মুম্বইতে আস্তানা মানেই ‘দুয়ারে ভ্রমণ’ আর উইকএন্ড মানেই একটু না দূর পাড়ি। তো ইতিমধ্যেই জল পথে কিহিম তট এবং স্থলপথে ভাসাই, পঞ্চগনি, মহাবালেশ্বর দাপিয়ে, এবার লক্ষ্য দমন। মহারাষ্ট্র থেকে গুজরাট সে তো একরকম জলভাত। এদিকে গেলে বিদর্ভে– অজন্তা ইলোরা আর ওদিকে গেলে– গোয়া দমন দিউ। পশ্চিমবঙ্গের মতোই– যে কোনও দিকেই আমি চলে যেতে পারি– হিমালয় বা বঙ্গোপসাগর মানে দার্জিলিং বা সুন্দরবন।
মাসখানেকের জন্য আমি এসে থিতু হলাম। নাতির ইশকুল ছুটি হল, মেয়েও ফিরল চণ্ডীগড় থেকে তার দু’রাতের অফিশিয়াল ট্যুরের হ্যাপা সেরে এবং ড্রাইভারও অরাজি হল না তার ছুটির দিন বরবাদ করে দূরপাল্লায় গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যেতে। মেয়ে খুব ভেবেচিন্তে জায়গা বাছে। তার সঙ্গী দু’জনের একজন ভাল করে হাঁটতে পারে না, আর অন্যজন হাঁটতে ভালোবাসে না। যখন সে জানাল যে দমন যাওয়া হচ্ছে আমি একটু চমকে গেলাম; কারণ আসার দুদিন আগে বেড়ানো বিলাসী এক কুচো সহকর্মী বিদিশা কাছ ঘেঁষে বসে, কানে ফুসমন্তর দেওয়ার মতো বলেছিল, ‘যে কোত্থাও নয়, সব ছেড়ে একবার শুধু দমন ঘুরে এসো’। বেশিরভাগ সময় নাক ডেকে ঘুমোলেও বিধাতা এবার নিশ্চয় খেয়াল করেছিলেন!
বেরতে একটু বেলা হয়ে গেলেও ভাসির কাছাকাছি এসে পছন্দের ফুড আউটলেট খুঁজে এক পেল্লায় লাঞ্চ হল। ‘ফার্ম হাউস’– এই ফুড চেনেই আমরা আগেও খেয়েছিলাম, ভাসির সমুদ্রের ধারে বসে। হুশহুশ করে ভাসি–গুজরাট হাইওয়ে পেরিয়ে ঢুকে পড়লাম দমন। এখানকার মূল নদী ‘দমন গঙ্গা’র ওপর রাজীব গান্ধী সেতু; যার একপারে নানী দমন এবং অপর পারে মোতি দমন। পর্তুগিজদের চারশো বছরের শাসন শেষে আপাতত এক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। মেয়ের মোবাইলে ডেসটিনেশন সঞ্চালিকা জানালেন, ‘অ্যারাইভড’। গাড়ি এসে দাঁড়াল ‘সিলভার ওয়েভস’ নামে এক আস্তানার সামনে। পা বাড়াতেই যে লাউঞ্জ, সেখানে লুটোপুটি খাচ্ছে সমুদ্রের হাওয়া। শার্সি খোলা কাচের জানলায় সমুদ্র গর্জন। আকাশজুড়ে ঝাউ আর নারকেল বনের আলপনায় যে স্বর ও বাতাস তার অর্থ– ‘স্বাগত অতিথি’। বুঝতে পারলাম যে জোয়ার আসছে গোধূলির মায়াজাল বিছিয়ে।

এরপর? পুরনো দুর্গ, পুরনো বসতে নতুন নতুন আর নতুন। সবুজ আর নীলে মাখামাখি সমুদ্র বাতাস। তার মধ্যে আমার জলকন্যা মেয়ে, খাদ্যবিলাসী নাতি আর আমার হ্যাংলা ভিখিরি উৎসাহ। প্রথম সন্ধে হোটেলেই কাটল। আমাদের জন্য বরাদ্দ এক ঘরের মধ্যে আবার দেড়তলার মাচা-সহ এক মনোরম ডুপ্লে; সঙ্গে তিনস্তর পর্দা দেওয়া বারান্দা এবং সঙ্গের শোভা এক মস্ত ফক্স পাম। এই হোটেলের বিস্তীর্ণ অধিকারে একদিকে পার্ক, সমুদ্রতটে যাওয়ার পথ আর অন্যদিকে জাকুজি-সহ বড়সড় সুইমিং পুল। অতিথিদের বেশিরভাগই খ্রিস্টধর্মের খোলামেলা পরিবার, যারা দাদু, দিদা, নাতিপুতি-সহ এই জলবিহারে অভ্যস্ত। অনেক পরিবার আবার পুল ক্যাফে থেকে খাদ্য পানীয় নিয়ে জলে পা ডুবিয়ে শুধু গপ্পোই করছে। দু’একজন বইবিলাসী পুলের দিকে পিঠ ফিরিয়ে, লম্বা চেয়ারে হেলান দিয়ে সমুদ্রের দিকে পা মেলে অক্ষর মগ্ন। আমি মুগ্ধ হয়ে সূর্যাস্ত দেখছি; এই ভরা জোয়ার ছেড়ে কার আর ঘরে যেতে মন চায়; সূর্যদেবই বা কী করে এর ব্যতিক্রম হবেন! রাতে, মোলায়েম নরম কিন্তু আলো ঝলমলে খাবার জায়গা। এখানেও মাথা ঢাকা খোলা চত্বরে সমুদ্র বাতাস। কিন্তু তার সেই রূপ আপাতত নিকষ কালো আঁধারের অবগুণ্ঠনে ঢাকা; এবং মেঘলা আকাশ একবারে তারাবিহীন; অস্তিত্বের জানান শুধু অশান্ত গর্জনে।
প্রথম রাতে আমার কাছে শুতে এলেও কিছুক্ষণ পরেই মায়ের কাছে ওপরে উঠে গেল নাতিবাবু। মা ছেলে নিশ্চিন্তে ঘুমলে শুরু হল বাতাসের দাপট। সেই ফক্স পাম সমানেই বারান্দায় আছড়ে পড়ে ভয় দেখাল। চোর পড়েছে না ভেবে দু স্তরের পর্দা সরিয়ে এবার নেটের মধ্যে দিয়ে দেখতে লাগলাম গহন রাতের আকাশী নীল ছবি। স্বপ্নের মতো এলো সেই পর্তুগিজ নাবিকের কথা; এই সমুদ্র পথে জাহাজডুবি হলে সে ভেসে এলো তটে; আর গড়ে তুলতে লাগল এক বিস্তীর্ণ পর্তুগিজ বসত। সময়টা ১৫৩১ খ্রিস্টাব্দ। আর এর কয়েকবছর পরই ১৫৩৯ নাগাদ গুজরাতের সুলতান এই অংশকে তাঁর অধীন থেকে পর্তুগালের হাতে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। সেই থেকে দমন হয়ে যায় পর্তুগিজ কলোনি। দমনকে তারা গড়ে তোলে পর্তুগালের কইম্বারা নগরের ‘যমজ শহর’ হিসেবে। ইয়োরোপীয় পর্তুগালের প্রশাসনিক ধাঁচে দমন জেলা ‘দিস্ত্রিতো দি দামাও’ (Distrito de Damão) প্রতিষ্ঠা করে। উনবিংশ শতাব্দীর শুরুতেই দমনকে পর্তুগিজ রাজ্য হিসবে ঘোষণাও করে। তাদের এই কায়েমি শাসন চলেছে প্রায় চারশো বছর।
মুসলমান শাসক এবং ইংরেজ উপনিবেশ কার সঙ্গেই না যুঝল এই নাবিকরা! কতরকম যুদ্ধ আর কি ভীষণ রক্তাক্ত লড়াই। ভারত স্বাধীন হলেও সহজে ভারতভুক্তি হল না গোয়া, দমন এবং দিউ– পর্তুগিজ অধ্যুষিত এই তিন অঞ্চলের। ১৯৬১ সালে ভারতীয় সেনার দখলে এল এবং এগুলি ঘোষিত হল কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে। পরে কোঙ্কণভাষী গোয়া হল পূর্ণ রাজ্য; কিন্তু গুজরাটিতে কথা বলা দমন ও দিউ এখনও কেন্দ্রশাসিত। ইতিহাস এবং ভূগোল দুটোতেই কমজোরি হলেও সমাজবিজ্ঞান এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে তো বরবাদ করতে পারি না। ফলে এখানে প্রবেশ ইস্তক প্রবল উত্তেজনা; কারণ এই প্রথম কোনও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দেখতে পাব, যার উত্তরদিকে গুজরাটের সুরাট আর দক্ষিণে মহারাষ্ট্রের নাসিক।

দমনের রাস্তাঘাট এবং হাটবাজার এবেলা ওবেলা চষে ফেললেও কোথাও একটিও রাজনৈতিক পোস্টার বা দেওয়াললিখন দেখলাম না। সর্বত্রই প্রধানমন্ত্রীর ছবি– স্বচ্ছ ভারতের ডাকে। মনে পড়ল, লোকসভায় কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে যে কুড়িটি আসনে প্রতিনিধি আসে তার মধ্যে দমন এবং দিউ নেই। আছে শুধু পন্ডিচেরি, জম্মু ও কাশ্মীর। ২০২০-তে লোকসভার দুটি আসনে অ্যাংলো ইন্ডিয়ান সম্প্রদায় থেকে মনোনয়নের ব্যবস্থা উঠে যাওয়ায় সেখানেও প্রতিনিধিত্বের সুযোগ নেই। পর্তুগিজ খ্রিস্টানরা নিজেদের অ্যাংলো ইন্ডিয়ান বলেন কিনা জানা নেই। ভাসাইতে এঁদের বেশ বড় একটা বসত এবং সজাগ সংস্কৃতি আছে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিতে চাকরি করার সূত্রে তাঁরা নিজেদের ইস্ট ইন্ডিয়ান বলেন। দমনে পর্তুগিজ নিপীড়ন এবং নিশ্চিহ্নকরণ বেশ জোরদার হয়েছিল বলে এখানে এরা সংখ্যালঘু। এদের কেল্লা, চার্চ সবই ভাঙাচোরা। এখন অবশ্য নানী দমনের দেবকা বিচের কেল্লার ভিতরে পর্তুগিজ নকশায় বানানো বাড়িগুলো উড়িয়ে না দিয়ে তার মধ্যেই সরকারি অফিস, সার্কিট হাউস, ম্যুজিয়ম, চার্চ, ইশকুল এবং জেল। সঙ্গে সংলগ্ন পাড়া এবং বাজার।
দেওয়ালে আঁকা রঙিন মাছের ছবি আর পথগুলি সাজানো লাল কৃষ্ণচূড়ায়। সরকারি এলাকা বলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং আলগা নজরদারীর ব্যবস্থাও। ভাঙা ভাঙা কেল্লাগুলির চত্বর লাল জবা, বেলফুল (মল্লি), চাঁপা আর নানা লতা ফুলে সাজানো। যেমন স্নিগ্ধ তেমন সুন্দর। আর মাথার ওপর খোলা আকাশ এবং চারপাশে সমুদ্র উচ্ছ্বাস। রাজনৈতিক দল বা প্রতিনিধিত্বের সুযোগ না থাকলেও মাছ ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ নিয়ে বড় রকম অসন্তোষ আছে। সে সব নিয়ে সমাজমাধ্যম মাঝে মাঝেই বেশ তপ্ত হয়ে ওঠে। আদিবাসী, গুজরাটি মুসলিম, গুজরাটি হিন্দু এবং ইস্ট ইন্ডিয়ান খ্রিস্টানদের সংস্কৃতি ও খাদ্যাভ্যাস নিয়েও গোল বাঁধে। মাঝখান থেকে খাঁটি পর্তুগিজরাই পুরো বেপাত্তা। কিছু কিছু নাম এবং রান্না পদ যদিও এখনও চালু আছে। আর আছে পুরনো ধাঁচের বাহারি কাঠের চালের সেই একতলা বাড়িগুলি।
অন্যপারে মোতি দমনে, জাম্পরী তটের ওপর আর এক কেল্লার আকাশ ছোঁয়া পাঁচিল, নীচে ঈর্ষণীয় ড্রাইভওয়ে; আর তার পাশেই মাইলের পর মাইল জুড়ে দিগন্তে লীন সমুদ্র। ভোর থেকেই ভাটার জল ফিরে যেতে থাকে তটভূমি ছেড়ে। আলোয় জেগে ওঠা কালো পাথুরে বালি যেন প্রাগৈতিহাসিক ফসিলের এবড়ো খেবড়ো স্তূপ। ‘দমন গঙ্গা’ নদীর ওপর নতুন জেটি। ট্রলারে মাছ আসছে। সাদা লাল নীল রঙের অপূর্ব রং বাহারি যত নৌকা। এ দিকের বেশিরভাগ জায়গায় ব্যবসাবাণিজ্য চলে। আবার তটভূমিতেও ভিড় জমে আশপাশ থেকে বেড়াতে আসা মানুষদের। সব সময় রঙ আর খুশি বাতাসে যেন ছড়িয়েই আছে। পাড় ছেড়ে শহরে ঢুকলে একটু ঘিঞ্জি। এর মধ্যেই খাবার দোকান। পুরনো বাড়িগুলোকে পুরনো আসবাবসমেত সাজিয়ে ভারি সুন্দর সব খাবার জায়গা। আমরা একটা পার্সি বাড়িতে বসে দমনের কিছু স্থানীয় খাবার খেলাম। কোথাও কোথাও নিরামিষ, কোথাও আবার পর্ক, বিফ, চিকেন সবই পাওয়া যায়। মাটন বলতে ছোট জাতের ভেড়া।

নিচু নিচু একতলা বাড়িগুলোতেই একইসঙ্গে থাকা এবং কাজকারবার। এরকমই বিউটি পার্লার, মুদির দোকানও। বড় মার্কেটটাও আমাদের এখানকার হগ মার্কেটের মতো। জাফরিকাটা কাঠের চালের একটা একতলা চত্বর। তার মধ্যেই নানা জিনিসের পসরা। অনেকটা খিদিরপুরের ফ্যান্সি মার্কেটের মতো। আর আছে মাছ এবং ফলের বাজার। চালের মতো মিহি দানার কালোজাম খেয়ে তো মনে হল যে এই জম্বু দ্বীপটিতেই থেকে যাই। ফসল বা ফল আর কী কী হয় জানি না, তবে চারিদিক বেশ সবুজ আর বড় বড় গাছে ঘেরা। ফুলের প্রাচুর্য খুব। ঝুমকোলতা, বেল, জুঁই, মধুমালতী আর কৃষ্ণচূড়ায় সুগন্ধি রংবাহার; চারিদিকে কাঠচাঁপার সারি। বাড়ির উঠোন, ফুটপাথ বা দুর্গের পরিখা ঘিরে– শুধু ফুল্ল কাঠচাঁপা। আর মজা হল যে পশ্চিম পাড়ে যে কোনও পায়ে চলা পথে হাঁটলেই , সমুদ্রতট আর ঝাউবন। সে হোক শহর, কি রিসোর্টের আশে পাশে বনপথ। সমুদ্রই এর শেষ গতি।

ঠিক যখন এক অচেনা আস্তানাকে নিজের ঘর, নিজের বাড়ি মনে হতে থাকে আর একসঙ্গে ঢোকা যাত্রীদের সঙ্গে বারবার দেখা হতে হতে কেউ কেউ যখন কাকা, পিসি, দাদা, দিদিও হয়ে যায়, ঠিক তখনই ফেরার দিনটা হুড়মুড় করে চলে আসে। একদিকে তখন গোছাও গাছাও আর অন্যদিকে বাদবাকিটুকু ঝপ ঝপ করে দেখে ফেলো। মেয়ে যখন বিল মেটাচ্ছে, আমি তখন মস্ত দোলনায় দুলতে দুলতে খুঁজে পাচ্ছি বাংলা জানা শিলিগুড়ির পাঞ্জাবি বা মেয়ের বাড়ির কাছে থাকা কোনও মারাঠিনীকে। পোঁটলাপুঁটলি গাড়িতে তুলে শুরু হল আর একবার বোঁ চক্কর; স্থানীয় হাট থেকে শুঁটকি এবং জাম কেনা। এখানে ছোট ছোট মাছের গুদামও আছে; যেখানে কাঁচা এবং শুঁটকি দুই পাওয়া যায়। আছে থেকে থেকেই মদের দোকান। মেয়ে বলল, এখানে সব উদোম মদ খেতে আসে কারণ মদের দামে অনেকটাই ছাড় দেওয়া হয়। তবে এখানকার পোর্ট ওয়াইন খুব বিখ্যাত, যা অন্যত্র সহজে পাওয়া যায় না। গতকাল আমরা টেস্ট করেছি; সত্যিই, তার যেমন রূপ তেমন স্বাদ। ইতিমধ্যে সবটাই চেনা হয়ে গেছে এবং রোদ্দুরও মাথায় চড়েছে। হাতের কাজ বা ফুলের কারিকুরির পাট নেই। তাই কেনাকাটারও হ্যাপা নেই কোনও। ফলে বিদায় দমন।
আমাদের বেরোতে হবে ভাপি স্টেশনের পাশ দিয়ে। এটাই রেলের পথ। সেখানের পাড়া ঘর খুব ঘিঞ্জি আর দোকানপাটে ভর্তি। সঙ্গে অটোর জ্যাম। কিছু বাড়ি ভেঙে বহুতল মানে চারতলা ফ্ল্যাট উঠেছে। পাশের খালি জমিতে আবর্জনার স্তূপ। সব দেশের মানুষই বোধহয় এভাবেই পোড়ো জমির সদ্ব্যবহার করে। এইসব বসত এলাকা পার হয়ে গুজরাট হাইওয়েতে পড়তে বেশ কসরত করতে হল। কিন্তু মন ভালো করার রসদ এল হাতে হাতে; গাড়িতে তেল ভরতে গিয়ে দেখা গেল নব্বই টাকা লিটার, ভাবা যায়! আরও একটা কারণ পাওয়া গেল, এখানে থেকে যাওয়ার। তবে ডাবের দোকানে দাম দিতে গিয়ে জানা গেল যে নোট চলবে, কিন্তু কয়েন ওখানে চলে না। পাঁচ বা দশ টাকার কয়েন হাতে নিয়ে দোকানী তো হেসেই অস্থির; বলল যে এ সব ফরেন। বিশ্বাসই করল না যে এগুলোও ভারতের কারেন্সি। ফলে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সম্পর্কে বিস্তর জ্ঞান হল আমার।

হাইওয়ে ধরে গুজরাত পার হতে হতে ভালসাটে এসে পেলাম আমের হাট। মাইলের পর মাইল দোকান করে সাজানো কাঁচা পাকা রাজপুরী, হাপুস ও কেশরী। গাড়ি গাড়ি আম বিকোচ্ছে পাইকারি দরে। এই আমের মরশুমে মাস তিনেক এখানে তাঁবু খাটিয়ে দিনেরাতে থাকবে গ্রামের ছেলেরা। মেয়েরা মাথায় করে বা সাইকেল ভ্যানে বয়ে এনে আম দিয়ে যাবে। আর পেলাম গুজরাটের ভালসাট জেলার সেই বিখ্যাত সাদা সেরামিক বয়েম, রান্না করার পোড়ামাটির বাসন আর মানত করার জন্য নীল রঙের জোড়া জোড়া পাখি, ডলফিন, চড়াই। কত সামান্য দামে সে সব বিক্রি করছে এরা; অনলাইন বা সাজানো দোকানে যার দামে ছ্যাঁকা লাগে। মনপ্রাণ জুড়িয়ে সে সব কিনে টানেল আর যোজন রাস্তা পেরিয়ে, পথে আবার এক অনবদ্য ধাবা ‘গজ্জল্লা’-তে খেয়ে সন্ধের মুখে বাড়ি ফিরলাম আমরা।
এখনও কি ফিরেছি! নিবিড় সমুদ্র বাতাস মেখে, পথে সাজানো আমের হাট , জামের বাট, সেরামিক বয়েম আর মাছের কেনাবেচা সেরে?
*সব ছবি তুলেছেন মধুজা বন্দ্যোপাধ্যায়
আড্ডা আর একা থাকা,দুটোই খুব ভাল লাগে।
লিখতে লিখতে শেখা আর ভাবতে ভাবতেই খেই হারানো।ভালোবাসি পদ্য গান আর পিছুটান।
ও হ্যাঁ আর মনের মতো সাজ,অবশ্যই খোঁপায় একটা সতেজ ফুল।
অসাধারণ উপস্থাপনা। আপনার কলমে দমন দেখা হ’ল। হয়ত যেতে পারবেন না। শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।