সংসার তাকে বলে— মেরুদণ্ডহীন‘…
সে রোজ তার মেরুদণ্ড গুঁড়ো গুঁড়ো করে, ছড়িয়ে দেয় বাগানের মাটিতে—
ফুল হবে, রং আসবে গাছে
পোকা সব মরে মরে যাবে

পদ্মফুলের চৌবাচ্চায় গাপ্পিমাছ ঘোরে। দোল খায়। বিদ্যুতের মতো চমকে ওঠে সে! দেখে– তারাও চিনেছে তাকে। চুল আঁচড়ে দিচ্ছে মাছ। তার ঘাম মুছে দিচ্ছে বোগনভেলিয়া। তার বড় শান্ত লাগে– শান্ত শান্ত লাগে। চুপ করে বসে দেখে, উড়ে যাচ্ছে তার শিরদাঁড়া। পাখি হয়ে যাচ্ছে আকাশে। পাখনা গজাল কোন ফুলে? জবার হলুদ রং এসে লাগল তার দাড়িতে। ছুঁড়ে দিল দোল… জবা, হাসনুহানা! সে দেখে তার মেরুদাঁড়া নৌকো হয়ে ভাসছে নদীতে। অস্থিরমতি জল এসে লাগছে শরীরে শরীরে…….

মাছগুলো কাটে ধীরে ধীরে। রক্ত ধোয়। প্যাকেটে প্যাকেটে ভরে রেখে দেয় ফ্রিজে। দাঁত মাজতে ভুলে যায়। বাসিমুখে সারাদিন হাসে। তার গজদাঁতে বসে বসে চিলেরা টিফিন খায় স্কুলে। তাদের থুয়েছে সে মন। তাদের থুয়েছে এই জীবনযাপন। মাথাভরা গাছ তার। চুলের বদলে সে গাছ চাষ করে। মাথাভর্তি আম, বট, ফুলের বিলোল চারা ফোটে। লাল লাল, হলুদ, বেগুনি ফুল ফোটে। সন্তান কলম তার পুঁতে আসে কবরখানায়। স্ত্রী তার অস্থি ভাসিয়ে দেয় অবমাননার নীল স্রোতে–

কেন লেখো! কী হয় এ ছাইপাশ লিখে?’

সংসারে সংসারে ওড়ে ধুলো। সে কবিতাকে বলে— আমার তো ধুলোর শরীর! ও মণি… তুমি মোরে ধূলি দিয়ে ঢেকো… আমি যেন পায়ে পায়ে ঘুরি মানুষের। আমার পাঁজর পরে তাদের পথের সব ছাপ, আমি যেন ধারণ করেছি…. তারা হাঁটে আমার বুকের পর দিয়ে… তারা হাঁটে আমার মুখের পর দিয়ে— আমি শুধু লিপিবদ্ধ করি ইতিহাস– আমি যে দয়াল-কবি! আমি লিপিকার…

কথা তার উড়তে উড়তে ভেসে যায়। নদীর আঁচল পাতা রোগা রোগা দুটি জ্যোৎস্নায়। তার কথা বেজে চলে মূক ও বধির সেই মেয়েটির চোখে….. তার মৃতদেহে গাছ হয়। ফুল ফোটে। পাখি এসে ঘাঁটে বুক-দুটো….. জোনাকির মতো তার করুণ রঙের শরীরে, একমুঠো মাটি দেয় মেয়ে…..

ও সংসার, মেরুদণ্ড কাকে বলে জানো?’

 

*ছবি সৌজন্য: Youtube

ঝিলমের জন্ম ১৯৮৪ -তে। দর্শনের ছাত্রী ছিলেন। লেখায় প্রবেশ সাতাশ বছর বয়সে। অনুভূতির গভীরে তাঁর লেখার শিকড়। ২০১৫ সালে প্রথম কাব্যগ্রন্থ "নিরুদ্দেশ সম্পর্কিত ঘোষণা"। ২০২০-তে দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ "বৃষ্টি পড়া বাড়ি", প্রতিভাস থেকে। ২০২১-এ প্রকাশিত হয় তৃতীয় কবিতার বই "আখরোট" এবং ওই একই বছর, কাশ্মীর থেকে তাঁর বাংলা কবিতার ইংরাজি অনূদিত কাব্যসংকলন- "Memoir Of a Girl" প্রকাশিত হয় মৌলীনাথ গোস্বামীর অনুবাদে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লিখে চলেছেন। "দেশ" অনলাইন পত্রিকায় "নির্বাচিত কবি"-র সম্মান পেয়েছেন। লিখতেই হয় তাঁকে ঈশ্বরের অদৃশ্য নির্দেশের মতো।

2 Responses

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *