কোরক বসুর কণ্ঠে এই ফিচারটির পডকাস্ট শুনতে হলে ক্লিক করুন

১৯৬৭ সাল। বিদ্যাসাগর স্ট্রিটে কলকাতা ইউনিভার্সিটির পিজি হস্টেলের একটা ছোট ঘর। পাশাপাশি পাতা গোটা তিনেক খাট। টুল, লাল পোড়ামাটির জলের কুঁজো। সস্তা কেরোসিন কাঠের তাকে একে অন্যের গায়ে হেলান দিয়ে থাকা বেশকিছু বই। খাটে বসা একটা ছেলে। বছর চব্বিশ কি পঁচিশ। সহ-আবাসিকদের কেউ ঘরে নেই এখন। ছেলেটার নাকের নিচে ঘন কালো পুরু গোঁফ। সামনের চুল পাতলা হতে শুরু করেছে এই বয়েসেই। মোটা ফ্রেমের চশমার পিছনে উজ্জ্বল চোখজোড়ায় গভীর চিন্তার ছাপ এই মুহূর্তে। সামনে খোলা পদার্থবিদ্যার মোটা একখানা বই। গোটাকয়েক নোটখাতা। সেসবের একবিন্দু ঢুকছে না মাথায়। তীব্র দ্বিধাদ্বন্দ্বের দোলাচলে ফালাফালা হয়ে যাচ্ছে ভিতরটা। মেদিনীপুর জেলার উড়িষ্যা ঘেঁষা গোপিবল্লভপুর ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রাম পিতানাউ থেকে পড়তে আসা অসম্ভব এক মেধাবী ছাত্র। ফুল স্কলারশিপ পেয়ে প্রেসিডেন্সি কলেজে অ্যাপ্লায়েড ফিজিক্স-এ অনার্স। অতঃপর সাফল্যের সঙ্গে পেরিয়ে যাওয়া একের পর এক ধাপ। বর্তমানে রাজাবাজার সায়েন্স কলেজে হলোগ্রাফ বিষয়ক গবেষণায় সিনিয়ার রিসার্চ ফেলো। সাম্মানিক ৪০০ টাকা প্রতিমাসে। সে বাজারে অনেক টাকা। কলেজের একজন জুনিয়ার লেকচারারের মাসমাইনের থেকেও বেশি। প্রান্তিক নিম্নবিত্ত কৃষক পরিবারের সন্তান। সামান্য কিছু জমি। বড়জোর সম্বৎসরের ধানচালটা জোটে তার থেকে। বাবা গত হয়েছেন বেশ কিছুদিন। ভাইয়েরা সব স্কুল-কলেজে এখনও। ফলে সংসারের গুরুদায়িত্ব বড়ভাই হিসেবে নিজের কাঁধে। গ্রামের বাড়িতে মা চাষবাস, সংসার, জগদ্ধাত্রীর মত সবকিছু সামলাচ্ছেন একা হাতে। প্রতিমাসে সাম্মানিকের টাকা থেকে মাকে পাঠানো বৃহদংশ, অনেকখানি ভরসার জায়গা সংসারে।
২৭শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১। যাদবপুর ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট হস্টেলের সামনে এসে দাঁড়াল সারি সারি কালো পুলিশ ভ্যান আর সিআরপি ট্রাক। প্রথমেই চক্রাকারে গোটা হস্টেল চত্বরটাকে ঘিরে ফেলল রাষ্ট্রের কেয়ারটেকার বাহিনী। কর্তৃপক্ষের কঠোর নির্দেশ – আজই যেনতেন প্রকারেণ মুক্ত করতে হবে উগ্রপন্থী নকশালদের এই দুর্গ।
ভবিষ্যতের ছবিটা আরও উজ্জল! গবেষণার কাজে বিদেশ যাত্রা। নামীদামি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা। সেমিনারে যোগ দিতে, বক্তব্য রাখতে কথায় কথায় বিলেত আমেরিকা। কিন্তু ইদানীং সুখসাগরে ডুব দেওয়া এইসব মেদুর ভাবনাচিন্তা বেবাক গুলিয়ে যাচ্ছে একটা নামের সামনে – নকশালবাড়ি! উত্তরবঙ্গে তরাই অঞ্চলের এক প্রত্যন্ত গ্রাম। সেখানে জমির দাবিতে সংগ্রামরত কৃষকদের মিছিলে গুলি চালিয়েছে পুলিশ। গুলিতে নিহত আট বিদ্রোহী কৃষক রমণী-সহ এক শিশু। সেই বিদ্রোহের আঁচ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বাংলায়, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে। এ শহরের ছাত্রসমাজও তার ব্যতিক্রম নয়। সে আঁচের ছোঁয়া এসে লাগছে অ্যাপ্লায়েড ফিজিক্সের প্রতিভাবান এই তরুণ গবেষকের গায়েও। পুড়িয়ে খাক করে দিচ্ছে ভিতরটা। নকশালবাড়ি! শেষ যুদ্ধের প্রস্তুতি! একঝটকায় সমস্ত চিন্তাভাবনার অবসান। গবেষণা, ব্রাইট কেরিয়ার, এসবের চেয়ে বিপ্লব অনেক জরুরি এখন, এই মুহূর্তে। বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন যুবক। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরে যেতে হবে গোপীবল্লভপুরে, নিজের প্রত্যন্ত সেই গাঁয়ে। গড়ে তুলতে হবে সংগঠন, গরীবগুরবো কিষাণ আর আদিবাসীদের মধ্যে। দ্রুত হাতে টিনের সুটকেসে নিজের সামান্য কয়েকটা জামাকাপড় গুছিয়ে নিতে শুরু করলেন তরুণ গবেষক। নাম সন্তোষ রানা। প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ ধরে কথাগুলো লিখলাম আপনাদের কাছে ওই সময়টার গুরুত্ব বোঝানোর জন্য। বিশেষত তাদের যারা সরাসরি প্রত্যক্ষ করেননি সময়টাকে। ‘৬০ / ‘৭০-এর সেইসব উত্তাল ছাত্রবিদ্রোহের দিনে কী ভূমিকা পালন করেছিল এই শহরের ছাত্রাবাসগুলো? কি ভাবেই বা নিজের অগ্নিগর্ভে ধারণ করেছিল তাদের ওইসব অগ্নিভক্ষক সন্তানদের? নিজের সীমিত জ্ঞানগম্যি অনুযায়ী তার টুকরোটাকরা দু’চার আখ্যান শোনাব নিম্নোক্ত কয়েক পরিচ্ছেদে। ‘৬০ – ‘৭০-এর দশক। মধ্য কলকাতা, দক্ষিণ কলকাতা, উত্তর কলকাতা, কলেজ স্ট্রিট, শেয়ালদা, বিদ্যাসাগর স্ট্রিট, হেদো, হরতুকিবাগান, কারবালা ট্যাঙ্ক লেন, যাদবপুর, হিন্দু, হার্ডিঞ্জ, পি জি, স্কটিশ, স্বর্ণময়ী, ওয়ান, আর জি কর, অগিলভি, এন আর এস, বিদ্যাসাগর। এরকম আরও অনেক, অনেক সরকারি ছাত্রাবাস শহর জুড়ে। ততদিনে বিপ্লব নামক এক অগ্নিসম্ভব স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে সেইসব আবাসের বাসিন্দারা। নোনালাগা স্যাঁতস্যাঁতে পুরনো সিঁড়ি ভেঙে উঠতে উঠতে দেখা যায় দেওয়ালে ব্ল্যাক জাপানে লেখা – ‘তুমি মাও, আমি মাও, সর্বহারার পেটের ক্ষিদে থেকে ঘরে ঘরে মাও জন্ম নেয়।’ করিডরে সারি সারি ছোট ছোট ঘর। প্রতি ঘরে দুটো থেকে তিনটে করে খাট। খাটে খাটে ছড়ান চটি চটি সব বই আর পত্রিকা। ছাত্রফৌজ, দেশব্রতী, রেডবুক, কৃষক সম্পর্কে তিনটি লেখা, নয়া গনতন্ত্র, লিবারেশন, অষ্টম কংগ্রেসের দলিল, লিন পি আওয়ের জনযুদ্ধের থিওরি। হিন্দু হস্টেলে এইসব হাজারও বইয়ের ভিড়ে একটা বেজায় পাতলা আর পুরনো বইয়ে চোখ আটকে গেছিল উত্তর-মধ্য কলকাতা স্কুল কমিটির ক্যুরিয়ার একটা বাচ্চা ছেলের। নাম – ‘কৈশোরক’। শৈবাল মিত্র, আজিজুল হক, রমেন পাইন, রনবীর সমাদ্দার, নির্মল ব্রহ্মচারীদের মত প্রবাদপ্রতিম ‘ওল্ডগার্ড’ ছাত্রনেতারা সদ্য ‘প্রাক্তনী’ হয়েছেন ততদিনে। আরও বড় দায়িত্ব নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছেন বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে। হস্টেলের করিডরে সামনে দাঁড়ানো প্রদীপ ধর। স্কুল কলেজ, পাড়া, গোটা কলেজ স্ট্রিট-বৌবাজার অঞ্চলের অবিসংবাদিত নেতা। কাকা চাটুজ্জে, দীপাঞ্জন রায়চৌধুরীদের সঙ্গে ওঠাবসা। শ্যামবাজারের কান্তিদার পাঠানো চিঠিটা হাতে গুঁজে দিয়ে জিগ্যেস করেছিল ছেলেটা – “বইটা নেব?” প্রদীপদার পাশে দাঁড়ানো অনুপদা আর রাজাবাজারের আখতারদা। মুচকি হেসেছিল ছেলেটার দিকে তাকিয়ে। “মিলনের বই। বইয়ের ব্যাপারে ও ভীষণ খুঁতখুঁতে। পড়েই ফেরত দিবি তিনদিনের মধ্যে, মনে থাকে যেন।” বলেছিল অনুপদা।
শেল্টার ছিল স্বর্ণময়ী হস্টেলে দোতলার একটা ঘরে। খবর পেয়ে পুরো হস্টেল ঘিরে ফেলে বিশাল পুলিশবাহিনী। ঘরের জানলা দিয়ে নিচে লাফ মারে প্রদীপদা। ভাঙা ইঁটের পাঁজার ওপর পড়ে মারাত্মক জখম অবস্থায় গ্রেফতার হয়। হাঁটু থেকে শিনবোন হয়ে গোড়ালি পর্যন্ত টুকরো টুকরো হয়ে গেছিল বাঁ পা-টা।
বাড়িতে এনে পুরো সন্ধে গোগ্রাসে বইটাকে গিলেছিল ছেলেটা। ওকে সবচেয়ে বেশি টেনেছিল পৃষ্ঠা দু’য়েকের কমিক সিরিজটা। ‘বানর থেকে মানুষ – শ্রমের বিবর্তন।’ শিল্পী-লেখক জীবন ব্রহ্মচারী। অসামান্য ইলাস্ট্রেশন আর লেখা! হাঁদাভোঁদা, বাঁটুল আর বেতালে অভ্যস্ত চোখ তার। এসবের বাইরে একটা অন্যরকম নতুন স্বাদের ছোঁয়া এনে দিয়েছিল লেখাটা। তিনদিন বাদে ফেরত দিতে গিয়ে দেখা হয়েছিল বইয়ের মালিকের সঙ্গে। মিলন দাশগুপ্ত। কলেজ স্ট্রিটে বিখ্যাত ক্রীড়াসরঞ্জামের দোকান দাশগুপ্ত স্পোর্টস, সেই বাড়ির ছেলে। অসম্ভব সৌম্যদর্শন চেহারা। পুরাণের কোনও সন্তের মত। টিকালো নাক। আক্ষরিক অর্থে যাকে বলে গৌরবর্ণ, তাই-ই। একমাথা ঠাসবুনোট কুচকুচে কালো কোঁকড়া চুল। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। চেহারার চেয়েও মিঠে কথাবার্তা আর মুখের হাসিটা। করিডরে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল অনুপদাদের সঙ্গে। বইটা ফেরত দিয়ে ভালোলাগার কথাটা বলেছিল ছেলেটা। “বইটা এত ভালো লেগেছে তোমার! তাহলে ওটা তোমার কাছেই রেখে দাও। ক্ষুদে কমরেডকে আমার উপহার।” জবাবে ভারি নরম হেসে বলেছিল মিলনদা। সেই মিলনদা। ১৯৭২ সালে রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে দাশগুপ্ত স্পোর্টসের ব্রাঞ্চ থেকে তুলে নিয়ে গেছিল রুনু অ্যান্ড কোং। পরদিন যথারীতি সেই পেটেন্ট ‘এনকাউন্টার’-এর গল্প। ‘পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে দেশদ্রোহী উগ্রপন্থী নিহত।’ নাঃ, কোথাও কোন স্মৃতিফলক বা শহীদবেদী নেই এ শহরে এই ‘দেশদ্রোহীর’ নামে! তবে অনুপদার ভাগ্যটা বোধহয় মিলনদার মত অতটা খারাপ না। কারণ কলেজ স্ট্রিটের মোড়ে আরও আটজন কমরেড ইন আর্মসের পাশে ওর নামটাও রয়েছে রঙ চটে যাওয়া তেকোনা শহিদ বেদিটায়। অন্যদিকে প্রদীপদা। আওয়ার হিরো অফ দোজ় স্ট্রিট ফাইটিং ডেজ়! শেল্টার ছিল স্বর্ণময়ী হস্টেলে দোতলার একটা ঘরে। খবর পেয়ে পুরো হস্টেল ঘিরে ফেলে বিশাল পুলিশবাহিনী। ঘরের জানলা দিয়ে নিচে লাফ মারে প্রদীপদা। ভাঙা ইঁটের পাঁজার ওপর পড়ে মারাত্মক জখম অবস্থায় গ্রেফতার হয়। হাঁটু থেকে শিনবোন হয়ে গোড়ালি অবধি টুকরো টুকরো হয়ে গেছিল বাঁ পা-টা। পুলিশ কাস্টডিতে পায়ে তার বেঁধে হাসপাতালের বেডে পড়েছিল ঝাড়া ছ’মাস। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে দীর্ঘমেয়াদি কারাবাস। মুক্তির পর পাড়ায় ফিরে এসে প্রেস খুলেছিল একটা। পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত হয়েছিল পরবর্তীতে। হাত পা কাঁপত সবসময়। শেষ তথ্য অজানা। চিন বিপ্লবের সময় সে দেশে গিয়েছিলেন ডঃ নরম্যান বেথুন। যুদ্ধক্ষেত্রে ঘুরে ঘুরে আহত লালফৌজের সৈন্যদের চিকিৎসা করতেন। বহু সাধারণ মানুষকে চিকিৎসাবিদ্যার প্রাথমিক পাঠ দিয়ে নামিয়ে দিয়েছিলেন রণভূমিতে। সে ছিল আমজনতার এক চিকিৎসক দল। বিখ্যাত হয়ে গেছিল ‘বেয়ার ফুট ডক্টরস’ নামে। এরকমই আরএক মানবদরদী ডাক্তার, আর্নেস্তো চে গেভারা। কিউবার সিয়েরা মাস্ত্রোর দুর্গম জঙ্গলে গেরিলাবাহিনীর নেতা। যুদ্ধ শেষ হওয়ামাত্র হাতের বন্দুক ফেলে তুলে নিতেন স্টেথো, ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ আর ওষুধের বাক্স। শুধু নিজেদের গেরিলাবাহিনীর যোদ্ধাদেরই নয়, চিকিৎসা করতেন বিপক্ষের পরাজিত এবং আহতাবস্থায় বন্দি সরকারি সৈন্যদেরও। অতঃপর বিনয় বসু। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের উজ্জ্বল নক্ষত্র। ঢাকা আর রাইটার্সে অত্যাচারী তিন সাহেবকর্তা লোম্যান, হডসন আর সিম্পসনকে কবরের মাটি ধরানোর আগে অনুজপ্রতিম বন্ধু সহযোদ্ধা নসু অর্থাৎ দীনেশ গুপ্তকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামে গ্রামান্তরে ঘুরে ঘুরে দরিদ্র, আর্তের চিকিৎসা করতেন ইনিও। না, ডঃ বেথুন, বেয়ার ফুট ডক্টরস, চে, বিনয় বোস, কারও সঙ্গে দেখা হয়নি ছেলেটার। তবে দেখা হয়েছিল মেডিক্যাল, এন আর এস, আর জি করের ডাক্তারদা, ভাস্করদা, স্বপনদা, জনদা, সমীরদা, শিপ্রাদি, এরকম অনেকের সঙ্গে। ডঃ বেথুন, বিনয়, চে গেভারা, নগ্নপদ চিকিৎসকদের সার্থক উত্তরসূরি সব। তাদেরই কিছু কথা এবার। ‘৭০-এর দশক। তীব্র দ্রোহাগ্নির আঁচে টগবগ করে ফুটছে কলকাতা। গোটা শহরটাই যেন একটা অতিকায় যুদ্ধক্ষেত্র। প্রতিদিন হাজার হাজার স্বপ্নদর্শী ছেলে, বোমায় উড়ে যাওয়া হাতের তালু, বুলেটে এফোঁড়ওফোঁড় হাত পা কাঁধ, চাকুর মারে দু’ফাঁক পেট নিয়ে ছুটে আসছে হাসপাতালগুলোয়। অক্লান্ত চিকিৎসা, অপারেশন করা, ওষুধপাতি দেওয়া, বিনা প্রশ্নে ভর্তি করে নেওয়া, বেড অকুলান হলে কলেজ হস্টেলে শেল্টারের ব্যবস্থা করা। সবার জন্য ক্যান্টিন আর কিচেনের খাবার। স্বপ্নের সেই যুদ্ধকালীন এক যৌথখামার যেন ! আজ এতদিন বাদে, ঠিক এইমুহূর্তে অতিমারির আতঙ্কপূর্ণ আবহে যখন ঘরবন্দি হয়ে এই লেখাটা লিখছি, বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে অনেকেরই কসাই হয়ে ওঠার খবর পাচ্ছি প্রিন্ট আর ভিশুয়াল মিডিয়ায়। বাইপাসের এক সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে অনুজপ্রতিম বন্ধু অভিজিৎ ঘোষের স্ত্রীর কোভিড চিকিৎসার বিল একদিনে এক লক্ষ বিরানব্বই হাজার টাকা, তারপরেও স্ত্রী বাঁচেনি, তখন কেন জানি না ওই বুড়ো পিট সিগারের গানটা মনে পড়ছিল খুব জোর। ‘হোয়ার হ্যাভ অল দ্য ফ্লাওয়ারস গন… হোয়ার হ্যাভ অল দ্য সোলজার্স গন!’ কোট আনকোট ‘ব্রাইট কেরিয়ারের’ মোহকে তুচ্ছ করে আগুনে ঝাঁপ দেওয়া, বেথুন, বিনয় আর চে গেভারার ভাইভাতিজা সেইসব ডাক্তারবাবুরা গেল কোথায়? স্কটিশ চার্চের কলেজ ছাত্রাবাস, হরতুকিবাগান, কারবালা ট্যাঙ্ক লেনের ওয়ান আর অগিলভি হস্টেলের ভাস্কর ভট্টাচার্য, রাজা রায়চৌধুরী। এদের কথা শুনেছিলাম সজলদার কাছে। ৭০-এর দশকে তরুণ প্রজন্মের আরএক জঙ্গি নেতা। বারবার মানা করেছিল রাজাদাকে সেদিন হস্টেল থেকে বেরতে। খবর ছিল সিপিএম অ্যাকশন স্কোয়াডের ছেলেরা নজর রেখেছে ওর ওপর। শোনেনি চিরকেলে বেপরোয়া রাজাদা। অলিভ থেকে বের হওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ওর খুন হয়ে যাওয়ার খবরটা এসে পৌঁছয় হস্টেলে। রাজাদা, ভাস্করদাদের মতো বিদ্যাসাগর স্ট্রিটে পি জি হস্টেলে আবাসিকদের নেতা ছিল দুর্গাদা আর কাশীদা। দুজনেরই অসম্ভব জনপ্রিয়তা ছাত্রমহলে। এ ছাত্রাবাসে সন্তোষ রানার ছেড়ে যাওয়া ‘ক্লাউট’; আর ‘লিগ্যাসি’ ধরে রেখেছিল এরাই। অলিভ, ওয়ান আর পি জি মিলিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে শখানেক ছেলেপুলের থাকাখাওয়া, শেল্টারের ব্যবস্থা হত এই তিন ছাত্রাবাসে। এছাড়াও যেকোনও ছোটবড় গোপন গ্রুপ মিটিং-এর অন্যতম নিরাপদ ঠিকানা ছিল অলিভ, পিজি আর ওয়ান হস্টেল। সেসময় ওইসব অঞ্চলে এই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত যে কাউকে জিগ্যেস করলেই এ কথার সমর্থন মিলবে।
লিভ, ওয়ান আর পি জি মিলিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে শখানেক ছেলেপুলের থাকাখাওয়া, শেল্টারের ব্যবস্থা হত এই তিন ছাত্রাবাসে। এছাড়াও যেকোনও ছোটবড় গোপন গ্রুপ মিটিং-এর অন্যতম নিরাপদ ঠিকানা ছিল অলিভ, পিজি আর ওয়ান হস্টেল।
২৭শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১। যাদবপুর ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট হস্টেলের সামনে এসে দাঁড়াল সারি সারি কালো পুলিশ ভ্যান আর সি আর পি ট্রাক। প্রথমেই চক্রাকারে গোটা হস্টেল চত্বরটাকে ঘিরে ফেলে রাষ্ট্রের কেয়ার টেকার বাহিনী। কর্তৃপক্ষের কঠোর নির্দেশ – আজই যেনতেন প্রকারেণ মুক্ত করতে হবে উগ্রপন্থী নকশালদের এই দুর্গ। কারণ ‘দেশদ্রোহের’ পাঠ পড়ানো হয় এখানে। অতঃপর শুরু হয়ে যায় ধুন্ধুমার লড়াই। মুহুর্মুহু টিয়ার গ্যাস আর আধুনিক স্বয়ংক্রিয় রাইফেলের বিরুদ্ধে হস্টেলের ভিতর থেকে বৃষ্টির মত পাল্টা উড়ে আসতে থাকে পেটো, মলোটভ ককটেল, শেল আর সকেট বোমা। হস্টেল থেকে কমপক্ষে আধ কিলোমিটারের নিরাপদ দুরত্বে তালতলা মাঠের সামনে দাঁড়িয়ে গোটা প্রক্রিয়াটা পরিচালনা করছিলেন উচ্চপদস্থ এক আই এ এস সরকারি আমলা। আধিকারিক মহোদয়কে ঘিরে দশবারোজনের সশস্ত্র নিরাপত্তাবাহিনী। ওয়াকিটকিতে টানা নির্দেশ দিয়ে চলেছিলেন আমলামশাই। প্রথমে ভেবেছিলেন জাস্ট কেকওয়াক হবে। আধুনিক সমরসজ্জায় সজ্জিত সি আর পি এফ এবং স্থানীয় পুলিশের যৌথবাহিনীর বিরুদ্ধে ইউনিভার্সিটি হস্টেলের কটা রোগাপ্যাংলা ছাত্র আর কতক্ষণ টিকবে? ভুলটা ভাঙ্গল কিছুক্ষণের মধ্যেই। প্রায় ঘন্টাদুয়েক হতে চলল লড়াই থামার নামই নেই। উল্টে হস্টেলের ভিতর থেকে উড়ে আসা পেটো আর ককটেলের পরিমাণ বাড়ছে প্রতিমুহূর্তে। বিস্ফোরণের আগুন আর ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন চারপাশ! প্রমাদ গুনলেন আমলামশাই। রাইটার্স আর লালবাজারে খবর দিয়ে আরও ফোর্স আনালেন। কাকস্য পরিবেদনা তাতেও। প্রতিরোধের আঁচ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এদিকে আধবেলা কেটে গেল প্রায়। আমলামশাইয়ের প্রমাদ এবার আশঙ্কায় পরিণত হল। এরপর যদি ঘেরাও ব্যারিকেড ভেঙ্গে রাস্তায় বেরিয়ে আসে ছাত্ররা? তালতলা মাঠ আর কতই বা দূর? ঘামতে ঘামতে দ্রুতহাতে ওয়াকিটকিটা তুলে নিয়ে বার্তা পাঠালেন রাজভবনে। প্রার্থনা একটাই। অবিলম্বে সামরিক বাহিনীকে পাঠানো হোক এই ছাত্রবিদ্রোহ দমন করতে। আমলামশাইয়ের আবেদন মেনে তৎক্ষণাৎ মঞ্জুর  হল আর্জি! ঘন্টাখানেকের মধ্যেই ফোর্ট উইলিয়াম থেকে হস্টেলের সামনে এসে হাজির বিশাল সামরিক বাহিনী। তারমধ্যে একটা জলপাইরঙা সাঁজোয়া ট্রাকে ড্রাইভার কেবিনের মাথায় বসানো ভীমকায় হেভি মেশিনগান। মুহূর্তের মধ্যে ছাত্রাবাস লক্ষ্য করে শুরু হয়ে গেল রাপিড ফায়ার। ফলে ঘরের দরজা খুলে করিডরে বেরিয়ে এসে প্রতিআক্রমণ চালানো অসম্ভব হয়ে গেল ছাত্রদের পক্ষে। এই সুযোগটাই কাজে লাগালো যৌথবাহিনী। আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে তারা ঢুকে পড়ল ছাত্রাবাসের মূল ফটক দিয়ে। ছড়িয়ে পড়ল করিডরে করিডরে। প্রতিটি ঘরের দরজা ভেঙে হ্যাঁচড়াতে হ্যাঁচড়াতে বের করে নিয়ে এল ইতিমধ্যেই সাঙ্ঘাতিকভাবে আহত, রক্তাক্ত ছাত্রদের। পরমুহূর্তেই শুরু হয়ে গেল যৌথবাহিনীর তাণ্ডবনৃত্য! প্রতিটি ছাত্রকে মাটিতে ফেলে নৃশংসভাবে পেটানো শুরু হল। আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত কি নয়, সেই বাছবিচার না করেই। ছাত্রনির্বিশেষে চলল উন্মত্ত প্রহার। আত্মগোপন করতে কিছু ছাত্র ঝাঁপ দিয়েছিল হস্টেলের সামনে ঝিলের জলে। সেখান থেকে তুলে এনে মারতে মারতে অর্ধমৃত অবস্থায় ফেলে রাখা হল নিচের খোলা উঠোন চত্বরে। অতঃপর বেওয়ারিশ মৃত পশুর লাশ টানার মত পা ধরে টানতে টানতে এনে ফেলা হল হস্টেলের সামনে বড় রাস্তায়। ‘সিচ্যুয়েশন ইজ আন্ডার কন্ট্রোল’ – এই মেসেজ পেয়ে ততক্ষণে ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত সেই আমলামশাই। এক প্রত্যক্ষদর্শী ভুক্তভোগী ছাত্রের কাছে শুনেছিলাম আহত, রক্তাক্ত, অর্ধমৃত ছাত্রদের উদ্দেশ করে পৈশাচিক নারকীয় উল্লাসে ফেটে পড়ছিলেন বারবার। “মারও শুয়োরের বাচ্চাদের! শালাদের বিপ্লবটিপ্লব সব ঘুচিয়ে দাও। প্রত্যেকটা হারামির লাইফার কানেকশনের ব্যবস্থা করছি আমি!” সময় যত গড়াচ্ছিল, কাঁচা নর্দমার মত ঝরঝরে পরিষ্কার হচ্ছিল আমলাসায়েবের মুখের ভাষা। পরবর্তীতে ‘৭৭-এর প্রথমভাগে জেল থেকে ছাড়া পাওয়া একজনের কাছে শোনা, যাদবপুর হস্টেল আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়ে আশুতোষ মজুমদার (খোকা), অজিত দত্ত (বড়দা), শ্যামল ভট্টাচার্য, সোনা রায়চৌধুরী, দিলীপ চ্যাটার্জিদের নেতৃত্বে ঢাকুরিয়া, হালতু, কসবা, সন্তোষপুর, কালিকাপুর অঞ্চলে সি পি আই (এম এল) অ্যাকশন স্কোয়াডের বিশাল এক বাহিনী এসে জড়ো হয় যাদবপুর থানার উল্টোদিকের ফুটপাথে। কিন্তু ততক্ষণে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সংখ্যাও বেড়ে তিনগুণ চারগুণ। ফলে টানা বোমা ছুঁড়েও রাষ্ট্রবাহিনীর ব্যারিকেড ভেঙে হস্টেলের ছাত্রদের উদ্ধার করে আনা সম্ভব হয়নি অ্যাকশন স্কোয়াডের পক্ষে। যাদবপুর হস্টেলের ছাত্র-পুলিশ লড়াইয়ে গ্রেফতার হওয়া ছাত্রদের মধ্যে একজন, সেসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র, সুদীপ চক্রবর্তীর মৃত্যু হয় পরবর্তীতে দমদম জেল থেকে পালাতে গিয়ে। সেনাবাহিনীর মেশিনগান থেকে ছোঁড়া অসংখ্য বুলেটের দাগ ঘটনার দীর্ঘকাল পরেও ক্ষতচিহ্নের মতো লেগেছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রাবাসের দেওয়ালে। ঘটনার প্রায় বছরদশেক বাদে, সম্ভবত ‘৮০ কি ‘৮১ সালে আমুল সংস্কার করে হস্টেলের দেওয়াল থেকে মুছে ফেলা হয় এক উত্তাল, উদ্দাম জলোচ্ছাসের মত দ্রোহকালের গায়ে লেগে থাকা সেইসব ক্ষতচিহ্ন! কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকারের নির্দেশে এই অভিযান পরিচালনাকারী সেদিনের সেই আমলা মহাশয় পরবর্তীতে মহান বামফ্রন্ট সরকারের আমলে পুরস্কৃত হয়ে এরাজ্যে আমলা কূলচূড়ামণির পদ অলংকৃত করেছিলেন দীর্ঘকাল। সে ইতিহাস অনেকেরই জানা। ফলে অতিশয়োক্তিতে গেলাম না আর। এরপর কেটে গেছে প্রায় অর্ধশতক। লিখলাম তো ‘মুছে ফেলা হয়’। কিন্তু সত্যিই মুছে ফেলা গেছে কি? উত্তরটা বোধহয় – ‘না’। কারণ সময় নামক এক মহাকালের বহু উথালপাথাল ঢেউ আর ঝড়ঝঞ্ঝা সামলে আজও শহরের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে হিন্দু, হার্ডিঞ্জ, বিদ্যাসাগর, ওয়ান, অলিভ, পিজি, স্বর্ণময়ী, এন আর এস, আর জি কর, মেডিক্যাল…একটা আগুনে সময়কে নিজের গর্ভে লালন করা সেইসব হস্টেলবাড়ি! আর যতদিন এরা থাকবে ততদিন শত চেষ্টাতেও মুছে ফেলা যাবে না ‘৭০-এর দশক আর তার সেইসব শীর্ণদেহ, জীর্ণবস্ত্র, রক্তদেহ, স্বপ্নদর্শী, পথযোদ্ধাদের ! তথ্যসূত্র এবং কৃতজ্ঞতা – সজল মিত্র প্রণবেশ চক্রবর্তী স্বপন দাসাধিকারী ভারতে সশস্ত্র বিপ্লব – ভূপেন্দ্রকিশোর রক্ষিতরায়। জগদ্ধাত্রী পাবলিশার্স রাজনীতির এক জীবন – সন্তোষ রানা। আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড এবং জলার্ক ( বিভিন্ন সংখ্যা ) ফুটপ্রিন্টস অফ ফুট সোলজার্স – অভিজিৎ দাস, সেতু প্রকাশনা সামান্য কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা।

জন্ম ও বেড়ে ওঠা উত্তর কলকাতার পুরোনো পাড়ায়। বহু অকাজের কাজী কিন্তু কলম ধরতে পারেন এটা নিজেরই জানা ছিল না বহুদিন। ফলে লেখালেখি শুরু করার আগেই ছাপ্পান্নটি বসন্ত পেরিয়ে গেছে। ১৪২১ সালে জীবনে প্রথম লেখা উপন্যাস 'দ্রোহজ' প্রকাশিত হয় শারদীয় 'দেশ' পত্রিকায় এবং পাঠকমহলে বিপুল সাড়া ফেলে। পরবর্তীতে আরও দুটি উপন্যাস 'জলভৈরব' (১৪২২) এবং 'বৃশ্চিককাল' (১৪২৩) প্রকাশিত হয়েছে যথাক্রমে পুজোসংখ্যা আনন্দবাজার এবং পত্রিকায়। এছাড়া বেশ কিছু প্রবন্ধ এবং দু চারটি ছোটগল্প লিখেছেন বিভিন্ন পত্রপত্রিকা আর লিটিল ম্যাগাজিনে। তার আংশিক একটি সংকলন বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে 'ব্যবসা যখন নারীপাচার' শিরোনামে। ২০১৭ সালে পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি পুরস্কার।

14 Responses

    1. ছাপার ভুল নয়, সচেতন ভুল মহোদয়া। এবং সেটা এই অধম প্রতিবেদকের। কারণ সেই ছেলেবেলায় আমরা মানে বেজায় ব্যাদড়া টাইপের উত্তুরে বাচ্চারা প্যান্টকে প্যান্টুল, অগিলবিকে অলিভ বা অলিব, অমৃতিকে আমিত্তি বলতুম। আমাদের পাড়ার মা-কাকীমারা ম্যাটিনি শোয়ে মিনার, দর্পনা, ছায়ায় সিনেমা, মুভি বা ছবি নয়, বই দেখতে যেতেন, পাড়ার স্পোর্টসে দৌড়নোর আগে তীব্র চেঁচিয়ে উঠতাম – ‘রেডি, সেডি ( স্টেডি ), অনিমা ( অন ইয়োর মার্ক ), গো ও ও !’ কোট আনকোট এই এররগুলোর জন্য আদৌ লজ্জিত নয়, বরং গর্বিত !

  1. ওই আগুনঝরা সময়েই কেটেছে ছাত্রজীবন। ছুঁয়ে ছুঁয়ে গিয়েছেন ঘটনা ও উজ্জ্বল ছাত্রনেতাদের ।সন্তোষ রাণার কথা আমরা জেনেছি তাঁর কলমে। আপনার লেখায় তাঁর মেধাবী ছাত্রজীবন ও পারিবারিক দায়বদ্ধতা জানা গেল।

  2. স্তাবক আমলা র নাম রথীন সেনগুপ্ত, তিনি নাকি পরিশীলিত ছিলেন , হাফ প্যান্টুলুনের প্লেবয় সিদ্ধার্থ ছিল এর পরিচালক, যার একমাত্র পেশা হুকুমতের বর্জ্যাংগ লেহন। পরে মহামান্য জ্যোতি বাবু তাকে উচ্চতম শিরোপা দিয়েছিলেন ,এরা সবাই গণহত্যাকারী , লেখক এদের মুখের ভাষা এবং দালালির পরিচয় খোলসা করেছেন বলে ধন্যবাদ। এই সব কীট দের পরবর্তী প্রজন্ম মানুষ হয়েছিল কি ? তাতে অবশ্য তাদের অন্ততঃ কিছু এসে যায় না , সুশীলদের গায়ে ফোস্কা পড়ে এদের বিরুদ্ধে কিছু বললে, কিন্তু মানুষেরই বা এদের বাকি জীবন নিয়ে কোনো ঔৎসুক্য থাকবে কেন ,কিছু এসে যাবে কেন ?

    উল্লিখিত প্রতিটি প্রতিস্পর্ধী র মুখ গুলো ভাসছে জ্বল জ্বল করে , স্বপ্নদিশারীএঁরা। আজ যখন প্রায় ৪০ বছর ধরে দেখছি শাসক দলের স্তাবক “আগুনখেকো” প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রনেতাদের তখন সেই “আগুন” টি কে সন্দেহ হয় , তার থেকে ওম বা উত্তাপ নেওয়া যায় না , সাপের বিষের থেকেও ঠান্ডা সব “ঐতিহ্য” … আজকাল সেই সব স্তাবক প্রাক্তনেরা ও নাকি তাদের জীবনী লেখে , আর ৭০ এর সেই প্রতিস্পর্ধীরা জীবন গড়েছিলেন , নিজেদের পাশাপাশি পরের অনেক প্রজন্মের।

  3. লেখায় দুটি ভুল। প্রণবেশ ভট্টাচার্য না হয়ে চক্রবর্তী আর রানা রায়চৌধুরীর জায়গায় রাজা রায়চৌধুরী হবে । অসাবধানতাবশত এবং অনিiচ্ছাকৃত ত্রুটির জন্য ক্ষমাপ্রার্থী

  4. আমি বিষয়ে যাব না। আমি সে নিদাঘ দেখিনি। পড়েছি। কিন্তু গল্পদাদার একি গল্প? মন অবশ হয়ে আসে। এখন আদর্শ অনুপস্থিত।
    আমরা পারলাম না। কিন্তু তাঁরা করেছিলেন। সামাজিক বৈষম্যের অচলায়তন গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন। বামপন্থা কথা বলেছিল। গল্পকার সুপ্রিয় চৌধুরী তোমাকে সেলাম। তবে তাঁদের কথা শোনা যায় না যারা সরকারি আমলার (নকশাল) জামাই হয়ে সরকারি বদান্যতায় বিদেশ গেলেন। ডাক্তার স্নাতকোত্তর না করে বহাল তবিয়তে সমান্তরাল চিকিতসা করছেন। বামপন্থী গডফাদারকে অস্বীকার করেন।
    তাদের কথাও উপন্যাসের চরিত্রে উঠে আসুক। সুপ্রিয় চৌধুরী তোমাকে সেলাম।

    1. মাঝে মাঝে মনে হয় লিখি, পরমুহূর্তেই ভাবি – দ্যুত ! কি হবে লিখে ? ওতো নিজেদেরই থুতু। ফিরে এসে সারা শরীর নোংরা করবে। তারচাইতে বরং তারাই উঠে আসুক আমার কলমে, সেই কবে উত্তরবঙ্গের একটা প্রত্যন্ত গ্রামের নাম বুকে নিয়ে যারা শহীদ হওয়ার চাকরি করতে নেমেছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *