প্রথমবার খাঁটি এদেশীয় যাত্রার আসর দেখে ভারী আমোদ পেয়েছিলেন উইলিয়ম, পরে বাবু রাধামোহন সরকারের সঙ্গে তাঁর সখ্যও গড়ে ওঠে, যাতায়াত নিয়মিত হয়। সেই বৎসরই পৌষ মাসের শেষে রাধামোহনের বসতবাড়িতে বিদ্যাসুন্দর পালায় হীরা মালিনীর বেশে গোপালকে প্রথম দেখেছিলেন উইলিয়াম হারউড। পালার শেষে গোপালের গান আর অভিনয়ে মুগ্ধ হয়ে তার সঙ্গে আলাপও করেছিলেন সাহেব। তারপর কেটে গেছে প্রায় আড়াই মাস, কলিকাতায় ভরা চৈত্র, ইতিমধ্যে উইলিয়াম হোটেল স্পেন্সেস ছেড়ে উঠে এসেছেন চৌরঙ্গির কাছে ভাড়া বাড়িতে, গোপাল এখন মাঝে মাঝে তাঁর কাছে আসে। সাহেবও বাঙলায় বেশ কথা বলতে শিখেছেন, কী এক বিচিত্র উপায়ে দুজন অসমবয়সী ভিনদেশী মানুষের মধ্যে একটি সম্পর্কের সেতু রচিত হয়েছে! সাধারণত সন্ধ্যার দিকে আসে গোপাল, অনেক রাত অবধি উইলিয়মের সঙ্গে গল্পগুজব করে, এক-একদিন সাহেবের অনুরোধে গানও শোনায়। উইলিয়মকে সে বলে উইল সায়েব!

কলিকাতার এই জায়গাটি যথেষ্ট মনোরম। অদূরে হুগলী নদী বয়ে চলেছে, নদীতীরে সবুজ গাছপালায় ঢাকা ময়দানের সামনে বিশাল গর্বনমেন্ট হাউস, তার পেছনে অ্যান্ড্রুজ চার্চ, বাঁদিকের জায়গাটির নাম চৌরঙ্গি। সুন্দর বাগানঘেরা সব বাড়ি চোখে পড়ে, বড় বড় স্তম্ভের উপর টানা বারান্দা, একটি বাড়ি থেকে অন্য বাড়ির মাঝে যথেষ্ট ফাঁকা জায়গা রয়েছে, দূর থেকে গৃহগুলিকে কোনও শান্ত ও গম্ভীর যুবাপুরুষের মতো দেখায়। উইলিয়ামের গৃহটি একতলা, চার পাঁচটি ঘর রয়েছে, সামনে বাগান তারপর প্রশস্ত বারান্দার ওপারে বৈঠকখানা। বৈঠকখানার মেঝেয় একখানি মির্জাপুরী কার্পেট পাতা রয়েছে, তিনটি বড় বড় জানলা রয়েছে এ-ঘরে, ওদিকে শোওয়ার ঘর, প্রতিটি ঘরের সঙ্গেই সংলগ্ন শৌচাগার আছে। এক ঘর থেকে অন্য ঘরে যাওয়ার জন্য ছোট ঠেলা দরজা রয়েছে, মঁসিয়ে দ্য বাস্তের দোকান থেকে কেনা বড় মার্বেল পাথরের টেবিল, আয়না, আরামকেদারা ও পালঙ্ক দিয়ে সমস্ত গৃহখানি সাজানো হয়েছে। মূল বাড়ির বাইরে বাগানে আউটহাউসে ভৃত্য ও অন্যান্য পরিচারকদের থাকার পৃথক বন্দোবস্ত রয়েছে। 

ঘোড়ার দাম পড়ে প্রায় বারোশ তেরোশ টাকা, এই মুহূর্তে অত টাকা ব্যয় করা উইলিয়মের পক্ষে অসম্ভব। ইতিমধ্যেই বাজারে তাঁর অল্প দেনা হয়েছে, এখানে সুদের হার অত্যন্ত চড়া, বছরে বারো টাকা হারে সুদ নেয় বেনিয়ানরা। এক বেনিয়ান কিছুদিন আগে টাকা ধার দেওয়ার সময় উইলিয়মকে বলেছিল, সায়েব আসল টাকা ঘুমাতে পারে কিন্তু সুদের চোকে ঘুম নাই, সে সব্বদা জেগে তাকে! 

বৈঠকখানায় একটি আরামকেদারায় বসে আছেন উইলিয়ম, হাতে সুরাপাত্র, সন্ধ্যা হয়ে এসেছে, সামনের টেবিলের উপর কতগুলি বকুল ফুল একটি সুদৃশ্য চিনামাটির পাত্রে রাখা,পাশেই দুখানি সেজবাতি জ্বলছে, খোলা জানলা বেয়ে গঙ্গার মধুবাতাস ভেসে আসছে, সমস্ত ঘরটি বকুল সুবাসে আচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে। বাইরের বাগানে গন্ধরাজ গাছটি ফুলে ফুলে সাদা, গেট থেকে বাড়ি অবধি পাথর বিছানো সরু রাস্তার দুধারে সারি সারি গোলাপ গাছ, চৈত্র মাসের সন্ধ্যায় নক্ষত্রভরা আকাশ সলমা-জরির নকশা তোলা বস্ত্রের মতো অপরূপ হয়ে উঠেছে। বড় রাস্তায় তেজি আরবি ঘোড়া চড়ে ময়দানের দিক থেকে ফিরে আসছে এক অলবয়সী শেতাঙ্গ যুবতি, সামনে লাগাম ধরে হাঁটছে সহিস, সন্ধ্যার পটচিত্রে অশ্বারোহিনীকে কোনও রূপকথার রাজপুত্রী বলে ভ্রম হয়! সেদিকে তাকিয়ে রয়েছেন উইলিয়ম, একটি ভালো জাতের আরবি ঘোড়া কেনার শখ তাঁর বহুদিনের। ঘোড়ার দাম পড়ে প্রায় বারোশ তেরোশ টাকা, এই মুহূর্তে অত টাকা ব্যয় করা উইলিয়মের পক্ষে অসম্ভব। ইতিমধ্যেই বাজারে তাঁর অল্প দেনা হয়েছে, এখানে সুদের হার অত্যন্ত চড়া, বছরে বারো টাকা হারে সুদ নেয় বেনিয়ানরা। এক বেনিয়ান কিছুদিন আগে টাকা ধার দেওয়ার সময় উইলিয়মকে বলেছিল, সায়েব আসল টাকা ঘুমাতে পারে কিন্তু সুদের চোকে ঘুম নাই, সে সব্বদা জেগে তাকে! 

দেনার কথা ভেবে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে গোপালের দিকে তাকিয়ে উইলিয়ম জিজ্ঞাসা করেন,

-গোপাল, তুমি কখনও সতি দেকিয়াছ?

বৈঠকখানায় কার্পেটের উপর বসে একমনে নিজের দোতারাটি বাঁধছিল গোপাল, ইদানিং তার এই নূতন শখ হয়েছে, দোতারা বাজিয়ে গান গাওয়া। উইলিয়মের কথা শুনে মুখ তুলে শুধোয়,

-সতী?

-হাঁ হাঁ, সতী! 

-দেকেচি সায়েব! উঃ, সে কি চোকে দেকা যায়।

হাতে ধরা হুইস্কির গেলাসে একটি চুমুক দিয়ে উইলিয়ম বিরক্ত গলায় বলেন,

-আহ! তোমাকে কতবার কহিয়াচি আমাকে সায়েব বলিবে না! উইলিয়ম, মাই নেম ইজ উইলিয়ম! 

এই কদিন মেলামেশায় গোপালের আড় ভেঙে গেছে, উড়িষ্যার গ্রাম্য কলাওয়ালা আর সে নাই, শরীরেও জেল্লা এসেছে। লোকে বলে কলিকাতার জল পেটে পড়লেই নাকি চোখমুখ গজায়! একটু হেসে গোপাল বলে,

-ভুল হই গ্যাচে! উইল সায়েব!

-হাঁ, উইল বলিয়া ডাকিবে! 

দু-এক মুহূর্ত পর উইলিয়ম বলেন,

-সতীর কতা কি কহিতেচিলে ?

-সে একবার দেকেচি সায়েব, চিতায় বউয়ের হাত পা বেঁধে তুলে দিইচে, আর কী চিৎকার কচ্চে সে, যন্তনায় চটফট কচ্চে আর

-আর ?

-নেমে পালাচ্চে চিতা তেকে, সব্বাঙ্গে আগুন, পেচন তেকে লোক বলচে, ধরে আন হতভাগীকে, মেরে ফেল, কেটে ফেল, বাঁশের বাড়ি দে মাতায়, চিতায় ফেলে দে!

দৃশ্যটি কল্পনা করেই শিউরে ওঠেন উইলিয়ম, মাত্র কয়েক বছর আগে এই বীভৎস প্রথা আইন করে বন্ধ করা হয়েছে। উইলিয়মের বড় সাধ ছিল যাঁর চেষ্টায় এই পৈশাচিক প্রথা বন্ধ হয় তাঁর সঙ্গে একবার দেখা করার, কিন্তু তা আর সম্ভব নয়। তিন চারবছর পূর্বে সেই বাবু রামমোহন মারা গেছেন। অন্যমনস্ক হয়ে সুরাপাত্রে মুখ ছোঁয়ালেন উইলিয়ম, গোপালের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ জিজ্ঞাসা করলেন,

-গোপাল, তুমি কি মদ খাইবে ?

ইদানিং মাঝে মধ্যে কোনও বাবুর বাড়িতে যাত্রাপালার শেষে মদ সে খায় কিন্তু এখানে সাহেবের কথা শুনে সলজ্জ হেসে দুদিকে মাথা নাড়ল।

গোপালের ভঙ্গি দেখে কৌতুক করে উইলিয়ম বললেন, 

-লজ্জা করিও না, বাবু আশুতোষ দেবের বাটিতে আমি দেখিয়াচি তুমি মদ খাইতেচ!

-ছাতুবাবুর বাড়িতে সেদিন সবাই বল্লে, তাই…

-একানে আমিও বলিতেচি!

সামনে টেবিলের উপর হুইস্কির বোতল রাখা আছে। উঠে গিয়ে একটি কাচের গ্লাসে হইস্কি আর জল মিশিয়ে গোপালের কাছে এসে উইলিয়ম বললেন,

-লও!

আজ বাতাস বড়ই অশান্ত, সমুদ্রে ভাসমান ক্ষুদ্র নৌকোর মতো ঘরটিকে দু হাতে করে দোলাচ্ছে, সেজবাতির আলোয় চারপাশে যেন মায়াভুবনের গোধূলি নেমে এসেছে, দেওয়ালে দুটি বড় বড় ছায়া ভাসছে, চিনামাটির পাত্র থেকে একমুঠি বকুল তুলে নিয়ে আনমনে উইলিয়ম বললেন,

-গোপাল তুমি হীরা মালিনী হইতে পারো না ? 

সাহেবের কথা শুনে একটু অবাক হয়ে গোপাল জিজ্ঞাসা করে,

-হীরা মালিনী ?

-হাঁ, হীরা, তুমি পারো না হইতে ?

-আমি হীরা তো সাজচি বিদ্যাসুন্দর পালায়! আপনি দেকেচেন!

-না, না, আমি সাজার কতা কহি নাই। আমি বলিতেচি সত্য সত্য হীরা মালিনী হইবার কতা!

দু এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বিষণ্ণ গলায় পুনরায় উইলিয়ম বললেন,

-আমার হীরা! হীরা মালিনী!

উইলিয়মের মনে বিদ্যাসুন্দরের হীরা মালিনী জেগে উঠেছে, তার পরনে নীল পাড় মসলিনের শাড়ি, মিথ্যা দুটি স্তন যৌবনবতী রমণীর পদ্মবৃন্তের মতো দৃঢ়, নকল বেণীখানি কালসর্পের মতো কোমরের কাছে পড়ে রয়েছে, গলায় একটি স্বর্ণচাঁপার মালা, বিরহিণীর মতো কাজলে আচ্ছন্ন দুটি চোখ, ঠোঁট আলতায় রক্তবর্ণ, অপূর্ব ছন্দে নদী স্রোতের মতো সে নেচে নেচে গান ধরেছে-মদন-আগুন জ্বলচে দ্বিগুণ, কি গুণ কল্লে ঐ বিদেশি/ ইচ্চে করে উহার করে প্রাণ সোঁপে সই হইগে দাসী। আজ ছয়মাস হল ডোনার কোনও পত্র আসে নাই, সম্ভবত ডোনা বিস্মৃত হয়েছে, ইংল্যান্ডের কোনও যুবকের সঙ্গে হয়তো এখন তার প্রণয় গাঢ় হয়ে উঠেছে, সুদূর কলিকাতায় উইলিয়মের কথা আর কেনই বা সে মনে রাখবে! হীরা মালিনী, সে দূতি, কিন্তু ওই যখন বিদ্যার কাছে যাওয়ার পথে কোটাল প্রহার করছিল তাকে, কী করুণ কণ্ঠে বিলাপ করছিল, এই বকুল কুসুম দিয়ে তৈরি একটি মালা যদি মালিনীর গলায় পরিয়ে দেওয়া যেত, হীরা কি বিদেশির মন বুঝতে পারে না?-এই কথা ভাবতে ভাবতে গোপালের দিকে গাঢ় চোখে তাকান উইলিয়ম। সদ্য যুবক গোপালই কি মালিনী নয়? ওই যে বেদনার মতো মুখখানি, তার কণ্ঠে যেন সুরলোকের দেবী বিরাজ করেন, গোপাল কি হীরার মতো উইলিয়মকে প্রেমকুসুম সুবাসে ভরিয়ে তুলতে পারে না?      

গোপালও উইলিয়মের দিকে মুখ তুলে তাকায়। সেজবাতির অস্পষ্ট আলোয় তাঁর নীল দুটি চোখ দূর কোনও দেশের মতোই অচেনা হয়ে উঠেছে, এই সাহেবকে পূর্বে কখনও দেখেনি গোপাল। দোতারাটি হাতে তুলে নিয়ে মৃদু স্বরে বলে,

-রাতি হচ্চে, আমি আজ আসি সায়েব?!

-চলিয়া যাইবে?

কোনও কথা না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে গোপাল। কয়েক মুহূর্ত পর দূর থেকে ভেসে আসা গলায় উইলিয়ম বলেন,

-সাবধানে যাইও!

—————————————————————————————————————————————-

কয়েক মাস পর আঠারশ সাঁইত্রিশ খ্রীষ্টাব্দের বর্ষায় কলেরায় আক্রান্ত হওয়ার দিন দুয়েকের মাথায় পরবাসে উইলিয়মের জীবন দীপটি নির্বাপিত হয়। চিকিৎসক ডুরাল্ড চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখেননি কিন্তু অনর্গল বমি আর থামানো যায়নি। জল না খেতে দেওয়ার নিদান দিয়েছিলেন ডুরাল্ড, শেষ মুহূর্তে এক ফোঁটা জলের জন্য কাতর হয়ে উঠেছিলেন উইলিয়ম, রোগ শয্যায় তাঁর পাশে গৃহভৃত্য আর কোম্পানির দু-একজন সহকর্মী ছাড়া আর কেউই ছিলেন না, অসলগ্ন প্রলাপের মতো বলছিলেন,

-ডোনার মুখখানি আর মনে করিতে পারি না…ইয়র্কশায়ারের বাগানে কি ফুল ফুটিয়াচে ? কেহ তো জানাইল না…আরবি ঘোড়া আর কেনা হইল না…হীরার কথা কেন বারবার মনে ভাসিয়া ওঠে…গোপালও আসে নাই…আহ! বড় তেষ্টা পাইয়াচে, আমাকে একটু জল দিতে পারো…জলকষ্ট আর সহ্য করিতে পারিতেচি না…ওই যে চাঁদপাল ঘাটে জাহাজ আসিয়া ভিড়িয়াচে…তোমরা মালিনীকে সতী করিয়াচ, জান নাই সতি বন্ধ হইয়া গিয়াচে…কে যেন ডাকিতেচে…কে আসিয়াচে ? উহার মুখ কেন দেকিতে পাইতেচি না!

সেই বছরই শীতকালে লিভারের অসুখে মারা যান রাধামোহন সরকার, কলিকাতার বাবুদের বাড়িতে বন্ধ হয়ে যায় যাত্রাপালার আসর। গোপাল নিজেই এখন একটি ছোট দল তৈরি করেছে, বঙ্গদেশের গ্রামগঞ্জে পালা দেখিয়ে বেড়ায়, বিদ্যাসুন্দরই তার সবথেকে জনপ্রিয় পালাগান।

গোপালের সঙ্গে উইলিয়ামের আর দেখা হয় নাই, শেষবেলায় কবরে নিয়ে যাওয়ার পূর্বে খবর পেয়ে গোপাল আর রাধামোহন বাবু এসেছিলেন। সেদিন যেন আকাশ ভেঙে কলিকাতায় বৃষ্টি নেমেছে, আষাঢ়ের মেঘ বিষণ্ণ সঙ্গীতের মতো ভেসে বেড়াচ্ছে, কবরখানায় কফিনের উপর একমুঠি মাটি ছড়িয়ে দিয়ে অ্যান্ড্রুজ চার্চের ফাদার সজল বাতাসে ক্রুশ এঁকে মৃদুস্বরে বললেন, আমেন! একমুঠি মাটি গোপালও দিল, কবরের পাশেই একটি বড় কদম গাছে কী ফুল এসেছে, চঞ্চল বাতাসের দোলায় গাছের ডালগুলি নুয়ে পড়ছে, কুসুম সুবাসে আচ্ছন্ন হয়ে নিজ দেশ থেকে কত সহস্র মাইল দূরে ঘুমিয়ে পড়ল এক বিদেশি যুবক, আত্মীয় পরিজন কেউ নাই…উইলিয়ম হারউড, ধীরে ধীরে সবাই ভুলে যাবে তাকে, শুধু প্রতি বর্ষায় ওই গাছ থেকে খসে পড়বে কদম রেণু, কলিকাতার আকাশে আবারও ঘন হয়ে মেঘ জমবে, এলোমেলো বাতাস বইবে, কবরের উপরে স্মৃতিফলকটি ঢেকে যাবে মহাকালের ধুলায়, অস্পষ্ট হয়ে আসবে অক্ষরগুলি, প্রেম-অশ্রু-বিরহ-বেদনাচ্ছন্ন একটি জীবনের ছায়াখানি শুধু পড়ে থাকবে প্রবাসে, একাকী!

গোপালের জীবনেও এরপর একটি বড় পরিবর্তন আসে। সেই বছরই শীতকালে লিভারের অসুখে মারা যান রাধামোহন সরকার, কলিকাতার বাবুদের বাড়িতে বন্ধ হয়ে যায় যাত্রাপালার আসর। গোপাল নিজেই এখন একটি ছোট দল তৈরি করেছে, বঙ্গদেশের গ্রামগঞ্জে পালা দেখিয়ে বেড়ায়, বিদ্যাসুন্দরই তার সবথেকে জনপ্রিয় পালাগান। শীতকালে কোনও অখ্যাত গ্রামের ধু ধু মাঠে তাঁবু পড়ে যাত্রার, হয়তো তাঁবুর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে শীর্ণকায়া একটি নদী, সন্ধ্যায় কুয়াশাচ্ছন্ন চরাচরে শোনা যায় হারমনিয়ামের সুর, জ্বলে ওঠে উজ্জ্বল হ্যাজাক বাতি, অসংখ্য মানুষের মাঝে গোল করে দড়ি দিয়ে ঘেরা প্রাঙ্গনে উঠে দাঁড়ায় হীরা মালিনী। মালিনী নাচে, গায়, হাসে, কখনও মাঠের ধুলার উপর কান্নায় লুটিয়ে পড়ে, নক্ষত্রে সাজানো আকাশের নিচে বয়ে যায় শীতের রুক্ষ বাতাস, মানুষজন অবাক হয়ে মালিনীর দিকে চেয়ে থাকে। আর হীরা মালিনীর অন্তরমহলে বসে গোপালের মনে পড়ে যায় এক হতভাগ্য বিদেশি যুবকের কথা, উইল সায়েব, সেই অকালমৃত যুবক অনেকদিন আগে অপরূপ চৈত্রের সন্ধ্যায় তাকে বলেছিল, আমার হীরা! হীরা মালিনী!

হীরা মালিনী পর্ব ১

হীরা মালিনী পর্ব ২

জন্ম পৌষ মাসে, রাঢ়বাংলার এক অখ্যাত মফস্সলে। মূলত গদ্য লেখেন। ২০১৬-তে প্রথম বই 'অক্ষরকলোনি' প্রকাশিত হয় নাটমন্দির থেকে। প্রথম উপন্যাসের নাম 'নয়নপথগামী'। কাব্যগ্রন্থ 'আমি শুধু পাঁচ বছর চেয়েছিলাম।' দুটিই প্রকাশিত হয় ২০১৮-তে। ২০২০-তে বেরোয় তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ 'বাসাংসি জীর্ণানি'। এই বইগুলি সবই ধানসিঁড়ি থেকে প্রকাশিত। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *