রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান নিয়ে আলোচনা হয়েছে বিস্তর। নানা জনের আলোচনায় রবীন্দ্র-গানের বিভিন্ন দিক উঠে এসেছে বিভিন্ন সময়ে। রবীন্দ্র-গানে রাগ-রাগিণীর প্রয়োগ নিয়েও চর্চা কম হয়নি। রবীন্দ্রনাথের এমন কিছু অনন্যসাধারণ গানে রাগ-রাগিণীর প্রত্যক্ষ উপস্থিতি সত্ত্বেও রাগসঙ্গীতের জগতে রবীন্দ্রনাথ বা রবীন্দ্র-গান সম্পর্কে যে সবাই খুব উৎসাহী, এমন নয়। অবশ্য সব রাগসঙ্গীতশিল্পীই যে রবীন্দ্রনাথের ক্ষেত্রে উদাসীন, তেমন নয়। সরোদশিল্পী বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত রবীন্দ্র-গানে রাগের প্রয়োগ নিয়ে মনে রাখার মতো কিছু কাজ রেখে গেছেন। সে প্রসঙ্গে পরে আসব। রবীন্দ্র-গানের ও রাগসঙ্গীতের সংযোগ প্রসঙ্গে প্রায়শই তর্ক চলে, রবীন্দ্রনাথ রাগ জানতেন কি না, সেই বিষয়েও। যদিও এসব বিতর্কের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এই সংঘাত কেন, কোথায় এর উৎস, তা ভেবে দেখা। এই পর্বে এই সংঘাতের প্রেক্ষাপট তুলে ধরা জরুরি মনে করি। যেহেতু রবীন্দ্র-গানে রাগের প্রয়োগই আমার আলোচনার বিষয়, রাগসঙ্গীতজগতের প্রেক্ষিতে রবীন্দ্রনাথের অবস্থান ঠিক কোথায় এবং কেন তা সেরকম, তা বলা আবশ্যক।

রাগসঙ্গীত ও রবীন্দ্র-গানের সংঘাত একপাক্ষিক নয়। যে কোনও সংঘাতই দ্বিপাক্ষিক। এক্ষেত্রে সঙ্গীতে-সঙ্গীতে সংঘাত হয়নি; হয়েছে দুইদিকের মৌলবাদী চিন্তাধারায়। রবীন্দ্রনাথ, তাঁর সৃষ্টি, বা রাগসঙ্গীত, কোনও কিছুরই এখানে প্রত্যক্ষ ভূমিকা নেই। রাগসঙ্গীতের জগতে এক ধরনের মৌলবাদ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসছে। এর একটি দিক হল এই– প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে যা চর্চিত হয়ে চলেছে, বর্তমান সময়েও কোনও শিক্ষার্থীকে তা-ই চর্চা করে যেতে হবে। অন্য একটি দিক হল এই– ঘরানাদারী গানবাজনার বাইরে অন্যান্য যাবতীয় সঙ্গীত, তার কোনও কিছুই শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত ও ওস্তাদদের কাছে সঙ্গীত পদবাচ্য নয়। এর আরও একটি দিক হল– রাগ পরিবেশনের সময়ে রাগের ভাবের প্রকাশ নয়, প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে রাগের ব্যাকরণগত নিয়মরক্ষা; সঙ্গে চলতে থাকে শিল্পীর নিরন্তর আত্মদম্ভ প্রকাশ। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘সঙ্গীতচিন্তা’ গ্রন্থে এই সঙ্গীতপদ্ধতি সম্পর্কে বিরূপ অনুভূতি ব্যক্ত করেছিলেন।

Rabindranath Tagore

রবীন্দ্রনাথের গান যাঁরা গান, তাঁরাও এক ধরনের মৌলবাদে বিশ্বাসী। এই বিশ্বাসের সঙ্গে মিল পাওয়া যায় রাগসঙ্গীতের জগতের মৌলবাদের। ঠিক যেমন রাগ পরিবেশনের সময় শিল্পী শুধু রাগের ব্যাকরণের প্রতিই মনোযোগী হয়ে পড়েন, সেরকমই রবীন্দ্র-গান গাওয়ার সময় শিল্পী স্বরলিপি যাতে ঠিক ঠিক অনুসৃত হয়, সেইদিকেই খেয়াল রাখেন। অধিকাংশ গায়ক-গায়িকাই, যাঁরা সমাজে প্রাজ্ঞ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী হিসেবে স্বীকৃত, সমাদৃত ও শ্রদ্ধেয়, তাঁদের গান যেন কখনোই স্বরলিপি পাঠের সীমা অতিক্রম করে না। রবীন্দ্র-মৌলবাদের অন্য দিকগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘রবীন্দ্রনাথ-পূজা’। এই আরোপিত দেব-মাহাত্ম্য যখন রবীন্দ্র-গানের উপস্থাপনায় তার ছাপ ফেলে, তখন গানগুলো আর সুখশ্রাব্য থাকে কি না, সে বিষয়ে মনে প্রশ্ন জাগে।

রাগসঙ্গীতশিল্পীদের বিরাগ রবীন্দ্রনাথ বা তাঁর সৃষ্টির প্রতি নয়, রবীন্দ্র-গান কীভাবে পরিবেশিত হয়, তার প্রতি। আগেই বলেছি, স্রষ্টা রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর সৃষ্টি এক্ষেত্রে কার্যত নিরুপায়। যাঁরা রবীন্দ্র-গান গান, তাঁদের অনেকেরই মূল উদ্দেশ্য সঙ্গীতচর্চা, না সামাজিক স্বীকৃতি লাভ, তাই নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। তাই তাঁরা গান গাইলে রবীন্দ্র-গানের সাঙ্গিতিক দিকগুলি যে উপেক্ষিতই রাখেন, সে কথা অনুধাবন করতে কষ্ট হয় না। এই সাঙ্গিতিক দিকগুলির মধ্যে মূলত পড়ে গানের কথা, গানের কথার ধ্বনি, গানের কথার বক্তব্য, গানের সুর, গানের সুরের ব্যাকরণ, গানের সুরের ভঙ্গি, চলন, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ — গানের কথার ও সুরের সামঞ্জস্য। সুচিত্রা মিত্র গানে চিত্রকল্পের কথাও বলেছিলেন। এই চিত্রকল্প কিন্তু শুধুই গানের কথার উপর নির্ভরশীল নয়।

উপরোক্ত শিল্পীদের একজন যদি গান, ‘প্রভু আমার প্রিয় আমার’, তিনি গানের কথা বা সুর কতখানি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন, তা তর্কসাপেক্ষ; হয়ত গানের কথার সঙ্গে তাঁর প্রথম পরিচয়ই ঘটবে স্বরবিতানের পাতায়। অথচ, গাওয়ার আগে, এবং অবশ্যই গাওয়ার সময়ে গানটি কোন রাগে, সেই রাগে সুরের ভঙ্গি বা চলন কেমন হয়, রবীন্দ্রনাথ এই গানের জন্য এই রাগ কেন বেছেছিলেন, গানের কথার বক্তব্যের সঙ্গে গানের সুরের চলনের কী সম্পর্ক ইত্যাদির প্রতি মনোযোগ একান্ত প্রয়োজন। প্রদর্শিত মুদিত চক্ষু, বিকৃত মুখশ্রী, অহেতুক হস্ত-সঞ্চালন, এবং ক্রম-বিলম্বিত লয় যে গানের সাঙ্গিতিক কোনও উদ্দেশ্য সাধনে সক্ষম নয়, বা গানে তথাকথিত ‘ভাব’, বা অভিব্যক্তি (এক্সপ্রেশন) যুক্ত করতেও নয়, এ কথাও মনে রাখা প্রয়োজন। ক্রম-বিলম্বিত লয়ের প্রসঙ্গে একটু ভেবে দেখলে বোঝা যাবে, এই লয় কমানোর ফলে গানে নন্দনতাত্ত্বিক দিক ছাড়াও ভাষাতাত্ত্বিক দিক থেকে একটি সমস্যা তৈরি হয়। কোনও একটি বাক্যে যখন শব্দ পরপর সাজানো থাকে, তখন প্রতিটি শব্দের অর্থ নির্ধারিত হয় সেই বাক্যের অন্তর্গত অন্যান্য শব্দের অর্থের, এবং সেই দুটি শব্দের ও অন্যান্য শব্দের পারস্পরিক অর্থের দ্বারা। দুটি শব্দের উচ্চারণের মধ্যে সময়ের ব্যবধানও বাক্যের অর্থ গঠনে সাহায্য করে। এই একই কথা কোনও রাগের ক্ষেত্রেও কিন্তু প্রযোজ্য। কোনও রাগের চলন আমাদের কাছে তখনই অর্থবহ হয়, যখন সেই রাগের স্বরগুলির মধ্যে একটি পারস্পরিক সম্পর্ক আমরা খুঁজে পাই– একটি স্বরের তাৎপর্য নির্ভর করে অন্যান্য স্বরের ও সেই স্বরের সঙ্গে অন্যান্য স্বরের সম্পর্কের উপর। কোন স্বরে কতক্ষণ দাঁড়ানো উচিৎ, তার উপরও নির্ভর করবে রাগের বক্তব্য ও রাগের মূল ভাব। ‘চিরপথের সঙ্গী আমার চিরজীবন হে’ যদি এমন লয়ে গাওয়া হয় যাতে ‘চিরপথের’ ‘চির’ উচ্চারিত হওয়ার এতটাই পরে ‘পথের’ উচ্চারিত হয়, বা ‘সঙ্গী’ উচ্চারিত হওয়ার এতটাই পরে ‘আমার’ উচ্চারিত হয় যাতে দুটি শব্দের পারস্পরিক সম্পর্ক সেভাবে গড়ে ওঠার সুযোগই না পায়, তাহলে কোনওভাবেই সেই পঙক্তিটির অর্থ বোঝা যাবে না; আর যদি গানের প্রতিটি পঙক্তিতেই এমন হয়, তাহলে সে গানের বক্তব্য শ্রোতারও বোধগম্য হবে না।

Rabindranath

এই বিষয়ের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে ‘স্ক্যানিং’-এর প্রসঙ্গ। লয় কমলে, বা এমনিও শিল্পীর দমের সমস্যা হওয়া খুবই স্বাভাবিক। শিল্পী যদি গানের কথা নিয়ে সচেতন না হন, তাহলে তিনি গানের মধ্যে যত্রতত্র দম নেবেন। বাক্যের মাঝখানে হঠাৎ বেমানান জায়গায় যতিচিহ্ন পড়লে, বা কখনও কখনও কোনও শব্দে দুটি ধ্বনির মাঝখানে যতিচিহ্ন পড়লে যে কোনও রসিক শ্রোতাই বুঝতে পারবেন, গানের কী সর্বনাশটাই না হয়!

আরও পড়ুন: রবীন্দ্রনাথকে লেখা চিঠি

যাঁরা সনাতন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী, যাঁদের মধ্যে দু-একজন এমনকি ‘গুরু’ হিসেবেও সম্মাননীয়, তাঁদের স্বরলিপি পাঠ থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, স্বরবিতানের বাইরে স্বরের বা স্বরসংগতির ব্যাপারে তাঁদের কেউই সচেতন নন। এঁরাই যখন রবীন্দ্রনাথের টপ্পা-অঙ্গের কোনও গান গান, তখন স্বরলিপি অক্ষুণ্ণ রাখার তাগিদে আন্দোলিত সুরগুলি গাওয়ার সময় গানটি অবধারিতভাবেই শ্রুতিমাধুর্য হারায়।

উচ্চারণের কারণে প্রথমবার শোনার পর  রবীন্দ্রনাথের অনেক গানই আমাদের অনেক দূরে ঠেলে দেয়। একসময় গাওয়া হত ‘য়োঁগোঁ য়াঁমাঁর প্রিঁঅঁ, তঁমাঁর রঁঙ্গিঁন য়ুঁত্তঁরীঁঅঁ’। কিংবা ‘সেই কৌন বৌনেইর হৌরীণ’… মনে আছে, সত্যজিৎ রায়ের রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রসঙ্গে একটি প্রবন্ধে তিনি এই উচ্চারণরীতির উল্লেখ করেছিলেন। উত্তরকালে যদিও বা উচ্চারণে উন্নতি লক্ষ করা যায়, তবু আজও অনেক গায়ক-গায়িকার উচ্চারণগত ত্রুটিও শ্রোতার সঙ্গে রবীন্দ্র-গানের বিচ্ছিন্নতার কারণ।

এমন নানা সমস্যা-সম্বলিত অভ্যেস অনুপেক্ষিত রেখেই যখন অনেকে রবীন্দ্র-গান গান, তাঁদের গান শুনে হয়ত মনে হওয়া স্বাভাবিক, গান গাওয়া ভীষণ সহজ কাজ। স্বরলিপির প্রতি আনুগত্য এঁদের অনেকের কাছেই স্বর-সচেতনতার চেয়ে বেশি প্রয়োজনীয়। রাগসঙ্গীতশিল্পীদের এক্ষেত্রে আপত্তি যুক্তিযুক্ত, আবার সবসময় নয়ও। যুক্তিযুক্ত, কারণ রাগসঙ্গীত শিক্ষার দ্বারা স্বরসচেতনতা তৈরি হয়। যুক্তিযুক্ত নয়, কারণ একমাত্র রাগসঙ্গীত শিক্ষার মধ্যে দিয়েই স্বরসচেতনতা তৈরি হয়, এই গল্পটিও রাগসঙ্গীতশিল্পীদেরই বানানো। এঁরা তো বটেই, অতীতে যাঁরা গেয়েছেন, বা গান রেকর্ড করেছেন, তাঁদের অনেকের গান শুনে জনৈক রসিক শ্রোতা নন্দনতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটু অভাব বোধ করতে পারেন। কিন্তু এইসব গায়কেরা বঙ্গসমাজে রবীন্দ্রনাথের মতোই পূজ্য ও পূজিত। তাঁদের গান যখন রবীন্দ্র-গানের নির্ভুল নিদর্শন হিসেবে সামনে আসে, যাঁরা এই রবীন্দ্র-পূজার অংশ নন (যেমন রাগসঙ্গীতশিল্পীরা) তাঁদের বিরক্ত হওয়া অস্বাভাবিক নয়।

Rabindranath Tagore on his study

রাগসঙ্গীতের জগতে মৌলবাদ নিয়ে গোড়ায় কিছু কথা বলেছি। শিল্পীর আত্মদম্ভ প্রকাশ, তাঁর স্ব-বিজ্ঞাপিত সাধনা এবং অন্যান্য যে কোনও ধরনের সঙ্গীতের অপরায়ণ নিয়েও আলোচনা করেছি। এই অপরায়ণেরই অংশ হিসেবে আসে কোনও কোনও পণ্ডিত বা ওস্তাদের মঞ্চে রবীন্দ্র-গান গাওয়া, যার ভেতর নিহিত থাকে মূলত রবীন্দ্রনাথকে সঙ্গীতসমাজে উচ্চাসন দানের চেষ্টা এবং প্রমাণ করার চেষ্টা, রবীন্দ্রনাথ রাগসঙ্গীত সম্পর্কে কতটা অনবগত, বা প্রাচীন বন্দিশগুলি তাঁর যে যে গানে প্রতিগৃহীত হয়েছে সেই সেই গান কতখানি রবীন্দ্রনাথের চৌর্যবৃত্তির উদাহরণ। এখানে আবারও ফিরে যেতে হবে সেই পুরনো প্রসঙ্গেই, যে প্রসঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেছি: রবীন্দ্র-মৌলবাদের জন্য অনেকের কাছেই যেমন রবীন্দ্র-গান পৌঁছয়নি, রাগসঙ্গীতশিল্পীরাও তেমনই রবীন্দ্র-গানের রসাস্বাদন করতে সক্ষম হননি। রবীন্দ্রনাথকে নিজের চেয়ে ছোট ভাবা একদিকে যেমন তাঁদের ঔদার্যের অভাবের পরিচায়ক, তেমনই অন্যদিকে রবীন্দ্র-গান যেভাবে তাঁদের কাছে পৌঁছেছে, তাতে রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর সৃষ্টি নিকৃষ্ট, তাঁদের এমন ভাবনা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক নয়।

দুই মৌলবাদের চেহারা, তাদের সংঘাত ও সেই সংঘাতের কারণ আমরা দেখলাম। মৌলবাদই যে সংঘাতের উৎস, এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। স্রষ্টা রবীন্দ্রনাথ কিন্তু এই সংঘাতের পরিসরের বাইরে, তাঁর সৃষ্টিও। আমাদের উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ, এ সমস্ত সঙ্কীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে তাঁর গান নিয়ে আলোচনা করা। রবীন্দ্র-গান রাগসঙ্গীতের জগতে সেভাবে পৌঁছয়নি, যদি এ কথা সত্যিও হয়, তাহলে সময় এসেছে রাগসঙ্গীতের রবীন্দ্র-গান চেনার জন্য অগ্রসর হওয়ার। এ লেখা হয়ত এই সংলাপের সূচনা ঘটাবে। রবীন্দ্রনাথ রাগ নিয়ে কাজ করেছেন, ভাবনাচিন্তা করেছেন; রাগসঙ্গীতের রীতিমত তালিম ছিল তাঁর, নানাভাবে বিভিন্ন রাগকে নিজের মতো করে গানের প্রয়োজনে সাজিয়ে নিয়েছেন তিনি। তাঁর গান নিয়ে পড়াশোনা করলে বেশ কিছু প্রচলিত রাগেরই এমন চলন পাওয়া যেতে পারে, যা প্রথম শ্রবণে শুনে মনে হবে, হয়ত রাগের অন্তর্গত নয়; কিন্তু ভালো করে ভেবে দেখলে দেখা যাবে, সেই চলনগুলি না থাকলে সেই সমস্ত রাগ যেন সম্পূর্ণতা পায় না।

পরের পর্বে রাগ-রাগিনীর প্রসঙ্গে প্রবেশ করব। রবীন্দ্রনাথের গানে রাগ নিয়ে আলোচনার সময় অবশ্যই রবীন্দ্রনাথের ধ্রুপদ বা খেয়াল অঙ্গের গান প্রাচীন, প্রচলিত কোন বন্দিশের প্রতিগ্রহণের নমুনা, সেইখানে আলোচনা সীমিত রাখব না; বরং অনেকটাই গুরুত্ব দেব রবীন্দ্র-গানে প্রাপ্ত রাগের প্রচলিত রূপের আড়ালে তার অপ্রচলিত চলনে। বেশ কিছু গানের উদাহরণ থাকবে; চেষ্টা করব সেসব গানে আলোচ্য রাগগুলির পরীক্ষিত আঙ্গিকগুলির উপর আলোকপাত করতে। প্রসঙ্গক্রমে আসবে মাইহার ঘরানার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের আদান-প্রদানের কথাও।

 

 

তথ্যসূত্র:
১. ‘সঙ্গীতচিন্তা’- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
২. সুচিত্রা মিত্র তথ্যচিত্র: পরিচালনা রাজা সেন
৩. ‘রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রসঙ্গে’- সত্যজিৎ রায় (প্রবন্ধ)

ছবি সৌজন্য: Wikipedia, Britannica

Subhadra Kalyan Author

সুভদ্রকল্যাণ বর্তমানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক ভারতীয় ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের স্নাতকোত্তর স্তরের ছাত্র। বাংলা ও ইংরাজি উভয় ভাষাতেই তাঁর লেখা সংগীত ও সাহিত্য বিষয়ক বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ প্রকাশ পেয়েছে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। বহু বিশিষ্টজনের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ করেছেন, সেগুলিও প্রকাশিত ও সমাদৃত। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তাঁর লেখা কবিতা প্রকাশ পেয়েছে। মূলত ইংরাজি ভাষায় কবিতা লেখেন সুভদ্রকল্যাণ। তাঁর আরেকটি পরিচয় রাগসঙ্গীতশিল্পী হিসেবে। সংগীতশিক্ষা করেছেন আচার্য শঙ্কর ঘোষ, পণ্ডিত বিক্রম ঘোষ, পণ্ডিত উদয় ভাওয়ালকর, ডঃ রাজিব চক্রবর্তী প্রমুখ গুরুর কাছে। পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার ও সম্মাননা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *