ছোটবেলায় দেখা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীভৎসতা, বাবার মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতা, বারবার ক্ষতবিক্ষত করেছে তাঁর চেতনাকে। এঁকে দিয়েছে ব্যথার অনপনেয় আঁচড় যা প্রকাশ পেয়েছে তাঁর রেখাচিত্রে, গ্রাফিক আর্টে, প্রিন্টে, লিথোগ্রাফে, এবং লেখায়। তিনি শিল্পী সোমনাথ হোর। তাঁর শ খানেকের কিছু বেশি ছবির একটি প্রদর্শনী শুরু হলো কলকাতার দেবভাষা আর্ট গ্যালারিতে। প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দিন প্রকাশিত হলো শিল্পীর ‘ক্ষতচিন্তা, ভাঙন’ বইটিও। বইয়ের আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচনে উপস্থিত রইলেন শিল্পীর দীর্ঘ কর্মজীবনের সঙ্গী শিল্পী লালুপ্রসাদ সাউ ও গণেশ হালুই, কবি দেবারতি মিত্র, লেখক সুশোভন অধিকারী। প্রদর্শনী দেখতে এসে কবি জয় গোস্বামী বলেন “সোমনাথ হোরের জীবনের এবং শিল্পের ছত্রে ছত্রে যে বেদনার প্রকাশ আমরা দেখতে অভ্য়স্ত তারই কঠিন কঠোর রূপ দেখতে পাচ্ছি ওনার এচিং-এ”।

শিল্পীর জীবনের বিভিন্ন সময়ের কাজ রয়েছে এই প্রদর্শনীতে। এচিং, লিথোগ্রাফ, স্টেন্সিল, ইঙ্ক অন পেপার মিলিয়ে শতাধিক ছবি রয়েছে এই প্রদর্শনীতে। নজর কাড়ে বিভিন্ন প্রদর্শনীর অথবা অনুষ্ঠানের  নিমন্ত্রণের কার্ডের ওপরে কখনো পেছনে করা ওঁর এচিং-এর সম্ভার। জীবনের গোড়ার দিকের বেশিরভাগ কাজ সাদাকালো হলেও শেষ দিকের ছবিতে (২০০০ সাল পরবর্তি সময়ের) দেখা যাচ্ছে রঙের ব্যবহার।

শান্তিনিকেতনের কলা ভবনের গ্রাফিক আর্ট বিভাগে দীর্ঘকাল শিক্ষকতা করেন সোমনাথ হোর। গ্রাফিক এবং প্রিন্ট আর্ট-এর ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অপরিসীম। প্রিন্ট তৈরিতে ব্যবহৃত  তাঁর নিজস্ব পেপার পাল্প টেকনিক এবং এই পদ্ধতিতে সৃষ্ট বিখ্যাত উন্ডস (ক্ষত) সিরিজের জন্য শিল্পী সোমনাথ হোর চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তাঁর দীর্ঘদিনের সঙ্গী শিল্পী লালুপ্রসাদ সাউ-এর মতে, “সোমনাথদার হাত ধরে কলা ভবনের গ্রাফিক বিভাগের ভোল বদলে যায়।” ২০০৭ সালে পদ্ম ভূষণ পুরস্কারে ভূষিত হন সোমনাথ হোর।

অনুষ্ঠানে প্রকাশিত বইটির প্রচ্ছদ এবং কম্পোজিশনের কাজ করেছেন শিল্পী কৃষ্ণেন্দু চাকী। প্রদর্শনীটি চলবে জানুয়ারি মাসের ৯ তারিখ অবধি।

পল্লবী বন্দ্যোপাধ্যায় আকারে স্থূল, প্রকারে কুল এবং জোকার-এ মশগুল। ভালোবাসেন মার্ভেল, ডিসি, আর যা কিছু ফিশি। পূর্বজন্মে ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী ছিলেন। বর্তমানে বাংলার নেশায় বুঁদ। পরজন্মে গল-দের গ্রামে খোলা আকাশের নীচে গোল টেবিলে নৈশভোজের আসরে বসে বুনো শূকরের রোস্ট খেতে চান।

One Response

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *