কল্যাণ, শান্তি আর সনাতন পরিমণ্ডলের আনন্দ নিয়ে সমস্ত সনাতনী হিন্দুদের মধ্যে এখন সাজসাজ-রব। প্রকৃতি ষড় পরিক্রমায় শরৎ এর আশ্বিন মাস সু-আগত। শিশিরস্নাত শিউলি ফুল আর নদীপাড়ের সাদা কাশবন মন মাতিয়ে তুলছে এর মধ্যে শুরু হতে যাচ্ছে বাঙালি সনাতনী সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় শারদীয় দুর্গোৎসব। দুর্গাপূজার অর্থ অপশক্তিকে অপহৃত করার পর নতুন দিব্য জন্মলাভ। অসুর শক্তি ধ্বংস করার জন্য যুগে যুগে তিনি অবতীর্ণ হন চামুণ্ডা,চণ্ডী,কালিকা,উগ্রচণ্ডা,কামাখ্যা,কাত্যায়নী প্রভৃতি রূপ। মহালয়া অমাবস্যার পরের দিন থেকে দেবীপক্ষের শুরু। মহালয়া অতি পূণ্য তিথি। মহালয়া তিথিতে দেবীপক্ষের সূচনা চণ্ডী পূজা, চণ্ডীপাঠের মাধ্যমে মহালয়া উদযাপিত হয়। এ বারও তার ব্যতিক্রম নয়।মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির উদ্যোগে চণ্ডীপাঠ ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯। সর্ববৃহৎ এই উৎসবের মাধ্যমে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের মাঝে গড়ে ওঠে এক আনন্দময় মহামিলন।

বাংলাদেশের চট্টগ্রাম মহানগরে ১৬টি থানা নিয়ে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, এই দুর্গা উৎসবের আয়োজন করেন। প্রতি দুই বছর পরপর ১১০ জন সদস্য নিয়ে ভোটের মাধ্যমে কার্যকরী কমিটি গঠন করা হয়, এবং ১০০ জন সদস্য নিয়ে উপ-কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি কেন্দ্রীয় ভাবে এবং পাড়া ভিত্তিক তাদের দায়িত্ব পালন করেন। প্রথমত নিজ বাসায় জন্মদাত্রী মায়ের পুজো দিয়ে উৎসবের সূচনা হয়। সন্তানরা জন্মদাত্রী মায়ের পা ধুয়ে মায়ের আশীর্বাদ গ্রহণ করেন, তৃতীয় দিন। এর পর পঞ্চমী তিথিতে বরণডালা নিয়ে জগৎজননী মা দুর্গাকে বরণ করা হয়। চট্টগ্রামে পৌর এলাকায় চারটি স্থানে প্রতিমা তৈরি করে। দেওয়ানজী পুকুর, গোয়ালপাড়া, সিআরবি ও সদরঘাট। দেবীপক্ষের সূচনা অনুষ্ঠানে পতাকা উত্তোলন ও শান্তির প্রতীক পায়রা ওড়ানোর মাধ্যমে করা হয়।

সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতে লোকজন বিভিন্ন পূজা মন্ডপে প্রতিমা দর্শনে যায়, অঞ্জলি দেয়। এখানে উল্লেখ্য ২৩০টি পুজোমণ্ডপ তৈরি হয়। এখানে দর্শনার্থীদের বিভিন্ন সবজি দিয়ে তৈরি খিচুড়ি প্রসাদ হিসেবে বিতরণ করা হয়। উৎসব প্রাক্কালে মাননীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি আলোচনা সভা, শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। বিজয় দশমীতে মায়েরা সিঁদুর খেলেন এবং ঢাকঢোল বাজিয়ে উৎসব মুখর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিমা বিসর্জন দিয়ে পূজা সম্পন্ন করেন। এর পরে লক্ষ্মীপুজো, শ্যামা পূজা উদযাপন করা হয়।

এ বছরও একই ভাবে পূজা উদযাপন করা হবে। এ বছরের নতুন আয়োজন ধর্মীয় নাটক,
বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম এবং থিয়েটার হলে দেখানো হবে। দুর্গা পূজাকে কেন্দ্র করে কমিটির পক্ষ থেকে বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। যেমন- বস্ত্রবিতরণ,চিকিৎসা, শিক্ষা, বাসস্থান, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, ধর্মীয় নাটিকা প্রচার,বিবাহ ব্যবস্থা। প্রতি বছর পুজোর স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়।

উক্ত প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করা হয় মিলন মেলা অনুষ্ঠানে গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে। এতে
কমিটির সকল সদস্যবৃন্দ উপস্থিত থাকেন। এ কর্মকাণ্ড সুষ্ঠভাবে পরিচালনা করার জন্য জেলা প্রশাসক, সিটি কর্পোরেশন,সিডিএ, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ সাথে দ্বিবার্ষিক মত বিনিময় সভা করা হয়।


প্রতিবছর পূজোর স্মরণিকা প্রকাশনা করা হয়। উক্ত প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করা হয় মিলন মেলা অনুষ্ঠানে গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে।এতে কমিটির সকল সদস্যবৃন্দ উপস্থিত থাকেন।
এ কর্মকাণ্ড সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য জেলা প্রশাসক, সিটি কর্পোরেশন,সিডিএ, চট্টগ্রাম
মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ সাথে দ্বিবার্ষিক মতবিনিময় সভা করা হয়।
আমি “প্রমা আবৃত্তি সংগঠন” এর সাথে যুক্ত। সংগঠনের প্রায় ২০-২৫ জন একত্রিত হয়ে আমরা বিভিন্ন পূজামণ্ডপে প্রতিমা দেখতে যাই। গত বছর মাইলের পর মেইল,হেঁটে হেঁটে গান গেয়ে, এক মণ্ডপ থেকে আরেক মন্ডপে লাইন ধরে গভীর রাত পর্যন্ত প্রতিমা দেখা, অঞ্জলি দেওয়া খুব ভাল লেগেছে। দলের ভাইয়েরা ভিড়ের মধ্যে বোনদের রক্ষা করেছে সেটা দেখার বিষয় ছিল।