ছোট্ট একখানা চৌখুপি দোকান যে গানবাজনার অমন দরাজ জানলা হতে পারে, ‘গান্ধার’-কে না দেখলে জানাই হত না আমার। খুব বেশি দূর নয় আমাদের পুরনো বাড়ি থেকে, মিনিট দশেকের হাঁটাপথ। অবশ্য এখন পিছন ফিরে তাকালে মনে হয়, তখন ভালোবাসার গোটা পৃথিবীটাই মিনিট দশেকের হাঁটাপথ দিয়ে ঘিরে ফেলা যেত। কখনও পশ্চিমে, কখনও উত্তরে মুখ করে হাঁটা দিলেই হল। বড়জোর দশ মিনিটের মাথায় ভালোবাসবার মতো কোথাও একখানা দিব্যি পৌঁছে যাওয়া যেত। এই ‘গান্ধার’-ও ছিল তেমনই এক ভালোবাসার পৃথিবী আমার।
‘বাটা’র গলি’ বলে গড়িয়ায় একজন বেশ রোগাসোগা লম্বাটে রাস্তা ছিল, দু’পাশে দোকানের সারি সামাল দিতে দিতে যে সটান গিয়ে পড়ত গড়িয়া বাস টার্মিনাসের মুখোমুখি। গলির মুখেই ‘বাটা’-র মস্ত দোকান, তাই সে-গলির নাম ‘বাটা’র গলি’। এ ধরনের সহজ নামকরণ আজও ছোটখাটো মধ্যবিত্ত পাড়ায় দেখতে পাওয়া যায় কিনা জানা নেই। আমাদের তেমনই ছিল তখন। তা সেই বাটা’র গলি’র মাঝবরাবর, ডাকঘরের ঠিক উল্টোদিকে ছিল আমার এই ভালোবাসার দোকানঘর, যার নাম গান্ধার। গানবাজনারই দোকান সে, গানবাজনা শোনানোর দোকান। সঙ্গে অবশ্য বাজনা বিক্রিও হত বাজানোর জন্য, কিন্তু শোনবার আকর্ষণই ছিল আসল।
ততদিনে আমি জেনে গিয়েছি, গান্ধার হল আমাদের সপ্তকের তৃতীয় স্বর। যার ডাকনাম ‘গা’। সেই গান্ধারের ঘুপচি কাউন্টারে গা এলিয়ে বসে থাকতেন সদাহাস্যমুখ মালিক তথা দোকানি, যাকে সকলেই ডাকতেন চাঁদমামা বলে। পাতলা হয়ে আসা চুল, কাঁচাপাকা একখানা গোঁফ, মোটা ফ্রেমের চশমা আর অনপনেয় মুচকি হাসি। এই সব নিয়েই চাঁদমামা। পরে অবশ্য জেনেছিলাম, তাঁর আসল নাম শ্রী চন্দন লাহিড়ি। একমাত্র আমিই বোধহয় ছিলাম, যে সর্বজনীন মামাকে কাকু বলে ডাকতাম।
গান্ধারের গায়ে হেলান দিয়ে কী বিক্রি করতেন হাসিমুখ সেই কাকু? ক্যাসেট। যখনকার কথা বলছি, তখনও সিডি আসেনি বাজারে। ডিজিটাল শ্রবণ তো স্বপ্নেরও বাইরে। গান্ধারে মেঝে থেকে সিলিং পর্যন্ত দেয়াল জুড়ে ঠাসা থাকত ক্যাসেটের মহাসম্ভার। অমন সংগ্রহ আমি খুব কম দোকানেই দেখেছি। আয়তনে বড়ো দোকান হয়তো অনেকই ছিল সে সময়ের কলকাতায়, কিন্তু ওইটুকু জায়গার মধ্যে ওই ভাবে গুছিয়ে অত অত ক্যাসেটের থাকার বন্দোবস্ত দেখেই অবাক হয়ে যেতে হত। আর অবাক হতাম নানা ধরনের গানবাজনার সমারোহ দেখে। কী পাওয়া যেত না সেখানে? হিন্দুস্থানি শাস্ত্রীয় সংগীত থেকে ফিল্মের গান, গজল থেকে নানা রকম বাংলা গান, কীর্তন থেকে পপ সংগীত, সব। যতরকমের গানবাজনার নাম করা যেতে পারে, সবেরই কিছু না কিছু রাখতেন কাকু। আর সে-দোকানকে আমি কোনও দিন একবারের জন্যও জনহীন দেখিনি। খদ্দেরদের দাবি আর চাহিদা সামলাতে একা চাঁদমামাকে যথেষ্ট হিমসিমই খেতে হত সকাল থেকে রাত। সেইসঙ্গে অবশ্য গিটারও রাখতেন নানা ধরনের। তখন ছেলেমেয়েদের মধ্যে গিটার বাজানোর ব্যাপারটা এত বেশি সুলভ না হলেও, কেউ কেউ কিনতেন ঠিকই। আর গান্ধার থেকে টুকটাক বিক্রি হতে থাকত আশ্চর্য সেইসব বাদ্যযন্ত্র।
এহেন গান্ধারে আমি যাতায়াতের পথে একবার দাঁড়াতামই। স্কুল থেকে ফিরছি, ধরলাম বাটা’র গলি। অন্য রাস্তা দিয়ে গেলে তাড়াতাড়ি হয়, কিন্তু সে-পথে তো ওরকম সাতমহলা গানের বাড়ি নেই। কিছুই না, ফেরার পথে একবার উঁকি মেরে যাওয়া গান্ধারে। ‘কাকু, নতুন কিছু এল নাকি?’ এই ছিল রোজকার প্রশ্ন। আবার হয়তো কোনও এক ছুটির দিনে সন্ধের পর টহল দিতে বেরিয়েছি, এ-পথ সে-পথ হাঁটতে হাঁটতে একবার ঠিক গান্ধারের সামনে ঢুঁ মেরে যাওয়া। মুখে সেই একই প্রশ্ন, ‘কিছু এল নাকি, কাকু?’ ভাবটা এমন, যেন নতুন কিছু এলেই কিনে ফেলব আমি। পকেটে যে সে-রেস্ত নেই, তা চাঁদমামাও জানতেন। বেশিরভাগ দিনই নীরব হাসিযুক্ত মাথা-নাড়ায় বুঝিয়ে দিতেন, কিছুই আসেনি। আবার মাঝেমধ্যে শেলফ থেকে আনকোরা একখানা ক্যাসেট বার করে বলতেন, ‘এইটা দেখতে পার।’ উনি জানতেন, কোন কোন দিকে আমার আগ্রহ। বাড়িতে শাস্ত্রীয় সংগীতের সংগ্রহের কোনও অভাব কোনওকালেই ছিল না, তাই সে-কারণে গান্ধারের দ্বারস্থ হতে হয়নি আমাকে বিশেষ। বরং কৈশোরেই যে-নেশাটি পুরোপুরি বিগড়ে দিয়েছিল আমাকে, যার হাত থেকে আজও মুক্তি পাইনি, সেই গজলের কারণে অনেক বেশি করে হানা দিতাম। তখন মন-মাথা ডুবিয়ে জগজিৎ সিং শুনছি। তাঁরই পাশে আস্তে আস্তে জায়গা দখল করছেন হরিহরণ, একেবারে অন্য ধরনের গায়কী নিয়ে। আর আমি খোঁজ রাখছি, কখন এঁদের নতুন গজলের ক্যাসেট আসবে বাজারে।
কী পাওয়া যেত না সেখানে? হিন্দুস্থানি শাস্ত্রীয় সংগীত থেকে ফিল্মের গান, গজল থেকে নানা রকম বাংলা গান, কীর্তন থেকে পপ সংগীত, সব। যতরকমের গানবাজনার নাম করা যেতে পারে, সবেরই কিছু না কিছু রাখতেন কাকু। আর সে-দোকানকে আমি কোনও দিন একবারের জন্যও জনহীন দেখিনি। খদ্দেরদের দাবি আর চাহিদা সামলাতে একা চাঁদমামাকে যথেষ্ট হিমসিমই খেতে হত সকাল থেকে রাত। সেইসঙ্গে অবশ্য গিটারও রাখতেন নানা ধরনের।
তখনও ক্যাসেটই হত। আমরা অ্যালবাম কথাটা শিখিনি। এপিঠ ওপিঠ মিলিয়ে আট কি দশখানা গান। সে-ই হত আমাদের বহু দিনের রসদ, বহু রাতের সঙ্গী। হয়তো খবর পেলাম, জগজিৎ সিং আর লতা মঙ্গেশকর জুটি বেঁধেছেন। বেরতে চলেছে ‘সজদা’। বা প্রথমবার গুলজারজি-র সঙ্গে হাত মেলালেন জগজিৎ সিং, আসছে ‘মরাসিম’। কিংবা উস্তাদ জাকির হুসেন আর হরিহরণ মিলে বানিয়েছেন ‘হাজির’। এসব খবর আমার কয়েক রাতের ঘুম, কয়েক দিনের পড়াশোনা কেড়ে নেবার জন্য যথেষ্ট ছিল। এই খবরগুলো কানে এলেই দু’বেলা ঘুরঘুর করতাম গান্ধারের সামনে। কাকু দেখেই বুঝে যেতেন, কিশোরের আগমন কী হেতু। খদ্দের সামলাতে সামলাতেই বলতেন, ‘আসেনি গো। কাল আসতে পারে’।
আমরা চিরকালই শুনে আসছি, কাল তুমি আলেয়া। সেই ভরসায় না থেকে তাই ফের সন্ধেবেলাতেই ফিরে যেতাম ভিড়ভাট্টার গান্ধারে। উঁকি মারতেই কাকু বলতেন, ‘উঁহু।’ অর্থাৎ আসেনি। এমনটা চলতে থাকত। যেদিন সত্যিই আসত, সেদিন মনের মধ্যে ঠিক কেমন রংয়ের আতসবাজি ফুটে উঠত, তা জাহির করার ভাষা আমি শিখতে পারিনি। ছোট্ট একখানা আয়তক্ষেত্রাকার বস্তু, পাতলা প্লাস্টিকের আবরণে মোড়া, যা আঙুলের টানে ছিঁড়ে ফেলতে পারলেই অতগুলো নতুন গান আমার কাছে দৌড়ে চলে আসবে। এ আনন্দের বর্ণনা আজও হয় না। কেবল কি গজল? সুমন যখন গাইতে এলেন, তখন তাঁর প্রতি বছরের পুজোর ক্যাসেট ওই গান্ধারে চক্কর কেটেই পাওয়া। একদিকে জগজিৎ সিং যেমন বিরহের পসরা খুলে দিচ্ছেন চোখের সামনে, সুমন আর একদিকে নিয়ে চলেছেন বিস্ময়ের অজানায়। ‘তোমাকে চাই’ থেকে ‘গানওলা’ হয়ে ‘চাইছি তোমার বন্ধুতা’, সব ওই কাকুর হাতে দাম মিটিয়ে কেনা। পাশাপাশি গাইছেন নচিকেতা, গিটার হাতে আসছেন অঞ্জন। মঞ্চে শুনতে যাচ্ছি এঁদের, বন্ধুরা দলবেঁধে। একের পর এক নতুন গান গাইছেন, আর অনুষ্ঠান থেকে ফিরে সে-গান বারেবারে শোনবার তেষ্টা পাচ্ছে। কবে আসবে হাতে, আশ্চর্য নতুন গানেরা? আমার সেইসব আকণ্ঠ সুরেলা অপেক্ষার একমাত্র উত্তর ছিল গান্ধার।
কিন্তু যেদিন সত্যি সত্যি হাতে পেতাম সেই জীবন পাল্টে দেওয়া গানের গুচ্ছ? সবদিন কি কিনে নিয়ে যেতে পারতাম? নাহ। হয়তো ভাবতাম ৩৫ টাকা দাম রাখবে ক্যাসেটটার, আগের বছর যেমন ছিল, গিয়ে দেখলাম বাড়িয়ে ৪৫ করেছে। ১০ টাকা কম পড়ছে। বা হয়তো হাতে নেবার পর জানতে পারলাম দু’টো ক্যাসেটের সেট। দাম ৯০। হয়ে গেল সর্বনাশ। কিন্তু তাই বলে মুখ ফিরিয়ে তো আর চলে আসা যায় না। খদ্দেরদের চলতি ভিড়ে এক কোণে জায়গা করে নিয়ে হাতের মধ্যে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতাম সেইসব ক্যাসেটদের। পিছনে ছাপার হরফে দেওয়া গানের শিরোনাম দেখে ভাবার চেষ্টা করতাম, ঠিক কেমন হবে তারা। আর সামনে প্রিয় শিল্পীদের ঝকঝকে ছবি দেখতাম দু’চোখ ভ’রে। তারপর চুপিসাড়ে ক্যাসেটটা রেখে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতাম। কিন্তু ওই ভিড়েও সর্বজনীন চাঁদমামা ঠিক খেয়াল করতেন। ‘কী হল? নেবে না?’ এ প্রশ্ন করা স্বাভাবিক। যার জন্য ওঁকে গত একমাস ধরে দু’বেলা জ্বালিয়েছি, সেই ক্যাসেট হাতে পেয়ে রেখে দিয়ে ফিরে যাচ্ছি, এ কেমন ব্যাপার?
শেষমেশ বলতেই হত, যে টাকা কম পড়ছে, এতটা দাম হবে বুঝতে পারিনি, পরে কোনও একদিন এসে নিয়ে যাব। সদাহাস্যমুখ মানুষটি মোটা ফ্রেমের আড়াল থেকে তাকাতেন আমার দিকে। হয়তো জানতেন, যতদিন না হাতে পাব, শান্তি হবে না আমার। গান থেকে মানুষ বেশিক্ষণ দূরে থাকতে পারে না, বুঝতেন তিনি। চুপ করে তাকিয়ে থাকতেন কিছুক্ষণ। তারপর অন্যান্য খদ্দেররা চলে গেলে বলতেন, ‘এটা কোনও কথা হল? নিয়ে যাও তো! পরে দেবে এখন।’ আমি কুণ্ঠায় না করি যতই, ‘গান্ধার’-এর নাম ছাপা ব্রাউন পেপারের খামে মুড়ে ক্যাসেট তুলে দিতেন আমার হাতে। কোনও দোকানের কাউন্টারে এমন আজব মনের মানুষও কি আজ পাওয়া যাবে আর? জানি না। কেবল মনে আছে, এসব ঘটনার কারণেই, দোকানের নামটা মনে মনে ভেঙে নিয়েছিলাম আমি। গান ধার। যে দোকানঘর আমাকে দিনের পর দিন গান ধার দিয়েছে, এর চেয়ে ভাল নাম তার আর হতেই পারে না।
হয়তো ভাবতাম ৩৫ টাকা দাম রাখবে ক্যাসেটটার, আগের বছর যেমন ছিল, গিয়ে দেখলাম বাড়িয়ে ৪৫ করেছে। ১০ টাকা কম পড়ছে। বা হয়তো হাতে নেবার পর জানতে পারলাম দু’টো ক্যাসেটের সেট। দাম ৯০। হয়ে গেল সর্বনাশ। কিন্তু তাই বলে মুখ ফিরিয়ে তো আর চলে আসা যায় না। খদ্দেরদের চলতি ভিড়ে এক কোণে জায়গা করে নিয়ে হাতের মধ্যে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতাম সেইসব ক্যাসেটদের।
অনেক পরে জেনেছিলাম, গান্ধার ছিল গিটারশিল্পী সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের উৎসাহ আর উদ্যোগের ফসল। উনিও গড়িয়ারই বাসিন্দা, মাঝেমধ্যে গান্ধারে বসে থাকতে দেখা যেত তাঁকেও। মা-বাবার সঙ্গে খোশগল্প করতে কখনও সখনও আমাদের ভাড়াবাড়ির ফাটল-ধরা মেঝেয় পা পড়ত সুবেশ ও সুদর্শন সেই শিল্পীর। খুব মৃদুস্বরে কথা বলতেন, আর ভারি মিষ্টি করে হাসতেন। তখনও অবশ্য আমি হাফপ্যান্ট। ছবিতে গান লেখার সূত্রে সুনীলবাবুর কনিষ্ঠ পুত্রের সঙ্গে আলাপ হতে কয়েক দশক দেরি।
কয়েক দশকে কত কী বদলে গেল। ক্যাসেট গিয়ে সিডি এল। সেও কিনেছি চাঁদমামা-র দোকান থেকে, গান্ধার থেকে। তারপর যখন সিডিও যায় যায়, সংগীত-শ্রবণ ব্যাপারটা হয়ে উঠছে বায়বীয়, আস্তে আস্তে নিভে যেতে দেখেছি চাঁদমামা’র মুখের সেই হাসি। একা বসে থাকতেন ছোট দোকানটায়, তেমন খদ্দের আর আসত না কেউ। যেতে-আসতে শুকনো হাসি-বিনিময় হত আমার সঙ্গে। যে-মানুষটির বদান্যতায় আমার গান শোনার পৃথিবী খুলে গেছে নিশ্চিন্তে, এই ঘনিয়ে আসা শান্ত বিপদের দিনে আমার টুকরো হাসি তাঁকে কোনও স্বস্তি দিতে পারত না। গান আমি একাই ধার নিয়ে গেলাম তাঁর কাছ থেকে, শোধ দিতে পারলাম না কিছুই।
এই ক’দিন আগে, লকডাউনের মধ্যেই খোঁজখবর নিতে ফোন করেছিল কৌশিকদা (পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, শিল্পী সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কনিষ্ঠ পুত্র)। এ-কথা সে-কথার পর আমি গান্ধারের প্রসঙ্গ তুললাম। গড়িয়া থেকে বাসাবদল করে যখন চলে আসি আজ থেকে বছর ১১ আগে, তখনও গান্ধার জ্বলছে টিমটিম করে। গিটারই বেশি সেখানে, দু’দশটা সিডি পড়ে আছে। আর আছেন বয়স্ক চাঁদমামা, খদ্দেরহীন। এই অবধি দেখে এসেছি। আমার প্রশ্ন শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে কৌশিকদা বলল, ‘গান্ধার আর নেই গো। উঠে গেছে। গানবাজনাই প্রায় উঠে যাচ্ছে, দোকান আর থেকে করবে কী।’ কথাটা শুনে সারাদিন গুম হয়ে বসে থাকলাম। আজও আছি।
ছোট্ট একচিলতে একটা দোকান, কত কত শ্রোতার সারা জীবনের শ্রবণ যেখান থেকে বয়ে গেছে দূরে দূরে, তাকেও বাঁচানো গেল না শেষমেশ। নিজের গানবাজনা শোনাকেই ভারি ব্যর্থ মনে হতে থাকল। গান্ধার। আমার কৈশোরে সে ছিল ঝলমলে, প্রাণবন্ত, শুদ্ধ গান্ধার। আমার মধ্যযৌবনে সে পেল পড়ন্ত রোদ, নিভে আসা মোমের আলো। শুদ্ধ গান্ধার কখন যেন কোমল গান্ধার হয়ে উঠল, অলক্ষ্যেই। আর এখন সেই সরু গলির সপ্তক হয়ে উঠেছে গান্ধারবর্জিত কোনও এক রাগ। অবশ্য, এমনই তো হবার কথা। ছোটবেলার চাঁদমামার গল্প কবেই বা সত্যি হয়েছে আর…
শ্রীজাত জাত-কবি। লেখা শুরু করেছিলেন নব্বইয়ের দশকের শেষাশেষি। ২০০৪-এ এসেই কাব্যগ্রন্থ 'উড়ন্ত সব জোকার'-এর জন্য আনন্দ পুরস্কার। গীতিকার হিসেবেও জনপ্রিয়তার শিখরে। পাওয়া হয়ে গিয়েছে ফিল্মফেয়ারও। ২০১৯-এর বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে বই 'যে জ্যোৎস্না হরিণাতীত', গদ্যসংকলন 'যা কিছু আজ ব্যক্তিগত' এবং উপন্যাস 'যে কথা বলোনি আগে'। এ যাবৎ প্রকাশিত বাকি কাব্যগ্রন্থের তালিকা এপিকসদৃশ দীর্ঘ। ট্রোলিংয়ের তোয়াক্কা না-করেই ফেসবুকে নিয়মিত কবিতা লিখে পাঠকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখতে পছন্দ করেন টেক স্যাভি কবি।
এই জীবন আমার ছিল না। তবু আপনার লেখায় এই জীবনের পাশাপাশি হাঁটলাম। অমীমাংসিত এই মন খারাপ। গান্ধারকে গান ধার ভাবা… শুদ্ধ গান্ধার থেকে কোমল গান্ধার, শেষে গান্ধার বর্জিত হয়ে গেল গলি। আমাদের জীবনও কি হয়নি এমন? অথচ হাতে নেই সুতো। লাটাই হারিয়েই গেছে মনে হয়।
অনেক শুভেচ্ছা আপনাকে।
মুগ্ধ হলাম। কী কবিতা কী গদ্য, সবেতেই তিনি অনবদ্য। কবিকে কুর্নিশ।
অসামান্য ।যত দেখি ততই মুগ্ধ হই।আপনার ভাবনাধারা শিক্ষনীয়।শ্রদ্ধা জানাই কলমকে,কলমের মননকে।
🙏🙏🙏
পড়তে পড়তেই উঠে গিয়ে ক্যাসেটের র্যাকটা দেখে আসলাম৷ জানেন, শ্বশুরবাড়ি, তিনটে ভাড়া বাড়ি, প্রায় পাঁচবার উদ্বাস্তু হয়েছে ওরা আমার সাথে সাথে৷ এখন আমার এক চিলতে ফ্ল্যাটে থিতু হয়েছে৷ বহুদিন হয়ে গেছে ওরা আর গান শোনাতে পারেনা৷ তবুও সেই স্কুল আর কলেজ বেলার গানের স্মৃতি ধরে রাখা নীরব সঙ্গীরা আমার সাথে সাথেই মনেহয় ঘুরবে আমার মৃত্যু পর্যন্ত৷
চোখে মনেহয় বালি পড়লো৷ জ্বালা করে উঠলো তাই৷
পৃথিবীর পিঠের ওপর থেকে এমন কত কিছু চলে গেছে সব কি আর সব সময় বোঝা যায়। যখন যায় তখন এরকম লেখায় বিষাদ চূর্ণ খসে পড়ে পুরনো দেওয়ালের প্লাস্টার খসে পরার মত।
ছোটেবেলার যত্সামান্য পয়সা যা জুটত তার সিংহভাগই ব্যায় করতাম গজলের ক্যাসেট আর খেলার পত্রিকা কিনে।আজ সেই স্মৃতি উজাগর হলো এ লেখার মধ্যে দিয়ে। অনায়াস বর্ণনায় অতীতকে ফিরে পেয়ে আমি বিস্মিত। ধন্যবাদ জানাই লেখক স্রীজাত কে।
ভালো লাগলো সহজ সুন্দর সাবলীল ভঙ্গিমায় নিজের বক্তব্য প্রকাশে পারদর্শিতা মনে কেড়ে নিয়েছে, পরবর্তী লেখার অপেক্ষায় রইলাম।
এরকম ছোট ছোট ভালোবাসার ঘর আমাদের বাল্যে, কৈশোরে ছড়ানো ছিলো চারপাশে, সে সব ঘরের দরজায় দাঁড়ালেই মন আলো হয়ে যেতো। কেমন করে যে সব হারিয়ে গেলো !! খুব মন কেমন করা লেখা।
Gandhare jakhon cassete bikri hoto takhon guitar thakto ki?mone hay na. Ashole celebrity hoye gyele shob tathyoi churanto sotyo bole dhore nite hay.noile moha bipad.