অশান্ত হংকংয়ে শান্তি ফেরাতে কি সমারিক পথেই হাঁটবে বেজিং? চিনের সর্বশেষ পদক্ষেপের জেরে এমনই আশঙ্কা আর্ন্তজাতিক মহলের।

বন্দি প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত বিলকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরে চিন বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হংকং। বিক্ষোভকারীরা শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যারিকেড তৈরি করে রেখেছেন। শহরের রাজপথে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হচ্ছে তাঁদের। রবিবার থেকে হংকংয়ের বিমানবন্দর কার্যত অবরুদ্ধ করে রেখেছেন আন্দোলনকারীরা। মঙ্গলবার থেকে তাঁরা দখল করে নিয়েছেন বিমানবন্দরের অ্যারাইভাল এরিয়াও।

এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবারই বলপ্রয়োগের ইঙ্গিত দিয়েছিল বেজিং। বুধবার দেখা গিয়েছে হংকং থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে শেনঝেন শহরে বিপুল সেনা মোতায়েন করেছে চিন। শেনঝেন বে স্পোর্টস সেন্টারের বাইরে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে চিনা লাল ফৌজের ট্যাঙ্ক। চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যমই সেনা মোতায়েনের ভিডিও সামনে এনেছে। প্রসঙ্গত, হংকংয়ের সংকট প্রসঙ্গে রাষ্ট্রসংঘ চিনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিল, সমস্যা সমাধানে শান্তিপূর্ণ পথে এগোতে হবে। আর্ন্তজাতিক মহলের একাংশের আশঙ্কা, ওই নির্দেশকে উপেক্ষা করে সেনা অভিযানের পথে হাঁটতে পারে বেজিং।

গতকালই হংকংয়ের আন্দোলনকারীদের সন্ত্রাসবাদী তকমা দিয়েছিল চিন। বেজিং দাবি করেছিল, বিক্ষোভকারীরা পেট্রল বোমা-সহ বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে পুলিশের উপর হামলা করছেন। এর মোকাবিলায় বলপ্রয়োগ অনিবার্য হয়ে পড়ছে।  হংকংয়ের চিনপন্থী শাসক ক্যারি লাম বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, গত ১০ দিন ধরে হংকংয়ের যা পরিস্থিতি, তাতে পিছিয়ে আসার আর কোনও উপায় নেই।

চিনের সামরিক প্রস্তুতি শুরু হতেই সমালোচনা শুরু হয়েছে বিশ্বজুড়ে। কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার সরকার আগেই কড়া বিবৃতি দিয়ে চিনের পদক্ষেপের সমালোচনা  করেছিল। শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানসূত্র খোঁজার পরামর্শ দিয়েছিল ট্রাম্প সরকারও। এদিন চিনের সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের বিরোধিতা করেছেন রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত হাইকমিশনার মিশেল বাচেল। তিনি বেজিংকে সতর্ক করে জানিয়েছেন, সন্ত্রাসবাদ এবং হংকংয়ের পরিস্থিতিতে এক করে দেখলে বড় ভুল হবে। ব্রিটিশ শাসনে থাকার সময় হংকংয়ের শেষ গভর্নর ক্রিস প্যাটেনের মত, সেনা অভিযানের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা হলে তা দুই পক্ষের জন্য বিপজ্জনক হবে।

এদিন বিমানবন্দরে গিয়ে তুমুল বিক্ষোভের মুখে পড়েন লাম। সাংবাদিকদের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন তিনি। বিক্ষোভের মুখে খানিকক্ষণ পরে বিমানবন্দর ছেড়ে চলে যান চিনপন্থী শাসক। তার আগে তিনি জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করা হবে। প্রয়োজনে বাহিনী ব্যবহার করাও হতেে পারে, তবে চেষ্টা করা হবে বাহিনীর ব্যবহার যথাসম্ভব কম করার।

ইতিমধ্যেই গতরাতের প্রতিবাদ আন্দোলনের নিন্দা করে বিবৃতি দিয়েছে হংকং পুলিশ। তাঁদের জন্য যে যাত্রীদের সমস্যা হচ্ছে তা মেনে নিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন বিক্ষোভকারীদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, অন্য কোনও উপায় নেই বলেই তাঁরা বিমানবন্দর অবরোধ করে রেখেছেন। এদিনই চিনের ভূমিকার সমালোচনা করে টুইট করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

কোন পথে যাবে হংকং, তার উত্তর হয়তো মিলবে আগামী কয়েক ঘন্টায়। কিন্তু চিনের সামরিক অভিযানের হুমকি সত্ত্বেও বিমানবন্দর ছেড়ে নড়তে রাজি নন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের এক মুখপত্র জানিয়েছেন, সরকারের দমননীতি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে। ইতিমধ্যেই হংকং জুড়ে দেওয়াল লিখন শুরু হয়েছে- চাইনিজ আর্মি কিলিং আস। আগামী কয়েকঘন্টায় পরিস্থিতির কী পরিবর্তন হয়, তার দিকে নজর রাখছে গোটা বিশ্ব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *