আমরা যখন পোলেরহাট শ্মশানে গিয়ে উঠলাম, তখন মাঝরাত বিশ্বচরাচর নিস্তব্ধ কাকপক্ষীরাও ঘুমে অচেতন কেবল একটা লণ্ঠনের আলো টিমটিম করছে শম্ভুনাথের খোড়ো চালার ঘরে ঘুমোচ্ছে অবশ্যই; অথবা ঝিমোচ্ছে কখনও মাঝরাতেও মড়ার উদয় হয় কিনা তখন নাম নথিভুক্ত করার জন্যে ওকেই খাতাপত্তর বাগিয়ে বসতে হয় কিন্তু আমরা এসে দাঁড়িয়েছি অতি সন্তর্পণে যাকে বলে, বেড়ালপায়ে পক্ষীকুল টের পাবার কথা নয় শম্ভুনাথ তো নয়ই 

শ্মশানের মাটিতে পা দেওয়ামাত্র গুড্ডু, লাল্টু, বিট্টুরা আমার জামাপ্যান্টের পকেটগুলো পুনর্বার সার্চ করে সামনে ঠেলে দিয়ে বলল,
যা দেরি করে কাজ নেই 

কোনওদিন শ্মশানঘাটের পথ মাড়াইনি জীবনে প্রথমবার ভয় করছে বড্ড বুকের ভেতরটা তিড়িক মিরিক করছে তাড়াতাড়ি কাজ সেরে বাড়ি যেতে পারলে বাঁচি মা বিপত্তারিনীর নাম স্মরণ করে সামনের দিকে এগোতে থাকলাম দুটো কাজ করতে হবে এখন আমায় অনতিদূরে নদীর পাড়ে মড়া পড়ে আছে একটা তেমনই থাকার কথা তার সঙ্গে কোলাকুলি করে আসতে হবে আমায় বিজয়াদশমী উপলক্ষ্যে যেমনটি করে থাকি ফিরে আসার সময় প্রমাণ হিসেবে মড়া ছোঁয়ার চিহ্ন আনা চাই তার গায়ে চাপানো কাপড় এবং মড়ার খাটেরও কিছু চিহ্ন দড়ির টুকরো, বাঁশের ছালযা খুশি

 

আরও পড়ুন: সৌরভ হাওলাদারের ছোটগল্প: প্রতিবেশী

 

ব্যাপারটা সহজ করে বুঝিয়ে বলি গুড্ডুলাট্টুদের সঙ্গে বাজি লড়েছিলাম একহাজার টাকার দুপক্ষের দু’হাজার গচ্ছিত রাখা হয়েছে ব্রজমামার কাছে বাজি যে জিতবে, পুরস্কারস্বরূপ ব্রজমামা তার হাতে তুলে দেবেন পুরো টাকাটা বাজিটা লড়ব কিনা, প্রথমে ইতস্তত করছিলাম অনেক ভেবেহ্যাঁবলে দিলাম দুটো কারণেএক, টাকার অংকটা বেশ আমার গরিব ট্যাঁক ভর্তি হয়ে যাবে দুই, আর পাঁচজনের তুলনায় আমি সাহসি তবে সুবর্ণ সুযোগ হেলায় হারাই কেন! তবু সত্যিটা স্বীকার করতে দ্বিধা নেইবাড়ি থেকে বেরিয়ে গোটা পথ যেমনতেমন, শ্মশানঘাটের মাটিতে পা দিয়ে বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠল এও সত্যি, এমন বাজি জীবনে লড়িনি জীবন নিয়ে খেলার মতো প্রায় শ্মশানঘাটে কতকত না সাংঘাতিক ঘটনা ঘটে থাকে! কিছু বইতে পড়া কিছু শোনা যমরাজ সেখানে অহরহ টহলদারি করেন ভূতপ্রেতব্রহ্মদত্যিশাঁখচুন্নি সকলের খেলাঘর শ্মশানঘাট চত্বর তবে

এমন বাজির মুখোমুখি হওয়ার মূল কারণটা যদিও আমি নিজেই সর্বদা ভূতপ্রেতের নামে তুড়ি মারিগাঁজাখুরি গপ্পোবলে তাচ্ছিল্য করি ওদেরও বা কানে সইবে কত? অমনি গুড্ডু চোখ টাটিয়ে তাকাল আমার দিকে খ্যাপা শুয়োরের মতো ঘোঁতঘোঁত করতেকরতে বলল,
খুব সাহসি হয়েছ তুমি, না? খুব? ভূত মানো না, ব্রহ্মদত্যি মানো না, পেতনিশাঁখচুন্নি মানো নামামদোবাজি? তবে একবার শ্মশানঘাটটি ভ্রমণ করে এসে দেখাও চাঁদু দেখি তোমার বুকের পাটাখানি

এরপর এলো বাজির প্রসঙ্গ আমিও রাজি ব্রজমামা সাক্ষী শুনে উনি হাঁহয়ে তাকালেন ভয়ার্ত চাহনি মেলে তাকিয়ে বললেন,
কেন রে, খেয়ে কাজ নেই তোদের? বাজির কি টান পড়েছে দেশে? কত বাজিই লড়লি এদ্দিন? ফুটবল নিয়ে, ডাংগুলি নিয়ে, গুল্টিঘুড়ি নিয়ে তাই কর না কেন খামোখা ওসব ভূতপ্রেতদের নিয়ে টানাটানি করছিস?
কেন? তোমার অসুবিধা কী? তোমায় তো যেতে হচ্ছে না

বিট্টুর ফটফটানিতে চুপ করলেন ব্রজমামা অবশেষে শুকনো মুখ করে মিনমিন করলেন,
ঠিক আছে যা খুশি করগে যা পরে আমায় দোষ দিস না যেন
হেসে উঠল বিট্টু অমনি
কেন? তোমায় দোষ দেব কেন? সেকথা আসছেই বা কোত্থেকে? তুমি তো এর মধ্যে নেই শুধু বয়সে বড়ো হিসেবে টাকাটার দায়িত্ব নেবে পরে বাজি যে জিতবে, তার হাতে পুরো টাকাটা তুলে দেবে ব্যস্‌! 
– শ্মশানঘাটে বিপদ ঘটলে?
বলে ব্রজমামা চোখ টেরিয়ে তাকালেন
বিপদ ঘটলে আমাদের ঘটবে তোমার কী?
গুড্ডুর কথায় বিতর্কের অবসান যদিও শেষ বাক্যটি ব্রজমামাই বললেন বললেন,
মনে থাকে যেন কথাগুলো শেষে বলিস না যে, বড়ো হয়েও তোদের ছোটোদের বারণ করলাম না কেন

গুড্ডুলাট্টুদের সঙ্গে বাজি লড়েছিলাম একহাজার টাকার দুপক্ষের দু’হাজার গচ্ছিত রাখা হয়েছে ব্রজমামার কাছে বাজি যে জিতবে, পুরস্কারস্বরূপ ব্রজমামা তার হাতে তুলে দেবেন পুরো টাকাটা বাজিটা লড়ব কিনা, প্রথমে ইতস্তত করছিলাম অনেক ভেবেহ্যাঁবলে দিলাম দুটো কারণেএক, টাকার অংকটা বেশ আমার গরিব ট্যাঁক ভর্তি হয়ে যাবে দুই, আর পাঁচজনের তুলনায় আমি সাহসি তবে সুবর্ণ সুযোগ হেলায় হারাই কেন!

পরে ব্রজমামা আমায় একান্তে বোঝালেন দুএকটা ভূতুড়ে গপ্পোও শোনালেন। আমি ব্রজমামার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বললাম,
কী কথা শুনি ব্রজমামা? তুমি তো কস্মিনকালে ভূতেদের পাত্তা দাওনি আমি তোমারই চ্যালা তবে আজ এমন মন ভাঙাচ্ছ
এবার ব্রজমামা বিব্রত বোধ করলেন এক ছিলিম মতো হেসে বললেন,
এক বললে আর এক বুঝিস দেখি! তুই আমার চ্যালা হওয়ার যোগ্যই নোস কী বলতে চাইলাম আমি, তা বুঝেছিস?
কেন বুঝব না? জলের মতো সোজা করেই যে বললে বলতে চাইলে, শ্মশানে ভূত থাকে অহেতুক এমন রিস্কের কাজ করার মানে হয় না
না, মোটেও আমি তা বলিনি ব্রজমামা পাল্টা বললেন
তা বলোনি?
না 
তবে আর একবার শুনি তোমার বক্তব্যটি?
ব্রজমামা মোলায়েম করে বললেন,
শোন, ভূত নেই ঠিক কথা সেটা আগে যেমন বলেছি, এখনও বলছি কিন্তুভূতের ভয়নামক বস্তুটা যে আমাদের ভেতরেই ঘাপটি মেরে বসে সে আমাদের জন্মসূত্রে লাভ করা রক্তে গড়া দিচ্ছে দিবারাত্র শ্মশানঘাটে গিয়ে যদি সেটি চাগাড় দিয়ে ওঠে?
আমি হেসে উঠে ফুৎকার দিয়ে বলি,
ধুৎ! অত হিসেব কষলে আর বাজি লড়া হয় না বাজির মূল ব্যাপারটাই হল ঝুঁকি এতগুলো টাকার ব্যাপার একটু ঝুঁকি তো নিতেই হয়
ব্রজমামা আর কিছু বললেন না মুখচুন করে উঠে দাঁড়ালেন শেষে হতাশকণ্ঠে বিড়বিড় করতেকরতে বাড়ির পথ ধরলেন
তোরা যে কবেকবে এত বড়ো হয়ে গেলি যা খুশি করগে, যা

চতুর্দিক ঘুটঘুটে অন্ধকাররাতের বুকে রংমিস্ত্রি যেন আলকাতরার প্রলেপ বুলিয়ে দিয়েছে এমনই অবশ্য হবার কথা একে অমাবস্যা; উপরন্তু মধ্যরাত আমার হাতে একটাই অস্ত্র। একটা পেন্সিল ব্যাটারির টর্চ সে আলো লণ্ঠনের চাইতেও মিনমিনে ইচ্ছে করেই ব্যাটারিগুলো পুরনো ভরে দিয়েছে গুড্ডুরা অতি আলো পাছে সাহস যোগায় আমায়টর্চের আবছা আলোয় হাঁটতে লাগলাম সামনের দিকে পথ বলে কিছু নেই যদিও চতুর্দিকে নোংরা আবর্জনার স্তূপ পোড়া কাঠের টুকরো, কঙ্কালের হাড়ের টুকরোএসব রয়েছে শামুক, ঝিনুক, খই, তুলো, ছেঁড়া কাপড়ের টুকরো, ভাঙা ঘট, শাঁখার টুকরো, কত কী দুএকটা কুকুর ঘুরঘুর করছে এদিকওদিক আমাকে দেখে ঘেউঘেউ করে থেমে গেল ঝোপ থেকে ঝিঁঝি ডাকার শব্দ আসছে পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ভাগীরথীর জলতরঙ্গধ্বনি সঙ্গে শেয়ালের ডাক মিশে চরাচর রহস্যময়

New-Delhi-crematorium
মড়া অর্থাৎ ভোম্বলের শরীরটা ছুঁয়ে নিলাম প্রথমে

উফ, মড়াটা আর কত দূর? সামনে নদীর পাড়েই থাকার কথা কোনওমতে গায়ে গিয়ে হাত বোলাতে পারলে, কেল্লা ফতে আহা, সংসারে টাকার মূল্যও যে অসীম তবে তার জন্যে আমার অসীমতম সাহসটুকু দেখাতে অসুবিধা কী? পাঠককুলকে এক্ষণে একটি গোপন কথা শোনাই ইংরেজিতে যাকে বলে, টপ সিক্রেট কিন্তু সাবধান! কথাক’টা গুড্ডু, লাট্টু, বিট্টুদের কানে নাযায় তবে এত্তগুলো টাকার তো জলাঞ্জলি হবেই, সঙ্গে এই অসম সাহসীর পিঠের ছালটি নিয়েও টানাটানি পড়ে যাওয়া অসম্ভব নয় কিছু 

ব্যাপার হল, কাজটা আমি করবই, বাজি জিতবইতা আগে থাকতেই জানা এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা এর কারণ একটাই: গোপন চুক্তি অন্যভাবে বললে, গট আপ গেম আসলে বাজিটা লড়ার সময়ই আমার মাথায় এসেছিল ভোম্বলের কথা শম্ভুনাথের ছেলে ওর সঙ্গে আমার কমবেশি ভাব গোপনে ওকেই ফিট করে বসলাম সম্পূর্ণ বৃত্তান্ত বলে জিজ্ঞাসা করলাম,
কত চাই তোর?
ভোম্বল কুমড়োর ফালির মতো হেসে বলল,
তুমি যা দিবে
পাঁচশো বলতে যারপরনাই খুশি বলল,
কোই বাত নেহি কাম হামি কোরবে
আমি সতর্ক করলাম, কাকপক্ষী নাজানে ভোম্বল আমাকে আশ্বস্ত করে একইরকম হাসল বলল,
চিন্তা মত করো হামি কাউকে বলবে নাই
সেই থেকে বুক বেঁধে আছি জানি, কোনও ভয় নেই এই মুহূর্তে শ্মশানে আমি একা নই আরও একজন আছে সে ভোম্বল মড়া সেজে সে এখন শুয়ে আছে নদীপাড়ে আমি গিয়ে সদর্পে তাকে স্পর্শ করব তারপর তার গায়ের কাপড়টি তালুবন্দি করে গুড্ডুদের কাছে ফেরত 

শোন, ভূত নেই ঠিক কথা। সেটা আগে যেমন বলেছি, এখনও বলছি। কিন্তু ‘ভূতের ভয়’ নামক বস্তুটা যে আমাদের ভেতরেই ঘাপটি মেরে বসে। সে আমাদের জন্মসূত্রে লাভ করা। রক্তে গড়া দিচ্ছে দিবারাত্র। শ্মশানঘাটে গিয়ে যদি সেটি চাগাড় দিয়ে ওঠে? আমি হেসে উঠে ফুৎকার দিয়ে বলি, ধুৎ! অত হিসেব কষলে আর বাজি লড়া হয় না। বাজির মূল ব্যাপারটাই হল ঝুঁকি। এতগুলো টাকার ব্যাপার। একটু ঝুঁকি তো নিতেই হয়।

কিন্তু ভোম্বল কই? কম পথ তো হাঁটা হল না একশোদুশো পা তো বটেই এখনও ওর চিহ্ন নেই যে! চতুর্দিক ঘাড় ঘুরিয়ে আমি ফিসফিসাই,
ভোম্বল আমি এসে গেছি তুই কই? দেখছি না যে!
কিন্তু ভোম্বলের সাড়াশব্দ নেই সে হোক গে এমন হতে পারে, অপেক্ষা করতে করতে ব্যাটা ঘুমিয়েই পড়েছে হয়তো কম রাতও তো হল না হতাশ হবারও কারণ দেখছি না টাকাটা অগ্রিম দিয়ে দিয়েছি কথার অন্যথা করার ছেলে নয় নিশ্চয়ই কাছাকাছিই চিত হয়ে আছে কোথাও

ভোম্বলের দেখা মিলল অবশেষে আরও একটু সামনে এগিয়ে টর্চের মিনমিনে আলো ফেলতে স্পষ্ট হয়ে উঠল লম্বা করে পাতা একটি সাদা থানকাপড় ওর ভেতরেই ঘাপটি মেরে পড়ে রয়েছে ভোম্বল কিন্তু ওখানে শুয়ে আছে কেন ? মাথা কি খারাপ আছে? একটু এদিকওদিক হলেই যে নদীর জলে ঝুপুস হয়ে যাবে ব্যাটা প্রকৃতই ভোম্বল মাথামোটা আমি মনেমনে ওকেভোম্বলদাসবলে এক ঝিলিক হেসে নিলামভোম্বল সত্যিই ঘুমিয়ে পড়েছে পড়ুকগে ওকে জাগিয়ে তোলার সময় নেই আমার প্রয়োজনও নেই ওদের শ্মশানেমশানে বাস গোটা রাত্তির এখানে শুয়ে থাকলেই বা কী আসে যায় ওর! আমি আমার কাজ সেরে পগারপার হতে পারলেই খুশি 

সাজানো মড়া অর্থাৎ ভোম্বলের শরীরটা ছুঁয়ে নিলাম প্রথমে সামান্য ঝুঁকে কোলাকুলির ঢংয়ে খাটের তলা থেকে দড়ির আঁশমতো ছিঁড়ে নিলাম খানিক বাঁশের ছাল এক চিলতে তারপর ভোম্বলের গায়ে চাপানো সাদা কাপড় বগলদাবা করে দেদৌড়ভয়ে কাপড় বা বাঁশের টুকরোদড়ির টুকরো কিছুই ছুঁয়ে দেখল না গুড্ডুলাট্টুরা তবে বাজি জিতেছি, স্বীকার করে নিল এরপর অতি দ্রুত পাচালিয়ে বাড়ির পথ ধরলাম আমরা সারা রাস্তায় কথা হল না তেমন আমাদের মধ্যে বোধহয় বাজিটা আমিই জিতে গেছি বলে মনমরা হয়ে আছে ওরা আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা সক্কাল হতে না হতে গিয়ে ব্রজমামার ডেরায় হানা দেওয়ার পালা তারপর বুক ফুলিয়ে কড়কড়ে দুহাজার টাকা হাতে নিয়ে বিজয়ীর হাসি হাসব

উফ, মড়াটা আর কত দূর? সামনে নদীর পাড়েই থাকার কথা। কোনওমতে গায়ে গিয়ে হাত বোলাতে পারলে, কেল্লা ফতে। আহা, এ-সংসারে টাকার মূল্যও যে অসীম। তবে তার জন্যে আমার অসীমতম সাহসটুকু দেখাতে অসুবিধা কী? পাঠককুলকে এক্ষণে একটি গোপন কথা শোনাই। ইংরেজিতে যাকে বলে, টপ সিক্রেট। কিন্তু সাবধান! কথাক’টা গুড্ডু, লাট্টু, বিট্টুদের কানে না-যায়। তবে এত্তগুলো টাকার তো জলাঞ্জলি হবেই, সঙ্গে এই অসম সাহসীর পিঠের ছালটি নিয়েও টানাটানি পড়ে যাওয়া অসম্ভব নয় 

হাঁটতেহাঁটতে নির্বাক কেটেছে অনেকক্ষণ আর বোধহয় থাকতে পারল না বিট্টু বলল,
সত্যিই বুকের পাটা আছে তোর দিব্যি গিয়ে মড়াটাকে ছুঁলি! কাপড় হাতে নিয়ে ফিরলি! ভয় করল না রে?
আমি যাত্রাদলের নায়কের মতো হেসে উঠে বলি,
বলেইছি তো বাজি আমিই জিতব ভূতে আমার কোনওকালে ভয় নেই ওসব আমার কাছে নস্যি পারলে আরও বড়ো কোনও বাজির আয়োজন কর
সত্যি বলছিস? একটুও ভয় লাগেনি তোর? গুড্ডু অমনি বলল। 
একদম না আমি দৃঢ়স্বরে বলি
মিথ্যে কথা লাট্টু মুখ খুলল। 
আমি এত কথায় পাত্তা দিলাম না বললাম,
চুপ কর বাজে বকিস না যা করার করে দেখিয়েছি কাল যাই ব্রজমামার হাত থেকে প্রাইজ়টা নিই, তবেই পরিশ্রম সার্থক

এই অবধি গল্পটা ঠিকঠাকই ছিল কিন্তু কাকভোরে ভোম্বল হঠাৎ আমাদের বাড়ি উদয় হয়ে গুলিয়ে দিল সব ঘুম থেকে উঠে উঠোনে ওকে দেখেই প্রায় জড়িয়ে ধরি বাহবা জানাই কিন্তু কাঁদোকাঁদো মুখ করে বলতে লাগল,
আমায় ক্ষমা করে দাও কাল তোমার কথা রাখতে পারলাম না বাবার জ্বর হওয়ায় মাথায় জলপট্টি দিতে দিতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম ঘরেই এই নাও, টাকাটা কাজ করিনি, পয়সা নেব কেন বলো?…
ভোম্বলের হাত থেকে টাকাটা নিলাম এই পর্যন্ত মনে আছে তারপর মাথাটা কেমন চক্কর মেরে উঠল বমি ভাব এল তারাও যেন দেখলাম টা তারপর অচেতনআধাঘণ্টাখানেক যেতে চোখদুটি আধা বোজা আধা খুলে দেখি সুরেশডাক্তার পাশে বসে ইঞ্জেকশন রেডি করছেন!

 

*ছবি সৌজন্য: The Nation, jorisherman.com

মৃত্যুঞ্জয় দেবনাথের ১৯৬৭-তে রানাঘাটে। আশৈশব কেটেছে নবদ্বীপ নিকটবর্তী বর্ধমান জেলার বেতপুকুর গ্রামে। পেশায় শিক্ষক হলেও ভালোবাসা সাহিত্যচর্চা। প্রথম ছোটগল্প প্রকাশিত হয় শুকতারা পত্রিকায়। লিখেছেন আনন্দমেলা, শুকতারা, কিশোর ভারতী, সন্দেশ, আনন্দবাজার পত্রিকা, দেশ, সানন্দা, কৃত্তিবাস, নবকল্লোল, শিলাদিত্য, সুখী গৃহকোণ প্রভৃতি পত্রিকায়। প্রকাশিত বই চোদ্দোটি, যার মধ্যে সিঁধেল চোর, মা কালীর খাঁড়া, ঝিনুক নদীর চর, মানুষ হয়ে ওঠা, বকুল ফুলের গন্ধ প্রভৃতি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ২০২০ সালে কিশোর ভারতী পত্রিকা থেকে পেয়েছেন সাধনা স্মৃতি পুরস্কার।

One Response

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *