‘একাদশীর চাঁদের মতো/ মননে মাখি/ মনখারাপের পাউডার।’

এইটুকু লিখে আমার এক কবিবন্ধু খুব তন্ময় হয়ে লাইক গুনছিল। পাব্লিক খুব খেয়েছিল। ‘এ যুগের শক্তি’ লিখে কমেন্টবক্সে শুভেচ্ছার বন্যা বইয়ে দিয়েছিল কেউ কেউ। কবিবন্ধুর টার্গেট ছিল, ঘণ্টাদুয়েকে গোটাপঞ্চাশ শেয়ার। গাড়ি ওই পথে দিব্যি এগোচ্ছিল। স্ক্রলসুখে মত্ত বন্ধুর সুখকালে এমন সময় হা রে রে রে রে। হঠাৎ দেখা দেল, জনৈক অমুক কুমার তমুক পোস্ট করেছেন, ‘ও মনখারাপের পাউডার / একাদশীর চাঁদ হও / মাখব গায়ে মত্তসুখে।’ 

ষাট ওয়াটের বাল্বের পাশে ফ্লাডলাইট জ্বালালে যেমনভাবে শ্যামাপোকার দল হইহই করে বেশি আলোর দিকে ধেয়ে যায়, ঠিক তেমনভাবে লাইক ও শেয়ার নদীর খাতবদল হল। দুর্বাসামুনির কিবোর্ডের মতো আমার কবিবন্ধু অমুক কুমার তমুককে লিখল, ‘ভস্ম করে দেব ওরে, লাইন আমার, বাগালো এক চোরে।’ অমুককুমারের উত্তর এল ঝটিতি। ‘আইডিয়াটা আমারই ছিল, কে দিল আগে, কী এসে গেল!’ ফেসবুকের সঙ্গে আড়ি করে দিয়েছিল আমার ওই কবিবন্ধু।

যাঁরা একটু কাব্য-টাব্য করেন, কিংবা মনের সুখে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে দেন কিছু হটকে লাইন, তাঁদের মধ্যে একটা অংশের অভিজ্ঞতা হল, লাইন চুরি হয়ে যাচ্ছে বিলকুল। রাত জেগে, প্রতিটা শব্দের সঙ্গে নিজের ভালবাসার ওম জড়িয়ে যে লেখাটা লিখে সোশ্যাল মিডিয়ায় দিলেন, সোজা কথায় বলতে গেলে, তা কেউ বা কারা ঝেড়ে দিচ্ছে। গোল গোল চোখে দেখেছেন, অন্যের প্রোফাইলে ঠিক একই কথা, একই লাইন। অরিজিনাল মানুষটি, এই লেখার জনক যে উনি নিজে, তা প্রমাণ করার জন্য আকুলি বিকুলি করছেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত তা করে উঠতে পারছেন না। দুই পিতা তাঁর পিতৃত্ব প্রমাণের জন্য লড়াই করছেন, কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি করছেন। আর আম-আদমি গ্যালারি সিটে বসে মজা নিচ্ছে খুব। 

Social media concept
‘ভস্ম করে দেব ওরে, লাইন আমার, বাগালো এক চোরে’

যাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ায় দিনভর আঙুল দিয়ে নৌকা চালান, সৃজনশক্তি প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন নিজের সাধের ভার্চুয়াল দেওয়ালকে, লেখা চুরি আটকানোর জন্য তাঁদের মধ্যে অনেকেই হালে একটা নতুন পদ্ধতির শরণাপন্ন হয়েছেন। লেখার শেষে কয়েক লাইন স্পেস দিয়ে টাইপ করে দিচ্ছেন কপিরাইট চিহ্ন (সি)। পাশে লিখছেন নিজের নাম। এই পদক্ষেপে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অবশ্য কাজ হয় নি। দেখা গিয়েছে, যিনি চুরি করছেন, সিলেক্ট অল করে পেস্ট করার আগে ওই সি-চিহ্নটুকু বাদ দিয়েই করছেন! লেখককুল লেখা বাঁচাতে এবারে আঁকড়ে ধরলেন ইমেজ ফাইল। ওয়ার্ডে টাইপ করে তার স্ক্রিনশট নিয়ে পোস্ট করলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। কনটেন্ট চুরির ইতিহাস বলে, লাভ হয়নি এর ফলেও। ছবিটা সেভ করে নিয়ে, লেখকের নামের জায়গাটুকু ক্রপ করে তা দিব্যি পোস্ট হয়ে যাচ্ছে অন্য কারও প্রোফাইলে। 

‘অবশেষে জেগে ওঠে শোষিত’-র মতো সামাজিক মাধ্যমের লেখকেরা এবারে বরণ করে নিয়েছেন ওয়াটারমার্ককে। মূল লেখার ছবির পিছনে হালকাভাবে ফুটে থাকবে লেখকের নাম। এমনটি এখন বেশ চলছে। অনেকে মনে করেন, এর ফলে চুরি করার পদ্ধতিটা একটু সময়সাধ্য হবে, এই যা। নতুনভাবে কম্পোজ করে পোস্টাতে হবে। চোরেদের হয়তো অত সময় নেই! ফলে কিছু লেখা বেঁচে যাবে।

সাইবার বিশেষজ্ঞদের স্পষ্ট দাবি, সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা কোনও লেখার মালিক যদি আপনি হন, তাহলে সেই লেখার যাবতীয় কপিরাইট সম্পূর্ণ আপনার। তবে মুশকিল হল, সামাজিক মাধ্যমের কয়েকশো কোটি ব্যবহারকারীর মধ্যে কার কনটেন্ট যে কে আপন করে নিলেন, তার খোঁজ পাওয়া এককথায় দুঃসাধ্য। ফেসবুকের সরলীকৃত অ্যালগোরিদম বলে, যিনি চুরি করলেন, তিনি লেখাটির আসল লেখকের বন্ধুবৃত্তের মধ্যে না থাকলে সেই চোরকে পাকড়াও করা শুধু মুশকিল হি নেহি, না-মুমকিন হ্যায়। কোনও পোস্ট ভাইরাল না হলে তা সাধারণত মূল ব্যক্তির কাছে ফিরে আসার সম্ভাবনা সীমিত। ফলে সামাজিক মাধ্যমে অধিকাংশ চুরিই অনেকটা ‘কোথা যে উধাও হল’-র মতো একটা ব্যাপার। 

 

আরও পড়ুন: নীলার্ণব চক্রবর্তীর লেখা: রাত কত হল

 

তবে হাহাকারের মধ্যে যেমন দুঃখ লুকিয়ে থাকে, ঠিক তেমনভাবেই জড়িয়ে থাকে ব্যবসার গন্ধও। নিজের লেখা বাঁচাব কী করে জানতে চাইলে সার্চ ইঞ্জিন ফোয়ারার মতো ছুঁড়ে দেয় একগাদা সমাধান। খোঁজ পেলাম এমন অনেক ওয়েবসাইটের, যেগুলোর কাজই হল আপনাকে জানিয়ে দেওয়া, গন্ধটা খুব সন্দেহজনক। এমন ওয়েবসাইটগুলো নিজেদের মাথায় যে মুকুট পরিয়েছে তার নাম পোশাকি নাম ‘মনিটরিং টুল।’ ধরা যাক, কেউ মনের মাধুরী মিশিয়ে রাত জেগে একটা লম্বা লেখা ছেড়ে দিলেন ফেসবুকে। লেখাটা পোস্ট করার পরে ওই মনিটরিং টুলকে জানাতে হবে লেখার মধ্যে থাকা কয়েকটা বিশেষ শব্দ, মানে কি-ওয়ার্ড। 

ওয়েবসাইটগুলোর দাবি, বলামাত্র এবং ক্রেডিট কার্ড মারফৎ আপনার পয়সা ওদের পকেটে ঢোকামাত্র বাইনারি দুনিয়া জুড়ে ফিট হয়ে যাবে সিসিটিভি। কোটি কোটি ব্যবহারকারীর মধ্যে কেউ যদি ওই কি-ওয়ার্ডগুলো ব্যবহার করে পোস্ট করেন নিজের ওয়ালে, সঙ্গে সঙ্গে খবর চলে আসবে মূল লেখকের কাছে। মনিটরিং ওয়েবসাইটের মেন্টররা হয়তো উপদেশ দেবেন, ওই যে চোর। হবে নাকি এক ছোবলে ছবি? তবে মূল লেখক হুমকি দিলেও দুনিয়ার অন্য প্রান্তে বসে থাকা কোনও চোরবাবাজির তাতে কতটা যায় আসে কে জানে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত কনটেন্টের স্বত্বরক্ষার বিষয়ে যাঁরা মাথা ঘামান, তাঁরা অবশ্য চুরি রুখতে ও ডিজিটাল রত্নাকরদের বাল্মীকির পথে আনতে বেশ কয়েকটা রাস্তা বাতলেছেন। চুরি ধরা পড়লে মূল লেখকের কাছে তাৎক্ষণিক দুটো রাস্তা খোলা থাকে। যিনি চুরি করেছেন, তাঁর শুভবুদ্ধি উদয়ের জন্য বিদ্যাসাগরস্যারের কয়েকটা লাইন ইনবক্স করা যেতে পারে। ‘না বলিয়া পরের দ্রব্য লইলে চুরি করা হয়। চুরি করা বড় দোষ। যে চুরি করে তাহাকে চোর বলে। চোরকে কেহ বিশ্বাস করে না। চুরি করিয়া ধরা পড়িলে, চোরের দুর্গতির সীমা থাকে না।’ 

ওয়াকিবহাল শিবিরের একটা বড় অংশই অবশ্য মনে করেন, শেষ লাইনটা পড়লেই ফিক করে হেসে ফেলবেন এ যুগের ডিজিটাল চোরেরা। এ অনেকটা মাল্যসাহেবের ব্যাঙ্কশাল কোর্টে হাজিরা দেওয়ার মতো একটা অসম্ভব ব্যাপার। চোরের সদ্গতির দ্বিতীয় রাস্তাটি হল, মূল লেখককে প্রমাণ করতে হবে যে লেখাটি তাঁরই। এর পরে অনুমতি না নিয়ে এবং নিজের নাম দিয়ে লেখাটি চালিয়ে দেওয়ার জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করতে হবে। এক কবিকে বলতে শুনেছিলাম, এক একটি লাইক এক হাজার হাততালির ধ্বনিতে গর্ভবতী হয়। চুরি যাওয়া পোস্টের প্রতিটা লাইক মানে জীবন থেকে এত সংখ্যক হাততালির জাস্ট ভ্যানিশ হয়ে যাওয়া। প্রতিযোগিতার বাজারে এ হতে দেওয়া যায় না। 

content share
এক একটি লাইক এক হাজার হাততালির ধ্বনিতে গর্ভবতী হয়

ক্ষতিপূরণের দাবি করলে চোরবাবাজির প্রতিক্রিয়া হতে পারে দুধরনের। বিবেকের ভ্যাক্সিন নেওয়া চোর হলে বলবে, ভুল হয়ে গিয়েছে। এই মুছে দিলাম পোস্ট। বলবে, তোমার লাইন তোমারই থাক। আর গোলমেলে চোর হলে উল্টে উত্তর আসবে, আমার জামার কলার টিএমটি বার দিয়ে তৈরি, এক লাইনও সরবে না, যা করার করে নাও। এমন ঘটনা ঘটলে ফ্রেন্ডসমহলে এই কথোপকথনের স্ক্রিনশট নিয়ে বেশ হল্লা করা যেতে পারে, যদিও জলঘোলা হওয়া ছাড়া আর তেমন লাভ কিছু হয় না। ফেসবুকের স্টেশনে নোংরামি রোখার এর পরের রাস্তা হল সোজা স্টেশন মাস্টারকে গিয়ে রিপোর্ট করা। চুরি যাওয়া পোস্টটির মাথার ডানদিকে টিকির মতো লেগে থাকা বিন্দুগুলোকে ধরে টান মারতে হবে। রিপোর্ট পোস্ট-এ গেলে সবার শেষে দেখা যাবে ‘সামথিং এলস’। সেখান থেকে বেছে নিতে হবে ‘ইন্টেলেকটুয়াল প্রপার্টি’। স্ক্রিন এর পরে যা জানতে চাইবে, তার উত্তর দিয়ে যেতে হবে পর পর। ভুক্তভোগীরা দেখেছেন, অনেক ক্ষেত্রেই আপত্তিকর পোস্টটি এর পরে মুছে যায় ফেসবুক থেকে। অপশনের সামান্য এদিক ওদিক হলেও অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমের প্ল্যাটফর্মে এমন সুবিধা আছে।

তবে শুধু লেখা নয়, পাল্লা দিয়ে চুরি যাচ্ছে ছবিও। ফড়িংয়ের ডানায় রামধনুর রং দেখা যে ছবি নিজের ওয়ালে পোস্ট করেছিলেন কেউ, সেই ফড়িং পলকে উড়ে গিয়ে বসে পড়ছে অন্যের বাগানে। আসল ছবিওলা আঙুল কামড়াচ্ছেন। ছবি খোয়া যাওয়ার পর, সাধের মোবাইলে, ৬৪ মেগাপিক্সেলের রিয়ার ক্যামেরার লেন্সের গভীরে চোখ রাখলেও কি দুঃখের ছলাৎছল শোনা য়ায়? ফড়িং তো উদাহরণ মাত্র। ছবি চুরির সঙ্গে জড়িয়ে থাকে চুরি যাওয়া ছবি বিকৃত বা মর্ফ করার নানা কু-সম্ভাবনাও। তাই সঙ্গত কারণেই লেখা কিংবা কনটেন্ট চুরির বদলে ছবি চুরি গেলে মুখের ত্রিকোণমিতি আরও প্রকট হয়। 

এক সাইবার বিশেষজ্ঞকে বলতে শুনেছিলাম, ‘দুনিয়াজুড়ে, সোশ্যাল মিডিয়ার গলির আনাচে কানাচে যে ঘুরে বেড়াচ্ছে ডেটিং প্ল্যাটফর্ম, মেসেজ পার্লারের বিজ্ঞাপন, তাদের প্রতিটা পেজের কভারের জন্য দরকার কোনও লাস্যময়ীর ছবি। সেলিব্রিটির ছবি নিতে হাত কাঁপবে। কারণ জানাজানি হলেই কোটি টাকার মানহানির মামলা। তাই সম্বল সোশ্যাল মিডিয়ায় সুন্দরীরা। প্রোফাইল দেখো, ডাউনলোড কর আর পছন্দমতো সেঁটে দাও। শুধু মুখটা ভাল হলেই হবে, পছন্দমতো ড্রেস পরিয়ে দেবে ফোটোশপ।’

পুলিশের সাইবার অভিযোগের ডায়রির খাতা এমন অভিযোগে উপচে উঠছে ক্রমশ। প্রেম ভেঙে গেলে এখন প্রেমিকার মুখে ছুঁড়ে দেওয়া যায় বাইনারি অ্যাসিড। ছবি চুরি করার পর মেয়েটির নামে একটা ভুয়ো প্রোফাইল বানিয়ে পরপর আপলোড করে দেওয়া যায় কিছু অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি। থানায় ডায়রি হলে, কোমরে দড়ি পরার আগে অভিযুক্তের এমন ছবি দেওয়ার আসল ‘উদ্দেশ্য’ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পূর্ণতা পায়। সার্চ ইঞ্জিন হাত জোড় করে বলে, কনটেন্ট না-ও বা বাঁধলেন, কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করা ছবির গায়ে নিরাপত্তার শেকল বেঁধে না রাখলে আখেরে নিজেরই ক্ষতি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামাজিক মাধ্যমে ছবি আপলোড করার সময় যতটা রোমাঞ্চ থাকে, তার সিকিভাগও যদি প্রাইভেসি অপশন নিয়ে থাকত, তাহলে হয়তো চুরি হওয়া ঠেকানো যেত অনেক ছবি। রুখে দেওয়া যেত অপপ্রয়োগও। তাঁদের উপদেশ, ছবি আপলোড করার সময় তা যেন কিছুতেই পাব্লিক না করা হয়। ছবি যদি দিতেই হয়, তাহলে একান্তভাবেই রাখতে হবে বন্ধুবৃত্তে, শেয়ার উইথ ফ্রেন্ডস অনলি। 

 

আরও পড়ুন: প্রসেনজিৎ দাশগুপ্তের কলমে: চেনা অচেনায় যাক না মিশে

 

অবাক করা তথ্য হল, আরও বেশি করে লাইক কুড়িয়ে নেওয়ার মোহে অধিকাংশ মানুষই এই বিধির কথা বেমালুম ভুলে যান। তার আসল মূল্য দেয় চুরি হয়ে যাওয়া ছবিসমগ্র। পরিস্থিতি হাতের বাইরে বেরিয়ে গেলে হাঁফফাস করা ছাড়া অন্য কিছু করার উপায় থাকে না। খবরের কাগজ জানে, অনেকসময়ই এই দমবন্ধ করা পরিস্থিতির পর্দা পড়ে যায় রাশি রাশি ঘুমের ওধুধে, কিংবা ঘরের কোণায় জমিয়ে রাখা পেস্টিসাইডের শিশিতে। পাতার বাঁদিকে দেশলাই বাক্সের মতো টুকরো খবরগুলোতেও কয়েকটা প্রাণ লুকিয়ে থাকে।

সামাজিক মাধ্যম নিয়ে গবেষণারত এক বন্ধুকে দিনকয়েক আগে বলতে শুনেছিলাম, ‘লেখা চুরি, ছবি চুরি আর কী এমন বড় ব্যাপার হল! জীবনটাই তো চুরি করে নিচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া। না খেতে পেলেও পোস্ট। বেশি খেয়ে ঢেঁকুর তুললেও পোস্ট। বেডরুমের আলো নিভে যাওয়ার পরের ঘটনাগুলো ছাড়া আর কীই বা প্রকাশ্যে জানাতে বাকি রাখছি আমরা? ফলে যা হওয়ার তা হচ্ছে।’ কথাগুলো ভাবিয়েছিল। সামাজিক মাধ্যমের কাছে আমাদের সমর্পণের শেষ কোথায় জানা নেই। অগাধ বিশ্বাসে যে ডেটা প্রতিদিন আমরা ফিড করে চলেছি সামাজিক মাধ্যমের সার্ভারে, তা দিয়ে কার্যত নিজেদেরই পণ্য বানিয়ে দিচ্ছি কিনা, তা নিয়ে একটু হলেও চিন্তা করা সময় এসেছে বলে মনে হয়। 

content theft
সমীকরণের কোন সূ্ত্র কোন তারে বাঁধা তা আমাদের মতো মূর্খ মানুষের আঁচ করতে যাওয়াটা বোকামি

মাসতিনেক আগের ঘটনা। ১০৬টি দেশের ৫৩ কোটি মানুষের ফেসবুক তথ্য বিনা পয়সায় ফাঁস করে দিয়েছিল একটি হ্যাকিং ফোরাম। ফেসবুক আইডি ছাড়াও এর মধ্যে ছিল ব্যবহারকারীদের পুরো নাম, জন্মতারিখ, শহরের নাম, ফোন নম্বর আর সংক্ষিপ্ত বায়োডেটা। অনেক ক্ষেত্রে বাদ যায়নি ইমেল ঠিকানাও। প্রসঙ্গত বলা যায়, এর মধ্যে প্রায় ৬ কোটি অ্যাকাউন্ট ছিল ভারতের। মার্কেটিংকর্তাদের কাছে ফোকটে পাওয়া এই ডেটাবেস সোনার খনির মূল্যকেও ম্লান করে দেয়। ফেসবুক কর্তারা যতই তাঁদের সিকিউরিটির কোলাপসিবল গেটে বজ্র আঁটুনি দেওয়ার কথা বলেন, আমরা জানি, এমন ঘটনা আগামীদিনেও ঘটবে। ঘটতেই থাকবে। সমীকরণের কোন সূ্ত্র কোন তারে বাঁধা তা আমাদের মতো মূর্খ মানুষের আঁচ করতে যাওয়াটা বোকামি।

এই ধ্বংসযজ্ঞে, ভুল বললাম, শেয়ারযজ্ঞে নিজেদের কতটা শামিল করব, তা একান্তভাবে আমাদের উপরেই নির্ভর করে।

অম্লানকুসুমের জন্ম‚ কর্ম‚ ধর্ম সবই এই শহরে। একেবারেই উচ্চাকাঙ্খী নয়‚ অল্প লইয়া সুখী। সাংবাদিকতা দিয়ে কেরিয়ার শুরু করলেও পরে জীবিকার খাতবদল। বর্তমানে একটি বেসরকারি সংস্থায় স্ট্র্যাটেজি অ্যানালিস্ট পদে কর্মরত। বহু পোর্টাল ও পত্রপত্রিকায় নিয়মিত লেখেন। প্রকাশিত হয়েছে গল্প সংকলন 'আদম ইভ আর্কিমিডিস' ও কয়েকটি অন্য রকম লেখা নিয়ে 'শব্দের সার্কাস'।

One Response

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *