ইংরিজি হরফে যেমনভাবে বাংলা লেখে, তেমন করে চ্যাটজিপিটিকে জিজ্ঞেস করলাম, “বাংলা বোঝো?”

বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ বুঝি। আমায় বল তোমার মনে কী প্রশ্ন আছে!”

লিখলাম, “কানমলা খাবি।”

বলল, “দুঃখিত। এটার মানে বুঝলাম না। আরেকটু বেশি ইনফর্মেশন পাওয়া যাবে? অথবা কোন প্রসঙ্গে এটা আমায় বললে বলা যাবে?” 

লিখলাম, “কানমলা খাবি ইন বেঙ্গলি।”

চ্যাটজিপিটি বলল, “এই ক্ল্যারিফিকেশন দেওয়ার জন্য অজস্র ধন্যবাদ। বাংলায় ‘কানমলা খাবি’ কথাটার মানে হল, তুমি কি বাতাবিলেবু খেতে চাও? ঝড়ের গতিতে এগিয়ে চলা কার্সার আরও বলল, বাতাবিলেবু হল একটা বড়সড় টকজাতীয় ফল। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় পাওয়া যায়। আই হোপ দ্যাট হেল্পস। তোমার যদি আরও কিছু জানার থাকে, আমাকে প্লিজ জানাও।”

আমার এক কবিবন্ধু দিনকয়েক আগে হোয়্যাটসঅ্যাপ কবিতায় লিখেছিল, “চারদিকের বাতাসে কেমন এআই এআই গন্ধ।“ আন্তর্জালে খবর নিয়ে জানা গেল, দুনিয়া জুড়ে ১০ কোটিরও বেশি মানুষ নাকি এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছেন এখন। এমন বিদ্যুৎগতিতে ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ানোর নজির অন্য কোনও তথ্যপ্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মের নেই। পরিসংখ্যান বলছে, আম আদমির ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়ার মাত্র ১২০ ঘণ্টার মধ্যে ইউজারের সংখ্যা ১০ লক্ষ স্পর্শ করে ফেলেছিল ওপেন এআই সংস্থার চ্যাটজিপিটি। মার্ক জুকারবার্গের ফেসবুকের এই সংখ্যা ছুঁতে লেগেছিল মাস-দশেকেরও বেশি। শ্রীহরিকোটা থেকে যে গতিতে রকেট ওড়ে, চ্যাটজিপিটির ইউজারের সংখ্যা তাকেও হয়তো বুড়ো আঙুল দেখায়, হেলায়

Robot hand typing

পাঁচতারা হোটেলে হাওয়াই চটি পরে ঢোকার মতো যাঁরা এখনও একটু ইতস্তত করছেন, তাঁদের জন্য দরজা হাট করে খুলে দিয়ে বলি, এআই-এর মানে হল আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। আরও সহজ করে বলা যেতে পারে, যে প্রখর বুদ্ধি নিয়ে মানুষ অ্যালগোরিদম বানিয়েছে, কম্পিউটারের সার্কিট বোর্ডে এঁকে দিয়েছে বুদ্ধি-আলপনা, এখন তারাই চাইছে, এই অ্যালগোরিদম-এর নিজস্ব বুদ্ধি হোক। ভাল-মন্দ বুঝে নিয়ে, যাচাই করে, ভেবেচিন্তে উত্তর দিতে পারুক। যান্ত্রিক বুদ্ধির সঙ্গে মিশে যাক কিছু অযান্ত্রিক বুদ্ধিও। ফর্মুলার বাইরেও লেখা হোক নতুন কোনও সমীকরণ। আরও একটু কল্পনা মিশিয়ে বলা যেতে পারে, প্রযুক্তিবিদরা চাইছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বললেও এর একটা নিজস্ব মন হোক। মনের সঙ্গেই মিশে যাক, সামান্য হলেও মানবিকতা।

আরও পড়ুন: চ্যাট-জিপিটির প্রথম পাঠ

চ্যাটজিপিটি চিরাচরিত সার্চ ইঞ্জিনের থেকে আলাদা। গুগলে কোনও প্রশ্ন করলে রেজাল্ট হিসাবে উড়ে আসে নানা পেজের লিংক। চ্যাটজিপিটি আমাদের অত কষ্ট করার থেকে রেহাই দিয়েছে। কোনও কিছু জানতে চাইলে নিজেই এক বা একাধিক অনুচ্ছেদ লিখে তার উত্তর জানায়। সফটওয়্যারের কোনও কোড নিখুঁতভাবে লিখতে চাইলে ভুলভ্রান্তি ধরে দেয়। চিঠি লিখতে চাইলে ব্যাকরণগত গলদ ধরে দিয়ে তাকে শুদ্ধ করে তোলে। কোনও চিঠির প্রাপকের সঙ্গে নিজের কেমিস্ট্রিটা কয়েক লাইনে বুঝিয়ে দিলে নিজের থেকেই ভাষার বুনোট পাল্টায়। লিখেছিলাম, “আমার আটান্ন বছরের বস ভীষণ একরোখা, জেদি আর খিটখিটে। কাল ছুটি নেওয়ার জন্য একটা দরখাস্ত লিখে দেবে?” কার্সার থেকে অবলীলায় অক্ষর জন্ম নিল। ফের লিখলাম, “আমার তিরিশ বছরের সুন্দরী আর মিশুকে লেডি বসের থেকে কাল একটা ছুটি চাইব।” অবাক চোখে দেখি, গুপিবাঘার হাতের তালির মতো নিমেষে বদলে গেল ছুটির বয়ান। শুনেছি, আরও বহু কাজের সঙ্গে কনটেন্ট রাইটিংয়ের মতো দায়িত্বও নাকি অবলীলায় পালন করে যাচ্ছে চ্যাটজিপিটি। কোটি কোটি ইউজারের দল সমস্বরে, সহর্ষে বলে উঠছেন, “কোথায় ছিলে ওস্তাদ, কোথায় ছিলে?” মোবাইল স্ক্রিন জাপটে ধরে চুমু খাচ্ছেন। গাইছেন, জীবন যখন শুকায়ে যায়, এআই ধারায় এস।  

Writing skill of Artificial Intelligence

গোল বেধেছে এতেই। যে সমাজবিদদের মধ্যে প্রযুক্তির অ্যালগোরিদমের নেশার সঙ্গে নিভৃতে স্থান করে নিয়েছে সামান্য সমাজসচেতনতা, তাঁরা প্রমাদ গুণে বলছেন, “এত কাজ যদি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পুরে দেওয়া যন্ত্র করে দেয়, তাহলে সাধারণ মানুষ করবে কী, খাবে কী?” তাঁদের দাবি, সাধারণ মানুষের বুদ্ধি যখন ধারাবাহিকভাবে দিনের পর দিন কমে চলেছে ক্রমশ, তিরিশ টাকা কেজি দরে সাড়ে চার কেজি টমেটো কেনার সময়েও যখন আমরা টুক করে মোবাইল বের করে গুণ করছি সার্চ ইঞ্জিন প্ল্যাটফর্মে, সেখানে জীবনের সব ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মিশে গেলে যে সমূহ বিপদ আগামী দিনে! আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স নিয়ে দুপক্ষে ভাগ হয়ে গিয়েছে নেটদুনিয়া। একদল বলছেন, “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জয় হউক। মানুষই অংক করে, তাহারই কৃপার পরে, করে টেক-মহিমা নির্ভর।” তাঁরা বলছেন, “ব্যস্ত জীবনে আপনার বিবাহবার্ষিকীর শুভেচ্ছাও যদি লিখে দিতে পারে চ্যাট-জিপিটি, আপনার ওটিটি-সর্বস্ব জীবনের প্রেমপত্রে যদি পনেরো সেকেন্ডে নিয়ে আসতে পারে কালজয়ী প্রেম-সাহিত্যের অমর, অমোঘ বাণী— তাহলে তাকে দুহাত ভরে আলিঙ্গন করতে বাধা কোথায়? কপি পেস্ট করুন সানন্দে। প্রিয়ার চুমুভরা উত্তর পান কোনও কষ্ট না করেই।” আর বিরোধীপক্ষ ক্রমাগত শ্লোগান তুলে বলছেন, “ক্রিয়েটিভিটির মিষ্টি জলে মনের ভিতরে যে অঙ্কুরোদগম হয়, তাকে নির্বংশ করার জন্য এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যথেষ্ট।” তর্কের পিঠে নতুন তর্ক মাথা তুলে দাঁড়ায়। চিরাচরিত বিশ্বাস নতুন ধ্যানধারণাকে দুয়ো দেয় প্রতি মুহূর্তে। নয়া প্রযুক্তি বলে, জীবন সরল হবে এক ক্লিকে। আর পুরনো ধ্যানধারণা বলে, যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ, ফুৎকারে উড়িয়ে দেব এই টেকনো জঞ্জাল।

যে সমাজবিদদের মধ্যে প্রযুক্তির অ্যালগোরিদমের নেশার সঙ্গে নিভৃতে স্থান করে নিয়েছে সামান্য সমাজসচেতনতা, তাঁরা প্রমাদ গুণে বলছেন, “এত কাজ যদি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পুরে দেওয়া যন্ত্র করে দেয়, তাহলে সাধারণ মানুষ করবে কী, খাবে কী?” তাঁদের দাবি, সাধারণ মানুষের বুদ্ধি যখন ধারাবাহিকভাবে দিনের পর দিন কমে চলেছে ক্রমশ, তিরিশ টাকা কেজি দরে সাড়ে চার কেজি টমেটো কেনার সময়েও যখন আমরা টুক করে মোবাইল বের করে গুণ করছি সার্চ ইঞ্জিন প্ল্যাটফর্মে, সেখানে জীবনের সব ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মিশে গেলে যে সমূহ বিপদ আগামী দিনে!

চ্যাটজিপিটিকে শুধিয়েছিলাম, “পুকুর দিয়ে একটা কবিতা লেখো তো।” মুহূর্তে লিখে দিল বারো লাইনের পদ্য। বললাম, “ভালো লাগেনি মোটেই। ফের লেখো।” স্ক্রিনে ঝটিতি উপচে পড়ল নতুন এক কবিতা। অবাক হয়ে দেখলাম, আগের পদ্যের সঙ্গে এই নতুন কবিতার মিল নেই মোটে। অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বোঝে, প্রভুর অপছন্দ হলে নতুন সাজে সাজিয়ে নিতে হবে আমাকে। আমি জানি, এই কবিতা আসলে লিখছে কোনও সফটওয়্যার, যার মধ্যে হয়তো পুরে দেওয়া রয়েছে সাহিত্যের ইতিহাস। যে পড়তে শেখেনি কখনও, অথচ বিশ্বসাহিত্য বেঁধে রেখেছে যান্ত্রিক চিপে, হৃদমাঝারে। এআই কর্তারা মুচকি হেসে বলছেন, এ তো সবে শুরু।

AI

এক ভারিক্কি অধ্যাপককে দিনকয়েক আগে বেজায় কপাল কুঁচকে বলতে শুনলাম, “এই যে আমার ছাত্ররা গুচ্ছ গুচ্ছ প্রিন্ট আউট দিয়ে যাচ্ছে, যাকে বলে থিসিস পেপার, এগুলো কে লিখেছে বলতে পারো?” আমার সাদা মনে কাদা নেই। বললাম, “কেন স্যার? আপনার ছাত্ররাই খেটেখুটে, গবেষণা করে লিখেছে। আপনি কি ওদের সন্দেহ করেন?” ভদ্রলোকের কপাল কুঁচকে গেল আরও। কয়েকটা পাতা তুলে জটায়ুর মতো বললেন, “হাইলি সাসপিশাস! আমি তো ছোকরাগুলোকে চিনি। এই গভীরতায় ক্ষেত্রসমীক্ষা করার ক্ষমতা ওদের নেই। সব জিপিটি থেকে ঝাড়া… সব…” আমি বললাম, “থিসিস তোমার ধূলায় হয়েছে ধুলি বলে, মাথায় গাঁট্টা মেরে, পাতাগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিন স্যার।” এর পরে ওঁর উত্তরটা এখনও কানে ফড়ফড় করে ঝাপটায়“টুকেছে যে, প্রমাণ কই? কয়েকটা রেফারেন্স নিয়ে আমিও যদি এখন প্রশ্ন করতে বসি চ্যাটজিপিটিতে, উত্তর পাব পুরো অন্য ভাষায়। একই কথা লক্ষভাবে ঘুরিয়ে লিখতে পারে এই নকল বুদ্ধিমত্তা।” দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ”এই ডবল এক্স এল সাইজের থিসিস পেপার পড়ার মানে কী জানো? আমি জেনেশুনে বিষ করেছি পান।”

ভদ্রলোকের কপাল কুঁচকে গেল আরও। কয়েকটা পাতা তুলে জটায়ুর মতো বললেন, “হাইলি সাসপিশাস! আমি তো ছোকরাগুলোকে চিনি। এই গভীরতায় ক্ষেত্রসমীক্ষা করার ক্ষমতা ওদের নেই। সব জিপিটি থেকে ঝাড়া… সব…”

এক সাহিত্যিককে স্থানীয় বইমেলার ফিতে কাটার পরে মাইকের সামনে বলতে শুনেছিলাম, “গল্পের জন্ম আমার কাছে প্রসববেদনার মতো।” কবিরা বলেন, “বিনিদ্র রাতে একটা একা নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে খুঁজেছি নতুন কবিতার প্রথম লাইন।” প্রাবন্ধিকরা কলার তুলে জানান দেন, এই সমীক্ষার খোঁজ পেতে ম্যানহোল পরিষ্কার করার মতো গায়ে মাখতে হয়েছে কাদা। চ্যাট-জিপিটির প্রেমিক প্রেমিকারা এমন শুনলে হয়তো ফিক করে হাসবেন। এক বন্ধুকে বলতে শুনেছিলাম, “আমার ইচ্ছেমতো বিষয়ে পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যে আনকোরা নতুন পদ্য কে লিখে দেবে আমায়? কোন কবির এমন সাধ্য আছে? পছন্দ না হলে চোখের পাতা পড়তে না পড়তেই ফের আরেকটা। ছোট কবিতা চাইলে ছোট, দীর্ঘ চাইলে দীর্ঘ। কে দেবে, কে?” প্রসঙ্গত, শুধু কবিতা নয়, গল্প, নিবন্ধও অবলীলায় লিখে দিচ্ছে এই যান্ত্রিক সাহিত্যিক। উপন্যাস লিখতে পারে কি না, সেটা নিজের হাতে জানার চেষ্টা করিনি। সত্যি কথা বলতে কী, ভয় করছিল।

ChatGPT

অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, সাহিত্যভাবনাও কি তাসের বান্ডিলের সেট শাফল করার মতো হয়ে গেল ক্রমশ? একটু পরেই নতুন সেট। ভালো না লাগলে ফের শাফল। প্রিয় কোনও লেখা বারবার পড়ে দেখার সুখবোধও কি যাত্রা শুরু করে দিল অন্ধকার, গভীর সুড়ঙ্গে? সাবেকি সাহিত্যপ্রেমীরা বলতেই পারেন, কে মেপেছে চ্যাটজিপিটির লেখার মান? উৎকর্ষের যদি কোনও স্কেল থাকে, তাতে সেই টকাটক করে লেখা বাইনারি গদ্য, পদ্য পাশ করছে তো? এর একটাও কি কালজয়ী হবে? পাল্টা উত্তরও ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড়ের মতো। তারা বলছে, খুব খিদে পেলে আমি অর্ডার করে পনেরো মিনিটে পিজা পাই, অ্যাপেমাথায় হাওয়া দিয়ে দু ঘণ্টা বসিয়ে রেখে প্রিয়জনের হাতের রান্নার স্বাদ নাই বা পেলাম!

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কোন দিকে যাবে, তার উত্তর আপাতত সময়ের গর্ভে। জেনেছি, স্থানীয় ভাষা নিয়েও নাকি কাজ হচ্ছে খুব। ‘কানমলা খাবি’র উত্তরে বেশি দিন আর উল্টোপাল্টা জবাব দেবে না চ্যাটজিপিটি।

বছর দশেক পরে যদি বলি, “একটা নতুন ফেলুদা কাহিনি শোনাবে? কিংবা ব্যোমকেশ? কাকাবাবু নতুন কোনও অভিযানে যেতে পারেন না কত বছর! টেনিদা নতুন কিছু বলল নাকি? ঘনাদা, ব্রজদাও যে চুপ। অর্জুনও তো কথা বলছে না আর।”

কল্পনা করা যেতে পারে, হৈ হৈ করে এগিয়ে যাচ্ছে কার্সার। মাতলো রে ভুবন।

হঠাৎ গা গুলিয়ে উঠল কেন?     

 

 

ছবি সৌজন্য: Istock, MaxPixel, Free Vectors,

অম্লানকুসুমের জন্ম‚ কর্ম‚ ধর্ম সবই এই শহরে। একেবারেই উচ্চাকাঙ্খী নয়‚ অল্প লইয়া সুখী। সাংবাদিকতা দিয়ে কেরিয়ার শুরু করলেও পরে জীবিকার খাতবদল। বর্তমানে একটি বেসরকারি সংস্থায় স্ট্র্যাটেজি অ্যানালিস্ট পদে কর্মরত। বহু পোর্টাল ও পত্রপত্রিকায় নিয়মিত লেখেন। প্রকাশিত হয়েছে গল্প সংকলন 'আদম ইভ আর্কিমিডিস' ও কয়েকটি অন্য রকম লেখা নিয়ে 'শব্দের সার্কাস'।

One Response

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *