সকাল সকাল এক কাপ গরম চা না হলে চলে না। আর এই চা দিয়ে পৃথিবীর ৭০% মানুষ তাদের দিন শুরু করেন। প্রতি সেকেণ্ডে প্রায় ২৫০০০ চায়ের কাপে চুমুক পড়ছে গোটা বিশ্বে। চায়ের কাপ হাতে নিতেই এক অদ্ভুত ভালো লাগার অনুভূতিতে মন ভরে ওঠে। তৈরি হয় এমন এক মুহূর্ত যা একান্ত ব্যক্তিগত এবং নিজস্ব। চায়ের কাপ হাতে দৌড়তে খুব কম মানুষকে দেখবেন। কাপ শেষে শুরু হয় জীবনের দৌড়। কথা বলতে বলতে, আড্ডা দিতে দিতে চায়ের কাপে চুমুক দেবার মজাই আলাদা। আমার চায়ের নেশা আমার আত্মীয় বন্ধুদের মধ্যে বিখ্যাত। তাই অনেকেই আমকে ‘চা-তক’ বলে ডাকেন। এই মজার নাম গুলো সেই চা আড্ডা গুলোতেই উঠে আসে যেখানে মন ভালো করা সব মুহূর্তগুলো একসঙ্গে স্মৃতির খাতায় লেখা হয়ে যায়। 

চা নিয়ে কিছু কথা

১। ২০০০ কুড়ি ও পাতা দিয়ে এক কাপ চা তৈরি হয়

২। চা খেলে ক্যাফেইনের নেশা হয় না। এটা একটা স্বাস্থ্যসম্মত নেশা।

৩। ভারতবর্ষে চা এর যাত্রা শুরু হয় ৫০০০ বৎসর পূর্বে, আমেরিকায় চা পৌঁছায় ১৯০১ সালে। চায়ের বিশ্ব ভ্রমনের বয়স। 

৪। ১৭০০ খ্রিষ্টাব্দ অবধি চিনে গ্রিন টির প্রচলন ছিল। বিশ্বের চায়ের প্রতি ভালোবাসা বাড়তে দেখে চিন অন্যান্য চায়ের চাষ শুরু করে। 

৫। চায়ের ৩০০০ রকমের পাতা আছে। সারা বিশ্বে জলের পরে সবচেয়ে বেশি খাওয়া হয় চা।

চায়ের ইতিহাস না গল্প?

চিনের এক সম্রাট শেন নুং (২৭৩৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ), দিব্যি সুস্থ মানুষ কিন্তু একদিন সকাল বেলায় বেশ দুর্বল বোধ করতে শুরু করেন। তা হাকিম বদ্যি সব দৌড়াদৌড়ি  শুরু করলেন এবং সম্রাটের চিকিৎসা শুরু হল। কিন্তু কিছুতেই সম্রাটের এই দুর্বলতা কাটতে চাইল না। সম্রাটকে প্রাতঃ ভ্রমণে বার করা হলো, এবং কিছুক্ষণ হাঁটার পরেই একটি গাছের নীচে নিয়ে বসানো হলো। সম্রাট বসে একটু গরম জল খেতে চাইলেন। ওঁর পাশে গরম জলের পাত্র রাখামাত্র সেই গাছ থেকে টুপ করে একটি পাতা খসে পড়ল সেই জলে। জলের রং কিছুসময়ের মধ্যেই লালচে বাদামি হয়ে গেল। সম্রাট কিছুক্ষণ পরে আয়েশ করে জলে যেই চুমুক দিয়েছেন ওমনি ওঁর সারা শরীরে শক্তি তরঙ্গের মতো খেলে গেল। কিছু সময়ের মধ্যেই উনি দিব্যি হাঁটাচলা করতে লাগলেন এবম ক্রমে চায়ের শক্তিশালী জীবনীশক্তির কথা প্রথমে সারা দেশে ও তারপর সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিলেন। চায়ের ইতিহাসে শেন নুং-এর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে গেল। tea leaves

আমেরিকা বরাবরই নিজেদের প্রতিপত্তি নিয়ে খুব হইচই করতে ভালোবাসে, চিন ই বা বেশি পিছিয়ে থাকে কেন? তারাও এসব আজগুবি গল্পের দ্বারা নিজেদের প্রতিপত্তি জগৎ বিখ্যাত করা শুরু করল। কিন্তু চিনের সভ্যতা সত্যি অনেক প্রাচীন। বহুকাল নিষিদ্ধ শহরের তালিকায় নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করে রাখায় এই সব লোককথাগুলো নিষিদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু এই গল্পটা গল্পই কেননা চায়ের গাছ (Camellia sinensis) ছোট ঝোপ জাতীয় গাছ। তার তলায় বসে সম্রাটের চায়ে কোনওভাবে পাতা খসে পড়া অসম্ভব। যাহোক, তাহলে আসল গল্পটা কী?

চা তৈরির সঠিক পদ্ধতি- দার্জিলিং ফার্স্ট ফ্লাশ

সবচেয়ে আগে জানা দরকার জলের বিষয়। খুব ভালো সুগন্ধী চা তৈরি করতে গেলে দরকার মিনারেল ওয়াটার। নলের জল হার্ড ওয়াটার যেটা সাধারণত আয়রন যুক্ত হয়। তাতে চায়ের ওপরে একটা পরত পড়ে যেটা চায়ের সুগন্ধ অনেকটাই টেনে নেয়। 

২ কাপ চায়ের জল ফুটিয়ে গ্যাস বন্ধ করে তারপর তাতে ২ চা চামচ দার্জিলিং ফার্স্ট ফ্লাশ চায়ের পাতা দিয়ে কেটলির মুখ বন্ধ করে রেখে দিতে হবে ৩ মিনিট। জলের তাপমাত্রা ৬০ থেকে ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে চায়ের ভালো সুগন্ধ পাওয়া যাবে। তারপর দুধ ও চিনি চায়ের কাপে নিয়ে চা ছেঁকে কাপে ঢাললে তার সঠিক ফ্লেবার পাওয়া যায়। খেয়াল রাখতে হবে ফার্স্ট ফ্লাশ সাধারণত দুধ ছাড়া বানালে সুগন্ধ পাওয়া যায়। 

ঠাণ্ডা লাগলে যে চা খাবেন

১ কাপ জলে ১টা ছোট মিছরির টুকরো, ১/২ চা চামচ আদা বাটা, ২টো লবঙ্গ, ১/৪ চা চামচ গোলমরিচ ভালো করে ফুটিয়ে নিয়ে তাতে ১/২ চামচ সিটিসি চা পাতা দিয়ে, আগুন নিভিয়ে পাত্রটি ৫ মিনিট ঢেকে রেখে দিতে হবে। এই চায়ে অল্প দুধ ও মেশানো যায়। তারপর ছেঁকে নিয়ে কাপে পরিবেশন।  

এই চা দিনে দুই তিনবার খেলে সর্দি, খুসখুসে কাশি কিছু কমে। আশাকরি উপকার পাবেন। 

 

 

পরের পর্ব ৩ মার্চ

ছবি সৌজন্য: Pixabay

Mohua Roy

মহুয়া এক কর্পোরেট সংস্থায় কর্মরত কাউন্সিলর। ভ্রমণ এবং নতুন নতুন খাদ্য-সংস্কৃতি সম্বন্ধে তাঁর অসীম আগ্রহ।

One Response

  1. চীনের ইউনানের পাহাড়ের চা গাছগুলো, বা আসাম বা বর্মার কিছু পাহাড়ি চা গাছ কিন্তু ছয় থেকে আঠারো মিটার ( ফুট নয়!) উঁচু। 😄

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *