১৬ বছরের প্রাণবন্ত চঞ্চল কিশোরী অনন্যা গ্রোভার| দাদু -ঠাকুমা‚ মা-বাবাকে নিয়ে ভালই দিন কাটছিল তার| কিন্তু গত বছর হঠাৎই কর্কট রোগে আক্রান্ত হয়ে ঠাকুমাকে হারান এই কিশোরী| স্ত্রীর মৃত্যু সহ্য করতে না পেরে এক বছরের মাথায় অনন্যার দাদুরও মৃত্যু হয় |
ঠাকুমার মৃত্যুর পর পরিবারের সবাই অনন্যার দাদুর সঙ্গে আগের থেকেও বেশি সময় কাটানোর চেষ্টা করতেন| কিন্তু তা-ও উনি একাকিত্বে ভুগতেন| সব সময় মন খারাপ ঘিরে থাকত তাঁকে| কিছুই চোখ এড়ায়নি অন্যন্যার| অনন্যার কথায় ‘দাদুর জন্য আমরা ছিলাম কিন্তু তা সত্ত্বেও দাদুর একলা লাগত| আমার মনে প্রশ্ন জাগে এমন তো অনেকেই আছেন যাঁদের পরিবার নেই‚ তাঁরা তা হলে কতটাই না নিঃসঙ্গতায় ভোগেন|’
অনন্যা বুঝতে পারে ঠাকুমাকে হারানোর পর দাদু বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য খুঁজে পাচ্ছিলেন না‚ এবং যখন কারওর জীবন উদ্দেশ্যহীন হয়ে যায় সে আর বেঁচে থাকতে চায় না|

বন্ধুদের সঙ্গে এই নিয়ে অনেক আলোচনা হয় অনন্যার| বহু আলোচনার পর সবাই ঠিক করে এমন একটা কিছু করতে হবে যাতে বয়স্করা বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য না হারিয়ে ফেলেন| অনেক ভাবনা চিন্তার পর অনন্যা‚ অনুষ্কা‚ আরীফা‚ বনশিখা এবং বসুধা নয়ডার অ্যামিটি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের এই পাঁচ জন কিশোরী মিলে এমন একটা অ্যাপ বের করেছে যাতে বৃদ্ধাশ্রমের বয়স্ক ব্যক্তি ও অনাথ বাচ্চাদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা যায়|
এই অ্যাপের প্রধান উদ্দেশ্য দুই একাকী ব্যক্তির মধ্যে বন্ধুত্ব স্থাপন করা। তাই অ্যাপটার নাম ও রাখা হয়েছে ‘মৈত্রী’| এই নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অনন্যা বলে ‘বয়স্ক ব্যক্তিরা একাকিত্বে ভোগেন অন্য দিকে অনাথ শিশুরাও বাবা-মায়ের ভালবাসা পায় না| ‘
চলতি বছরের মার্চ মাসে রিসার্চ আরম্ভ করে ওই পাঁচ কিশোরী| ১৪০ জনের ও বেশি বৃদ্ধবৃদ্ধা ও অনাথ আশ্রমের বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলে ওরা| জুলাই মাসে অ্যাপটি লঞ্চ করা হয়| অনন্যা জানিয়েছেন এর মধ্যেই হাজারের ও বেশি সংখ্যক ডাউনলোড করা হয়েছে এই অ্যাপ| এই মুহুর্তে দিল্লির ও তার আশপাশের বৃদ্ধাশ্রম এবং অনাথ আশ্রমের সঙ্গে কাজ করছে ওরা| কিন্তু ভবিষ্যতে সারা দেশের বৃদ্ধাশ্রম ও আনাথ আশ্রমের মধ্যে সেতু গড়ার পরিকল্পনা আছে ওদের|
তিন ধরনের ইউজার আছে এই অ্যাপের| স্বেচ্ছাসেবকেরা এই অ্যাপের মাধ্যমে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন| কোনও ব্যক্তি আবার অর্থ দিয়েও সাহায্য করতে পারেন| এ ছাড়াও অনাথ আশ্রম ও বৃদ্ধাশ্রমের কর্তৃপক্ষের মধ্যেও যোগযাগ থাকবে এই অ্যাপের মাধ্যমে|