প্রথম পর্বের লিংক: ‘পদব্রজে নেপাল’ [১]

[২]

পরদিন ভোরে নয়াপুলগামী একটি বাসে উঠে পড়লাম। কোনওক্রমে শেষ সিটে গুঁতোগুঁতি করে বসলাম। কোলে হ্যাভারস্যাক। বাসে তারপর একটা রামছাগলকে তোলা হল। বিদেশি তিন সহযাত্রী সোজা বাসের ছাদে পালিয়ে গেল। ভিড় বাসে তাদের সিট তৎক্ষণাৎ ভর্তি হয়ে গেল। আমরা নাক টিপে বসে রইলাম।

লুমলে নামে এক জায়গা থেকে আমাদের হাঁটা শুরু হল। পথে প্রথম গ্রাম বিরেথাঁটির altitude হল এক হাজার মিটার। আমাদের সঙ্গে আছে contour map. পরনে পুরো হাতা সুতির জামাকাপড়, পায়ে হান্টার জুতো। আমার পরিচিত অপরেশদা খুব ভালবাসেন হিমালয়ে ট্রেকিং করতে। আমি প্রথমবার যাব শুনে তিনি জোর করে নিজের জুতো আমাকে দিয়েছেন! এখানে রাস্তা মানে পায়ে চলা পথ। গাধার পিঠে সবকিছু নিয়ে যাওয়া হয় উত্তর দিকে। মাঝে মাঝে সেইরকম একদল গাধা পিঠে বোঝা নিয়ে পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে। তাদের গলার ঘণ্টির ঠুনঠুন শব্দ নিঃশব্দ পাহাড়ি পথকে সচকিত করে তুলছে। পথ এঁকেবেঁকে চলেছে ছোট ছোট চড়াই উৎরাই পেরিয়ে। এক জায়গায় অগভীর ছোট নদী পেরোলাম ফেলে রাখা কাঠের গুঁড়ির ওপর দিয়ে। আমাদের সঙ্গে গাইড বা মালবাহক কেউ নেই, নিজেদের জিনিসপত্র নিজেদের পিঠের স্যাকে। এখানে প্রতিটি গ্রামে থাকার ও খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। হোমস্টে একপ্রকার। এদের মেনুকার্ড দেখলে চোখ কপালে উঠে যায়! কী নেই তাতে! যাবতীয় ইউরোপিয় খানা, যেগুলোর নাম উচ্চারণ করতে জিভ মচকে যায়, সে স-অ-অ-ব আছে। কিন্তু নেপালি গ্রামে বানানো কন্টিনেন্টাল খানা খেতে খুব একটা ভরসা পেলাম না। খাবারের অস্বাভাবিক দাম, কারণ সবকিছু গাধার পিঠে টেনে আনতে হয়। আমরা নেপালি ডাল-ভাত-শাক ছাড়া অন্য কিছু খাইনি। সারা পথে নানা দেশের নানা লোকের সঙ্গে দেখা হল। তারাও দেখি দুপুরে রাতে ‘ডাল-বাত’ অর্ডার দিচ্ছে। বিরেথাঁটি, মাতাথাঁটি, হিলি পেরিয়ে প্রথম রাতে রইলাম তিরখেডুঙ্গা গ্রামে। বিরেথাঁটি থেকে দূরত্ব ছয় কিলোমিটার মাত্র, কিন্তু অনভ্যস্ত পায়ে চড়াই উৎরাই পেরিয়ে পাঁচশো মিটার উচ্চতা লাভ করলাম।

তিরখেডুঙ্গা গ্রাম পেরোলে পাহাড় চড়া শুরু। বড় বড় পাথর ডিঙিয়ে উঠছি, প্রায় সিঁড়ি বেয়ে ওঠার মতো, শুধু সিঁড়িগুলো হাঁটু সমান। এই সেই বিখ্যাত ঊলেরি যা পেরিয়ে ঘোড়েপানি পাস। তিরখেডুঙ্গা থেকে ঘোড়েপানি পাস খাতায় কলমে চার কিলোমিটার, কিন্তু ১৫০০ মিটার উচ্চতা থেকে উঠে যেতে হবে ২৮৭০ মিটার। উপরে উঠছি তো উঠেই যাচ্ছি। মন চাইছে দুই পা উৎরাই, কিন্তু এ যেন স্বর্গের সিঁড়ি! তারই মধ্যে মাঝেমাঝে একদল গাধা পিঠে বোঝা নিয়ে ওঠানামা করছে। পিঠে বোঝা নিয়ে চড়াইয়ে একরকম গতি আর উৎরাইয়ের সময় তারা দৌড়োয়। ওদের ঠুনঠুন আওয়াজ শুনে সবাই পাহাড়ের গায়ে সেঁটে যাচ্ছি। ভুল করে খাদের দিকে সরে জায়গা দিতে গেলে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। অন্নপূর্ণা ম্যাসিফের দক্ষিণ থেকে পশ্চিম মুখ দিয়ে যাচ্ছি। সারা পথে নানা দেশের লোকের সঙ্গে পরিচয় হচ্ছে, কিন্তু আর কোনও ভারতীয়কে দেখলাম না। বিদেশিরা আমাদের দেখে হাতজোড় করে হেসে বলছে নমস্তে। আমরাও নমস্কার জানিয়ে এগোচ্ছি।

Nepal Treking route
আমাদের সঙ্গে গাইড বা মালবাহক কেউ নেই, নিজেদের জিনিসপত্র নিজেদের পিঠের স্যাকে

ঊলেরি পেরোতে আমার মতো আনাড়ির দেড় দিন লাগল। মাঝে এক জায়গায় রাত কাটালাম একটা ছোট্ট গ্রামে। হাতে পায়ে অসহ্য ব্যথা। পরদিন আবার হণ্টন। এক জায়গায় ধস নেমেছে, রাস্তা নেই। গড়ানো নুড়ি পাথরের ওপর দিয়ে হেঁটে চলে যেতে হবে। আমি ভয়ে বসে পড়লাম, বললাম পারব না যেতে। পার্থ বলল,“তাড়াহুড়ো করবে না আর কোথাও দাঁড়াবে না, আমি চললাম।” দেখি সত্যি আমাকে ফেলে চলে গেল! এ কী কাণ্ড! এ কাকে বিয়ে করলাম রে বাবা! কী আর করা! মনে মনে রাগে গসগস করতে করতে আমিও পেরিয়ে গেলাম ওই জায়গাটা। কয়েকবার পা হড়কে ছিল, কিন্তু সামলে গেছি। দুর্গম জায়গা পেরিয়ে দেখি তিনি দাঁড়িয়ে আছেন একধারে। সহযাত্রী ছিল একদল জাপানি অল্পবয়স্ক ছেলে-মেয়ে। তারা দেখি পার্থকে বোঝাচ্ছে, কাজটা ভালো করোনি। তাদের সহমর্মিতা আমার রাগকে মুহূর্তে প্রশমিত করল, যদিও ঘণ্টাখানেক চুপচাপ ছিলাম।

ঘোড়েপানি থেকে এক কিলোমিটার উঠতে হয় পুন হিল নামে একটা পাহাড়ে। ৩২০০ মিটার উচ্চতায় সেখানে সবাই যায় সূর্যোদয়ের ছবি তুলতে। চারিদিকে উঁচু উঁচু বরফশৃঙ্গ গম্ভীরভাবে তাকিয়ে আছে। অন্ধকারে, ঠান্ডায় গুটিসুটি হয়ে আমাদের মতো কিছু লোক জমায়েত হয়েছে। প্রথমে একটা লাল আলোর রেখা একটি বরফচূড়া স্পর্শ করল। তার খানিকক্ষণ পর এক লাফে সেই আলো আরেকটি চূড়াকে রাঙিয়ে দিল। আগের চূড়ায় তখন আলোর রং সোনার বর্ণ। আকাশ তখনও নীল কালির মতো গাঢ় রঙে ছোপানো। সেই ঘননীল আকাশের গায়ে একটি লাল ও একটি সোনালি চূড়া আমার মনে চিরদিনের মতো ছাপ দিয়ে গেল। আস্তে আস্তে রং ছড়িয়ে গেল সবখানে, সব চূড়াগুলো ভোরের নরম আলোয় হেসে উঠল। সূচনা হল একটি নতুন দিনের। আমরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে ছিলাম। সবাই চলে গেল, সব কিচিরমিচির বন্ধ হল, উজ্জ্বল সূর্যালোক সবদিক ভাসিয়ে দিল— তখন ধীরপায়ে ফিরে এলাম।

এ কী কাণ্ড! এ কাকে বিয়ে করলাম রে বাবা! কী আর করা! মনে মনে রাগে গসগস করতে করতে আমিও পেরিয়ে গেলাম ওই জায়গাটা। কয়েকবার পা হড়কে ছিল, কিন্তু সামলে গেছি। দুর্গম জায়গা পেরিয়ে দেখি তিনি দাঁড়িয়ে আছেন একধারে। সহযাত্রী ছিল একদল জাপানি অল্পবয়স্ক ছেলে-মেয়ে। তারা দেখি পার্থকে বোঝাচ্ছে, কাজটা ভালো করোনি।

প্রাতরাশ শেষে আবার রওনা। ঘোড়েপানি থেকে পায়ে চলা পথ এবার নিম্নগামী। চিত্রে, শিখা হয়ে সতেরো কিলোমিটার দূরে তাতোপানি যাব। সেখানে হট স্প্রিং-এ সারাদিন ডুবে বসে থাকব ব্যথা-যন্ত্রণা কমাতে। অবরোহণ করা কিছু কম শক্ত নয়, সারাদিন ব্রেক কষতে কষতে যাওয়া! অবরোহণের রাস্তা সবুজে ঘেরা। একদিনে পৌঁছনো হল না, সন্ধ্যার মুখে শিখাতে একরাত থেকে গেলাম। সেখানে বাথরুম যাব বললাম, আর হোটেল মালিক একটি জলভরা বিয়ারের বোতল ধরিয়ে দিয়ে বলল ওই মাঠে চলে যান, ওই হোথা বাথরুম। মাঠের মাঝে চারটে খুঁটি পোঁতা, তাদের ঘিরে চট। মাথার উপর খোলা আকাশ। আমি আপাদমস্তক শহুরে এক মহিলা, কোনওদিন ভাবিনি এইরকমভাবে প্রকৃতির সঙ্গে সর্বতোভাবে মিশে যেতে হবে! মাঝে একটা গরু বাইরে থেকে ল্যাজের চাপড় মেরে গেল! কী অভিজ্ঞতা! পরদিন সকালে মানে মানে বিদায় নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে তাতোপানি পৌঁছলাম। নেমে এলাম ১২০০ মিটার উচ্চতায়।

Chitre Nepal
ঘোড়েপানি থেকে পায়ে চলা পথ এবার নিম্নগামী

তাতোপানিতে উষ্ণ প্রস্রবণের চারপাশ বাঁধিয়ে পুল তৈরি করা হয়েছে। পুলে সবাই আরাম করে বসে আছে। দুপুরে খাবার জায়গায় বসে আছি, দেখি পাশের টেবিলে এক বিদেশি ছেলে ও এক ভারতীয় মেয়ে। এই পথে প্রথম আরেকজন ভারতীয় পেলাম। আলাপ হল। মেয়েটি খুব আগ্রহে জিজ্ঞেস করল, “আমাকে কোন দেশের মনে হচ্ছে?” বললাম, “পাঞ্জাবি”। ও বলল অনেকে বলেছে ওকে দক্ষিণ ভারতের মেয়ে মনে হয়। আমি তো প্রথমটা একটু থতমত খেয়ে গেলাম, এ আবার কী কথা, নিজেই জানে না সে কোথাকার মেয়ে? ও আসলে সুইডিশ। এক বছর বয়সে উত্তর ভারতের একটি চার্চে ওকে রেখে ওর মা বাবা চলে যায়, কিন্তু প্রতিশ্রুতি মতো ওকে আর কেউ নিতে আসেনি। নিঃসন্তান এক সুইডিশ দম্পতি ওকে অ্যাডপ্ট করেন। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে ভারত-নেপাল-পাকিস্তানে ঘুরছে পিতৃমাতৃপরিচয়ের সন্ধানে। ওকে দেখে অনুভব করলাম নিজের শিকড়বাকড় সম্বন্ধে কিছু না জানাটা কতটা যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে। না হলে কি এমনি এমনি নিজের উৎসের সন্ধানে বেরিয়ে পড়া মেয়েটি খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরতে চাইছে যতটুকু তথ্য পাওয়া যায় অজানা অচেনা মানুষদের কাছে? কোথা দিয়ে সময় কেটে গেল ওদের সঙ্গে গল্প করে জানি না। স্বল্প পরিচয়ে প্রগাঢ় বন্ধুত্ব হয়েছিল ওর সঙ্গে।

তাতোপানি থেকে বেশিরভাগ লোকজন ফিরে গেল পোখারা। আমরা দুজন উত্তর দিকে হাঁটা দিলাম। আবার চড়াই, কিন্তু অতটা খাড়া নয়। এবার পায়ের ব্যথা কমেছে, হাঁটতে আর কষ্ট হয় না। কালীগণ্ডকী নদী ধরে ধরে তার উৎসর দিকে যাত্রা। চারিদিকে গাছপালা অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে। পথ চলেছে ডানা, রূপসে, কাবরে ছুঁয়ে ছুঁয়ে। ঘাসায় এসে মোটা দড়ি দিয়ে বাঁধা কাঠের পাটাতন দিয়ে তৈরি ব্রিজ পেরোলাম খরস্রোতা নদীর ওপর দিয়ে। পায়ের তলায় কাঠের পাটাতন, সাবধানে পা ফেলতে হয়, না হলে পা গলে যাবে ফাঁক দিয়ে। হাতের কাছে দড়ি ধরবার জন্য। অনেক নীচে নদীর জল ফেনায়িত স্রোতে বয়ে চলেছে। তাতোপানি থেকে ঘাসা তেরো কিলোমিটার দূরে। ১২০০ মিটার থেকে ২০১০ মিটারের উচ্চতায় এসে পড়লাম।

আমি তো প্রথমটা একটু থতমত খেয়ে গেলাম, এ আবার কী কথা, নিজেই জানে না সে কোথাকার মেয়ে? ও আসলে সুইডিশ। এক বছর বয়সে উত্তর ভারতের একটি চার্চে ওকে রেখে ওর মা বাবা চলে যায়, কিন্তু প্রতিশ্রুতি মতো ওকে আর কেউ নিতে আসেনি। নিঃসন্তান এক সুইডিশ দম্পতি ওকে অ্যাডপ্ট করেন। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে ভারত-নেপাল-পাকিস্তানে ঘুরছে পিতৃমাতৃপরিচয়ের সন্ধানে। ওকে দেখে অনুভব করলাম নিজের শিকড়বাকড় সম্বন্ধে কিছু না জানাটা কতটা যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে।

নরম রোদ পিঠে নিয়ে হাঁটছি। গরমজামা খুলে ফেলতে হয় হাঁটতে হাঁটতে, আবার বিশ্রাম নিতে হলে সেগুলো চাপাতে হয়। এক জায়গায় আবার রাস্তা ভাঙা। পাথর ডিঙিয়ে যেতে হবে। আমার পক্ষে সহজ নয়। উল্টো দিক থেকে আসা যাকেই জিজ্ঞেস করি কাছাকাছি গ্রাম আর কতদূরে, সবাই বলে আর দশ মিনিট। সে দশ মিনিট আর ফুরোয় না। একটা পাহাড় পেরোই তো আরেকটা দাঁড়িয়ে আছে সামনে। পিছনের দুটো পাহাড় পেরিয়ে দুই লম্বা লম্বা বিদেশি লোক ও তাদের গাইড আর পোর্টার আমাদের পাশ দিয়ে অনেক আগে চলে গেল।

Tatopani Hot Spring
তাতোপানিতে উষ্ণ প্রস্রবণের চারপাশ বাঁধিয়ে পুল তৈরি করা হয়েছে

ছোট্ট একটা গ্রামে পৌঁছলাম সন্ধ্যার মুখে। সেখানে একটাই ভদ্র হোটেল, সেটাতে ওই ওভারটেক করা সহযাত্রীরা উঠেছে। আর জায়গা নেই। আরেকটা হোটেল আধখানা তৈরি হয়েছে, সেখানে রাতের আস্তানা জুটল। সরু সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠলাম। ঘরের দেওয়াল কাঠের পাটাতন দিয়ে তৈরি, পাটাতনের মাঝে বড় বড় ফাঁক, সেখান দিয়ে মাঠ পেরিয়ে ধবধবে সাদা বরফচূড়া আমাদের দিকে প্যাটপ্যাট করে তাকিয়ে আছে। একখানা মোমবাতি জ্বালিয়ে ঘর গরম করার চেষ্টা। নেপালের বাড়িগুলোর একটা বৈশিষ্ট্য হল প্রত্যেকটা ঘরে একটা ছোট জানলা থাকে যেটা বন্ধ করার কোনও ব্যবস্থা নেই, সে যত ঠান্ডাই পড়ুক! ঠান্ডা হাওয়ায় আমাদের দন্ত্যবাদ্য শুরু হল।  যতক্ষণ সম্ভব রান্নাঘরে বসে রইলাম দুজনে। রাতে সোয়েটার চাদর কম্বল কিছুতেই আর ঠান্ডা কমে না। জুতোগুলো যাতে সকালে পরতে পারি, তারা জমে শক্ত না হয়ে যায়, তার জন্য বিছানায় কম্বলের মধ্যেই জুতোগুলো রাখা হল। সকালে কম্বল থেকে মুণ্ডু বের করে মেঝের ফাঁক দিয়ে পার্থ ষাঁড়ের মতো চেঁচিয়ে বলল, “দিদি, চিও!” আর মিনিট দশেকের মধ্যে গরম চা বিস্কুট নিয়ে নেপালি দিদি হাজির। রান্নাঘরের চুলার আগুনে হাত পা সেঁকে জলখাবার খেয়ে আবার রওনা।

লেতে পেরিয়ে চড়াই উৎরাই একেবারেই কমে যায়। পথ নেমে এসেছে নদীতে। যত যাচ্ছি উৎসের দিকে, কালীগণ্ডকী নদীর বেড তত চওড়া হচ্ছে। পাহাড়ে পাইনের জঙ্গল। ছোট বড় পাথরের ফাঁক দিয়ে নদী অনেক ধারায় বিভক্ত হয়েছে, আবার জুড়েছে, আবার ভাগ হয়ে গেছে। বাঁদিকে ধৌলাগিরি আর ডানদিকে অন্নপূর্ণা— আমরা দুজন সেই বিস্তীর্ণ নদীর মাঝ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। যেদিকে চোখ তুলে তাকাই, সেদিকেই সাদা সাদা পাহাড়ের চূড়া, আমাদের যেন পরম স্নেহে ঘিরে রেখেছে। এই গিরিখাত পৃথিবীর গভীরতম গিরিখাত। এখানে alpine vegetation. নদীর দুধারের পাইনের জঙ্গলে সূচের মতো পাতার ফাঁক দিয়ে উজ্জ্বল সূর্যালোক ভূমি স্পর্শ করে। শুকনো ঝরাপাতা পায়ের তলায় নরম গালিচা বিছিয়ে দিয়েছে। মাঝে মাঝে পাইন-কোন্ ইতস্ততঃ ছড়িয়ে আছে। সেই আলোছায়ায় যেতে যেতে দুএকটা পাইন-কোন্ তুলে ব্যাগে পুরলাম— নেপালের স্মৃতি! আমার সংগ্রহে এরকম আরও কিছু আছে। লেহ গিয়ে ছোট প্লাস্টিকের বোতলে সিন্ধু নদীর জল, তেলেঙ্গানার প্রাণহিতা নদীর ধার থেকে কুড়িয়ে পাওয়া গাছের ফসিল, জমির ধারে পড়ে থাকা তুলোর ফল, বিদেশ থেকে হেমন্তের ঝরে পড়া লাল পাতা, এসবের মধ্যে আমার স্মৃতি জড়িয়ে থাকে।

যত যাচ্ছি উৎসের দিকে, কালীগণ্ডকী নদীর বেড তত চওড়া হচ্ছে। পাহাড়ে পাইনের জঙ্গল। ছোট বড় পাথরের ফাঁক দিয়ে নদী অনেক ধারায় বিভক্ত হয়েছে, আবার জুড়েছে, আবার ভাগ হয়ে গেছে। বাঁদিকে ধৌলাগিরি আর ডানদিকে অন্নপূর্ণা— আমরা দুজন সেই বিস্তীর্ণ নদীর মাঝ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। যেদিকে চোখ তুলে তাকাই, সেদিকেই সাদা সাদা পাহাড়ের চূড়া, আমাদের যেন পরম স্নেহে ঘিরে রেখেছে। এই গিরিখাত পৃথিবীর গভীরতম গিরিখাত।

কালীগণ্ডকী নদীতে নারায়ণশিলা পাওয়া যায়। পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী দেবী লক্ষ্মী রাজা ধর্মধ্বজের কন্যা তুলসী রূপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর বিবাহ হয় দানব শঙ্খচূড়ের সঙ্গে। দেব-দানব যুদ্ধে দেবতারা প্রায় পরাজিত। একমাত্র শিবের হাতে শঙ্খচূড় মৃত্যুবরণ করবে। কিন্তু তার কবচ হরণ করতে হবে এবং তার পত্নীর সতীত্ব নষ্ট করতে হবে। দুটি কাজই বিষ্ণু দায়িত্ব নিয়ে করলেন। বৃদ্ধ সেজে শঙ্খচূড়ের কবচ চেয়ে নিলেন আবার শঙ্খচূড়ের রূপ ধরে কবচ পরে তুলসীর সঙ্গে সহবাস করলেন। যুদ্ধে শঙ্খচূড় মৃত্যুবরণ করলেন। তুলসী এই চাতুরী বুঝতে পেরে বিষ্ণুকে অভিশাপ দিলেন যে তিনি যেমন পাষাণ হৃদয় হয়ে এই পাপকাজ করেছেন সেইরকম পাথরেই তিনি পরিণত হবেন। দেহত্যাগ করলেন তুলসী এবং তাঁর শরীর কালীগণ্ডকী নদীতে পরিণত হল। তার চুল থেকে তুলসী গাছ জন্ম নিল। বিষ্ণু পাথর হয়ে গেলেন। বজ্রকীটের দংশনে পাথরের গায়ে দাগ তৈরি হল, টুকরো টুকরো হয়ে কালীগণ্ডকীর জলে ভেসে গেল শালগ্রাম শিলা।

এই শালগ্রাম শিলা প্রকৃতপক্ষে এক ধরণের লুপ্ত হয়ে যাওয়া সামুদ্রিক শামুক ammonite-এর ফসিল। পাহাড়ের মধ্যে সামুদ্রিক জীবের ফসিল দেখে ভূবিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন যে একসময় এখানে একটি সমুদ্র ছিল। না হলে কেই বা বুঝত যে বিরাট হিমালয় যেখানে দাঁড়িয়ে, সেখানে কোনও সুদূর অতীতে টেথিস সাগর ছিল! আমার ভূবিজ্ঞানী পার্থ কালীগণ্ডকীর গর্জে পুরো রাস্তা শালগ্রাম শিলা খুঁজল, যেন তারা হাতজোড় করে ওর প্রতীক্ষায় লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, শুধু কুড়িয়ে নেওয়ার অপেক্ষা! একটাও পাওয়া গেল না, স্বাভাবিকভাবেই, মাঝে থেকে ঘাড় ব্যথা।

Kali Gandaki Riverbed
কালীগণ্ডকী নদীর গর্জ, ছবি কাকলি মজুমদার

কালোপানিতে রাতের বিশ্রাম। ঘাসা থেকে হেঁটেছি সাত কিলোমিটার আর ৫১৫ মিটার উঠতে হয়েছে। এখানে অনেক লোকজনের সঙ্গে আলাপ হল। এক ব্রিটিশ ছেলে পড়াশোনা শেষ করে বেড়াতে বেরিয়েছে। তিন মাস নানা দেশে ঘুরবে। তারপর চাকরি শুরু করবে। একটি নরওয়ের ছেলে একমনে বসে গল্পের বই পড়ছে আর নিজে নিজে হাসছে। এক অস্ট্রেলিয়ান ভদ্রলোক, পেশায় আর্কিটেক্ট, বললেন আমরা চেষ্টা করি ঘরগুলোতে উত্তরমুখী বড় বড় জানলা রাখতে। মনে হল, ঠিক তো, আমরা তো দক্ষিণখোলা ঘর ভালোবাসি, দক্ষিণ গোলার্ধে তো উল্টো হবার কথা! খাবার টেবিলের তলায় একটা ছোট পাত্রে জ্বলন্ত কয়লা, আর টেবিলে পাতা আছে একটা মস্ত কম্বল। কম্বলের তলায় পা ঢুকিয়ে সবাই মিলে খেতে বসবে আর ওই ধিকিধিকি আগুন হাত পা গরম রাখবে। আর সবাই বসে গল্প করবে, আলাপ জমাবে এর ওর সঙ্গে, নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলি ভর্তি করে নেবে।

এরপর আমরা নেপালের আপার মাসটাং জেলায় ঢুকতে যাচ্ছি। এই জায়গাকে পবিত্র ভূমি মনে করা হয়। এখানে অনেক কিছু বারণ, সেটা বড় বড় করে লেখা আছে। ভদ্রসভ্য পোশাক পরতে হবে। পাবলিক ডিসপ্লে অফ অ্যাফেকশন একদম চলবে না। কতকিছুই যে লেখার দরকার পড়ে!

এক ব্রিটিশ ছেলে পড়াশোনা শেষ করে বেড়াতে বেরিয়েছে। তিন মাস নানা দেশে ঘুরবে। তারপর চাকরি শুরু করবে। একটি নরওয়ের ছেলে একমনে বসে গল্পের বই পড়ছে আর নিজে নিজে হাসছে। এক অস্ট্রেলিয়ান ভদ্রলোক, পেশায় আর্কিটেক্ট, বললেন আমরা চেষ্টা করি ঘরগুলোতে উত্তরমুখী বড় বড় জানলা রাখতে। মনে হল, ঠিক তো, আমরা তো দক্ষিণখোলা ঘর ভালোবাসি, দক্ষিণ গোলার্ধে তো উল্টো হবার কথা!

নেপালে যদিও বেশিরভাগ লোক হিন্দু, অনেক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদেরও দেখা যায়। আপার মাসটাং জেলা তিব্বত সংলগ্ন এবং এখানে তিব্বতী প্রভাব দেখা যায়।

কালোপানির পরে টুকুচে। এগারো কিলোমিটার পথ, আর উচ্চতায় ২৫৯০ মিটার। এখানে আমরা অনেকটা উত্তরে চলে এসেছি। মালভূমির মতো ফ্ল্যাট রাস্তা, চড়াই উৎরাই নেই বললেই চলে। বড় গাছপালা বিশেষ দেখা যায় না, শুধু বড় বড় পাথর। টুকুচের কথা পড়েছি ফরাসি পর্বতারোহী মরিস হারজোগ (Maurice Herzog)-এর লেখা ‘অন্নপূর্ণা’ বইতে। ওঁরা প্রথম আট হাজার মিটারের বেশি উচ্চতার একটি শৃঙ্গ, অন্নপূর্ণা, জয় করেছিলেন। টুকুচে থেকে ওরা রওনা হয়েছিলেন। এই অভিযানে ওঁর এবং আরেকজন পর্বতারোহীর ফ্রস্টবাইট হয়ে গিয়েছিল। সেসময় প্রাণরক্ষা করতে তাদের হাতের ও পায়ের আঙুলগুলি বাদ দিতে হয়।

টুকুচের ছয় কিলোমিটার দূরে মারফা (২৬৭০ মিটার)। বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর গ্রাম। স্বল্প উচ্চতার দেওয়াল খেতগুলোকে আলাদা করে রেখেছে। পাথর বাঁধানো রাস্তা গ্রামের এক মাথা থেকে অন্য মাথায় চলে যায়। দু একটা চেরি গাছ ফুলে ঢাকা। দোকানে ইয়াকের দুধ/চর্বি থেকে তৈরি ছোট ছোট চৌকো চৌকো ছুরপি পাওয়া যায়, ইঁটের মতো শক্ত। চিবিয়ে চিবিয়ে দাঁত ব্যথা। ও নাকি চিবোতে নেই, মুখে রেখে দিতে হয়, ওতেই শরীর গরম হয়। একরকম চা পাওয়া যায়, মাখন দেওয়া, নোনতা স্যুপের মতো স্বাদ। মারফাতে অনেকটা সময় কাটল। যাত্রাপথ শেষ হয়ে আসছে, আমাদের পথচলার গতিও বেড়ে গেছে। এক এক সময় মনে হচ্ছিল এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে ভালোই হত।

Marpha village Nepal
টুকুচের ছয় কিলোমিটার দূরে মারফা

মারফা থেকে জোমসোম আরও ছয় কিলোমিটার পথ। ২৬৭০ থেকে ২৭২০ মিটার উঠে এলাম। গ্রাম নয়, শহর শহর ভাব। এখান থেকে লোকে যায় মুক্তিনাথ, কাগবেণি হয়ে। জোমসোমে সকাল সাড়ে নটা-দশটা থেকে হাওয়া দিতে শুরু করে, হাওয়ার ধাক্কায় বাইরে বেরোনো যায় না। আমরা একটা ভালো দেখতে রেস্তোরাঁয় বসলাম। এতদিন পর ‘ডাল-বাত’ ছাড়া অন্য কিছু খাবো। রেস্তোরাঁর দুর্দান্ত মেনুকার্ড দেখে কন্টিনেন্টাল খাবার অর্ডার দিলাম। ভুলে গেছি যে রান্নাটা নিজের মতো করে করবে একজন নেপালিই। ভালো লাগল না খেয়ে। ওই সামান্য ডাল ভাত শাক অমৃতের মত লেগে আছে মুখে।

আমাদের পকেট খালি হয়ে এসেছে। হিসেব করে দেখা গেল আর দুদিন দেওয়া অসম্ভব। মুক্তিনাথ আর যাওয়া হল না এ যাত্রা। অন্নপূর্ণার দক্ষিণ মুখ থেকে শুরু করে উত্তর মুখ অবধি এলাম, পুরো প্রদক্ষিণ করা হল না।

way to muktinath
মুক্তিনাথের পথে, ছবি কাকলি মজুমদার

জোমসোম থেকে রয়্যাল নেপাল এয়ারলাইনসের প্লেনে পোখারা ফিরব। এয়ারলাইন্সের অফিস একটা ছোট ঘরে, মাঝখানে রেলিং দেওয়া। রেলিং-এর একপাশে সুটকেস হাতে এক ভদ্রলোক আর অন্যপাশে ভাবী যাত্রীকুল। সুটকেসটাই অফিস। এয়ারলাইন্সের ছোট্ট তেরো সিটার প্লেন। দিনে তিনটে ফ্লাইট। প্রথম দুটো সাধারণ যাত্রীদের জন্য, যারা বেশিরভাগই পর্যটক। তৃতীয় উড়ানে ছাগল সুদ্ধু উঠে যায়। বেলা বেড়ে গেলে ওই প্রচণ্ড হাওয়ায় প্লেন চালানো সম্ভব নয়। গাদাখানেক লোক টিকিট কাটতে চায়। ভদ্রলোক কাউকে নিরাশ করছেন না। সবাইকে বলছেন, “দাঁড়াও, দেখছি।” এক বুড়ি ভেউ ভেউ করে কাঁদছে, তার দলের লোকজন তাকে ফেলে চলে গেছে, তার পয়সাকড়ি নেই। ভদ্রলোক বললেন, “চিন্তা করবেন না টিকিটের ব্যবস্থা হবে। ডরিয়ে মৎ মাইজি, ম্যয় হুঁ না!” আমাদের বললেন, “পরদিন ভোরে চলে আসুন এয়ারপোর্টে, যদি কেউ ক্যানসেল করে, আপনারা তার জায়গায় চলে যাবেন।“ “আর যদি কেউ ক্যানসেল না করে, তবে?” এই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর পাওয়া গেল না!

পরদিন ভোরে, অন্ধকার কাটেনি, ব্যাগ নিয়ে আমরা হাজির। এক কোণে দাঁড়িয়ে আছি, যেতে পারব কিনা জানি না। হঠাৎ সেই ভদ্রলোক এলেন, বললেন দুটো টিকিট ক্যানসেলড হয়েছে, আপনারা টিকিট কাটতে পারেন। টিকিট কেটে সিকিউরিটি চেক করে বসলাম তিনদিকে জানলা দেওয়া একটা ঘরে। সিকিউরিটি চেক মানে সরু প্যাসেজ দিয়ে একটা ঘর থেকে প্রতীক্ষালয়ে যেতে হবে, সহাস্যমুখে চেকার ‘আইয়ে আইয়ে’ বলে ঢুকিয়ে দিল। জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি, অন্ধকার তরল হয়ে আসছে। লাল সূর্যের যখন দেখা পেলাম, ততক্ষণে আকাশ ফর্সা। ছোট্ট একটা প্লেন অটোরিকশার মতো গুড়গুড় করতে করতে রানওয়েতে নামল। বলা উচিৎ উঠল, কারণ পাহাড়ের ফাঁক দিয়ে নীচে থেকে উপরে উঠল। সেই ভোরের ফ্লাইটে যে পথ ধরে এসেছিলাম, সেই পথ দেখতে দেখতে আকাশপথে ফিরে এলাম পোখারা।

এই আমার প্রথম ও শেষ ট্রেক। বুঝলাম যে মাঠের মাঝখানে চট দিয়ে তৈরি দেওয়াল-ঘেরা বাথরুম ব্যবহার করা আমার কর্ম নয়। পকেটে রাখা আয়োডিনের শিশি থেকে কয়েক ফোঁটা আয়োডিন পড়ে পকেট ফুটো করে দিয়েছে। রোজ সকালে শরীরে অস্বস্তি, গা গোলানো দেখে ঘোড়েপানিতে গিয়ে ডাক্তার দেখিয়েছিলাম, জেনেছি আমি অন্তঃসত্ত্বা। ওই হাঁটা আমার শরীরের পক্ষে খুব উপকারী ছিল। মনের আনন্দে টুপিতে রডোডেনড্রন ফুল লাগিয়ে হাঁটছি, নেপালি এক বৃদ্ধা একগাল হাসলেন সেই দেখে। এক সময় কষ্ট হচ্ছিল হাঁটতে; সহযাত্রী এক পক্বকেশ জার্মান ভদ্রলোক আর তাঁর স্ত্রী তাদের ফ্লাস্ক থেকে চা আর জিঞ্জার বিস্কিট দিয়েছেন। বছর কয়েক আগে দুই জার্মানি এক হয়ে গেছে, তাঁদের আনন্দে আমিও সামিল হলাম।

জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি, অন্ধকার তরল হয়ে আসছে। লাল সূর্যের যখন দেখা পেলাম, ততক্ষণে আকাশ ফর্সা। ছোট্ট একটা প্লেন অটোরিকশার মতো গুড়গুড় করতে করতে রানওয়েতে নামল। বলা উচিৎ উঠল, কারণ পাহাড়ের ফাঁক দিয়ে নীচে থেকে উপরে উঠল। সেই ভোরের ফ্লাইটে যে পথ ধরে এসেছিলাম, সেই পথ দেখতে দেখতে আকাশপথে ফিরে এলাম পোখারা।

হিমালয় তার পূর্ণ সৌন্দর্য চোখের সামনে মেলে দিয়েছে। পাহাড়ের পর পাহাড়, কোথাও সূর্যস্নাত, কোথাও ছায়াময়, কোথাও ছোট ঝরনার কুলকুল, কোথাও পাহাড়ি নদীর গর্জন, কোথাও পাইনের জঙ্গলের অদ্ভুত এক ঘ্রাণ, কোথাও বা রোদে পোড়া রুক্ষ পাথুরে রাস্তা। যাত্রাপথের সৌন্দর্য অবর্ণনীয়। এখানে গিয়ে মানুষের সহৃদয়তা আমার উপরি পাওয়া। শুনেছি এই যাত্রাপথ এখন গাড়িতে করে লোকে যায়, সেই পথে উলেরির অসীম পরিশ্রম লাগে না, পুনহিলের সূর্যোদয় প্রত্যক্ষ করার সৌভাগ্য হয় না, বেশি সময়ও লাগে না। তাই ওই পথে আর যাবার ইচ্ছে নেই। ইচ্ছে নেই পোড়া ডিজেলের গন্ধ নাকে আসুক। অন্নপূর্ণা তার অপার সৌন্দর্য নিয়ে আমার মনে অম্লান থাকুক।

ওই সময় একটি পুরোনো ক্যামেরায় সাদাকালো ফিল্মে কিছু ছবি তোলা হয়েছিল, সে সব ছবিতে আমি বা পার্থ বা আমরা দুজনেই আছি। আমাদের যাত্রাপথের সৌন্দর্যে আমরা এতই বিমোহিত ছিলাম যে ছবি তোলার কথা মনে পড়েনি। শরণাপন্ন হলাম আমার পিসতুতো বোনের ও খুড়তুতো দাদার। ওরা ২০২২-এর অক্টোবর মাসে এই পথ দিয়ে গেছেন। ওরা রাজি না হলে লেখার সঙ্গে কোনও ছবি থাকতো না। কিছু ছবি ওদের তোলা, কিছু Internet ঘেঁটে পাওয়া।

ছবি সৌজন্য: কাকলি মজুমদার, Trekkingpartners, Flickr

বিশাখা ঘোষ পেশাগত বাঁধনে বাঁধা অর্থনীতির সঙ্গে। কিন্তু মন চায় ঘুরে ঘুরে বেড়াতে, আর অজানা পৃথিবীকে চিনতে। তাতে নিজেকেও তো চেনা হয়। আপনাকে জানাতে তাঁর ভারী কৌতূহল। ছাত্রাবস্থা কেটেছে প্রেসিডেন্সি কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঁটাকল ক্যাম্পাস আর আইএসআই-তে। এখন কল্যাণী বিশ্ববিদ্য়ালয়ে অধ্যাপনা করেন। ভালোবাসেন আড্ডা মারতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *