একদা তুমি প্রিয়ে : দম্পতি দর্পণ

সম্পর্কের মানেই তো এই যে অন্যজনের দুঃখকষ্ট সব ভাগ করে নেওয়া। ঘর পরিস্কার, বাসন মাজা, নোংরা ফেলা, জামাকাপড় ধোওয়া, রান্না করা, এসব কাজের কোনও লিঙ্গ নেই। এককালে মেয়েরাই শুধু এগুলি করেছে বলে চিরকালই সর্বত্র তাই চলবে, এ অতি নির্বোধ যুক্তি।
এভাবেও ফিরে আসা যায় (প্রবন্ধ)

এমনই চলছিল গত প্রায় দুবছর! ওমা, হঠাৎ করে আবার সপ্তাহ দুয়েক আগে দেখি এক পিক-আপ ট্রাক থেকে লোটাকম্বল নামাচ্ছে জেসিকা! তড়াং করে সেটা থেকে লাফ দিয়ে নামল সাদা কুকুর ও দুই বাচ্চা। হাঁটতে বেরিয়ে তার দিন দুয়েক পরে দেখি, বাড়ির দরজা খোলা, জেসিকা ভেতরে বাড়ি পরিষ্কার করছে দেখা যাচ্ছে। খাবলা মেঝে আবার ফেরত আসা জিনিসে ভরে গেছে। আমাদের ব্যাকইয়ার্ডের পাশেই তাদের ব্যাকইয়ার্ডে সাদা কুকুর কালো কুকুর আবার একসঙ্গে দাপাদাপি করে খেলছে! বাড়ির সামনে জেসিকা ছোট ছোট গোলাপের চারা পুঁতছে।
অপ্রতিরোধ্য বসন্তদিন

কে রুখবে অপ্রতিরোধ্য বসন্তের হাওয়া? চারিদিকের এই মহেঞ্জোদাড়োর শূন্যতার মাঝে ঝাঁপিয়ে পড়েছে দুরন্ত ম্যাগনোলিয়া। দু’মিটারের দূরত্ব বজায় রেখে সন্তর্পণে পাড়ায় হাঁটছি আলেকজান্দ্রা প্যালেসের দিকে। মার্চের প্রথম বাসন্তী রোদ গায়ে মেখে। মনে পড়ে যাচ্ছে বোকাচ্চিওর দশ বন্ধুর কথকতা। মহামারী প্রবল অন্ধকারের বুক থেকে ড্যাফোডিল আলো ছিনিয়ে এনে হালকা হাসিতে তারা ছড়িয়ে দিয়েছে বিংশ শতাব্দির করোনার কলোনিতে। এ সময় ভয়ের। এ সময় নির্ভীকতার। এ সময় সামাজিক দূরত্বে দাঁড়াবার। এ সময় ভীতিপ্রদ রক্তচক্ষুর দিকে সরাসরি তাকিয়ে থাকবার।
করোনা ভাইরাস — ব্রিটেনের চিঠি

২৬শে মার্চ রাত ৮টায় সমস্ত মানুষ নিজেদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে হাততালি দিয়ে উৎসাহ দেন স্বাস্থ্যকর্মীদের — এই যুদ্ধের সেনানীকে| ওই সময় গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম| সামনে ফাঁকা রাস্তা – তার দুধারে দাঁড়িয়ে মানুষ হাততালি দিচ্ছেন| আমি গাড়ির কাচ নামিয়ে হাত নাড়তে থাকায় হাততালি দ্বিগুণ হলো| ভালো লাগছিল খুব এই সম্ভাষণ মানুষ জানিয়ে থাকেন তারকা ফুটবলারদের, রকস্টারদের| একজন চিকিৎসক হয়ে মানুষের এই ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ দেখে খুব ভালো লাগছিল|
দূরকে করেছ নিকট বন্ধু

গত দু’সপ্তাহ ধরে আমরা এক অদ্ভুত সময়ের মধ্যে বাস করছি। এক এক দিন ঘুম ভেঙে মনে হচ্ছে যেন সায়েন্স ফিক্শন-এর মধ্যে বেঁচে আছি। স্পর্শ থেকে দূরে, একে অপরের স্পর্শ বাঁচিয়ে বেঁচে থাকা। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সব বন্ধ; এখন পড়াশোনা, গবেষণা, মিটিং সবকিছুর মাধ্যম ভার্চুয়াল। অর্থাৎ কম্পিউটার বা ফোন। শিক্ষার্থীদের দেখাশোনা হচ্ছে zoom, blue jeans, webex, ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মে। হাত বাড়িয়ে প্রিয় বন্ধুকে ছোঁয়ার উপায় নেই। বড় জোর একটা দু’টো উড়ন্ত চুম্বন স্ক্রিন তাক করে পাঠানো যেতে পারে।
এই সময়, এই চিড়িয়াখানা

করোনা ভাইরাসের আড়ালে অন্য যে ভাইরাসটা লুকিয়ে বসে আছে, সে তো বহুদিন ধরে মানুষকে আক্রান্ত করে রেখেছে! সে শরীরে মারে না। মনকে ঝাঁঝরা করে ফেলে, ধীরে। খুব ধীরে। অসুস্থ মানুষ চায় একটা ছোট্ট, নিজস্ব পৃথিবী তৈরি করতে, যেখানে থাকবে শুধু তার পরিবার, তার ধর্ম, তার জাতি। প্রতিবেশীকে সেই পৃথিবী থেকে বহিস্কার করতে সে বিন্দুমাত্র পিছপা হয় না, যদি সে প্রতিবেশী অন্যধর্মী হয়। এই মানুষ স্বার্থপর।