লাল

মিছিল এবং ঠোঁটের সেতুসম্ভব! বিপ্লব আর কাঠগোলাপের। রক্তদান শিবির এবং মাল্টি ভিটামিনের। সূর্যাস্ত এবং দিগন্তকে ভাসিয়ে রাখা গরদ আঁচলের। মির্জা গালিবের পানীয় থেকে যে বিষাদ উড়ে আসে শতক ডিঙিয়ে, তাকে সে চুনির কাঠিন্যে কানে পরে নিয়েছিলো, চলে যাওয়ার আগে। তখন ব্যাগে গুপ্তির মতন গোপনে ঝলসাচ্ছিল কি রেভলন প্লাম্প অ্যান্ড গ্লস? দেখা হয়নি। শুধু শীতের বাতাস কাটতে কাটতে ধেয়ে এসেছে ডিউস বল। নতুন চুমুতে কেটে যাওয়া স্মৃতি থেকে টপটপ করে ঝরে পড়ছে বাসনা তরল। শীত গ্রীষ্ম বসন্তে, এল পি-তে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, লজ্জা রাঙা সিঁদুর রাঙা আর রাঙা কৃষ্ণচূড়া। তার মধ্যেই ট্রাফিক সতর্কতা, জিপিএস-এ যানজট বটফলের মত পেকে আছে! তবুও বিভিন্ন অপেক্ষার উঁচু নিচু টিলার ওপারে জানি, শিমূল তার প্রবাস সাজিয়ে বসে থাকবে

 নীল

ডেনিম বিপ্লব আছড়ে পড়ার অনেক আগে থেকেই আকাশ,  সমুদ্র এবং শূন্যতার জন্য বিখ্যাত। পর্যটনের ডার্লিং, ব্রিটিশরাজ বিরোধী প্রথম মঞ্চসফল নাটক এবং দলিত আন্দোলনের পোশাক। আপাতত নাবিকের অভিমান চূর্ণ হয়ে গুলছে বাতাসে। হাওয়াইয়ান শার্টে কারও কালি নিবিড় হয়ে রইল রজক বিভ্রাটে। উড়ছে নিয়তি নির্দিষ্ট ঘুড়ি, তোমাকে ছুঁতে চেয়ে। তোমার চোখে ড্যানিয়ুবের গভীরতা জাহাজডুবির বার্তা পাঠাচ্ছে ঘনঘন। যেখানে কেঁপে যাচ্ছে আকাশের ছায়া। কোথাও কোনও চন্দ্রাহত রাতে পাঁচজন গোল হয়ে বসে একই কর্ড বাজিয়ে চলেছে ক্রমাগত। গিটারের গোঙানি রঙ পেতে পেতে বিষাদজব্দ করে ফেলছে অ্যাম্পি থিয়েটারকে। স্বচ্ছতার গ্যারান্টি ট্যাগ সাঁটা মিনারেল ওয়াটারের ঝর্ণা এবার নেমে আসুক হাফসোল হৃদয়ে

গোলাপি

ফুল বাজারে একমেবাদ্বিতীয়ম শো স্টপার এবং টিন এজারের স্বপ্নপণ্য। উভকামী আন্দোলনের জগৎজোড়া প্রতীকও বটে। বিগত শতকের উপন্যাস জুড়ে যার বেধড়ক কটাক্ষ, বাবুদের বুকের তাপজ্বালায় এসেন্স হয়ে থেকেছে। দু ছিলিমের পর তখন চুবিয়ে ফেলতেই হয়েছে চেতনার স্রোতকে। নেশার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যার রূপকে হতে হয়েছে ফিনফিনে। অথচ প্যাঁড়া, চমচম আর বরফে শর্করাসম্ভূত এবং স্বভাবেও তাই ছেলেমানুষ! বালিকা মনের দেওয়াল আর নখ-কথায় যার শৈশব আঁকা রইলো। পুতুলের সংসারকে এক আশ্চর্য মমতায় সাজিয়ে রাখতে রাখতে তার কখন যে বেলা গড়িয়ে যায়। তখন জেলুসিলের শিশি হাতে বিপদসমুদ্রে নেমে পড়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না আর

হলুদ

পৃথিবীর প্রাচীনতম অসুখ। আবার অসুখ পেরিয়ে এসে উজ্জ্বল রোদে তোমার দাঁড়িয়ে থাকাও কি নয় ? একমাত্র রঙ যার চাহিদা দেশের কোনও রান্নাঘরে ফুরায় না, ফুরায় না সে! ত্বকের যত্নে, ভেষজ স্বপ্নে এবং শাড়ির জমিতে যার সিদ্ধি আজ কিংবদন্তি। বিশ্বভারতী এবং সাবেক চটি পুস্তিকার প্রচ্ছদ যেখানে একসঙ্গে মিলেমিশে গেছে চিলেকোঠার বিপদে। মফস্বলের পুকুরের পাশে নিরানন্দ আবাসনগুলির ডুকরে ওঠা বিকেলের যে স্তব্ধ ও মলিন স্বাক্ষী। গায়ক ও ডুবুরির কাছে সাবমেরিন, স্মৃতির কাছে অমলতাস, পান্ডুলিপির কাছে সাবেকিয়ানা। ফ্রেমে বন্দি চলে যাওয়া মানুষের ছবিতে, প্রতিরাতে যার রূপ ঝরে যেতে থাকে

সবুজ

ঘড়ির কাঁটা এবং ঋতুবদলের সঙ্গে পরিবর্তন হয় রূপ ও অরূপ। বিশেষত অরণ্যে, পাহাড়ে, দিকে, দিগন্তরে। তার গানের জন্য রবি ঠাকুর এবং প্রাণের জন্য জগদীশচন্দ্র বোসের কাছে এই সভ্যতা আমৃত্যু ঋণী থেকে গেল। ঢাকাই শাড়ি থেকে প্রিয় দলের জার্সি – সর্বত্র পূজ্যতে। শীতের কড়াইয়ে উপচে পড়া পালং আর কড়াইশুটির শুভবিবাহের প্রচারে সদ্য ক্ষেত থেকে উঠে আসা মারীচসংবাদ নিরলস! অলস দুপুরে খয়ের জর্দার সঙ্গে কাঁসার বাটায় বিগত প্রজন্মের স্নেহ যেন চুন হয়ে লেগে আছে পানপাতার ঠিক হৃদমাঝারে। তবু বিশ্বের তাবড় হাসপাতালগুলিতে তাকেই খুঁজে চলেছে স্যালাইন, ওয়ার্ড, অপারেশন থিয়েটার আর দেওয়ালের পোস্টারে পোস্টারে

এবং কালো

‘যদিও রজনী পোহালো তবুও দিবস কেন যে এলো না …’ !  শয়তান যেভাবে সেজে থাকে ঠিক সেভাবেই তোমার আই লাইনারও! বিশ্বের চরম লজ্জাজনক অধ্যায়ের ইতিহাস, যাকে ব্যাকহিল করে গোলের মালা পরিয়ে দ্যাখো সাম্বা নাচছে ছেলেমেয়েরা! ওদের পায়ে শতাব্দী নাচছে, আর ওই নাচে সৃষ্টির গোড়ার কথা। বুদ্ধের শিষ্যের গিটার থেকে দুপুরে পাশে এসে বসেন সেই ম্যাজিক উওম্যান আজও। কখনও ছিন্নমস্তা কখনও চপলা বার টেন্ডার সেজে এগিয়ে দেন গভীর ব্লাডি মেরি অথবা রাম অ্যান্ড কোক। প্রলয় পূর্ব আকাশের দুর্লভ এই কলঙ্কোজ্জ্বল শেডে লুকিয়ে পড়তে চায় জন্মজীবন     

সকালে কবিতা লেখেন আর সন্ধ্যায় সংবাদ । এই স্বআরোপিত দ্বিচারিতার মধ্যেই ফ্রিস্টাইল বেঁচে থাকা । পেশার সূত্রে দেড় দশক দিল্লিতে অতিক্রান্ত। ভ্রমণ যত্রতত্র, কাব্যগ্রন্থ আপাতত পাঁচটি। জন্ম ১৯৭০, কলকাতা।

4 Responses

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *