একশো তিন নম্বর বেড। ভোরবেলা মারা গিয়েছে। কোভিড ওয়ার্ডে সব জানলা খোলা থাকে হাওয়া চলাচলের জন্য। হাওয়া খেলছেও বেশ। অথচ মানুষটা বাতাসের অভাবেই হাঁপাতে হাঁপাতে মারা গিয়েছে। কী দুঃসহ বৈপরীত্য! 

চোখ সরাতে গিয়েও পারলাম না। মৃতের পাশের জানলায় একটা ফুটন্ত গোলাপ। হাসপাতালের বাগানের। রংটা টকটকে লালের কাছাকাছি। চেরি রেড কিংবা রেড ওয়াইন। লোকটা কিন্তু সেই গোলাপ দেখতেও পাচ্ছে না যদিও ওর চোখদুটো চিরদিনের মতো হাট করে খোলা।

এইসব কনট্রাস্টের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে নিজেকে মনে হয় সং। ক্লাউন। ঘুম থেকে উঠে টুথপেস্টের বদলে ভোলিনি জেল লাগিয়ে ফেলি। তারপর মুখে দিতেই ওয়াক থুঃ! তীব্র ঝাঁঝাল গন্ধের প্রতি ঘৃণার সঙ্গে একটা কুলকুল আনন্দও হয়। নাহ, কোভিড হয়নি ‌অন্তত। বান্ধবীরা ফোনে গরগর করে উষ্মা ঢেলে দেয়।
– সারাদিন মাস্ক মাস্ক করে চিল্লাচ্ছিস, লিপস্টিকগুলোর কী হবে?
প্রশ্নটা যে আমার মনেও দু’একবার উঁকি মারেনি, তা নয়। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে চোখেও পড়েছে ছবিটা। লিপস্টিকের ফটোতে মালা পরানো। সামনে ধূপকাঠি। 

Lipstick
লিপস্টিকের ভাগ্যে কী আছে?

মাস্ক পরার নিয়মকানুন নিয়ে তো করোনা আসার পর থেকে প্রায় গোটা পাঁচশো বক্তৃতা, ওয়েবিনার করে ফেললাম। কিন্তু লিপস্টিকের ভাগ্যে কী আছে? সে-ও তো পটল তুলল বলে! আমরা যারা সংসারের বিবর্ণ অসারতার মধ্যে নিজেকে একটু রঙিন রাখার জন্য হাতব্যাগে একটা বা দুটো লিপস্টিক রাখতে পেরেছি মহানগরের ‘আরতি’দের মতো, এবং শপিংমলের চকচকে দুর্মূল্য বিদেশি লিপস্টিকগুলো দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছি ফোঁস ফোঁস করে, তাদের কি একটুও প্রতিশোধস্পৃহা জেগে ওঠেনি? বে এ এ এ শ হয়েছে! লোক না খেতে পেয়ে মরে আর বিবিরা আমেরিকা, দুবাইয়ের লিপস্টিক লাগায়। নে মাখ এখন! করোনা এসেছে ভাল হয়েছে। লিপস্টিকের বারোটা!

তবে এতশত জ্ঞান দিয়ে, ভ্যাজর ভ্যাজর করেও, মাস্ক সংক্রান্ত ওয়েবিনারগুলো যে আদতে দুর্গন্ধযুক্ত ওয়েবি-ন্যাড় হয়েছে সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। কারণ বাজারে গেলেই দেখতে পাই মাস্ক জিনিসটা নেহাতই লজ্জাবস্ত্র। কিংবা সানগ্লাস। সবজিবেচা বুড়োদাদু ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে চোখ ঢেকেছে মাস্কে। কারণ দুপুরের চড়া রোদ। বেশিরভাগ খরিদ্দারেরই কানামাস্ক। কানের একদিক থেকে ঝুলছে। কানামাছি খেলার মতো কেউ আবার পুলিশ দেখলেই নাকে তুলে দিচ্ছে। নতুবা থুতনির তলায় থুতনাস্ক। গরুর গলকম্বলের মতো। পরিচিত বউদি দেখলেই অশেভিত খোঁচা খোঁচা পাকাদাড়ি মাস্কের আড়ালে লুকিয়ে ফেলে ঠাকুরপোরা। বলতে গেলেই চেঁচিয়ে আস্তিন গোটানো।
– কুম্ভমেলার সন্নিসিগুলোকে বলতে পারবেন অ্যাঁ? কোথায় পরেছিল? সে মুরোদ আছে?
অতএব ঢোঁক গিলতেই হয়। বিবেক বলে ওঠে,
বহুরূপে সম্মুখে তোমার
ছাড়ি কোথা খুঁজিছ নাকপর,
কটিবস্ত্র নেংটি হয়ে মাস্ক,
যোনিদেশ ঢাকে চরাচর!’

এক গায়নোকোলজিস্ট বন্ধুকে ফোন করলাম।
করোনা তো যৌনরোগের থেকেও গুপ্তরোগ হয়ে গেল রে! পাবলিক জ্বর হলেই লুকোচ্ছে।
– তবু টেস্ট করতে দিচ্ছিস তো?
– দূর, ল্যাবে গিয়ে টেস্ট করাতেই চাইছে না। বলছে পাড়া প্রতিবেশি জেনে যাবে। এদিকে ফোনে চুপিচুপি জিজ্ঞেস করছে, ডাক্তারদিদি বাড়িতে কোনও ইয়ে হবে?
– মানে?
– মানে তোদের প্রেগনেন্সি কিটের মতো। যা দিয়ে বাড়ি বসেই গর্ভবতী কিনা বোঝা যায়। তেমনই করোনা হয়েছে কিনা জানার জন্য চটজলদি কিট।
– তুই কি জানিস বাজারে এবছর প্রেগনেন্সি কিটও পাওয়া যাচ্ছে না!
– অ্যাঁ?
– হ্যাঁ রে। মজার ব্যাপার হল, গত দেড় বছরে যত মৃত্যু হয়েছে কোভিড বা নন-কোভিড মিলিয়ে, বাচ্চা জন্মেছে তার চেয়ে অ-নে-ক বেশি।
– ধ্যাত!
– সত্যি! বিশ্বাস হচ্ছে না? পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যাবে। গোটা মহামারিকাল জুড়ে গর্ভধারণের হার বিপুল! আমি তো দু’বেলা হিমশিম খাচ্ছি প্রসূতি নিয়ে!
প্রকৃতির এই তুমুল বৈপরীত্যে চমকে উঠেছি। বলে কী? অতিমারিতে মৃত্যুকে ছাপিয়ে গেছে জন্মহার?

কোভিডের আগমনের পর জনগণ কত বিচিত্র হাইপোথিসিস বার করে ফেলেছে এ ভাইরাসের উত্থানের পিছনে! শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বেঁচে থাকলে ব্যোমকেশের নতুন সিরিজ বেরিয়ে যেত। কিংবা প্রোফেসর শঙ্কু বহুজাতিক ফার্মা কোম্পানি এবং কর্পোরেট হাউজ়গুলোর ধান্দা নির্ঘাত বার করে ফেলতেন। ভাগ্যিস তখন ফেসবুক ছিল না! তাই সত্যজিৎ রায় পুরীর হোটেলে বসে নির্বিঘ্নে নামিয়ে ফেলতে পারতেন এক একটি রহস্য উপন্যাস। এখন তো ফেসবুকের জনগণ ড্যান ব্রাউনের থেকেও বেশি রোমাঞ্চকর প্লট দেয়! 

কাজেই সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে মোটামুটি জেনে গেছি যে বাদুড় নয়, এই ভাইরাস একটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের সন্তান। আসলে নাকি পৃথিবী থেকে লোক কমানোই এর উদ্দেশ্য। রোজই দেওয়ালে দেওয়ালে অজস্র শোকজ্ঞাপন, কান্নার ইমোজি, শোকগাথার কবিতা, রেস্ট ইন পিসের ছড়াছড়ি। করোনা আসার আগে যেন মৃত্যু হত না। মানুষ অমর ছিল। কিংবা লকডাউনের আগে আর কোনও গুরুতর সমস্যা ছিল না। বেকারত্ব ছিল না, না খেয়ে শুকিয়ে মরা ছিল না, একাকীত্ব ছিল না। 

বাজারে গেলেই দেখতে পাই মাস্ক জিনিসটা নেহাতই লজ্জাবস্ত্র। কিংবা সানগ্লাস। সবজিবেচা বুড়োদাদু ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে চোখ ঢেকেছে মাস্কে। কারণ দুপুরের চড়া রোদ। বেশিরভাগ খরিদ্দারেরই কানামাস্ক। কানের একদিক থেকে ঝুলছে। কানামাছি খেলার মতো কেউ আবার পুলিশ দেখলেই নাকে তুলে দিচ্ছে। নতুবা থুতনির তলায় থুতনাস্ক। 

আসলে করোনা এক সুতীব্র বৈপরীত্য হয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সামাজিকভাবে সুরক্ষিত এবং অসুরক্ষিত দেশগুলোর ভেদাভেদ। যেসব দেশে প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা শক্তিশালী, সেই জার্মানি, ভিয়েতনাম, আইসল্যান্ড, ডেনমার্ক, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ফিনল্যান্ড যেভাবে করোনার দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ঢেউয়ের মোকাবিলা করেছে, ইয়োরোপ, আমেরিকার মতো তথাকথিত উন্নত মহাদেশের অন্যান্য দেশগুলোও কিন্তু সেভাবে পারেনি। কাজেই ফিরে আসতে হচ্ছে সেই প্রাথমিকে। যতই আমরা টার্শিয়ারি স্বাস্থ্যব্যবস্থা, অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর নিয়ে গলা ফাটাই না কেন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা ঠিক থাকলে আজ লক্ষ লক্ষ মানুষকে এভাবে মরতে হত না। একটা প্যানডেমিকে জ্বর হলেই ধরে নিতে হবে কোভিড। সেভাবেই যদি প্রথম থেকে মানুষজন সচেতন হয়ে টেস্ট করিয়ে কিংবা যেখানে অপ্রতুল টেস্ট, সেখানে টেস্ট না করিয়েও আইসোলেশনে যেতেন, হু হু করে সংক্রমণ হত না। ক’জন  সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর পালস অক্সিমিটার ছিল?

ছিল না সে যন্ত্র। তবু তাঁরা সুস্থ হয়েছেন। সিঙ্গল ব্রেথ কাউন্ট বলে একটা জিনিস আছে। এক নিঃশ্বাসে দমবন্ধ করে কত অবধি মনে মনে সংখ্যা গুনে ফেলা যায়। তার উপরে ভিত্তি করেও যথেষ্ট ভালভাবে এবং বহু আগেই বোঝা যায় শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি। এইসব প্রাথমিক স্বাস্থ্যসচেতনতা আমরা কি দিয়েছিলাম? না পেয়েছি? তুমুল কনট্রাস্ট আমাদের শিক্ষায়। পঠনপাঠনে। মননে। যাপনে। তাই কোভিড অতিমারিকালে মানুষের নজর চলে যাচ্ছে প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা ছাড়িয়ে চড়াদামের আইসিইউ পরিষেবায়। একমো (ECMO) তো খায় না মাথায় মাখে, আগে জানতই না মানুষ! যে ভেন্টিলেটরকে কিছুদিন আগেও দায়ী করা হত মানুষ মারার যন্তর বলে, এখন তাকেই বলা হচ্ছে প্রাণদায়ী! কী উলটপুরাণ! 

Pills
মান্যতা পাচ্ছে রেমডিসিভির। কমদামি স্টেরয়েড ডেক্সামিথাজ়োন নয়

মান্যতা পাচ্ছে রেমডিসিভির। কমদামি স্টেরয়েড ডেক্সামিথাজ়োন নয়। জনগণের একাংশ তো বটেই, চিকিৎসকরাও বাজারের, মিডিয়ার এবং বিজ্ঞাপনের এই ট্রেন্ডে ভেসে যাচ্ছেন। চিকিৎসা কেন্দ্রীভূত হচ্ছে একটিমাত্র রোগকে ঘিরে আর কোভিডের বাইরে হাজার হাজার রোগ বিশেষত ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা এবং এইডস চূড়ান্তভাবে অবহেলিত হয়ে হু হু করে বাড়ছে। না, ব্যক্তিগত মতামত নয়। এই  তথ্য গত বছর নেচার জার্নালের অগস্ট সংখ্যায় প্রকাশিত। 

আমেরিকার মতো দেশে, যেখানে জিডিপি-র প্রায় ১৫% স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় হয়, এখন আবার তাই প্রাথমিক স্বাস্থ্যের দিকে ফিরে তাকানোর কথা উঠে আসছে। কাজেই ঝকঝকে সভ্যতার আগা আপাতভাবে ব্রিলিয়ান্ট মনে হলেও গোড়ায় গলদ আছেই। 

আসলে এসব প্রকৃতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার ফল। যথেচ্ছভাবে জঙ্গল কেটে মানুষ তৈরি করেছে খেতখামার। জমি এবং প্রকৃতিকে উন্মত্তের মতো ভোগ করার প্রবৃত্তিতে মানুষ পড়ে গিয়েছে ফাঁদে। প্রকৃতিকে ধর্ষণ করতে গিয়ে নিজেই হয়েছে ধর্ষিত। অরণ্যের পশুপাখির শরীরে যেসব ভাইরাস, ব্যাকটিরিয়া বাস করত সেগুলোই অবাধ বেলাগাম কৃষির মাধ্যমে মানুষের বসবাসের ‌অঞ্চলে প্রতিটি বাস্তুতন্ত্রের শৃঙ্খল ভেঙে মানুষের শরীরে ঢুকেছে। হয়ে উঠছে অ্যান্থ্রোপোজুনোটিক।

কাজেই উন্নতির শিখর থেকে মানুষ নিজেই পড়ে গিয়েছে পতনের রাস্তায়। মানুষের কৃষিবিপ্লব, কৃষিপণ্যের গ্লোবাল মার্কেটিংয়ের যথেচ্ছাচার কি আদৌ সভ্যতা নাকি অসভ্যতা এই প্রশ্নও আজ খুব সঙ্গত, কারণ  করোনা গোত্রের এই ভাইরাসগুলো সহজে যাবে না। আজ প্রায় দেড় বছর ধরে সারা পৃথিবী জুড়ে চলছে এর দাপাদাপি। ভ্যাকসিন এই রোগের একমাত্র উত্তর নয়। শুধুমাত্র কিছুটা প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে পারে ভ্যাকসিন। কাজেই করোনা গোত্রের ভাইরাস এবং তাদের সঙ্গীরা অপেক্ষা করে আছে মানুষের সামাজিক দুর্বল মুহূর্তের, যখন কিনা বেলাগাম মেলামেশা করে মানুষ আবার তৈরি করবে সংক্রামক জমি।

সমাধান? সেও এক কন্ট্রাস্ট। একমাত্র দাওয়াই হল, মানুষকে হতে হবে অসামাজিকভাবে সামাজিক। হাতে হাত, কাঁধে কাঁধ নয়। চুম্বনে চুম্বন নয়। মনে মনে শৃঙ্খল। অনেকটা দূর থেকে ভালবাসার মতো। দার্শনিক প্লেটো যে ভালবাসার কথা বলে গিয়েছিলেন কবে! প্লেটোনিক লাভ। শরীরী বনাম অশরীরী ভালবাসা। কী চরম বৈপরীত্য না! 

ঠাট্টা নয়, সত্যি বলতে গেলে, মানুষের প্রতি মানুষের এই অবিশ্বাস, দায়হীনতা হল করোনার উর্বরজমি। যে রাষ্ট্রনায়ক, রাজনীতিবিদরা শুধু নিজেদের আখের গোছাতে গিয়ে এতগুলো মানুষকে নিয়ে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার খেলা খেললেন, তাঁদের জন্যই কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ এত মারাত্মক হল। কাজেই গণতন্ত্রের জন্য মানুষ, নাকি মানুষের জন্য গণতন্ত্র, এটাও একটা বড় প্রশ্ন। অতিমারির মধ্যেও গণতন্ত্রের নামে ভোট তথা ক্ষমতার নির্লজ্জ আগ্রাসন কি সব দলগুলোরই ফ্যাসিজ়ম নয়? নির্বাচন পিছিয়ে দিলে হয়তো অনেক মানুষ অকালে মরতেন না। 

 

আরও পড়ুন: দেবজ্যোতির কলমে: একটা মাছি আর ভাইরাসের আমড়াগাছি

 

ফিরে আসছি আবার সেই লিপস্টিকের গপ্পে। ফেসবুকে লিপস্টিক পরে পাউট করা ঠোঁটের যেসব  তরুণীর ছবি দেখে বিরক্ত হতাম, কখন নিঃশব্দে তারা শুরু করেছে বিপ্লব। বাড়িতে রান্না করে কোভিড রুগিদের দিয়ে আসছে। বাতেলাবাজ টুইট-করা তরুণ বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ছে মুমূর্ষু রোগীর অক্সিজেন সন্ধানে। শিল্পী, নাট্যকার, সঙ্গীতশিল্পীরা টাকা দিয়ে খুলে ফেলছেন বিপন্ন মানুষের জন্য হাসপাতাল। নার্স, চিকিৎসকরা তো প্রথম থেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবা করছেন। কিন্তু সমাজের সর্বস্তরের মানুষ যে এইভাবে বাঁচিয়ে তুলেছেন একটা মৃতপ্রায় শব্দকে, যা ক্রমশ লোপ পেতে পেতে ডোডোপাখির মতো অবলুপ্ত হচ্ছিল, না দেখলে বিশ্বাস হত না। শব্দটা হল ‘মানবতা’।  

বাচ্চাগুলোকে ২০১৯-এর মার্চের আগেও মোবাইল নিতে মানা করেছিল স্কুল। আজ গোটা স্কুলটাই মোবাইলের মধ্যে। একে পরিহাস না কন্ট্রাস্ট, কী বলব! 

যে কথাটা প্রথমেই উঠেছিল করোনার শুরুতে, মানুষ কমাতেই এই ভাইরাসের আগমন, সেটা নিয়ে আর কোনও উচ্চবাচ্য হল না। আসলে মূল সমস্যাটা আমরা তো সবসময় পেটের মধ্যে লুকিয়ে রাখি আমাশার মতো। সেটা হল জনদূষণ। এত মানুষ কেন? কোনও রাজনৈতিক দল এসব নিয়ে অ্যাজেন্ডা করবে না। একবারও মানুষের জন্মহার কমানোর কথা বলবে না জনপ্রিয়তা হারানোর ভয়ে। কিন্তু প্রকৃতি নির্মমভাবে সেই কাজটাই করছে। একটা গ্রহের স্বাভাবিক বাস্তুতন্ত্রে মানুষ প্রাণীটা সংখ্যায় বড্ড বেশি। থিকথিক করছে। সব প্রাণী, গাছপালা মেরে ধ্বংস করে দিচ্ছে তারা। কাজেই যা হওয়ার তাই হচ্ছে। আজ তাই যম হল একমাত্র নায়ক, যে বাঁচাতে পারে সৌরজগতের এই সুন্দর গ্রহটাকে। 

আমি তাই বলব বেঁচে থাকুক যম। হোমো স্যাপিয়েনস হয়তো তাহলে আরও ক’বছর টিঁকে যেতে পারে এই গ্রহে। মৃত্যু আছে বলেই কিন্তু জীবন। এটাই সবথেকে বড় সত্যি! এবং কন্ট্রাস্ট! 

 

*অন্যান্য ছবি: gettyimages, Pinterest

পেশায় ডাক্তার দোলনচাঁপা নতুন প্রজন্মের লেখকদের মধ্যে পরিচিত নাম। মূলত গল্প এবং উপন্যাস লেখেন বিভিন্ন ছোটবড় পত্রপত্রিকায়। 'চন্দ্রতালের পরীরা' এবং 'ঝুকুমুকু' তাঁর লেখা জনপ্রিয় কিশোরসাহিত্যের বই।

23 Responses

  1. দোলনচাঁপা বেশ লিখেছ। বাস্তব চিত্র টা খুব সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে তোমার লেখনীতে।
    সাবধানে থেকো , ভাল থেকো ।

  2. লেখাটা ভালো লাগল বেশ। বৈপরীত্যগুলো নাড়া দিল । আর সব শেষে বলি, হোমো স্যাপিনেন্স আছে বলেই হয়তো যম আছে। ভালো থাকবেন দিদি।

  3. ডাক্তার হয়েও আপনি আমাদের মনের কথাগুলো এত সুন্দর ভাবে লিখে ফেললেন কি করে? আপনার লেখা খুবই উপভোগ্য এবং শেষ লাইন পর্যন্ত মনকে বেঁধে রাখে। আশা রাখি আপনার ডাক্তারি চলুক সাথে সাথে লেখনি চলুক সফল ভাবে।আমরা মানসিক ও শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকবো আপনার সাহচর্যে। ধন্যবাদ 🙏

  4. অসাধারণ অনবদ্য একটি লেখা Ma’am। ভীষন ভালো লাগলো পড়ে। এই paradox ই যে জীবন এর সবচেয়ে বড় সত্য তাই আবার মনে করিয়ে দিলেন আপনার লেখায়। আরো অনেক লেখার অপেক্ষায় রইলাম। 🙏🏻

  5. কী যে এক পেখমতোলা উন্মাদনা আমাদের, অসন্দেহের বশে অন্যায়কেই প্রশ্রয় দিই বারবার। ফলস্বরূপ, সেই এক আশ্চর্য ক্ষতিমন্ডলের মধ্যেই পাক খেতে থাকি—-মৃত্যু অবধি। তবুও নিজেকে শুধরানোর জন্য বিচলিত হইনা কখনো। কেবল এবং কেবলমাত্র অতিবক্ষমতাশালী সাহসের নমুনা রেখে যাই, এককালীন প্রজন্মের যুক্তিপূর্ণ আয়নায়।

  6. জীবনের মূল‍্য‍্ কিসের পরিপ্রেক্ষিতে তার যেন ভ্রাম্যমাণ চলন্তিকা।মৃত‍্যুর দাপাদাপি ই ত জীবনের বেচে থাকার ছটফটানির প্রেরণা। খুব ভালো লেখা।

  7. কী যে এক পেখমতোলা উন্মাদনা আমাদের অসন্দেহের বশে অন্যায়কেই প্রশ্রয় দিই বারবার । ফলস্বরূপ আমরা সেই এক আশ্চর্য ক্ষতিমন্ডলের মধ্যেই পাক খেতে থাকি জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি। তবুও নিজেকে শুধরানোর জন্য বিচলিত হইনা কখনো । কেবল এবং কেবলমাত্র অতিবক্ষমতাশালী সাহসের নমুনা রেখে যাই, এককালীন প্রজন্মের যুক্তিপূর্ণ আয়নায় ।

  8. পুজো, উৎসব(?), সবই কাটিয়ে দিলাম নুতন জামা, কাপড় না পড়ে, কিন্তু চৈত্র সংক্রটির সেলের ভিড়ে রাস্তাও ক্লান্ত। একটু খেলে কিহবে, একটু হজ্জুতি করলে কিছুই হবেনা, সেই আমি দেড়বছর ধরে সংযম দেখেই টানটান হয়ে আছি। ……কনট্রাস্ট ছারা আর কি।।। খুব ভালো।

  9. কিছু যানা কিছু অযানার মধ্যেও অনেক কিছুর যানার থাকে।সেটা তোমার সুন্দর লেখা গল্পের মধ্যে খুঁজে পেলাম,
    গল্প পড়ার সাথে যদি মনের মিলন হয়! সেটা আরো সুন্দর
    হয়ে ওঠে।অনেক ধন্যবাদ,অপেক্ষায় রইলাম নতুন কিছু যানর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *