গল্পের চরিত্ররা:
তিখিটিমা: সদাহাস্যময়ী মেয়েটির চোখে পলক পড়ে না। মাথায় তার একজোড়া ঘুঘু। তাদের একটা বোবা, অন্যটা মাসে একবার ডাকে। তিখিটিমার হাসির শব্দে খানখান হয়ে ভেঙে যায় জানলার কাচ।
লজপ: ছেলে না মেয়ে বোঝা যায় না। রংহীন মুখ, শরীর টলটল করে গড়িয়ে যায়। চোখের ভেতরে সাদা অংশ নেই, কালো মণিদুটো রয়েছে শুধু। চুল, ভ্রূ সব জলরঙের। হাতপা থেকেও যেন নেই। মাঝেমাঝে গর্জে ওঠে, ফুলেফেঁপে ওঠে দশগুণ আকারে।
তেগুজন: লাল টকটকে রঙের এই ছেলেটির পেটে স্টিম ইঞ্জিনের বয়লারের মতো গর্ত। সেখানে সবসময়েই আগুন জ্বলছে। লজপ ছাড়া সবাই ওকে ভয় পায়। ওর পেটের ভেতর থেকে এক শুয়োরছানা উঁকি দেয়।
মবরুহা: এরোপ্লেনের স্বপ্ন দেখা ছেলেটার হাতে একটা বাজপাখি। চোখের মণিদুটো এরোপ্লেনের মতো আকৃতির। কাল্পনিক আকাশে এরোপ্লেনের ছবি আঁকে সবসময়ে। মাঝেমাঝে তাকে কেউ কেউ উড়তেও দেখেছে।
বনশূম: শরীর বলতে শুধু দুটো হাত। তাতে ধরা একটা সাদা পাথরের মুণ্ডহীন মূর্তি যার স্কার্ট যেন হাওয়ায় উড়ে ওপরে উঠে যাচ্ছে, বনশূম সেই পাথরের স্কার্টকে নামানোর চেষ্টায় মেতে আছে। ওই হাতদুটো দিয়ে মাঝেমাঝেই তবলা বাজায়।
এদের পাঁচজনই কিশোর বা কিশোরী।
ট্রেন: মুখে লৌহমানবের আদল। মাথায় কয়েকটা লোহার কাক গুলতানি করে। কামরাগুলো যেন এক একটা খাঁচা। ওই পাঁচজন দলবল-সহ পাঁচটি কামরায় চলেছে। প্রত্যেকের কামরায় আছে নিজের মতো অবয়বের ডুনমু। প্রভুদের তালে তাল দেওয়া ছাড়া এদের কোনও কাজ নেই। আর আছে কয়েকটা কঙ্কাল। তাদের নাম আলফা, বিটা, গামা। তারা প্রত্যেকে খাটিয়ায় শুয়ে থাকে সারাক্ষণ। খাটিয়ার নীচে তাদের পোষা কুকুরের কঙ্কালগুলোও সারাক্ষণ হাসে।
ট্রেনের নিচে রয়েছে গাঢ় নীল রঙের দুটি রেললাইন। তারা বক্ররেখায় সমান্তরাল চলেছে।
১
ট্রেন চলেছে এঁকেবেঁকে ঝেঁকেঝেঁকে। অকারণ অপলক তিখিটিমা গেয়ে ওঠে, ঘুঘুদুটি অকারণ ঘূ ঘূ বলে নেচে নেয়। ডুনমুরা শুয়ে পড়ে ভাবছে— তিখিটিমা কোথায় যাচ্ছে? আজ এই অসময়ে কেউ নেই চারপাশে! তিখিটিমা কোথায় চলেছ আজ, গন্তব্য থেকে দূরে, ঘোরের ভেতর, তিখিটিমা আর দুই ঘুঘু— বোবাপাখিটাও গেয়ে উঠবে ভাবছে। রাত এল, চাঁদ এল, তিখিটিমা তুমি কই?
ডুমনুরা গাইছে-
আমরা চাঁদের ঘরেতে যাবই যাব
চরকা কাটব ঘুরর ঘুরর ঘুর
আমরা তারার গাঁয়েতে যাবই যাব
চমকাবো চুর চুরর চুরর চুর……
২
ট্রেনটিও বলেছে-
তিখিটিমা তিখিটিমাটি কোথায় তুই?
কঠিন মুখটি তোমাকে মানায় কই
লজপকে ডাকো তাহলে তোমরা কেউ
কেউ এল নাকি, না হয় ভুলই সই
লজপ-এর টলটলে চোখে জল, জল আর জল… জলময় কামরায় লজপ থাকে, ডুমনুরা ডুবে ডুবে জল খায়, ভেজা বাংকে গড়াগড়ি দিয়ে গেয়ে ওঠে—
আরও আরও জল খাব খুব, ডুব
ভিজে চুপচুপে হব থুপথুপে, খুব
ভিজভিজভিজ ফুস ফুস ফুস গুব
৩
পেটে আগুন পুষে আর কতদিন জ্বলবে তুমি? তেগুজন, তেগুজন… কে যেন ডাকে! তেগুজন ফুঁসে ওঠে! দাউদাউ পেট কয়লা খেয়ে, আরও জোরে ছোটে ট্রেনটির দেহ। ভয় পেয়ে চোখ বুজে ফেলে কাক। ভয় পেয়েছে লোহার মুখও। নীললাইনে ফুলকি ওড়ে, বাতাস গরম, মবরুহা কাৎ।
লজপকে ডাক, লজপকে ডাক্! কান্না ভুলে আসুক এবার। ভুলিয়ে দিতে বিশ্ব সবার। যাবে না সে আজ- খবর দিয়েছে। তারও ভীষণ মন খারাপ আজ! টরেটক্কায় বোল উঠেছে, দুটো হাত শুধু এগিয়ে এলো, জলপর ধারে পুতুল খেলায়, স্কার্ট ওড়ে যার সর্বক্ষণে। মণিময় চোখে হাতের আড়াল-
কেরে, কেরে… ছাড়, ছাড় ছাড় আজ! পাজি!
ভাল্লাগে না, ভাল্লাগে না
বনশূম তুই ভীষণ পাজি!
৪
মিষ্টি মুখের শুয়োরছানা গেয়ে উঠেছে-
ঘোঁত ঘোঁত ঘোঁত
ঘুররঘুররর ঘোঁতঘোঁতঘোঁত
টকটকাটক টকাটকটক… ভ্রুম!
এরোপ্লেনের শব্দে ভুলে
চোখের তারায় আকাশ ভরে
সেই ছেলেটি কোথায় গেল?
মবরুহা উড়ছে। এরোপ্লেন চোখ দেখে নিয়েছে, আকাশে আছে অন্য কেউ, কেউ এসেছে তারই আকাশে। দূরাগত কোনও সঙ্কেত ধরা পড়েছে তার রাডারে। ক্ষিপ্ত দু’হাত তুলে বনশূম ডাকছে ওকে। তেগুজন রাগে জ্বলছে ফের— নেমে আয় ওরে মবরুহা, পড়ে যাবি! এই আমরাই শুধু আছি। আর কেউ ছিল না কখনও। তুফান উঠেছে, কাঁপছে ট্রেন থরথর, নীল লাইন শঙ্কায় দোলে। এই বুঝি থেমে গেল ট্রেন…। যাওয়া হল না আর প্রান্তিক স্টেশনে! ঝড়ে কাক উড়ে যায় বারবার। এক্সপ্রেস থামতে জানে না, উড়ল ট্রেন হাওয়ার আগে…
ট্রেনের মুখে লৌহমানবের আদল। মাথায় কয়েকটা লোহার কাক গুলতানি করে। কামরাগুলো যেন এক একটা খাঁচা। ওই পাঁচজন দলবল-সহ পাঁচটি কামরায় চলেছে। প্রত্যেকের কামরায় আছে নিজের মতো অবয়বের ডুনমু। প্রভুদের তালে তাল দেওয়া ছাড়া এদের কোনও কাজ নেই। আর আছে কয়েকটা কঙ্কাল। তাদের নাম আলফা, বিটা, গামা। তারা প্রত্যেকে খাটিয়ায় শুয়ে থাকে সারাক্ষণ।
মবরুহা দুরন্ত বেগে উড়ছে। ওই সেই অযাচিত যান, কৌশলে এসেছে এ আকাশে। ধরাশায়ী করে ওকে নামিয়ে আনতে হবে আজই। ভেবেছিল চলে যাবে। ভাবনায় ভুল ছিল তার। ক্ষতি করেছে ওরা আকাশের। ছিদ্র করেছে এত বড়! যে ছিদ্রপথে এসেছে তারা। চুরি করে নিয়ে যাবে এই ট্রেনটিকে-
শান্ত হ’ তুই মবরুহা, নেমে আয়। ওই দেখ লজপ এসেছে। দু’দণ্ড ওর কাছে গিয়ে বস! ধীরে ধীরে নেমে এল সে, প্রলয় কমে এল, রোদ উঠল ফের। আবারও ট্রেন চলল ঝেঁকেঝেঁকে, এঁকেবেঁকে।
৫
তেগুজন রেগেছে খুব সব শুনে। নাকমুখ দিয়ে হলকা উঠছে!
কারা ওরা? আমাদেরই আকাশ ফুটো করে এসেছে আমাদেরই ঘাড়ে! সবকটাকে যদি না পুড়িয়েছি…। তিখিটিমা চুপ, লজপও অশান্ত। ঢেউ উঠেছে কামরায়, ফুলেফেঁপে উঠেছে জল। এই বুঝি বানভাসি হল, ভেসে গেল ট্রেন! কে কাকে শান্ত করে আজ!
দেখেশুনে বৃদ্ধ কাকটি এল ওদের কাছে। গলা ঝেড়ে সে বলে, ওরে শোন তোরা, করিসনে গোল। এখন কী আর রেগেমেগে কেউ কিছু করে! স্থির বুদ্ধি যার, সেই জেতে। ওদের তাড়াতে হবে- এই লক্ষ্য রেখে করি এক মস্ত প্ল্যান! তোরা পাঁচজনে বল, কী ভেবেছিস মনে। তার আগে যে যার কামরায় গিয়ে ভাবতে থাক।
৬
এই যে দেহহীন আমি, বনশূম। শরীর কোথায় আমার? নেই! তবেই হয়েছি আজ এই শূন্যস্থান। ঘুরিয়ে বললে, আমার শূন্য শরীর থেকেই জন্মেছে ওরা। ফলে ওরাও গোল্লা অতি মহাশয়! আমি এই গোল্লাই দেব শত্রুদের। আমার এই বাজপাখি ওড়ে। ডাকলে ফেরে, হাতে এসে বসে। এরোপ্লেনের সঙ্গে বাজি রেখে এক দমে কত দূর উড়ে যায়… শ্বাসবায়ু কাতর হলে ফেরে। আমি ওর বুক ভরে হাওয়া দিই। এই বেদম হাওয়াই দেব ওদের, আমি মবরুহা!
তেগুজনের পেটে আগুন জ্বলতেই দেখেছ! ওর খিদে মিটে গেলে ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে যেতেও দেখেছ। কিন্তু ভেবেছ কী, এই খিদে, ঘুম না থাকলে আগুন নিভত ক্যামনে? আগুন না নিভলে তোমাদের দুনিয়া হত ছারখার। তেগুজন তাই বলে- এই আগুনেই পুড়িয়ে মারব ওদের!
শীতল ও শান্ত লজপ-র আর একটা চেহারা আছে। ডুবিয়ে, ভাসিয়ে দেয় সব। যে মহাপ্রলয় থেকে রক্ত, মজ্জা, শুক্র, শোনিত জন্মেছে, সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে দিয়েছে প্রাণ, জীবনদায়ী হয়েও সে অঙ্গীকার করে- শত্রুর শেষ দেখে ছাড়ব!
দেহের অন্তঃস্থলের জন্ম দিয়েছে তিখিটিমা। অস্থি, মাংস যদি নাই থাকত, পেত কি কেউ শরীর? ভূমিও সে, আধারও সে। নরম মেয়েটি কঠিন হলে চৌচির হবে ধরণী। মাথার ঘুঘুদুটি পাথর হয়েছে সব দেখে। তিখিটিমা বলে— করবই শত্রুর নাশ!
৭
ট্রেনের মুখেও চিন্তার ছাপ। কাকেদের মাথায় চেপেছে দুশ্চিন্তার পাহাড়! শত্রুর রূপটি কেমন সেটা জানা চাই। বল হে মবরুহা, তারা কারা? কোথা থেকে এল আকাশে? কোথা থেকে এসেছে জানা নেই। ওদের আছে এক চাঁদের আকৃতির যান, রাতে যাকে চাঁদ বলে ভ্রম হয়, দিনে লুকিয়ে থাকে সূর্যের আড়ালে। ওই যানে ওরা সাতজন-
মবরুহা দুরন্ত বেগে উড়ছে। ওই সেই অযাচিত যান, কৌশলে এসেছে এ আকাশে। ধরাশায়ী করে ওকে নামিয়ে আনতে হবে আজই। ভেবেছিল চলে যাবে। ভাবনায় ভুল ছিল তার। ক্ষতি করেছে ওরা আকাশের। ছিদ্র করেছে এত বড়! যে ছিদ্রপথে এসেছে তারা। চুরি করে নিয়ে যাবে এই ট্রেনটিকে-
সমস্বরে বলে সবাই- সাতজন??
হ্যাঁ ওরা সাতজন। জনা দুই বামন, শুধু ফাইফরমাশ খাটে। বাকি পাঁচজন হল শয়তানের দাস। ত্রাসও বটে। হাড়হিম হয়ে যাবে তাদের চেহারা দেখে!
কেমন, কেমন? আতঙ্কে জানতে চায় ওরা।
ড্রাগনের মতো সবুজ চামড়া তাদের। আগুনমুখো। ভাঁটার মতো চোখ জ্বেলে সামনের স্ক্রিনে ছুঁচলো নখ দিয়ে আঁকিবুকি টানে। সে হরফের মানে বুঝিনি। খাদ্য বলতে যা পায় হাতের কাছে— ইট, কাঠ, লোহা, মরিচ… মায় পশুপাখি। যদিও খাবারের সন্ধানে তারা আসেনি, এসেছে আমাদের নিতে।
তার মানে? কিছুই বুঝলাম না মোরা!
মানে— আমাদের। এই তিখিটিমা, লজপ, তেগুজন, বনশূম আর আমি— আমাদের পাঁচজনকে নিয়ে যেতেই এসেছে।
ভয়ে, আতঙ্কে স্তব্ধ হয় ওরা কিছুক্ষণ। সবশেষে প্রাচীন কাকটি মাথা নেড়ে ক্র ক্র ডাক দেয়। এই ডাকের অর্থ জানে বাকি কাকেরা। ঘাড়ের পালক ফুলিয়ে ওরা অপেক্ষায়…
ওই, ওই! দূর থেকে কে যেন ক্র ক্র উত্তর দেয়! সাদা ধবধবে এক কাক এসে বলে— সমস্যা কী? সব শুনেটুনে হাই তুলে ঘুমিয়ে নেয় দেড়ঘণ্টা। অবশেষে কান চুলকিয়ে সে বলে— ভেব না অত! কাল হবে সম্মুখ সমর! আমার পিছে এস তোমরা। ঠিক যেমনটি বলব, তেমন করবে কাজ। কথার অমান্য হলে ভস্ম হবে সব্বাই। আমি যাই। কাল কাকভোরে দেখা…
৮
চরম উত্তেজনা ট্রেনে। যে যার অস্ত্রে শাণ দিচ্ছে। আলফা, বিটা, গামা নামের নিষ্কর্মা কঙ্কালগুলোও খাটিয়া ছেড়ে উঠে এসেছে। ডুনমুরাও মাথা ঠুকে শক্তি বাড়াচ্ছে। নীল রেললাইন উত্তেজিত হয়ে লালবর্ণ হচ্ছে মাঝেমাঝে। সকলে মিলে উত্তেজনেয় গান ধরেছে-
চল, চল, চল
ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল
আমরা করব বেশ বদল
চলরে, চলরে, চল!
সত্যিই তারা একে অপরের বেশ বদলে নিয়েছে সাদা কাকের পরামর্শ অনুযায়ী। কে মবরুহা, কে তেগুজন, কে লজপ আর কে তিখিটিমা, কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। অন্ধকার ফিকে হয়ে এল। ওই, ওইই! ক্র ক্র ক্র… যুদ্ধের ভেঁপু বেজে উঠল। ট্রেনটিও সাদা কাকের পিছনে ডানা ঝাপ্টে উড়ান দিল সেই ভয়ঙ্কর যানের সামনে। সাদা কাক ডেকে উঠল আবারও— ক্র ক্র! লক্ষ লক্ষ কাকেরা সমস্বরে ডেকে উঠল— ক্র ক্র! তাদের ডাকে কানে তালা ধরে গেল ড্রাগনমুখোগুলোর। আগুন জ্বালবে কিনা ভাবতে ভাবতেই লজপ, যে সত্যি লজপ নয়, ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। এই বুঝি লজপ ওদের স্ক্রিন ভিজিয়ে দিল— ভয়ে কাঁটা দিল ওদের সবুজ চামড়ায়। যানের ছাদ থেকে লজপ-র গায়ে কে যেন ঢেলে দিল রাসায়নিক তেল। সে ছিল তেগুজন। দপ করে জ্বলে উঠল। আগুনে আগুনে ছারখার করে দিলো ককপিট।
তেগুজনের পেটে আগুন জ্বলতেই দেখেছ! ওর খিদে মিটে গেলে ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে যেতেও দেখেছ। কিন্তু ভেবেছ কী, এই খিদে, ঘুম না থাকলে আগুন নিভত ক্যামনে? আগুন না নিভলে তোমাদের দুনিয়া হত ছারখার। তেগুজন তাই বলে- এই আগুনেই পুড়িয়ে মারব ওদের!
এরপরেই লজপ কান্নাকাটি শুরু করল। সে কী ভীষণ চোখের জল… গলা পর্যন্ত ডুবে গেল। হাবুডুবু খেয়ে ওরা পড়ল মবরুহার ফুঁয়ের সামনে। যান শুদ্ধু উড়ে চলে যাচ্ছিল সাগরে প্রায়! আর তখনই বনশূম হাঁ করল। ওর মুখের ভেতরে চুম্বকের মতো আকর্ষণে ওরা উধাও হয়ে যাচ্ছিল প্রায়! তাই দেখে তিখিটিমার কী হাসি! তার হাসি শুনে পৃথিবীতে শত বৃক্ষের জন্ম হল, হাজার ফুল ফুটে উঠল, লক্ষ পাখি এসে ভিড় জমাল। এই রকম নাস্তানাবুদের পরে, ‘পালাই বাবা, কান ধরছি, আর কোনওদিনও তোমাদের নিতে আসব না, ঘাট হয়েছে, এবার মাফ করে দাও’— এই বলে কান্নাকাটি জুড়ে দিলো ওরা। সাদা কাক ওদের ফেলে দিয়ে এলো মহাকাশে।
ফেরার সময়ে বিজয়ীর দল ট্রেনে গাইতে গাইতে ফিরল। নীল রেললাইন চলল এঁকেবেঁকে, ঝেঁকেঝেঁকে। ডুমনুরা নাচল, গাইল। আলফা, বিটা, গামা খাটিয়ায় গড়াগড়ি দিল। আর ওরা— মানে ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ, ব্যোম— ওদের অবশ্য ডাক নামও আছে- মাটি, জল, আগুন, বায়ু আর শূন্য। ওরাও একসঙ্গে হাতে হাত ধরে ঘুরে ঘুরে নাচতে, গাইতে লাগল।
আমাদের কেউ ভাঙতে পারবে না
আমাদের কেউ গড়তে পারবে না…
আমরা এক, আমরা মরব না, মরব না…
হারিয়ে যেতে দেব না এই পৃথিবীকে…
ট্রালালালালালালা…
তুষ্টি হুগলি জেলার শেওড়াফুলির বাসিন্দা এবং বোটানিতে স্নাতক। গদ্য ও কবিতা লেখায় সমান আগ্রহ। প্রকাশিত কবিতার বইয়ের সংখ্যা তিন - ভিজে যাওয়া গাছ, ব্ল্যাক ফরেস্ট ও এরিসেডের আয়না। গদ্যের বইয়ের নাম পদাবলি।