চলি বলি রংতুলি: ময়ূর পাহাড়ে সূর্যাস্ত কিংবা মিষ্টি গুলগুলা

আরও কিছুটা পথ এগোতেই দেখি পাগড়ি মাথায় কাঁচাপাকা দাড়িওলা একজন সুঠাম চেহারার লোক এগিয়ে আসছে। কাঁধে ফেলা তরোয়াল গোছের একটা জিনিস, যার আবার দুটো ফলা। লোকটাকে দাঁড় করিয়ে জেনে নিলাম একে দাউড়ি বলে এবং মহাশয়ের নাম পাহাড়ি সিং। জঙ্গলে জঙ্গলে গিয়ে গাছের ডাল কেটে বেড়ায়। নামটা বেশ মানানসই বলতে হবে। চট করে এর একটা স্কেচ না করলেই নয়!
উত্তুরে: সংঘাত এড়ায় হাতি, ক্ষিপ্ত করে মানুষ

দেশভাগের কারণে পরে পূর্ব পাকিস্তান থেকে উদ্বাস্তু স্রোত আছড়ে পড়েছিল এখানে। স্রোত না হলেও সেই আসার বিরাম নেই এখনও। আবার নেপাল থেকেও বহু লোক আসেন। এখানেই থেকে যান। আদিম অধিবাসী বোরো-রাভা-টোটোরা তো আছেনই। এত লোককে জায়গা দিতে গেলে যে কারও জমিজিরেত চলে যায়। হাতিরও গেছে। জমিজিরেত গেলে আপনার, আমারও মাথাগরম হয়। হাতির দোষ কী? কারও হাত-পা ছড়িয়ে থাকার পরিসর কেড়ে নিলে সে তো ক্রুদ্ধ হবেই! তবে মহাকালবাবা কিন্তু শুধু ক্রুদ্ধ হন না, মানুষকে আগলেও রাখেন!
দিনের পরে দিন: রমাপদবাবুর স্মৃতি

ফাঁকা ঘর দেখে একদিন বেলাবেলি আনন্দবাজার অফিসে ফোন লাগালাম। অপারেটর ফোনে উত্তর দিলেন। বললাম, “রমাপদ চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলতে চাই।” অবিলম্বে লেখক ফোন ধরলেন। বেশ গম্ভীর গলার আওয়াজ। ততক্ষণে আমার সাহস তলানিতে এসে ঠেকেছে। নিজের বুকের ভিতরকার ধুকপুকুনির আওয়াজ নিজের কানে শুনতে পাচ্ছি। জিজ্ঞাসা করলেন আমার পরিচয় এবং ফোন করার কারণ। পরিচয়? বললাম, “আমি কলেজে পড়ি। ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্রী।” অর্বাচীন প্রশ্নটিও চোখকান বুজে করেই ফেললাম। উত্তরে লেখক মনে হল খুকখুক করে একটু হেসে উঠলেন। তারপরেই সস্নেহে জিজ্ঞাসা করলেন কলেজের নাম এবং কোথায় থাকি।
ইন্তিবিন্তি: ঘুম অধরা প্রেমিক, আমি নাছোড় স্টকার

সকাল-দুপুর-সন্ধে-রাত্রি আমি স্টক করতে থাকি ঘুমকে কিন্তু ঘুম আমায় ধরা দিতে চায় না। আমার আবার কোনও তুলসী চক্রবর্তীও নেই যিনি কিনা ঘুমচোর হয়ে আমারটি হাতিয়েছেন, যেমনটি তিনি মলিনাদেবীর জন্য, সাড়ে ৭৪ সিনেমায় করেছিলেন। ফলে কাকে ঠিক করে দোষ দেব বুঝে উঠতে পারি না।
আইঢাই: ফাঁক ফোকর

ফাঁদ যেমন অনেক রকম হয়, ফাঁকও ঠিক তাই। গলে পালানো বা গলিয়ে দেবার জম্পেশ সব ব্যবস্থা। এই যেমন চালুনি, সাঞ্চা বা ছুঁচ। এসব ইচ্ছে করে রাখা ফাঁক, কাজের সুবিধের জন্যে। যেমন এক ফাঁকে রোদে মেলা কাপড়গুলো তুলে রাখা, বা টুক করে পুকুরে গিয়ে তিন ডুবে স্নান সারা, বা আচারের শিশিগুলোর এ পিঠটা ঘুরিয়ে রোদ্দুরে ওপিঠ করে দেওয়া; এই মোচাক’টা কেটে রাখি, বা সরষেগুলো ঝেড়ে রাখি বা ছোট্ট করে পান সেজে, এক খিলি গালে ঠুসি। এসব ফাঁকে ছাড় চলবে। কারণ তা কাজেরই আগু বা পিছু।
উত্তুরে: নীরবতার সৌন্দর্য শেখায় তাসিগাঁও, উচলুম

তাসিগাঁও, আদমা, উচলুম, লেপচাখাঁ-এ যাঁরা বসবাস করেন, তাঁরা ডুকপা উপজাতি গোষ্ঠীর। নেপালি নয়, ভুটিয়াও নয়। তাসিগাঁওয়ের সঙ্গে সবদিক থেকেই নৈকট্য আছে ভূটানের। তাসিগাঁও পেরিয়ে আর একটু উঁচুতে উঠলে পাহাড় টপকে ভূটান। রাজার দেশ। ড্রাগনের দেশ। ভূটান তাসিগাঁওকে অনেক কিছু দেয়। বাজার করতে হলে ভূটান, মজুর খাটতে হলে ভূটান, এমনকি তাসিগাঁওয়ের ছেলেমেয়েরা পড়তেও যায় ভূটানে। দিগন্ত-বিস্তৃত পাহাড় আর উন্মুক্ত আকাশের তলায় কোথায় বা সীমান্ত, কোথায় বা বিধিনিষেধ।
চলি বলি রং তুলি: অযোধ্যা পাহাড় ও লুড়কুর চুল দাড়ি

অযোধ্যা পাহাড়ের মাথায় পৌঁছতে হলে পুরুলিয়া শহর থেকে সরাসরি বাস সার্ভিস আছে। আমি একা যাব, তাই সেটাই সুবিধের। আগে জয়চন্ডী পাহাড় ঘুরে রঘুনাথপুর থেকে মিনিবাসে চেপে ঘণ্টা দু’য়েক পর এলাম পুরুলিয়া সদরে। ততক্ষণে সন্ধ্যা হয়ে গেছে, ফলে রাতটা এখানেই থেকে গেলাম একটা চলনসই গোছের হোটেলে। বাস ডিপোটা উল্টোদিকেই। পরদিন সাতসকালে উঠে হাজির হয়ে গেলাম।
উত্তুরে: জয়ন্তী-নোনাইয়ে প্রাণের স্রোত

জয়পুর। রাজস্থানের পিঙ্ক সিটি নয় কিন্তু! সম্বলপুর। ওডিশার জেলা শহর নয় কিন্তু! ডুয়ার্সে দুটি গ্রাম আছে জয়পুর আর সম্বলপুর নামে। জয়ন্তী নদীর ধারে। তবে সেখানে বসতের অবশ্য একটা ট্রিলজি আছে। জয়পুর, সম্বলপুরের সঙ্গে জিৎপুর। জিৎপুর অবশ্য নিখাদ উত্তরবঙ্গীয় নাম। যেমন কালীপুর, ব্রহ্মপুর। তলা, গুড়ি, ডাঙা ইত্যাদিও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকার নামের অনুষঙ্গ। সে অন্য প্রসঙ্গ। আপাতত […]