটা কমল।”

কেবল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই নন, কাশ্মীরের ছাত্রছাত্রীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন যাদবপুরের ছাত্র-সংসদের সদস্যরাও। ইতিমধ্যে একটি হেল্পলাইন পরিষেবা চালু করেছে আর্টস ফ্যাকাল্টির ছাত্র সংসদ। আর্ন্তজাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্রী সোমাশ্রী চৌধুরি জানান, যে কোনও সমস্যায় ওই হেল্পলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন কাশ্মীরের ছাত্রছাত্রীরা। তাঁর কথায়, “কিছু দিন আগে দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা এক কাশ্মীরি চিকিৎসককে আক্রান্ত হতে হয়েছিল। আমরা চাই না আমাদের কোনও সহপাঠী এমন অভিজ্ঞতার মুখে পড়ুন।” তাঁর অভিযোগ, ইতিমধ্যেই হেল্পলাইনে ফোন করে গালিগালাজ ও হুমকি দিয়েছেন এক দল মানুষ। কিন্তু তাও তাঁরা পরিষেবা বন্ধ করবেন না। সোমাশ্রীর কথায়, ”এই দেশ তো আমাদের সবার। তাই এটুকু না করে উপায় নেই।”

banglalive logo

বাংলালাইভ একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবপত্রিকা। তবে পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে বাংলালাইভ। বহু অনুষ্ঠানে ওয়েব পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সেই ভিডিও পাঠক-দর্শকরা দেখতে পান বাংলালাইভের পোর্টালে,ফেসবুক পাতায় বা বাংলালাইভ ইউটিউব চ্যানেলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *