জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শনের উদ্যোগকে কেন্দ্র করে নজিরবিহীন বিতর্ক শুরু হল দ্বিশতবর্ষ পেরনো প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের প্রেক্ষিতে ‘রাম কে নাম’ নামে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন পরিচালক আনন্দ পট্টবর্ধন। পরবর্তীকালে সেটি জাতীয় পুরস্কার পায়। গত ২৭ বছরে দেশ-বিদেশ মিলিয়ে অসংখ্য বার ওই তথ্যচিত্রটি দেখানো হয়েছে। কলকাতাতেও বহু বার প্রদর্শিত হয়েছে ‘রাম কে নাম’। সম্প্রতি হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই তথ্যচিত্রটি দেখাতে উদ্যোগী হন ছাত্রছাত্রীদের একাংশ। অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জোর করে প্রদর্শনী বন্ধ করে দেয়। গ্রেফতার করা হয় অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের (আইসা) সঙ্গে যুক্ত ৬ ছাত্রনেতাকে। এর প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ‘রাম কে নাম’ দেখানোর উদ্যোগ নিচ্ছেন বামপন্থী ছাত্রছাত্রীরা। আজ, সোমবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং আগামিকাল, মঙ্গলবার প্রেসিডেন্সিতে ওই তথ্যচিত্রটি দেখানোর কথা ছিল। অভিযোগ, ছবিটিকে বিতর্কিত তকমা দিয়ে প্রদর্শনীর অনুমতি বাতিল করে দিয়েছে প্রেসিডেন্সি কর্তৃপক্ষ। ঐতিহ্যশালী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনা কার্যত নজিরবিহীন।

উদ্যোক্তাদের পক্ষে প্রেসিডেন্সির ছাত্র কল্পক গুহ বলেন, “আমরা বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্যচিত্রটি দেখাতে চেয়ে আবেদন করি। ওঁরা টালবাহানা করতে থাকেন। শনিবার ডিন অফ স্টুডেন্টস অরুণ মাইতি জানান, ছবিটি অত্যন্ত বিতর্কিত। তাই ক্যাম্পাসে দেখানো যাবে না। এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত অনভিপ্রেত, দুভার্গ্যজনক। প্রেসিডেন্সি বাংলা তথা ভারতের মুক্তিচিন্তার বার্তাবহ প্রতিষ্ঠানগুলির অন্যতম হিসাবে পরিচিত। গত দুই শতাব্দী ধরে আমরা এই ঐতিহ্যের বাহক। কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্ত ডিরোজিও, সুভাষচন্দ্র বসুদের প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্যের সঙ্গে খাপ খায় না। আমরা এর মধ্যে ফ্যাসিবাদের বীজ দেখছি।”

২৭ বছর আগের একটি তথ্যচিত্র নিয়ে কেন এমন সিদ্ধান্ত নিল প্রেসিডেন্সি কর্তৃপক্ষ, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। কর্তৃপক্ষের একাংশের যুক্তি, উদ্যোক্তারা অনুমতি নেওয়ার সময় জানিয়েছিলেন তাঁরা একটি আলোচনাসভা করবেন, তথ্যচিত্র দেখানোর কথা বলা হয়নি। তাই অনুমতি বাতিল হয়েছে। কর্তৃপক্ষের অন্য একটি অংশের দাবি, কল্পকরা সিনেমা দেখানোর কথা বললেও কোন সিনেমা দেখাবেন, তা জানাননি। ডিনের কথায়, “এখন এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা সম্ভব নয়। সব খতিয়ে দেখে পরে জানানো হবে।” সূত্রের খবর, আজ ফের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবে প্রেসিডেন্সি কর্তৃপক্ষ।

শিক্ষামহলের একাংশের মতে, বাংলায় গেরুয়া শিবিরের শক্তিবৃদ্ধির প্রেক্ষিতে ‘রাম কে নাম’ তথ্যচিত্রটি দেখানোর ঝুঁকি নিতে চাননি প্রেসিডেন্সির শীর্ষ আধিকারিকেরা। আনন্দ পট্টবর্ধনের এই তথ্যচিত্রে লালকৃষ্ণ আদবানির রথযাত্রা, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতাদের রামমন্দির ইস্যুতে বিতর্কিত বক্তৃতা, নাথুরাম গডসের প্রশংসা করে বিজেপি নেতাদের সাক্ষাৎকারের মতো বেশ কিছু বিষয় রয়েছে। তাই তথ্যচিত্রটি প্রদর্শনের সময় বিক্ষোভের আশঙ্কাতেই অনুমতি দেওয়া হয়নি। যদিও শহরের আর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিস্থিতি ভিন্ন। গোলমালের আশঙ্কায় অতিরিক্ত সতর্কতা নিলেও প্রদর্শনের অনুমতি বাতিল করেনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রেসিডেন্সির প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায় বলেন, “এক জন প্রাক্তন ছাত্র এবং অধ্যক্ষ হিসাবে আমি লজ্জিত। প্রেসিডেন্সি তার জন্মলগ্ন থেকে মুক্তচিন্তার ধারক ও বাহক। তথ্যচিত্রটির বক্তব্যের সঙ্গে আমি এক মত না হতে পারি, কিন্তু দেখাতে দেওয়া হবে না কেন! যদি বহিরাগত কোনও শক্তি অভব্যতা করে, তা হলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। তাঁরা সেই দায়ভার এড়িয়ে অনুমতি বাতিল করতে পারেন না।”

স্বতন্ত্র‚ চমকপ্রদ ও মন ভালো করা খবর পেশ করার চেষ্টা করি আমরা | প্রতিবেদন বিষয়ে আপনাদের মতামত জানান 'কমেন্ট' বক্সে | আপডেট পেতে ফলো করুন https://www.facebook.com/banglaliveofficial/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *