কোয়ারেন্টাইন

বারান্দাটা নিজের বাড়িতেই একঘরে। 
মিশতে চায় না, নাকি মিশতে পারে না!
এটা ভেবে দেখার অবসর নেই তার। 
অথচ খোলা মাঠের মতো ফাঁকা সময়। 
সময় শব্দটাতেই অবশ্য আপত্তি তার। 
সময় বলে কিছু হয় না। আসলে একটা
অদৃশ্য নদী কিছুটা পথ পেরিয়ে পেছনে ফিরে দেখে
কচুরিপানার ডালে বসে অন্যমনস্ক তিনটে কাক। 
বা সাতটা আটটা দশটা। সংখ্যাটা অর্থহীন। 
কিছু আছে রঙ ভালবাসে, কিছু অন্ধকার।
বারান্দাটার অবশ্য সংখ্যা মনে রাখার অভ্যেস নেই।
লেভেলক্রসিং ছেড়ে কটা ট্রেন চলে গেল

কতজন মানুষকে দেখে ইচ্ছে করে তাকিয়েই থাকি
বা পুকুরের পাশে জামরুল গাছটায়
টা আধখাওয়া পাখিদের ফল 
ভেসে উঠল জলে। সকাল থেকে রাত, ভোররাত বা রাতভোর।
কখনওই নয়।

 


মিসক্যারেজ

তোমার গর্ভে এক কাল্পনিক সন্তানের মতো
বেড়ে উঠছে আমাদের সম্পর্ক। 
বয়স বাড়ছে আঙুল, কান, নাভি, চোখের।
স্পর্ধা চিনছে সে, বুঝতে শিখছে অধিকার তার।
অন্ধকারে অস্থির, আলোর হাতছানিতে মশগুল…
সে যেন বলছেআমি এসেছি, দরজা খোল
আমার একটা নাম দিও পারলে
আমার কোনও নাম নেই।

আকাশপাতাল অভিধান তছনছ করেও
পছন্দসই কোনও নাম পাইনি আমরা।

পরে বুঝেছি সে জানত, নামকরণ আমাদের কাজ নয়। 
আমরা শুধু প্রতিদিন নতুন করে ভালবাসতে পারি।
ঝগড়া হাসি গান অভিমান এইসব পারি।
তারপর আদরে ভেসে যেতে যেতে ডুবে গিয়ে 
আমাদের একটা সম্পূর্ণ নিজস্ব দ্বীপে পৌঁছে যেতে পারি।

তোমার গর্ভের সন্তান আমাদের সম্পর্ক এইসবই শুধু চেয়েছিল।
চেয়েছিল আমাদের নিজস্ব একটা বৃত্ত,
একটা ত্রিভুজ, একটা বর্গক্ষেত্র হোক।
তার নিজের নামের চাহিদা নেই।

*ছবি সৌজন্য: Pexels

সত্তরের দশকের শেষের দিকে কলকাতায় জন্ম অভিরূপের। স্কুলজীবন থেকেই বাংলা সাহিত্যের প্রতি ঝোঁক। কলেজে বাংলা অনার্স নিয়ে পড়ার পাশাপাশি পুরোপুরি সাহিত্যে মনোনিবেশ। কিছুদিন ফ্রিলান্স সাংবাদিকতাও করেছেন। এরপরেই ঢুকে পড়া টেলিভিশনের জন্য স্ক্রিপ্ট লেখার আঙিনায়। সম্পূর্ণ আলাদা এক পরিবেশ এবং প্রস্তুতির সঙ্গে পরিচয়। একইসাথে চলতে থাকে গল্প-কবিতার পালা। দেশ, এই সময়, আজকের সম্পূর্ণা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে বেশ কিছু লেখা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *