আগের পর্বের লিংক: খলিল জিব্রানের দ্য প্রফেট-এর অনুবাদ: কথামুখ, প্রেম, বিবাহ, সন্ততি, দান ও দাক্ষিণ্য

পান-ভোজন

এবার সরাইখানার পাহারাদার এক বুড়ো বলল, পান –ভোজন বিষয়ে আমাদের কিছু বলুন।
তিনি বললেন:
শুধুমাত্র ধরিত্রীর সুঘ্রাণেই কি বাঁচতে পারো তুমি, যেমন ওই বায়ু-উদ্ভিদ কি আলো সহ্য করতে পারে।
কিন্তু যবে থেকে খাবারের প্রয়োজনে তোমাকেও প্রাণিহত্যা করতেই হয় এবং নিজের তৃষ্ণা মেটাতে যখন সদ্যোজাত শাবকটির জন্য উৎসারিত ওই মা গাভীর দুধ লুঠ করে নিতে হয়, তখন এ দুটি কাজকেই পুজো হিসেবেই দেখ।
তোমার খাবার টেবিলটি হোক সেই বেদি, যেখানে পবিত্র ও নিষ্পাপ বনরাজি এবং সমতলের বলিদান চলছে, শুধুমাত্র মানুষের খাবারের চাহিদা মেটাতে যা সর্বতোভাবেই পবিত্রতর এবং নিষ্পাপ। 
পশুটিকে হত্যা করবার আগে, নিজের হৃদয়েও তার সঙ্গে একবার কথা বলে নাও: 
“যে শক্তিতে তোমাকে হত্যা করছি, সেইভাবেই আমি নিজেও নিহত হব; এবং আমিও তো ভোজ্য হব।
যে বিধিতে আজ তুমি আমার হাতে খাদ্য হিসেবে প্রেরিত, সেই একই বিধিতে আমিও প্রেরিত হব আরও শক্তিমানের হাতে।
ব্যাপারটা তোমার বা আমার রক্ত নয়, আসল হল সেই প্রাণরস যা পুষ্টি দিচ্ছে স্বর্গের গাছগুলিকে।”

তোমার দাঁতে যখন আপেলটি পিষবে, তখনও তোমার হৃদয়ে তাকে বোলো:
“হে বীজ-রাশি, আমার শরীরেও তো তুমি বাস করবে,
এবং তোমার ভবিষ্যতের মুকুলগুলিও ফুটে উঠবে আমার হৃদয়ে।
তোমার সুরভিই হবে আমার শ্বাস। এবং দু’জনে একসঙ্গে আনন্দেও মাতব সমস্ত ঋতুতে।”
আর হেমন্তে, তোমার দ্রাক্ষাকুঞ্জগুলি থেকে যখন সরস আঙুর সংগ্রহ করবে মাড়াই কলে দিয়ে মদ তৈরি করবার জন্য , তখনও নিজের হৃদয়ে বোলো:
“আমি নিজেও তো একটা আঙুরের খেত এবং আমার ফলগুলিও সংগৃহীত হবে মাড়াই কলের জন্যে,
নতুন মদিরার মতো, আমিও সঞ্চিত থাকব ওই অনন্তের কলসে।”
আর যখন মদিরা স্পর্শ করবে শীতের হিমে, তখনও প্রতিটি পেয়ালার জন্য যেন তোমার  হৃদয়ে একটি করে গান থাকে;
এবং সেই গানেই ধরা থাক হেমন্ত ঋতু, সেই দ্রাক্ষাকুঞ্জ এবং সেই আঙুর মাড়াই কলের যত স্মৃতি।

Mandar Mukhopadhyay

আড্ডা আর একা থাকা,দুটোই খুব ভাল লাগে।
লিখতে লিখতে শেখা আর ভাবতে ভাবতেই খেই হারানো।ভালোবাসি পদ্য গান আর পিছুটান।
ও হ্যাঁ আর মনের মতো সাজ,অবশ্যই খোঁপায় একটা সতেজ ফুল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *