বাংলার দলিত সাহিত্য-সংস্কৃতি আন্দোলন নিয়ে কিছু কথা বলার আগে, প্রথমেই যদি বাংলা ভাষার উৎস সন্ধানে যাই, দেখতে পাব, বাংলা একটি মিশ্র ভাষা। তার মধ্যে বৈদিক ভাষার অবদান যেমন আছে, তেমনি আছে খেরওয়াল বা সাঁওতালি-সহ বেশ কিছু মুণ্ডা ভাষার অতি গুরূত্বপূর্ণ অবদান। বাংলা ভাষার জননী হিসেবে কেবল সংস্কৃত আর্য ভাষার দাবি সম্বলিত যে মিথটি গড়ে উঠেছিল – সেই দাবিকে নস্যাৎ করার কাজটা আজ থেকে প্রায় একশো বছর আগে শুরু করেছিলেন ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় স্বয়ং।
১৯১৮ সালে সুনীতিকুমার নদিয়া সাহিত্য পরিষদের সভায় একটি বক্তৃতা দেন। সেটি তারপর ছাপা হয় সবুজপত্র পত্রিকায়। “বাঙলা ভাষার কুলজী” নামক সেই অতি গুরূত্বপূর্ণ নিবন্ধে সুনীতিকুমার বলেন, “বাঙলা ভাষাটা যে অনার্য ভাষার ছাঁচে ঢালা আর্য ভাষা, সেটাও ক্রমে ক্রমে লোকে মানবে; আর্যামি যত দিন বাধা দিতে থাকবে, ততদিন বাঙলার ঠিক স্বরূপটি বের করা কঠিন হবে।” তিনি এও বলেন, “দ্রাবিড় আর কোল উচ্চারণের বিশেষত্ব – কথায় দুই ব্যঞ্জন একত্র থাকতে পারে না; হয় তাদের ভেঙে নেওয়া হয় বা একটিকে লোপ করা হয়। প্রাকৃতেও তাই, আমাদের ভাষাতেও তাই।” তাই তাঁর গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, “খালি সংস্কৃত আর প্রাকৃতের দিকে নজর রাখলে চলবে না, বাঙলা ভাষার ইতিহাস ঠিক করে জানতে গেলে অনার্য ভাষাগুলির দিকেও নজর রাখতে হবে।” তিনি এও বলেছেন, “বাঙলা ভাষা যখন জন্মগ্রহণ করে, তখনকার দিনের অনার্য ভাষার প্রভাবটাই বেশি পড়েছিল।” … “কিন্তু ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের আর শ্রীরামপুরের পণ্ডিতদের হাতে পড়ে বাঙলা ভাষা ভোল ফিরিয়ে বসল, বাঙলা ব্যাকরণ বলে লোকে সংস্কৃত ব্যাকরণের সন্ধি আর কৃৎ তদ্ধিত শব্দসিদ্ধি পড়তে লাগল।”
যে ভাষা নিজেই এক মিশ্র ভাষা, সেই ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে বর্ণাশ্রম প্রথা অনুযায়ী সমস্ত রকম মানুষের মিশেল থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কালেদিনে সমাজ, সভ্যতা, ভাষা-সংস্কৃতির ওপর ব্রাহ্মণ্যবাদের প্রভাব চেপে বসল নির্দয় ভাবে। তথাকথিত নিম্নবর্ণের মানুষ, যাদের দলিত বলা হচ্ছে ইদানীং, আগে যাদের চণ্ডাল আখ্যা দেওয়া হত সার্বিকভাবে, দীর্ঘকালীন অবহেলা সহ্য করতে করতে একদিন মুখ খুলল।
পরবর্তীকালে সুনীতিকুমারের সূত্র ধরে এবং মৌলিক ভাবে ব্যোমকেশ চক্রবর্তী, সুহৃদকুমার ভৌমিক, ক্ষুদিরাম দাস প্রমুখের কাজ থেকে বাংলা ভাষার অন্তর্লীন কিছু ধ্বনিতাত্ত্বিক, রূপতাত্ত্বিক, ছন্দোগত বৈশিষ্ট্যকে বুঝতে, তার শব্দভাণ্ডারের জরিপ করতে করতে বাংলা ভাষার কুলজী বিচারে আমাদের তাকাতে হবে সাঁওতালি প্রভৃতি মুণ্ডা/কোল ভাষার দিকে। একটি মিশ্র ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষাকে বিবেচনা করাই যুক্তিসংগত, যার ভারতীয় আর্য ও মুণ্ডা/কোল উভয় ভাষা ঐতিহ্যের কাছেই নির্মাণগত মৌলিক ঋণ আছে।
অর্থাৎ কিনা যে ভাষা নিজেই এক মিশ্র ভাষা, সেই ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে বর্ণাশ্রম প্রথা অনুযায়ী সমস্ত রকম মানুষের মিশেল থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কালেদিনে সমাজ, সভ্যতা, ভাষা-সংস্কৃতির ওপর ব্রাহ্মণ্যবাদের প্রভাব চেপে বসল নির্দয় ভাবে। তথাকথিত নিম্নবর্ণের মানুষ, যাদের দলিত বলা হচ্ছে ইদানীং, আগে যাদের চণ্ডাল আখ্যা দেওয়া হত সার্বিকভাবে, দীর্ঘকালীন অবহেলা সহ্য করতে করতে একদিন মুখ খুলল। ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের ভাষা-সংস্কৃতিকে বাইরের প্রভাবমুক্ত করার জন্য আন্দোলনের পথে যেতে বাধ্য হল। দীর্ঘ বঞ্চনার সে কাহিনি তারাই বর্ণনা করতে চেয়েছে নিজেদের ভাষায়। চেয়েছে নিজেদের সম্মান, নিজেদের জন্য সাহিত্য। যদিও আলাদাভাবে দলিত অ্যাকাডেমি চালু হওয়ার পক্ষে ও বিপক্ষে সমানে তরজা চলছে এখনও। এই বাদানুবাদ হয়ত মানসিক সুস্থতার লক্ষণ।
এরই মধ্যে বাংলায় আত্মপ্রকাশ করেছে দলিত সাহিত্য অ্যাকাডেমি। চলতি বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রাজবংশী, কুরুক, নমশূদ্র, মতুয়া, পোন্দ্র ক্ষত্রিয়, বাগদি, বাউড়ি, ডোম, মাজি-সহ বিভিন্ন গোষ্ঠীর অর্থাৎ দলিত সম্প্রদায়ের সাহিত্য চর্চা, একটি পৃথক লাইব্রেরি গঠন, এই সম্প্রদায়ের মধ্যে যাঁরা মনীষী আছেন, তাঁদের জীবন তুলে ধরা, তাঁদের জীবনী রচনা করা ইত্যাদি নানা সাহিত্যমূলক কাজ করা হবে দলিত সাহিত্য অ্যাকাডেমির মাধ্যমে। তিনি বলেন, “আমরা ইতিমধ্যেই রাজবংশী ডেভেলপমেন্ট বোর্ড করেছি। করেছি মতুয়া ডেভেলপমেন্ট বোর্ড। এবার পিছিয়ে পড়া দলিত মানুষদের সাহিতের ভাণ্ডারকে সকলের সামনে তুলে ধরা এবং তাঁদের সাহিত্য চর্চার উদ্দেশ্যে এই সিদ্ধান্ত নিলাম।” দলিত সাহিত্য অ্যাকাডেমির সভাপতি পদে রয়েছেন মনোরঞ্জন ব্যাপারি।
কিন্তু এই দলিত কারা? কাদের বলা হয়েছে দলিত? এই নিয়েই সামান্য আলোকপাত করার চেষ্টা করব এখানে।
‘দলিত’ শব্দটি চালু হয়েছিল ১৯৫৪ সাল থেকে। সেই বৈদিক যুগ থেকে ঋগবেদ, স্মৃতিশাস্ত্র, পুরাণ, ন্যায়শাস্ত্র প্রভৃতি গ্রন্থগুলি জাতি ও বর্ণ প্রথার অমানবিকতা, অবিচার, অসাম্যকে গুরুত্ব দিয়েই অগ্রসর হয়েছে, চালু রয়েছে ‘বেদান্ত সাংস্কৃতিক ধারা’। এইসব ক্ষেত্রে বারবার দলিতদের নীচুজাত, অস্পৃশ্য ইত্যাদি মর্যাদাহীন হিসেবেই দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ শাস্ত্র নির্মীত কল্পনার বাইরে কবি কল্পনার ব্যাপ্তি বা বিকাশ হয়নি। নিম্নবর্ণের চরিত্র বা কোনও অস্পৃশ্যকে নায়ক/নায়িকা বা উৎকর্ষময় স্রষ্টা হিসেবে দেখানো হয়নি কোথাও। হিন্দুধর্মের ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রের আধিপত্যে একদল মানুষ অপাংক্তেয় হয়ে রইল— এই ধর্মীয়, সামাজিক সংকট এক তীব্র দ্বন্দ্ব তৈরি করতে সক্ষম হল একদিন। যার ফলে বৌদ্ধ ধর্মান্দোলন, চার্বাকপন্থী দর্শনের উদ্ভব হয়। সেখানে বলা হল, স্বর্গ বলে কিছু নেই, চরম মুক্তি নেই, আত্মা নেই, সত্য হল মানুষ আর চরম সত্য হল মানুষের বেঁচে থাকা। একই কারণে তামিল অব্রাহ্মণ বৈষ্ণবরা ‘ভাগবত পুরাণ’ রচনা করলেন। ভাগবত পুরাণের ‘ভক্তিরত্নাবলী’তে ভক্তিহীন ব্রাহ্মণ্যতার কোনও স্থান নেই। দেবদেবীর স্থান নেই। ‘ভক্তিবাদী চণ্ডাল’ ব্রাহ্মণ্যের চেয়েও বরিষ্ঠ।
সম্প্রতি ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে দলিত কবি, সাহিত্যিক ও লেখক সমাজের সাহিত্য, কাব্য, সাংস্কৃতিক আলোচনায় এক ধরনের প্রতিবাদী সাহিত্য সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছে। বাংলার দলিত সাহিত্যিক যতীন বালা বর্তমান দলিত সাহিত্যের পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করেছেন। ১) দলিত জীবনের পীড়নের অভিজ্ঞতা বা suffering, ২) বিদ্রোহ বা revolt, ৩) অস্বীকৃতি বা negeation, ৪) জনতত্ত্বের আবিষ্কার বা Ethnic discovery এবং ৫) নবনির্মাণ বা creation। দলিত সাহিত্যে কাল্পনিক গল্পগাথার চেয়ে বাস্তবের অভিজ্ঞতা, আত্মস্মৃতি বা আত্মচরিতই সবচেয়ে বড় জোরের জায়গা। প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্মণ্যবাদী মূল্যবোধ বা অলীক ধারনার (Myth) বিরোধিতা, অস্বীকার এবং তথ্যানুসন্ধানের মাধ্যমে দলিত জনগোষ্ঠীগুলির ঐতিহ্যমণ্ডিত প্রাচীন সংস্কৃতির উৎস অনুসন্ধান করে বৈষম্যহীন মানবিক মূল্যবোধ-নির্মীত সমাজ গঠনই দলিত সাহিত্যের অন্তর্নিহিত প্রত্যয়।
ভিন্ন প্রদেশে, ভিন্ন ভাষার দলিত সাহিত্য আন্দোলনের মূলে রয়েছে ‘প্যান-ইন্দো অস্তিত্ব’। এই ‘প্যান-ইন্দোয়িজ়মের সূত্র ধরেই দলিত লেখকরা একত্রিত হয়েছেন। এই সাহিত্য আন্দোলনের প্রথম চর্চা শুরু হয়েছিল মহারাষ্ট্রে। জ্যোতিরাও ফুলে (১৮২০-৯০) ও অম্বেডকরের হাত ধরে এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল। এদিক থেকে দেখতে গেলে বাংলায় দলিত সাহিত্য আন্দোলনের শুরু হয়েছিল অনেক পরে। বিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে যখন মহারাষ্ট্রের ‘দলিত প্যান্থার’ স্বমহিমায় বিরাজমান তখন উত্তর চব্বিশ পরগনার মছলন্দপুর গ্রামের শিক্ষক নকুল মল্লিক ও অন্যান্য দলিত বুদ্ধিজীবীরা একত্রিত হয়ে ১৯৮৭ সালে ‘বঙ্গীয় দলিত লেখক পরিষদ’ প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন বিমল বিশ্বাস, সম্পাদক নকুল মল্লিক ও অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন রণেন্দ্রলাল বিশ্বাস।
দলিত সাহিত্যে কাল্পনিক গল্পগাথার চেয়ে বাস্তবের অভিজ্ঞতা, আত্মস্মৃতি বা আত্মচরিতই সবচেয়ে বড় জোরের জায়গা। প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্মণ্যবাদী মূল্যবোধ বা অলীক ধারনার (Myth) বিরোধিতা, অস্বীকার এবং তথ্যানুসন্ধানের মাধ্যমে দলিত জনগোষ্ঠীগুলির ঐতিহ্যমণ্ডিত প্রাচীন সংস্কৃতির উৎস অনুসন্ধান করে বৈষম্যহীন মানবিক মূল্যবোধ-নির্মীত সমাজ গঠনই দলিত সাহিত্যের অন্তর্নিহিত প্রত্যয়।
১৯৮৭ সালের এপ্রিল মাসের শেষে মছলন্দপুরে দু’দিন ধরে ‘বঙ্গীয় দলিত সাহিত্য সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গীয় দলিত লেখক পরিষদের ত্রৈমাসিক মুখপত্র ‘দলিত কণ্ঠ’ নকুল মল্লিকের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়। পরবর্তীকালে ১৯৯২ সালে কলকাতার বিধাননগরে প্রতিষ্ঠা হয় ‘বাংলা দলিত সাহিত্য সংস্থা’ যার সভাপতি ছিলেন জগবন্ধু বিশ্বাস, সম্পাদক অমর বিশ্বাস এবং কোষাধ্যক্ষ ঊষারঞ্জন মজুমদার। এই সংস্থার প্রথম বার্ষিক সম্মেলন হয় ১৯৯২ সালের ৫-৬ই ডিসেম্বর নদিয়া জেলার বগুলার কাছে ভায়না গ্রামে। বাংলার দলিত সাহিত্য সংস্থার মুখপত্র ছিল ‘চতুর্থ দুনিয়া’। বিগত তিন দশক ধরে বাংলার দলিত সাহিত্য সংস্থা দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার হৃদয়পুরে, হুগলির কামারকুন্ডু ও খন্যানে, মালদার পাকুয়াহাটে, উত্তর চব্বিশ পরগনার রঘুনাথপুরে, পাঁচঘরিয়ায়, পুরুলিয়ার আদ্রায়, পশ্চিম মেদিনীপুরের কাঁথি প্রভৃতি স্থানে রাজ্য সম্মেলনে ও রানাঘাটের কুপার্স ক্যাম্প ও মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরে জেলা সম্মেলনে প্রবল উদ্দীপনার মধ্যে দলিত সাহিত্য চেতনাকে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করে চলেছে।
বাংলায় দলিত সাহিত্য আন্দোলন দেরিতে শুরু হওয়ার কারণ হিসেবে বলা যায়, বাঙালি সংস্কৃতি অন্যান্য ভারতীয় ভাষা-সংস্কৃতির থেকে ভিন্ন চেতনায় লালিত হয়েছিল। আর্যাবর্তের বাইরে থাকা ব্রাহ্মণ্যবাদী সংস্কৃতি যেমন এখানে পরে (নবম শতকে) এসেছে, ফলে ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির কাছে বাঙালির সত্তা সম্পূর্ণরূপে বিলীন হয়নি। গ্রামবাংলার নিম্নবর্ণের সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশ আশ্রয় পেয়েছে বৌদ্ধ সহজিয়া ও বৈষ্ণব ধর্ম সংস্কৃতি, আউল-বাউল প্রভৃতি লোক সংস্কৃতির বিভিন্ন আঙিনায়। তবুও আর্থিক ও সামাজিক স্তরবিচারে নিম্নবর্ণের মানুষেরা বাঙালির সমাজে নিচুতলার বাসিন্দা হয়েই থেকে গিয়েছিলেন। ফলে তাঁরা তাঁদের অমর্যাদা, শোষণ, নিপীড়নের ধারালিপি লিখে রাখছিলেন নিজস্ব কথনে, বয়ানে।
বিশ শতকের গোড়া থেকেই বিক্ষিপ্তভাবে দলিত সাহিত্যের চর্চা শুরু হয়েছিল বলা যেতে পারে। ১৯০৯ সালে খুলনার রাসবিহারী রায় নমঃশূদ্র সমাজের মানুষের আত্মকথনে সমৃদ্ধ ‘নমঃশূদ্র দর্পণ’ পত্রিকা প্রকাশ করেন। এছাড়াও উত্তরবঙ্গের রাজবংশী, মালো, মাহিষ্য ও পৌন্ড্র প্রভৃতি দলিত গোষ্ঠির মধ্যে বিচ্ছিন্ন ভাবে দলিত সাহিত্য সংস্কৃতির চর্চা শুরু হয়েছিল। পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জের ‘জিতেন্দ্রনাথ’কে নিয়ে লিখে পৌন্ড্র জাতির মণীন্দ্রনাথ মন্ডল ‘অ্যাকটিভিস্ট’ হিসেবে পরিচিত হন। ডায়মন্ড হারবারের বেণীমাধব হালদার রচিত ‘জাতি বিবেক’ এবং ‘ভারতীয় ক্ষত্রিয় সমাজ সংস্কার’ গ্রন্থদুটির মাধ্যমে পৌন্ড্র ক্ষত্রিয় সাহিত্য সংস্কৃতির সূচনা হয়। ১৯০৯ সালে তাঁর নেতৃত্বে ‘ভারতীয় ক্ষত্রিয় সমিতি’ প্রতিষ্ঠিত হয়। উত্তরবঙ্গের মাথাভাঙার খলিসামারি গ্রামের ঠাকুর পঞ্চানন বর্মন রাজবংশীদের সাহিত্য সংস্কৃতি বিকাশের উদ্দেশ্যে ‘উত্তর বঙ্গ সাহিত্য পরিষদ’ গঠন করেন। তিনি রংপুর থেকে প্রকাশিত ‘রংপুর সাহিত্য পরিষদ’ পত্রিকার সম্পাদনা করতেন। ১৯০৭ সালে ফরিদপুর থেকে ‘নমঃশূদ্র সুহৃদ’ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। সম্পাদক ছিলেন আদিত্যকুমার চৌধুরী ও কোষাধ্যক্ষ ছিলেন গুরুচাঁদ ঠাকুরের পুত্র সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর।
এছাড়া ১৯১১ সালে ফরিদপুরের উলপুরে বলরাম সরকার সম্পাদিত ‘নমঃশূদ্র জ্ঞান ভাণ্ডার’ যশোরের জ্ঞানেন্দ্রনাথ মজুমদার সম্পাদিত ‘নমঃশূদ্র চন্দ্রিকা’ (১৯১৩) পত্রিকা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। মেদিনীপুরের কৈবর্তরা ১৯১১ সালের জনগণনায় মাহিষ্য হিসেবে পরিচিত হয়। মাহিষ্যদের সাহিত্য সংস্কৃতি নিয়ে মহেন্দ্রনাথ দাস ‘সেবক’ নামের একটি মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করেন এবং ১৯১৭ সাল থেকে মাহিষ্য সমিতি পরিচালিত ‘মাহিষ্য সমাজ’ নামক পত্রিকাটি প্রকাশিত হতে থাকে। উনিশ শতকের প্রথম দুই দশকের পত্রিকাগুলিতে প্রাথমিক ভাবে নিজ নিজ আঞ্চলিক, জাতিগত, সম্প্রদায়গত ও গোষ্ঠীগত আধিপত্য বিস্তারই ছিল মূল লক্ষ্য। দলিত সাহিত্য বলে কিছু ছিল না। কিন্তু self-identity নিয়ে পত্রপত্রিকাগুলি যে কর্মকাণ্ডে নিজেদের জড়িত করে, সেখান থেকেই পরে বাংলার দলিত সাহিত্য সংস্থা তৈরির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
পরবর্তী পর্ব : ৮ ডিসেম্বর ২০২০, রাত ন’টা।
তুষ্টি হুগলি জেলার শেওড়াফুলির বাসিন্দা এবং বোটানিতে স্নাতক। গদ্য ও কবিতা লেখায় সমান আগ্রহ। প্রকাশিত কবিতার বইয়ের সংখ্যা তিন - ভিজে যাওয়া গাছ, ব্ল্যাক ফরেস্ট ও এরিসেডের আয়না। গদ্যের বইয়ের নাম পদাবলি।
ইতিহাসটি জানা ছিলো না। জানলাম। পরের পর্ব পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
অনেক ধন্যবাদ
চমৎকার একটি লেখ। তথ্য সমৃদ্ধ। আরো অনেকটা চা। গোটা ইতিহা।
পুরো ইতিহাস লিখতে গেলে এক জীবন কেটে যাবে যে
বর্ণাশ্রম কি বাংলায় আরো গভীরে নিহিত নিজস্ব বৃত্ত ?
আশা করি উত্তর পেয়ে যাবেন পুরোটা পড়লে
শুরুটা অসাধারণ হয়েছে। আশা করছি, পরের পর্বগুলো এমনই তথ্যসমৃদ্ধ, বিস্তারিত হবে। নতুন কিছু তথ্য পেয়ে আমিও উপকৃত হলাম। এরিসেডের আয়নার কবির কাছে আমার প্রত্যাশা একটু বেশিই। আজ এ লেখা পড়ে প্রত্যাশা আরো বাড়লো।
জানি না প্রত্যাশা পূরণ করতে পারুব কী না….
খুব ভাল লাগল। পরের পর্বের অপেক্ষায়।
অনেক ধন্যবাদ
অনেক পরিশ্রমের ফসল এই লেখা। দলিত সাহিত্যের রূপ রচনায় আঞ্চলিক প্রভাবগুলিকে স্পষ্ট ভাবে দেখানো হয়েছে।
প্রতিভাদি, ভালবাসা নিও।
খুব ভালো লাগল
ভালবাসা জানাই
খুব ভালো লেখা তুষ্টি। অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে। পরবর্তী অধ্যায়ের অপেক্ষায় থাকলাম।
ভালবাসা নিও
পরিশ্রমী লেখা। পরের দুই পর্ব এখনই পড়বো। অভিনন্দন!!