যখন জন্ম হল

নড়ে ওঠে দেহগুলি অমলিন চৈত্রের রোদে
সুবিশাল মধ্যাহ্নের রোদেলা উদর ফুলে ওঠে
রৌদ্রের শিখাগুলি বস্তুত আঘাত করে বোধে
চৈত্রের হলুদ আভা নশ্বর দেহ মনে ফোটে।

ডুবন্ত এটলান্টিস, প্রায় বিস্মৃত মহেঞ্জোদারো
রূপকের আশ্রয় পেয়ে হয়ে ওঠে অধিক প্রগাঢ়
চৈতন্যে ছায়া ফেলে হরপ্পার ধ্বংসাবশেষ
অচৈতন্য পড়ে থাকে সভ্যতার ভগ্ন অবশেষ।

সুদীর্ঘ পথ হেঁটে পৌছাবে যে ক্ষয়প্রাপ্ত কালে
পত্তন হয়েছিল কবে? পতন ঘটলো কোন সালে?
পুরাতত্ত্ব ঘেঁটে ঘুঁটে নির্ণয় করে পুরাবিদ
সভ্যতার স্মৃতিফলকে নড়ে ওঠে চেতনার ভিত।

শস্যহীন প্রান্তর পড়ে থাকে দিকচিহ্নহীন
মনে পড়ে বুত্‍পত্তি তোমার প্রথম জন্মদিন।

নোটবুক

ক্রমশঃ মৃত্যুর হাত প্রলম্বিত নৈঃশব্দ্যকে ছুঁয়ে অক্টোপাসের মতো
তার কর্ষিকা বিস্তৃত করে দিল ক্রমশঃ স্খলন ঘটছে নিবিড়
বন্ধনগ্রন্থিতে সারি সারি মৃতদেহ ভেসে যাচ্ছে গঙ্গার যমুনার
নদীপথ দিয়ে। কখনও মনে পড়ছে তোমার নিকটে কোন বন্ধুর
মুখ স্বজন হারানোর কান্না বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ছে দেহে কখনও
বর্ষণসিক্ত রাতের শেষেও আকাশে ফুটে থাকছে ক্ষীণ চন্দ্রিমা
ক্ষীণতর অভিব্যক্তিতে ফুটে আছে লুব্ধক তারা। যেদিকেই যাই
সেই মৃত্যুর প্রবল গর্জন রাস্তায় মুখ থুবড়ে অচৈতন্য পড়ে আছে
গৃহহারা নাগরিকের নিঃসঙ্গ পরিত্যক্ত ভালবাসা — ক্রমশঃ
সমুদ্র থেকে আরও কত লাশ যাদের হত্যা করে
ভাসিয়ে দিয়েছে কারা সাগরের লবণাক্ত নীরে। যেন জীবন
বিপন্ন করে ইতিহাসের অবলুপ্তি ঘোষণা করছে হাওড়া স্টেশনের
বিখ্যাত ঘড়ি যেন ট্রেন চলাচল বন্ধ বলে রেলপথ ধরে ধরে
ছুটে চলেছে নিখাদ শূন্যতা। শহরের রাজপথে প্রলম্বিত প্রজ্বলিত
একই নিঃসঙ্গ বিষণ্ণতা ক্রমশঃ অরাজক দিন রূপান্তরিত হয়ে
চলেছে শাণিত নিষ্ঠুর রাত্রিতে এইসব দেখতে দেখতে পদব্রজে
ঘুরে ঘুরে শেষতঃ পৌঁছেছি ময়দানে কলকাতা ময়দান
নিরাভরণ পড়ে আছে নিঃসঙ্গ অলঙ্কারহীন।

নিদাঘের নিষ্ঠুর রোদে ঝলসাচ্ছে ঘাসজমি ঝলসাচ্ছে পিচের
রাস্তাঘাট যেন অ্যাসফল্টে নিদারুণ অভিমানে চিকচিক করছে
মৃত্যুর রূপসী নির্জনতা। এই বুঝি শেষ বাস পকেট থেকে
টিকিটের মূল্য মিটিয়ে দিয়ে জানলার ধারে বসে গরম বাতাসের
ঝাপটায় পর্যুদস্ত আলোড়িত হয়ে দেখতে পাচ্ছি শহরের ফাঁকা
ফাঁকা রাস্তাগুলো বিষাদে ভরপুর হয়ে আছে যেন আঙুলের
ফাঁকে বাসের টিকিট গুঁজে চড়েছি যাত্রিশূন্য বাসে যেন ফাঁকা
রাস্তাঘাট দিয়ে চলেছে মৃত্যুর যান অশরীরি শহরের বিন্যাসে।  

ছবি সৌজন্য: Pxhere

সৌগত চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৬১ সালে কলকাতায়। কলকাতা বিশ্ববিধ্যলয়ের ইতিহাসের সাম্মানিক স্নাতক। কবিতা ও সাহিত্য ছাড়াও তাঁর প্রধান আকর্ষণ সঙ্গীত। রয়াল স্কুল অফ মিউজিক, লণ্ডন থেকে বেহালাবাদক হিসেবে গ্রেড ৫, ৬ ও ৭ পাস করেছেন। সাংবাদিকতার সূত্রে অমৃতবাজার পত্রিকার লেখক ছিলেন। তপন সিংহ-এর অন্তর্ধান ছবিতে সহকারি পরিচালক হিসাবে কাজ করেন। নৃপেন গঙ্গোপাধ্যায় পরিচালিত অনিল চট্টোপাধ্যায় বিষয়ক তথ্যচিত্রেও সহকারি হিসাবে কাজ করেন। পরবর্তীকালে একটি স্কুলে কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। বর্তমানে চাকুরীজীবি। নিয়মিত লেখালেখি করেন বেশ কিছু প্রথম সারির বাংলা পত্রিকায়। সৌগত চট্টোপাধ্যায় প্রয়াত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পুত্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *