আনন্দবাজার পত্রিকায় একদা “পান্তাভাতে” নামে একটি কলাম লিখতেন গুলজার। অনুলিখন করতেন সঞ্চারী মুখোপাধ্যায়। এই কলামে গুলজার স্মৃতিচারণ করতেন বিখ্যাত বাঙালিদের (এবং কিছু কিছু আবাঙালিদেরও) সম্পর্কে, যাঁদের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে তিনি এসেছেন, কাজ করেছেন, দিনযাপন করেছেন। পরে সেই কলাম বই আকারে প্রকাশিত হয় দে’জ পাবলিশিং থেকে। সেই বই থেকেই রবিশঙ্করের এই টুকরো স্মৃতিকথাটি পুনর্মুদ্রিত হল। দে’জ পাবলিশিংয়ের বর্তমান কর্ণধার শ্রী শুভঙ্কর দে-কে বাংলালাইভের তরফে অকুণ্ঠ ধন্যবাদ নিঃশর্তে পুনর্মুদ্রণের অনুমতি দেওয়ার জন্য। গুলজার রবিশঙ্করের সংস্পর্শে আসেন তাঁর পরিচালিত “মীরা” ছবির সঙ্গীত পরিচালনার জন্য। পণ্ডিতজির পরিচালনায়, বাণী জয়রামের কণ্ঠে, হেমা মালিনির লিপে অসাধারণ সব গান তৈরি হয়েছিল ওই ছবির জন্য। রবিশঙ্করের জন্মশতবর্ষে বাংলালাইভের পাঠকদের জন্য রইল সেই নেপথ্য কাহিনি। 

 

একটা চকরাবকরা জামা আর জিন্স পরে যে লোকটি আমার ঘরে ঢুকে একটা হতভম্ব সারপ্রাইজ দিলেন, তিনি রবিশঙ্কর। হ্যাঁ, যাঁর সংগীতের সঙ্গে আমরা কালচারালি বড় হয়েছি। রবিশঙ্কর যে কত বড়, তিনি যে ভারতের নাম পৃথিবীর মানচিত্রে ইত্যাদি, সেসব ক্লিশে আর লিখব না। কেবল একটু গর্ব করে নিই। আলাউদ্দিন খাঁ সাহেবের জন্মদিন উপলক্ষে মুম্বইয়ের- তখন বম্বে- ভারতীয় বিদ্যাভবনে রবিশঙ্কর আর আলি আকবর খান যুগলবন্দি বাজিয়েছিলেন। আর সেই ঐতিহাসিক কনসার্ট, যা পরে রেকর্ড হিসেবে বেরোয় এবং দুনিয়াজুড়ে হইচই ফেলে, সেটা আমি টিকিট কেটে দেখতে গিয়েছিলাম। সারা রাত ধরে শুনেছিলাম।

ওঁকে কাছাকাছি থেকে চিনি, তখনও খুব কাছ থেকে নয়, আইপিটিএ-র সময় থেকে। ‘ধরতি কে লাল’ বলে একটা সিনেমার সুর দিয়েছিলেন। আর ওঁর সঙ্গে কাজ করেছিলেন আইপিটিএ-র সমস্ত সদস্য। এরপর কাট টু নিউ ইয়র্ক। প্রথমবার আমার আমেরিকা যাওয়া, শুধু পণ্ডিত রবিশঙ্করের সঙ্গে দেখা করতে। এখানে একটু ফ্ল্যাশব্যাক-এ যেতে হবে। ‘মীরা’ সিনেমাটা তৈরির কাজ চলছে তখন। সেট লাগবে লাগবে। এমন সময় লতাদিদি বললেন, “আমি এই সিনেমায় গাইব না।” আমি একটু অবাক ও হতাশ। জিজ্ঞেস করলাম কেল গাইবেন না? বললেন, “আমি এখন হৃদয়নাথ মঙ্গেশকরের সঙ্গে একটা নন ফিল্মি অ্যালবাম করছি, এখন আমি অন্য গান গাইব না।” বেশ, আমি সেই কথাই অ্যাকসেপ্ট করে নিলাম। ও দিকে সিনেমার সুরকার লক্ষ্মীকান্ত-প্যারেলাল দেখি প্রায়শই গাঁইগুঁই করে গানের ব্যাপারটাকে দেরি করাতে থাকে। তারপর একদিন প্রাতঃকালে জানতে পারলাম, লতাজি মীরার গলায় গান গাইবেন না বলে ওঁরা সুর দেবেন না। ওকে, তথাস্তু। তখন কিন্তু আমার সেট তৈরি হয়ে গিয়েছে। দিন কয়েক বাদে শুটিং। পঞ্চম আমার বন্ধু। ফলে ও জানতই এ বার এটা ওর ঘাড়ে আসতে চলেছে। ফোন করে বলল, “গুল্লু, তুই আমার বন্ধু, কিন্তু লতাদিদি গাইছে না, আমার সুরে আশা গাইলে কন্ট্রোভার্সি বাড়বে। আর আমার পারিবারিক ফ্রন্ট-এ ঝামেলা হতে পারে।” আতান্তরে পড়লাম। প্রেমজি, মানে প্রয়োজককে খুলে বললাম সব কথা। বললেন, “কোনও ব্যাপার নয়, আমরা না হয় আর এক বার সেট লাগাব। কিন্তু মীরা হওয়া চাই।”

সবাই মিলে খুব খানিক মাথা খাটিয়ে একটা নাম ভেবে পেলাম, যিনি ইন্ডাস্ট্রির মানুষ নন আর সব কন্ট্রোভার্সির ঊর্ধ্বে। পণ্ডিত রবিশঙ্কর। কিন্তু তাঁকে বলবে কে এ কথা? আমাদের প্রডাকশনে তখন হেমন্ত চৌধুরী ছিলেন যিনি কমলাকে চিনতেন। কমলা ছিলেন পণ্ডিত রবিশঙ্করের খুবই পরিচিত। রবিশঙ্করের বহু কনসার্টে সঙ্গত করেছিলেন। তম্বুরা বাজাতেন তিনি। ভারতে রবিশঙ্করের কনসার্ট সংক্রান্ত সবকিছু তখন উনিই দেখাশোনা করতেন। হেমন্ত ফোন করলেন। কমলাজি বললেন, উনি তো নিউ ইয়র্কে। তোমরা চাইলে কথা বলতে পারো। হেমন্ত চৌধুরী একদিন ফোন করলেন। পণ্ডিতজি বললেন, ‘যদি স্ক্রিপ্ট পছন্দ হয় তাহলেই একমাত্র আমি রাজি।’ শুনে আমার একটু সাহস বেড়ে গেল। আমি প্রেমজিকে বললাম, আমি একবার সরাসরি কথা বলতে চাই। ফোন করলাম। ও পাশ থেকে একটা মোলায়েম গলায় উত্তর, ‘আমার যদি স্ক্রিপ্ট পছন্দ হয়, তাহলেই করব। আর হ্যাঁ, লতাজিকে নিয়ে কন্ট্রোভার্সিটা কী? আমি কিন্তু কোনও ঝামেলায় জড়াব না। তুমি তোমার স্ক্রিপ্টটা পাঠিয়ে দিতে পারো।’ আমি বললাম, ‘আমি যদি নিজে গিয়ে আপনাকে স্ক্রিপ্টটা শোনাই?’ ‘তুমি নিউ ইয়র্ক আসবে?’ ‘হ্যাঁ। আসতে চাই।’ কিছুক্ষণ চুপ। ‘আচ্ছা এসো। আমি তোমাদের থাকার জন্য বুকিং-টুকিং করে দেব।’ প্রেমজি বললেন, ‘একা যেও না। সঙ্গে হেমন্তকে নিয়ে যাও। ওকে চেনো তো।’ সেই আমার প্রথম আমেরিকা যাওয়া। পৌঁছে আমাদের হোটেলে গেলাম। বিকেল নাগাদ, ঘরে বেল। এবং আমার হতবাক, হতভম্ব হওয়ার মুহূর্ত, চকরাবকরা শার্ট আর জিন্স-এ দাঁড়িয়ে রয়েছে মধ্যবয়স্ক একজন যুবক।

উনি যে নিজে আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসবেন, এ আমার কল্পনার অতীত ছিল। কথা হল, পরের দিন বাড়িতে গিয়ে স্ক্রিপ্ট শোনাব। কিন্তু তার আগে লতাজির সঙ্গে উনি কথা বলতে চান। লতাদিদি তখন একটা মিউজিক্যাল ট্রিপ-এ ওয়াশিংটনে ছিলেন। আমি ফোন করলাম। আমি লতাদিদিকে বললাম যে পণ্ডিতজি আপনার সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলতে চান। লতাদিদি বললেন, ‘ঠিক আছে। উনি যদি ফোন করেন, তাহলে আমি নিশ্চয়ই কথা বলব।’ সেই ট্য়ুরে মুকেশও ছিল। মুকেশের সঙ্গেও কথা হল। এবং শেষবারের মতো। সেই ট্যুরেই মুকেশ চলে গেল আমাদের সবাইকে ছেড়ে।

আমার এ বার বুক ধুকপুক। কী করে পণ্ডিতজিকে বলি যে লতাদিদি আপনাকে ফোন করতে বলেছেন। তবু অনেক সাহসে বুক ফাঁপিয়ে যতটা মোলায়েম করে, কিন্তু কিন্তু করে বলা সম্ভব বললাম। শুনে রবিদা বললেন, ‘ও আচ্ছা। আমি লতাজিকে ফোন করে নেব।‘ খুব ব্যপ্তি হয়ে গেলে বোধহয় কোনওকিছুর কাছেই পোঁছনো অসম্ভব নয়। কথা হল, এরমধ্যে উনি কিছু সুর করে রাখবেন। আর সামনে তখন ওঁর বেশ কয়েকটা কনসার্ট ছিল বিভিন্ন জায়গায়। তার ফাঁকে ফাঁকে কিছু সুর তৈরি হবে আর কিছু সুর উনি সেপ্টেম্বরে এসে দেবেন। আমি ভয়ে ভয়ে বললাম, ‘দাদা, আমি সেপ্টেম্বরে গান রেকর্ডিং করতে চাই।’ বললেন, ‘তা কী করে সম্ভব! আমি সুর করলেও তোমায় তো বসতে হবে।’ আমি বললাম, ‘আমি যদি এই কনসার্টগুলোয় আপনার সঙ্গে সঙ্গে যাই, আর ফাঁকে ফাঁকে সুরের ব্যাপারটা তৈরি হতে থাকুক।’ আমার দিকে তাকালেন, প্রথমে একটা স্মিত হাসি, আর তারপর একটা অট্টহাস্য। যা বললেন, তার মানেটা দাঁড়ায়, ‘ছোকরা, তুমি তো বড় অ্যাডামান্ট হে!’ লন্ডন গেলাম পণ্ডিতজির সঙ্গে। কাজ হল কিছু। ফিরে এলাম। ফের গেলাম অ্যামস্টারডাম। And this time I was star struck. অ্যামস্টারডাম-এ একটা গির্জার মধ্যে অনুষ্ঠান হচ্ছিল, ডাস্ক টু ডন। বেশ কয়েক জন প্রথিতযশা শিল্পী বাজালেন। মাঝরাতের কিছু আগে পণ্ডিতজি বসলেন বাজাতে। আমি অনুভব করলাম একটা রাত কী করে তৈরি হয়। একটু একটু করে কালো থেকে গাঢ় নীল থেকে আরও গভীর কোনও বর্ণহীন রাত। মোহিত ছিলাম। মোহভঙ্গ হল, যখন দেখলাম চ্যাপেলের ছাদের কাছের অনেক উঁচু প্য়ানেল দিয়ে ভোরের আলো এসে পড়ছে। সেতারে তখন ভৈরবী। সে ভোরও তৈরি করছেন পণ্ডিতজি। ভোরের যেন একটা গন্ধও ছড়িয়ে পড়ছে সুরের সেই মূর্ছনা থেকে। হঠাৎ একটা স্মিতহাসির ঝাঁকড়াচুলের টগবগে যুবকের কথা মনে পড়ে গেল। তিন দিনের সংগীত মহাসম্মেলনের ভোরে যে বাজিয়েছিল আর সারা উডস্টক আরও আরও মোহগ্রস্ত হয়ে উঠেছিল। সে ভোরও ইনিই তৈরি করেছিলেন। মনে মনে ভেবেছিলাম, ঈশ্বর খানিকটা নিশ্চয়ই এ রকমই দেখতে।

অ্যামস্টারডাম থেকে আমরা ফিরলাম বম্বে আর পণ্ডিতজি চলে গেলেন নিউ ইয়র্ক। বললেন, ‘তোমাদের অসুবিধে হবে না। সেপ্টেম্বরেই গান রেকর্ডিং করতে পারবে।’ সেই ভরসায় বুক বেঁধে আমরা ফের কাজে নেমে পড়লাম।

কিন্তু মাথার মধ্যে একটা কথা ঘুরতেই থাকল, লতাদিদি গাইবে না, আশাজি গাইবে না, তা হলে মীরার গলায় পণ্ডিতজির সুরে মণিমাণিক্য ছড়াবে কে? সমাধান রবিদাদাই দিলেন। বললেন, ‘যদি বাণী জয়রাম গানগুলো গায় তোমার আপত্তি আছে?’ আমি তো সবে হাতে চাঁদ পেয়েছি, অসুবিধে কী? বললাম, ‘মোটেই নয়। আর ওর প্রথম গাওয়া হিন্দি গান আমারই তো লেখা। গুড্ডি সিনেমায় – বোলে রে পাপিহারা। কী অসামান্য গেয়েছিল।’ রবিদাদা বললেন, ‘হ্যাঁ, আসলে আমার এক জন ট্রেনড ক্লাসিকাল গাইয়ে দরকার। কারণ মীরার ভজনের নতুন আঙ্গিকে ক্লাসিকাল সুর আর তার মোহ ফুটিয়ে তুলতে পারবে এমন একটা চোস্ত গলা চাই, বুঝলে কিনা! বাণী মনে হয় পারবে।’ 

এ বার ছোট বাচ্চার মতো উত্তেজিত হয়ে পড়লাম আমি। কী যেন একটা হতে চলেছে। আমার মধ্যে মীরার মোহ তখন উথালপাথাল করছে। পণ্ডিতজি সেপ্টেম্বরে এলেন। বাকি গান তৈরি তত দিনে। রেকর্ডিং শুরু হল। সুর তার মায়াজাল বিস্তারে মগ্ন হয়ে পড়ল। আমাদের শিফট থাকত সকাল ন’টা থেকে রাত ন’টা। প্রথম দু’তিন দিন যেন স্বপ্নের মতো বাস্তব তৈরি হল। গান রেকর্ডিং হচ্ছে, তার মূর্ছনায় আমরা আবিষ্ট। কিন্তু তিন-চার দিনের মাথায় লক্ষ করলাম, পণ্ডিতজি সব কিছুই করছেন, গান হচ্ছে, রেকর্ডিং হচ্ছে, রিহার্সাল হচ্ছে, ভুল ধরা হচ্ছে, ফের গান হচ্ছে—সব নিখুঁত, কিন্তু তিনি যেন কোথাও বিষাদগ্রস্ত, কোথায় যেন ছিন্ন। চার দিনের দিন রেকর্ডিং শেষ হওয়ার পর বললেন, ‘আচ্ছা, আমরা কি কাল থেকে দুপুর দু’টো নাগাদ রেকর্ডিং রাখতে পারি?’ আমি বললাম, ‘নিশ্চয়ই।’ কেন জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করিনি। ভেবেছি ওঁর তেমন কোনও প্রয়োজন আছে, যার জন্য উনি এটা বলছেন।

পরের দিন ঠিক দু’টোয় স্টুডিয়োয় ঢুকলেন রবিদাদা, এক রাশ হাসি, প্রচুর ফুর্তি আর সাংঘাতিক হইচই নিয়ে। গোটা স্টুডিয়ো যেন আলোকময় হয়ে উঠল। কিছু পরে আমায় ডেকে বললেন, ‘আসলে কী হয়েছিল জানো, গত চারদিন ধরে আমি সেতারে হাত দিইনি। রেওয়াজ না করলে আমার মনে হয় আমার নাড়ি থেকে কী যেন ছিঁড়ে গিয়েছে। আমি অসম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছি। আজ সকাল চারটে থেকে বারোটা টানা বাজিয়ে সেই ঘাটতি কিছুটা মেটালাম। মনে হচ্ছিল অনেকদিন খাইনি। অভুক্ত ছিলাম। এখন আমি বেশ চাঙ্গা। চলো গিরধর দোপালকে গিয়ে এ বার জাপটে ধরি।’

আমি স্তব্ধবাক। সাধনা যে আসলে শারীরিক, সে দিন বুঝেছিলাম। ডিসিপ্লিন, ভোরে ওঠা, ঘণ্টার পর ঘণ্টা রেওয়াজও – এ সব অর্থহীন হয়ে যায়, যখন সাধনায় না বসলে শারীরিক কষ্ট হয়। আর শরীর যে সবচেয়ে বড় শিক্ষক, এ কথা যে না শরীর দিয়ে বুঝতে পারে, তাকে বোঝানো খুব কঠিন। এ উপলব্ধির বস্তু, বোঝানোর নয়। শব্দ তার কারিকুরি দিয়ে ব্রেনে ঢুকিয়ে দেবে, সে তার কম্ম নয়।

রেকর্ডিং শেষ হল, রেকর্ড বেরোল, আমার স্বপ্নের সাধনা ‘মীরা’ সিনেমাও একদিন তৈরি হল। এরপর পণ্ডিতজির সঙ্গে যে খুব নিয়মিত যোগাযোগ ছিল তা নয়। তবে দেখা হত মাঝে মাঝে, যাকে বলে অকেশনালি। একবার এ রকমই একটা দেখা হয়েছিল ব্যাঙ্গালোরে। তখন মেয়ে অনুষ্কা ছোট।ওঁর স্ত্রী সুকন্যার সঙ্গেও আলাপ হল, সেই প্রথম।

তবে একটা অদ্ভুত স্মৃতি, অস্বস্তিকর কিংবা মজাদার, যা-ই বলি না কেন, সেই সাক্ষাৎকে স্মরণীয় করে রেখেছে। বেশ গল্পগুজব আড্ডার পর, সুকন্যা আমায় হঠাৎ একটা প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আমায় অনেকটা রাখীজির মতো দেখতে না?’ আমি থতমত। এ প্রশ্নের ঠিক কী জবাব হয়, তা আমার কল্পনারও বাইরে। শব্দ, ভাষা আর বাক্য নিয়ে যতই লোফালুফি করি, বিরাট স্মার্ট উত্তর দিয়ে ফেলব, দেখলাম সে বিদ্যে আয়ত্ত করতে পারিনি। কেবল আমতা আমতা করে বললাম, ‘আপনাদের দুজনের সৌন্দর্য তো এক্কেবারে আলাদা।আমার পক্ষে এর বিচার করা খুবই দুষ্কর।’

তবে, খেয়াল করলাম, পণ্ডিতজির ঠোঁটের কোণে একটা দুষ্টু হাসি মিলিয়ে গেল। সেটাকে আর ডিকোড করার চেষ্টা করিনি।

আসল নাম সমপূরণ সিং কালরা আর কেউ মনে রাখেনি। ছদ্মনাম গুলজারই পরিচয়। কারণ এ নাম নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান। কবি, সাহিত্যিক, চিত্রনাট্যকার, চিত্রপরিচালক এবং মেধাজীবী হিসেবে বিশ্ববন্দিত। গ্র্যামি থেকে অস্কার - পুরস্কারের তালিকায় রয়েছে সবই। জন্মসূত্রে অবাঙালি হলেও হৃদয়ে, মননে, লেখনে আদ্যন্ত বাঙালি। রবীন্দ্রনাথ কণ্ঠস্থ। বইয়ের সংখ্যা অজস্র। পরিচালিত বিখ্যাত সিনেমা - পরিচয়, খুশবু, মৌসম, আঁধি, মীরা, ইজাজত, কোশিশ, লেকিন-সহ অসংখ্য।

One Response

  1. অসামান্য এই সংযোগ। সকলে সহমত না হলে বঞ্চনার বোঝা কী বিপুলই না হতো! ধন্যবাদ এমন স্মৃতিকথনটি আবার পড়বার সুযোগ করে দেবার জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *