আর মাত্র ক’টা দিনের অপেক্ষা। আর তারপরই মা দুগ্গা ছেলেমেয়ে নিয়ে চলে আসবেন বাপের বাড়ি। কচি কাঁচা থেকে মা-কাকিমা-দিদিমা, সকলের উৎসাহ একেবারে তুঙ্গে। এই ক’টা দিন সব নিয়ম থেকে ছুটি। ডায়েটের চোখ রাঙানি, এক্সারসাইজের কড়া শাসন, সব তোলা থাকবে বাতিলের খাতায়। মনের সুখে কবজি ডুবিয়ে খাওয়া, রাত জেগে ঠাকুর দেখা, এ প্যান্ডেল থেকে সে প্যান্ডেল ঘুরে বেড়ানো, কাজের তালিকা বেজায় লম্বা। সুতরাং এখন থেকেই তো প্রস্তুতি নিতে হবে। আর সবচেয়ে বেশি তৈরি থাকতে হবে সাজ পোশাক নিয়ে। আরে বাবা! এ তো আর যেমন তেমন অনুষ্ঠান নয়, এ হল সাজগোজ করারও সেরা সময়। প্যান্ডেলগুলো তো যেন হয়ে ওঠে একেবারে ফ্যাশন র্যাম্প। কেউ শাড়িতে আটপৌরে, কেউ বা আবার ফিউশনে আধুনিকা। মেক-আপ, জুতো, ব্যাগ সব হওয়া চাই এক্কেবারে পারফেক্ট। তা হলে আর দেরি কেন, চট জলদি চোখ বুলিয়ে নিন এবারের ফ্যাশন ট্রেন্ডে। শপিংটা সময় মতো সেরে ফলতে হবে তো!
স্টেটমেন্ট ইয়ারিং
শাড়ি বা লহেঙ্গা, সালোয়ার বা শরারা, যাই পরুন না কেন, কানে এক জোড়া বড় ঝুমকো না থাকলে কি আর মানায়! গত বছর থেকেই বড় ঝোলা দুলের চাহিদা শুরু হয়েছে। এই বছরও এই ট্রেন্ড যে নট আউট, তা তো বোঝাই যাচ্ছে। বলিউড সেলেবরাও এই ট্রেন্ডে কাবু। আলিয়া ভট্ট থেকে শুরু করে দীপিকা পাড়ুকোন, সোনম কপূর, ফিল্ম প্রোমোশন থেকে উৎসব, যেখানেই যান না কেন, কানে এক জোড়া লম্বা দুল পরতে কেউই ভোলেন না। এমনকী ওয়েস্টার্ন ওয়্যারের সঙ্গে লম্বা দুল নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে পারেন।
‘আমি পুজোর পাঁচ দিন, এথনিক পোশাক পরতেই ভালবাসি। ষষ্ঠী থেকেই সাজ শুরু হয়ে যায়। বাকি দিন লং কুর্তা, কুর্তি পরব। তবে অষ্টমীতে শাড়ি আমার চাই-ই। প্রত্যেক দিনের জন্য ম্যাচ করে লম্বা দুল কিনেছি। কুন্দন আমার ফেভারিট। ঠিক যেমন আলিয়া ভট্ট পরেন।’ জানালেন আই টি সেক্টরের কর্মী সায়ন্তী মৈত্র।

মা-ঠাকুমার শাড়ি
‘আমার ঠাকুমার একটা দারুণ বেনারসি ছিল। জায়গায় জায়গায় ফেঁসে গেছে। ওটা পরার ইচ্ছে বহুদিনের। কিন্তু ছেঁড়া শাড়ি তো আর পরতে পারব না। দর্জিকে দিয়ে স্কার্ট বানিয়ে নিয়েছে। ফুশিয়ার উপর সোনালি সুতোর কাজ। সঙ্গে একটা সাদা শার্ট ব্লাউজ পরব আর একটা ইলাবোরেট নেকপিস।’ বলছিলেন কলেজের ছাত্রী তিয়াশা বক্সী। স্কুলের টিচার শতরূপা ঘোষ আবার মা-র বিয়েতে পাওয়া একটা ছাই আর লাল রঙের জামদানি অষ্টমীতে পরবেন বলে ঠিক করেছেন। তার সঙ্গে আলাদা করে বানিয়ে নিয়েছেন অফ বিট ব্লাউজ।
এবার কিন্তু পুরনো মানেই ফেলনা এই ধারণা ত্যাগ করতে হবে। কারণ মা-ঠাকুমার শাড়ি পুজোয় বাজার মাত করবে। আগেকার দিনের ডিজাইন এখন আর পাওয়া যায় না। সুতরাং সেগুলো ফেলে না দিয়ে তার সদ্ব্যবহার করাই ভাল বলে মনে করছেন আজকের প্রজন্মের মেয়েরা। পুরনো বেনারসি, বালুচরি, জামদানি শাড়ি তো পরতেই পারেন। আবার সেগুলোর কাট ও স্টাইল বদলে ফেলে তৈরি করে নিতে পারেন একেবারে নতুন ফিউশন ওয়্যার।

লং জ্যাকেট আর পালাজো
পালাজো অনেক দিন ধরেই ফ্যাশন জগতে তার আধিপত্য বিস্তার করেছে। শর্ট টপ, ক্রপ টপ, লং টপ—সবের সঙ্গেই দারুণ মানিয়ে নিতে পারে। তবে এবার চাই একেবারে অন্য রকম লুক। আর তাই বেছে নিতে পারেন, ক্রপ ব্লাউজ আর লং জ্যাকেট। রোগা পাতলা চেহারাতেই তো সবই মানায়। একটু ভারী চেহারা হলে ক্রপ টপের বদলে শর্ট টপ পরতে পারেন। শিয়ার জ্য়াকেট, প্রিন্টেড জ্য়াকেট, বেল স্লিভড জ্যাকেট, অ্যাসিমেট্রিক জ্যাকেট অপশন প্রচুর। কোনটা বাছবেন, সেটা আপনার পছন্দের উপর নির্ভর করবে। শতাব্দী যেমন ব্যাঙ্কে কাজ করেন। বেশ লম্বা। ওঁর পছন্দ শিয়ার জ্যাকেট। হাসতে হাসতে জানালেন, ‘আমি পালাজো পরতে খুব স্বচ্ছন্দ বোধ করি। অফিসে তো ড্রেস কোড থাকে, খুব একটা পরা হয় না। কিন্তু সুযোগ গেলেই পালাজো পরি। পুজোতে বেশ কয়েকটা আলাদা আলাদা প্যাটার্নের পালাজো কিনেছি। টিম আপ করব লং জ্যাকেটের সঙ্গে। একটা হালকা নীলের রঙের ট্রান্সপারেন্ট জ্যাকেট ভারী ভাল লেগেছে। এমন ভাবে সাজব যে সবাই তাকিয়ে থাকবে।’

ফেদার টাচ
হ্যাঁ, পালকের কথাই বলছি। ফ্যাশন র্যাম্পs এখন দারুণ হিট এই ট্রেন্ড। আপনারাই বা বাদ যান কেন। ব্লাউজের হাতায়, লহেঙ্গার হেমলাইন বা শাড়ির আঁচলে হালকা একই রঙের পালক লাগিয়ে নিতে পারেন। পুরো পোশাকের চেহারাটাই বদলে যাবে। ‘একটা ফ্যাশন শোয়ে প্রথম ব্লাউজে পালক লাগানো দেখি। অফ শোল্ডার ব্লাউজের হাতায় ঘন করে পালক লাগানো ছিল। সাদা পোশাকটি দারুণ গর্জাস লেগেছিল। এবারে পুজোয় ঠিক এমনই একটা পোশাক বানাতে দিয়েছি। আমি তো প্রচণ্ড এক্সাইটেড ওটা পরার জন্য।’, জানালেন পাবলিক রিলেশনশিপ ম্যানেজার পূজারতি বসু।

আমরা কিন্তু আপনাদের পুজোর লুক বুক তৈরি করে দিলাম। আপনারা তৈরি তো!