গোলকিপার (শেষ পর্ব)

“টাকার জোরে, ক্ষমতার নেশায় তার চতুর্দিকের সব কিছু নিজের ইচ্ছে মতো চালাতে চায়, এরকম একটা উন্মাদ, একটা পাগলের জন্যে তোমাকে ভুগতে হয়েছে গোলকিপার। তোমার সঙ্গে সঙ্গে আমাকেও হয়েছে। ঠাম্মাকে হারিয়েছি আমি এই পাগলামির জন্যে। তখন তো জানতামই না। কিন্তু সেই পাগলটাকে কি আজ এক মুহূর্তের জন্যেও দেখতে পেলে? অবশ্য দেখবেই বা কী করে! তুমি তো আজ একবারও তাকাওইনি তার দিকে!”
বোধ

অটিজম – এই প্রতিবন্ধকতাটি সারাবিশ্বে বিজ্ঞানসম্মত গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে অন্য প্রতিবন্ধকতার তুলনায় অনেক পরে এবং বলা বাহুল্য পশ্চিমবঙ্গে তথা ভারতবর্ষে আরও অনেক দেরীতে। বর্তমানে সরকারী ভাবে স্বীকৃতি পেলেও সঠিক পরিচালনের জন্য বিজ্ঞানসম্মত পরিকাঠামো প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
গোলকিপার (পর্ব ২৩)

সুজাত একটু ভেবে বললেন, “আজ শিম-পোস্তটা কোরও। বলছিলে না, কুর্চি ভালোবাসে? তার সঙ্গে মটর ডাল আর ঢেঁড়স ভাজা। তারক একটু পরে গলদা চিংড়ি দিয়ে যাবে। চিংড়ি কিন্তু সবাই নাও খেতে পারে। আর একটা মাছ লাগবে। বসন্ত দেখ, বাজারে যদি পাবদা পাও আজ। তাহলে পাবদার তেল-ঝাল। পাবদা না-পেলে একটা ফোন করে জানিও ট্যাংরা, ভেটকি কোনটা পাওয়া যাচ্ছে। মৌরলা পেলেও নিয়ে নিও, তাহলে ঢেঁড়সের বদলে মৌরলা ভাজা। বারো জন খাচ্ছি আমরা, সেই বুঝে মাছ নেবে। পাবে তো?”
অপ্রতিরোধ্য বসন্তদিন

কে রুখবে অপ্রতিরোধ্য বসন্তের হাওয়া? চারিদিকের এই মহেঞ্জোদাড়োর শূন্যতার মাঝে ঝাঁপিয়ে পড়েছে দুরন্ত ম্যাগনোলিয়া। দু’মিটারের দূরত্ব বজায় রেখে সন্তর্পণে পাড়ায় হাঁটছি আলেকজান্দ্রা প্যালেসের দিকে। মার্চের প্রথম বাসন্তী রোদ গায়ে মেখে। মনে পড়ে যাচ্ছে বোকাচ্চিওর দশ বন্ধুর কথকতা। মহামারী প্রবল অন্ধকারের বুক থেকে ড্যাফোডিল আলো ছিনিয়ে এনে হালকা হাসিতে তারা ছড়িয়ে দিয়েছে বিংশ শতাব্দির করোনার কলোনিতে। এ সময় ভয়ের। এ সময় নির্ভীকতার। এ সময় সামাজিক দূরত্বে দাঁড়াবার। এ সময় ভীতিপ্রদ রক্তচক্ষুর দিকে সরাসরি তাকিয়ে থাকবার।
আর এক সে কোয়ারেন্টাইন!

ভিরান্দিয়ারা থেকে কিছুদূর গিয়ে গাড়ি বাঁ দিকের রাস্তা ধরল। সামনে পুলিশের চেকপোস্ট। সেখানে নিজের পরিচয়পত্রের কপি জমা দিতে হবে শুনে কিছুটা অস্বস্তি হল। এর আগে যেখানেই চাকরি করেছি, পুলিশের খাতায় নাম ওঠেনি কখনও। গাড়ি ফের রওনা দিল। বেশ কয়েকটা গ্রাম পেরিয়ে এক ধূ-ধূ মাঠে পৌঁছলাম। শুনলাম সেটার অপর প্রান্তে রিসর্ট। পাশে একটা বিএসএফ ক্যাম্প। পরে জেনেছিলাম সেটাই শেষ ক্যাম্প, কারণ আমাদের রিসর্টের সামনে থেকেই শুরু হচ্ছে দিগন্তবিস্তৃত সাদা প্রান্তর– যাকে লোকে সল্ট ডেসার্ট বা রান বলে জানে।
কাকগুলো সন্ধেবেলা বাসায় ফেরে (অনুবাদ গল্প)

ওরা ঐখানে বসে আছে উবু হয়ে। নষ্ট হয়ে যাওয়া ইতর জীবন নিয়ে বসে আছে। জলের একদম ধারে বন্দরের জেটির পাঁচিলে, পাথরের উপরে জবুথবু হয়ে বসে আছে। বাঁধের নিচের ধাপের সিঁড়ির উপরে বসে আছে। বয়ার কাছে, পন্টুনের উপরে বসে আছে। ঝরে পড়া ধুলোমাখা পাতা আর টিনের ফয়েলভর্তি রাস্তার কিনারে বসে আছে। কাকগুলো? নাহ, মানুষ!
নিমাই ঘোষকে যতটুকু চিনেছি

ক্যানন-এর একটা ডিজিটাল ক্যামেরা কেনার পর গিয়েছিলাম ওনার ছবি তুলতে। তুলেওছিলাম। উনি প্রেরণা দিয়েছিলেন। ওনাকে অনুরোধ করেছিলাম আমার ক্য়ামেরায় একটা ছবি তুলে দিতে। উনি সবিনয়ে অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, “আমি অ্যানালগ ক্যামেরার মানুষ আর ওতেই আমার বিশ্বাস। আপনাকে আমি পরে ভালো ছবি তুলে দেব। কিন্তু সেটা আর হয়ে উঠল না।
গোলকিপার (পর্ব ২২)

এতক্ষণ মুখ খোলেননি সুমিত্রা। এবার ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন, “যে মেয়েটা তোর ভালোর কথা ভেবেই এত কিছু করছে, আমি তো দেখছি সেই একেবারে প্রথম দিন থেকে, তার সঙ্গে কোনও কথা না বলে তাকে এক কথায় উড়িয়ে দেওয়া যায় না ছোটু। সে যদি তার বাড়িতেই আমাদের থাকার ব্যবস্থা করে থাকে…” মা’কে কথা শেষ করতেও দিল না অরিত্র, ঝাঁপিয়ে পড়ে বলে উঠল, “তুমি কিছু জানো না মা। কুর্চি আমার বন্ধু বলে এই লোকটা, কুর্চির বাবা, আমাকে শেষ করে দিতে চায়। দেবুদাই দুদিন আগে বলছিল, ভাড়াটে খুনি লাগাবে আমার পেছনে। এখন ওরই সঙ্গে আমাদের থাকতে হবে? পাগল নাকি!”