অপূর্ব এক ডিঙি

Illustration by Upal Sengupta on Hand pulled Rickshaw

রিস্কাওলা কালা। খালি পথনির্দেশটুকু কানে যায় তার। ঈশ্বর তাকে বিশেষ ক্ষমতা দিয়ে পাঠিয়েছেন আজব এ শহরে শৌখিন বেতো বাবুবিবিদের আয়েশ আর আদিখ্যেতার ভার বইতে, সারভাইভালের তরে। তুম কালা তো জগত ভালা, কী? 

টানা রিকশার দাস্তান

হাতে টানা রিকশা illustration by upal sengupta

সরকারি হিসাবে ২০০৮ সালে কলকাতায় ৫৯৪৫টি হাতে-টানা রিক্‌শা ছিল। কলকাতায় প্রায় ২৫০ জন সর্দার। এক একজন সর্দারের অধীনে কুড়ি জন করে রিক্‌শাচালক থাকেন। রিক্‌শাচালকদের বাধ্যতামূলক ভাবে সপ্তাহে ২৮০ টাকা বা দৈনিক ৪০ টাকা সর্দারের হাতে জমা দিতে হয়। সর্দাররা প্রতি সপ্তাহে মালিককে প্রাপ্য টাকা বুঝিয়ে দেন। এক একজন মালিকের গড়ে ১০ থেকে ১৫টি রিক্‌শা চলে। রিক্‌শা চালকদের অধিকাংশেরই বাড়ি বিহার, ঝাড়খন্ডে। অন্যান্য প্রদেশ ও বাঙালি শতকরা ২০ ভাগ।

দূরকে করেছ নিকট বন্ধু

Ann Arbour picture

গত দু’সপ্তাহ ধরে আমরা এক অদ্ভুত সময়ের মধ্যে বাস করছি। এক এক দিন ঘুম ভেঙে মনে হচ্ছে যেন সায়েন্স ফিক্শন-এর মধ্যে বেঁচে আছি। স্পর্শ থেকে দূরে, একে অপরের স্পর্শ বাঁচিয়ে বেঁচে থাকা। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সব বন্ধ; এখন পড়াশোনা, গবেষণা, মিটিং সবকিছুর মাধ্যম ভার্চুয়াল। অর্থাৎ কম্পিউটার বা ফোন। শিক্ষার্থীদের দেখাশোনা হচ্ছে zoom, blue jeans, webex, ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মে। হাত বাড়িয়ে প্রিয় বন্ধুকে ছোঁয়ার উপায় নেই। বড় জোর একটা দু’টো উড়ন্ত চুম্বন স্ক্রিন তাক করে পাঠানো যেতে পারে।

প্রান্তবাসী মনোরোগীদের ‘আইসোলেশন’

mandar mukhopadhyay Illustration

গত আঠারো বছর ধরে আমি যুক্ত এই সংস্থাটির সঙ্গে। নানা অসুবিধে, ঝড়বৃষ্টি, সাইক্লোন বা প্রিয় প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক আঙ্কল জনের মৃত্যু- কোনও অবস্থাতেই অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করা হয়নি কোনও থেরাপি ইউনিট। কর্মকর্তারাই সামলেছেন সব সঙ্কট। এই প্রথম জারি হল এক যুদ্ধকালীন নিষেধ। আপাতত বন্ধ আমাদের শনিবারের ক্লাস- এস্থেটিক থেরাপি ইউনিটও। আবাসিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার কথা ভেবেই। কারণ আমরা, যারা না-আবাসিক এবং বাইরে থেকে যাই, তারা তো না জেনেই বাহক হতে পারি ওই মারণ ভাইরাসের! একজনের বহন তখন শতজনের ত্রাসের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। সে সঙ্কট সামলানোই যে এক নিদারুণ সঙ্কট হয়ে দেখা দেবে।

ওয়র্ক ফ্রম হোম

Work from home corporate official

সাধারণ দিন হলে এই সময়টায় দাপিয়ে বেড়াই। তোয়ালে ও অন্তর্বাস আমার সঙ্গে লুকোচুরি খেলে। আমি চার্চিলের মতো চিৎকার করে বাথরুমে প্রবেশ করি এবং পরিবার লজ্জা নিবারণের ব্যবস্থা না করলে ওই অবস্থাতেই বেরিয়ে আসার হুমকি দিই। কিন্তু এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতি। ওয়র্ক ফ্রম হোম, মানে ডব্লিউ-এফ-এইচ। নিয়ম মেনে আগে কুড়ি সেকেন্ড সাবান জলে হাত কচলাই। তারপর হালকা করে ওঁকে বলি, ব্রেকফাস্ট-এ পাঁউরুটি হলেই চলবে, বাড়িতেই তো আছি। টুকটাক খেতেই থাকব। আজ চান নয়, দাড়ি কামানো নয়। পুরো বেনিয়ম। কিন্তু বিধির বিধান হল করপোরেট পদে পদে পরীক্ষায় ফেলবে তার বিশ্বস্ত কর্মচারিকে।

করোনার কুশপুতুলি 

Covid 19 positive in Ballygunge Housing Complex

আচ্ছা এতে রাখঢাকের কী আছে মশাই? রোগ হলে হবে, হয়েছে। স্বীকার করুন। সবার বাড়িতে আমাদের বুড়োমানুষেরা আছেন, হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিসে ভোগা প্রচুর মানুষ রয়েছেন। আমাদের লিফট ইত্যাদি পরিষ্কার করা হচ্ছে সর্বক্ষণ। কিন্তু সেই ছেলেগুলি গায়ের জোরে আবার ঢুকে পড়বে না তো? সারাক্ষণ স্যানিটাইজেশন চলছে। পেপারওয়ালা, পুজোর ফুল, দোকান থেকে কয়েন ফেরত নেওয়া, স্যুইপার, মালি, ড্রাইভার সব বন্ধ করে আমরা হোম কোয়ারান্টাইনে রয়েছি। কিন্তু অবোধ এই বালকেরা? এরা এত অবাধ্য? প্লিজ কথা শুনুন সবাই। রোগ লুকোবেন না। রোগ ছড়াবেন না।

ঝড়কে পেলেম সাথি

Norwester storm

শান্তিনিকেতনে, বলা ভালো গোটা রাঢ়বঙ্গেই কালবৈশাখীর দাপট বাংলার অন্যান্য অংশের চেয়ে কিঞ্চিৎ বেশিই। তার প্রমাণ তো গুরুদেবের অজস্র গানের ছত্রে ছত্রে ছড়িয়ে রয়েছে। আমি গানের মানুষ, তাই ঝড় উঠলেই মনে হয়, ‘আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার’-এর প্রতিটি মীড়েই কি ধরা নেই লাল মাটির উপর কালবৈশাখীর তাণ্ডব? কিম্বা ‘ওই যে ঝড়ের মেঘের কোলে, বৃষ্টি আসে মুক্তকেশে, আঁচলখানি দোলে’-র সুরের দুলুনিতে তো প্রায় বৃষ্টির ফোঁটা হাওয়ার টানে ছিটকে এসে পড়ে গানের খাতার ওপর! ‘হৃদয় আমার ওই বুঝি তোর বৈশাখী ঝড়’ না গাইলে বুঝি কালবৈশাখীর বাউল বাতাসকে শরীরে অনুভব করা যায় না! ‘ওই বুঝি কালবৈশাখী’ গানে যেমন করে কালবৈশাখীর রূপের মধ্যে অরূপের বাণী তুলে আনেন কবি, সে যে জীবনের করালঝড় সামলে চলার শিক্ষা!

বৈশাখী ঝড়ের সন্ধ্যা: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

এমন সময় দেখতে দেখতে উত্তর-পশ্চিমে ঘনঘোর মেঘ করে এসে সূর্যাস্তের রক্ত আভাকে বিলুপ্ত করে দিলে। মাঠের পরপারে দেখা গেল যুদ্ধক্ষেত্রের অশ্বারোহী দূতের মতো ধুলার ধ্বজা উড়িয়ে বাতাস উন্মত্তভাবে ছুটে আসছে।