উজ্জ্বল রোদের ওম মাখা এক মিঠে শীতের সকাল। আমরা হাজির উট্রাম ঘাটে, পালতোলা ডিঙিনৌকো ‘মণিমেখলা’র লঙ্কাযাত্রার সাক্ষী হতে। নৌকোর প্রধান কাণ্ডারি সাংবাদিক জ্যোতির্ময় দত্ত। দুই সহকারী আজ়িজ়-মায়া। তিন নাবিকই অনভিজ্ঞ। যাত্রার মুহূর্তে গীতাদি (ঘটক) গান দিয়ে শুভসূচনা করলেন। শাঁখে ফুঁ দিয়ে সমবেত জয়ধ্বনির মধ্যে ‘মণিমেখলা’ পাল তুলে ভেসে গেল সাগরপানে। 

এরকম হুজুগে কাণ্ডকারখানা নিয়ে আমার স্বামী শংকর ঘোষের কোনও আগ্রহ ছিল না এমনিতে। কিন্তু এবারের ব্যাপারটা  ছিল একটু অন্যরকম! সহকর্মী জ্যোতির্ময় দত্তর এই অভিযানে প্রত্যক্ষ মত ছিল অমৃতবাজার পত্রিকার। কাজেই যুগ্ম-সম্পাদক ঘোষ মশাইকে সেদিনের অনুষ্ঠানে যেতেই হয়েছিল আজ এত বছর বাদেও সেদিনের সেই দৃশ্যটি আমার চোখের সামনে ভাসে। পত্রিকার আর এক মাথা প্রতাপকুমার রায় আর শংকর ঘোষ মুখ গম্ভীর করে একপাশে দাঁড়িয়ে প্রতাপ রায় নিজেও পরে জানান, যে এই অভিযানের অন্যতম প্ররোচক তিনি স্বয়ং হলেও যাত্রার দিনে অনভিজ্ঞ তিন প্রাণিকে অকূল পাথারে ভাসিয়ে দেবার প্রাক্কালে বিপদের আশঙ্কায় তাঁরও বুক কেঁপে উঠেছিল। আর শংকরের মনে তো প্রথম থেকেই এই অদ্ভুত অবাস্তব সমুদ্রযাত্রা ও জ্যোতির্ময়দের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর সংশয় ছিল।




যাত্রা শুরু হবার পরে কতদিনে তাঁদের খবর মিলবে তারও কোনও ঠিক ছিল না। তটভূমিতে না পৌঁছলে সাধারণ ডাক-তারের সাহায্য ছাড়া খবর পাঠানো ওঁদের পক্ষে সম্ভব হবে না
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে ওঁরা বিপদে পড়লে সে খবরও কলকাতাতে পৌঁছবে না, এই সব নানা দুর্ভাবনায় প্রতাপ রায় এবং শংকর সেদিন একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। জ্যোতির্ময়ের স্ত্রী মীনাক্ষী, আমাদের সদা হাস্যময়ী মিমিদি সেদিন চোখে জল, মুখে হাসি নিয়ে স্বামীকে বিদায় দিয়েছিলেন।

Jyotirmoy Dutta handwriting
লেখককে উপহার দেওয়া বইতে জ্যোতির্ময়ের স্বাক্ষর

গত শতকের সাতের দশকে জরুরি অবস্থায় জ্যোতির্ময় যখন কারাগারে বন্দি, তখনই তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন, একদিন পালতোলা ডিঙিনৌকো চালিয়ে সমুদ্রপথে শ্রীলঙ্কায় পৌঁছবেন। মুক্তি পাওয়ার পর নানা কর্মকাণ্ডের মধ্যেও সে স্বপ্ন ভোলেননি। ১৯৭৭ সালের মাঝামাঝি কাকদ্বীপের খালধারে খোঁজ পেলেন এক অর্ধসমাপ্ত নৌকোর। দু’হাজার টাকায় কিনেও ফেললেন। শুরু হল সেগুন ও শালকাঠ দিয়ে তাকে গড়েপিটে সাগরযাত্রার উপযোগী করে তোলার কাজ। বইপত্র ঘেঁটে নৌকোর একটি নকশাও তৈরি করে ফেললেন জ্যোতির্ময়। সিংহলি পুরাণকথার সমুদ্রদেবীর নামে নৌকোর নাম রাখলেন ‘মণিমেখলা’।




নতুন করে নৌকো গড়তে সময় লেগেছিল দু’মাস।
এ কাজে মুখ্য কারিগরদের সহায়তায় জ্যোতির্ময়ের দুই সহযোগী মায়া ও আজ়িজ়ও হাতুড়ি-বাটালি হাতে তুলে নিয়েছিলেন। জ্যোতির্ময় নিজেও তদারকি করেছেন  রাত জেগে। তাঁর দুই সহযাত্রী, যাঁদের জ্যোতির্ময় নিজেই নির্বাচন করেছিলেন, সমুদ্রযাত্রা তো দূরের কথা, কখনও নৌকো পর্যন্ত চালাননি। আকাশের তারা দেখে কী করে দিক চেনা যায় বা পথনির্দেশ পাওয়া যায়, সে সম্বন্ধেও কোনও ধারণা ছিল না। অবশেষে নৌকো চালানোর প্রশিক্ষণের জন্য এক নাবিকের খোঁজ পাওয়া গেল, যিনি এক সময়ে জাহাজের ক্যাপ্টেন ছিলেন। তিনিই হলেন জ্যোতিদের পরামর্শদাতা। অভিযানের তিনদিন আগে সেই ক্যাপ্টেনের প্রশিক্ষণে মায়া-আজ়িজ় এবং জ্যোতির্ময় নৌচালনা সম্বন্ধে  কিছুটা জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। 

Jyotirmoy Dutta Minakshi Dutta
তরুণ দম্পতি জ্যোতি- মীনাক্ষি

ইতিমধ্যে নৌযাত্রার পরিকল্পনার কথা জ্যোতির্ময় জানিয়েছিলেন তাঁর তদানীন্তন কর্মস্থল অমৃতবাজার পত্রিকা দফতরে। বলেছিলেন, তারা সাহায্য করলে একটা দারুণ রোমাঞ্চকর অভিযান হতে পারে। আপাতদৃষ্টিতে অবাস্তব বলে মনে হলেও সংবাদপত্র বলেই বোধহয়, অমৃতবাজার-যুগান্তর কর্তৃপক্ষ রাজি হয়ে যান অভিযানের পৃষ্ঠপোষক হতে। বাজেট বরাদ্দ হল কুড়ি হাজার টাকা। উৎসাহের  প্রাবল্যে অনেক খুঁটিনাটি অথচ জরুরি জিনিসের কথা জ্যোতির খেয়াল থাকল না। তখনও একটা কম্পাস কেনা হয়নি। সঙ্গে একটা রেডিও রাখার প্রয়োজন, সে কথাও মাথায় আসেনি। শেষ মূহুর্তে তড়িঘড়ি সে সব সংগ্রহ হল।




জ্যোতির্ময়ের কাছে পরে শুনেছি, তাঁর নৌ-অভিযান নিঃসন্দেহে যথেষ্ট বিপদসঙ্কুল এবং রোমাঞ্চকর হয়েছিল। যাত্রার প্রায় শুরুতেই ‘মণিমেখলা’র খোলে ৩০-৪০ বালতি জল! পাছে কারও চোখে পড়ে, তাই আড়াল করে হ্যাচে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন জ্যোতি। সাগরপথেও কত অভিজ্ঞতা! মাঝপথে একদিন ধাওয়া করেছে ‘ছাই-কোনি রঙের এক পাল হাঙর’। আবার একদিন চোখে পড়ল দু’শো মিটার দূরে সমুদ্রের মধ্যে এক বিশালকায় তিমি। যে কোনও মূহুর্তে এক ঢুঁয়ে উলটে দিতে পারত ডিঙি। কিন্তু কোনও অজ্ঞাত কারণে সে তা না করে শুধু খেলা করে গেল নিজের মনে। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। প্রকৃতির কাছে হার মানতেই হল তিন দামাল নাবিককে। শ্রীলঙ্কা পর্যন্ত যাওয়া হল না। 

প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ভাইজ়াগ পার হবার পর জ্যোতির নৌকো তীরে উঠে যায়। ‘মণিমেখলা’ নাকি খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ঝড়ে। টেলিফোনে সে খবর এলে কলকাতার দফতরে সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস  ফেললেন। দু’মাস বাদে ‘মণিমেখলা’ ফের চালু করে তিন অকুতোভয় নাবিক প্রাণে বেঁচে অক্ষত শরীরে ফিরে এসেছিলেন। প্রিন্সেপ ঘাটে পন্টুন জেটি জনতার চাপে ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছিল সেদিন হাসিমুখে স্বাগত জানাতে ঘাটে উপস্থিত ছিলেন সস্ত্রীক প্রতাপ রায়, শংকর ঘোষ, অমিতাভ চৌধুরীরা। অভিযানের ব্যর্থতা সত্ত্বেও জ্যোতির্ময় দেশে ফিরেছিলেন এক পরাজিত বীরের গৌরব নিয়ে।   

মাঝপথে একদিন ধাওয়া করেছে ‘ছাই-কোনি রঙের এক পাল হাঙর’। আবার একদিন চোখে পড়ল দু’শো মিটার দূরে সমুদ্রের মধ্যে এক বিশালকায় তিমি।

চাক্ষুষ পরিচিত হবার আগেই আমি জ্যোতির্ময়ের গুণমুগ্ধ হয়েছিলাম তাঁর নানাবিধ কর্মকাণ্ডের কাহিনি    পড়ে এবং আমার স্বামী শংকর ঘোষের মুখে ওঁর কথা শুনে! যুগান্তরে ওঁর বাংলা কলাম ‘কোমল ক্যাকটাস’  এবং ইংরেজিতে অমৃতবাজার পত্রিকায় ‘প্রিকলি পিয়ার্স’-এর তখন আমি নিয়মিত পাঠক। ইংরেজি, বাংলা- দুই ভাষাতে রিপোর্টিং থেকে প্রবন্ধ লেখা, সংবাদ খুঁজে বের করার এক সহজাত অসাধারণ ক্ষমতা ও অনুসন্ধিৎসা, অনন্যপন্থী সাংবাদিকতা- এই প্রতিটি ক্ষেত্রে শংকর বন্ধু ও অনুজ জ্যোতির্ময়ের গুণগ্রাহী ছিলেন। সুপ্ত স্নেহ প্রকাশ পেত যখন তিনি আমার কাছে জ্যোতির্ময়ের কাজের গল্প করতেন। তবে ওঁর খামখেয়ালিপনার কারণে কখনও কখনও শংকরকে বেশ বিপদে পড়তে হয়েছে।

Jyotirmoy Dutta
কন্যা কঙ্কাবতীর বাড়ির (তিতির) চা-আড্ডায় (বাঁদিক থেকে) সস্ত্রীক জ্যোতির্ময়, লেখক ও ফ্যাশন ডিজ়াইনার শর্বরী দত্ত

অমৃতবাজার পত্রিকার সম্পাদকীয় কলামেও জ্যোতি লিখতেন মাঝে মাঝে একবার হল কী, যেদিন এবং যে সময়ের মধ্যে লেখা জমা দেবার কথা, সেদিন অফিসে জ্যোতির্ময় সারাদিন বেপাত্তা। তখন মোবাইল ফোন ছিল না। না ছিল ইন্টারনেট। শেষমেষ শংকর নিজে লিখে অবস্থা সামাল দিলেন।  

অমৃতবাজার পত্রিকার প্রতাপকুমার রায় ছিলেন আমাদের প্রতিবেশী। বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের একদিকে আমাদের সপ্তপর্ণী আবাসন। আর তার ঠিক উল্টোদিকে কেশব বসুর বাড়ির দোতলায় থাকতেন প্রতাপবাবুরা। প্রায়ই সে বাড়িতে আমাদের দু’জনের নৈশভোজের আমন্ত্রণ থাকত। এ রকমই এক নৈশভোজের আসরে জ্যোতির্ময়ের সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাৎ। কবি বুদ্ধদেব বসুর জ্যেষ্ঠাকন্যা তথা জ্যোতির স্ত্রী মীনাক্ষীদি, যিনি মিমিদি নামেই অধিক পরিচিত- তাঁর সঙ্গে আমার বন্ধুতা কিন্তু অনেক আগে থেকেই, যখন থেকে তিনি সাউথ পয়েন্ট স্কুলে আমার সহকর্মী হয়ে যোগ দেন। এই মূহুর্তে আমার সামনে খোলা রয়েছে ‘আমার নাই বা হল পারে যাওয়া’ গ্রন্থের প্রথম খণ্ড, যার প্রথম পাতায় রয়েছে জ্যোতিদার স্বাক্ষর-সহ স্নেহবার্তা- “আলপনাকে- সস্নেহে, একা-একা কলকাতার রাস্তায় গাড়ি-চালানোর দুঃসাহসের জন্য সেলাম-সহ/ জ্যোতিদা।”  

Jyotirmoy Dutta
একটি গ্রন্থপ্রকাশ অনুষ্ঠানে লেখকের সঙ্গে মীনাক্ষী ও জ্যোতির্ময় দত্ত

সত্যি কথা বলতে কি, জ্যোতির্ময় দত্তের মতো একজন বর্ণময় চরিত্র সম্বন্ধে লিখতে গেলে ফুরবে না সে গল্প। কী না করেছেন তিনি জীবনভর! প্রেসিডেন্সি কলেজের উজ্জ্বল ছাত্র। কর্মজীবন শুরু করেছিলেন কলকাতার ক্লাইভ স্ট্রিটে আপার ডিভিশন ক্লার্কের পদে। পরে কলকাতার সেরা সব কাগজে দাপিয়ে সাংবাদিকতা করেছেন। আমেরিকা গিয়ে রেস্তোরাঁয় পিৎজা বানিয়েছেন, শিকাগো এবং আইওয়াতে তিনি আবার গবেষক-অধ্যাপক। তার ওপর কবি, চিত্রকর এবং ভাস্কর। জল,স্থল, নভঃ — তিনি সর্বত্রগামী। ঘোড়দৌড় নিয়ে লিখতে গিয়ে শিখে ফেললেন অশ্ব-চালনা। শখ করে শিখলেন গ্লাইডিং। 

সুপ্ত স্নেহ প্রকাশ পেত যখন শংকর আমার কাছে জ্যোতির্ময়ের কাজের গল্প করতেন। তবে ওঁর খামখেয়ালিপনার কারণে কখনও কখনও শংকরকে বেশ বিপদে পড়তে হয়েছে।

একবার জ্যোতির্ময়ের মাথায় খানিকটা গান্ধীবাদের শখ চাপল শুরু হল নিরামিষ খাওয়া আর কলকাতার রাস্তায় খালি পায়ে চলা। ট্রামে পর্যন্ত উঠতেন না। দূরত্ব বেশি হলে সেকেন্ড ক্লাসে চড়তেন। অধুনালুপ্ত হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ডে যখন কাজে যোগ দিলেন, তখনও অফিস যেতেন খালি পায়ে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শর্ত ছিল, কাজের প্রয়োজনে যে কোনও জায়গায় তিনি যাবেন, কিন্তু জুতোটি যেন পরতে না হয়। অফিসে সহকর্মীরা এ নিয়ে বিদ্রূপ করেছেন। একদিন তো দফতরে ঢোকার সময় কানে এল বরুণ সেনগুপ্তর মন্তব্য, “এই যে খালিপদ এলেন।” কিন্তু জ্যোতির্ময়ের তাতে ভ্রূক্ষেপ নেই। 




তেরো দিনের বাংলাদেশ যুদ্ধে জয়ী হলেন ইন্দিরা গান্ধী
তাঁকে নিয়ে কভারস্টোরি হবে। প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সাক্ষাৎকার নিতে আনন্দবাজার-হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড নির্বাচন করলেন জ্যোতির্ময়কে। কিন্তু সমস্যা তো ওঁর ‘পা’ নিয়ে। সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে খানিকটা ছাড় মিললেও প্রধানমন্ত্রীর দফতরে প্রবেশের জন্য তো পোশাকবিধি মানতে হবে। জ্যোতির ‘খালিপদ’ নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতর আপত্তি তুললেন। অনেক বাদানুবাদের পরে কর্তৃপক্ষের মধ্যস্থতায় স্থির হল “জুতো পরতে হবে না, শয়নকক্ষে ব্যবহার্য একজোড়া কার্পেট স্লিপার কয়েক মিনিট ধারণ করলেই চলবে…।” এসবই জ্যোতির্ময় ‘আমার নাই বা হল পারে যাওয়া’ বইতে লিখেছেন।  

Jyotirmoy Dutta Autobiography
জ্যোতির্ময় দত্তের আত্মকথনমূলক গ্রন্থ – ‘আমার নাই বা হল পারে যাওয়া’

সাল ১৯৭৭। সে বার কিংবদন্তী ফুটবল খেলোয়াড় পেলে প্রথমবার আসছেন একদিনের কলকাতা সফরেউপলক্ষ, মোহনবাগানের প্রদর্শনী ম্যাচ। তিনি নিজেও মাঠে নামবেন কসমসের হয়ে খেলতে। সারা শহর জুড়ে পেলেকে নিয়ে প্রবল উন্মাদনা। পেলে জাপান থেকে কলকাতা আসবেন ব্যাঙ্কক হয়ে। কলকাতার সব কাগজকে টেক্কা দিতে অমৃতবাজার কোমর বেঁধে লেগে পড়ল। শংকর এই কাজের জন্য জ্যোতির্ময়কেই বেছে নিলেন। ঠিক হল তিনি ব্যাঙ্কক যাবেন এবং ওই একই বিমানে কলকাতায় ফিরবেন, যাতে বিমানেই পেলের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান। 




কলকাতায় পেলে থাকবেন গ্র্যান্ড হোটেলে। তারই কাছাকাছি একটি ঘরে জ্যোতির্ময় থাকবেন, সে ব্যবস্থাও হয়ে  গেল। সব আয়োজনই হল গোপনে, অতি সন্তর্পণে, যাতে অন্য কোনও কাগজের দফতর আঁচটি পর্যন্ত না পায়! কিন্তু বিমানে জ্যোতির্ময় পেলের সঙ্গে দু’একটি কথা বলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেন, কারণ ততদিনে পেলে সাংবাদিকদের বিফল মনোরথ করায় সিদ্ধহস্ত। এসব সত্ত্বেও জ্যোতির্ময় পেলের সফরসঙ্গী হিসাবে ইংরেজি ও বাংলাতে এমন দু’খানি দুর্দান্ত কপি লিখে ফেললেন যে পরের দিন কাগজ নিয়ে দারুণ হইচই এবং প্রতিদ্বন্দী কাগজে বিষাদ! 

এ রকমই হাজারটা কর্মকাণ্ড নিয়ে ভরপুর থেকেছে জ্যোতির্ময়ের সারাটি জীবন! ৮৪ বছর বয়সে  জীবন-আঙিনায় আজও সদর্পে ব্যাট চালিয়ে যাচ্ছেন মনেপ্রাণে নবীন এই যুবক, অগণিত স্নেহাস্পদের  জ্যোতিদা! শরীর ভেঙেছে, ক্ষীণ হয়ে এসেছে চোখের দৃষ্টি! কিন্তু জীবনীশক্তি রয়েছে অটুট, অনির্বাণ!

  

* উল্লিখিত বহু ঘটনাই লেখকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। জ্যোতির্ময় দত্তের লেখা ‘আমার নাই বা হল পারে যাওয়া’ বই থেকে সমর্থিত ও উদ্ধৃত। 

পেশা শুরু হয়েছিল সাংবাদিকতা দিয়ে। পরে নামী ইস্কুলের বাচ্চাদের দিদিমণি। কিন্তু লেখা চলল। তার সঙ্গে রাঁধা আর গাড়ি চালানো, এ দুটোই আমার ভালবাসা। প্রথম ভালবাসার ফসল তিনটি ব‌ই। নানা রাজ্যের অন্নব্যঞ্জন, মছলিশ আর ভোজনবিলাসে কলকাতা।

7 Responses

  1. যতদূর জানি মরিচঝাঁাপিতে মারাত্মক সাহস দেখিয়ে মাঝরাতে সর্বাঙ্গে কাদা মেখে পুলিশের চোখ এড়িয়ে সাঁতরে নদী পার হয়েছিলেন। খুব সম্ভব Statesman-এ একটা গুরুত্বপূর্ণ লেখা বেরিয়েছিল। পাই নি এখনও। কিন্তু যুগান্তরের লেখা দুটো পড়েছি। বিখ্যাত সাংবাদিক। তবে আমার একটু দুঃখের কারণ তিনি। বহু কষ্টে বুদ্ধদেব বসুর সমর্পন কবিতাটি অনুবাদ করে ওনাকে পাঠিয়েছিলাম। জবাবই দিলেন না। অবশ্য কোনও দুঃখই দীর্গস্থায়ী হয় না। তাই ওনারে ভুলে গেলাম। তোমার চমৎকার লেখাটা পড়ে মনে পড়ল ওনার কথা।

  2. যতদূর জানি মরিচঝাঁপিতে মারাত্মক সাহস দেখিয়ে মাঝরাতে সর্বাঙ্গে কাদা মেখে পুলিশের চোখ এড়িয়ে সাঁতরে নদী পার হয়েছিলেন। খুব সম্ভব Statesman-এ একটা গুরুত্বপূর্ণ লেখা বেরিয়েছিল। পাই নি এখনও। কিন্তু যুগান্তরের লেখা দুটো পড়েছি। বিখ্যাত সাংবাদিক। তবে আমার একটু দুঃখের কারণ তিনি। বহু কষ্টে বুদ্ধদেব বসুর সমর্পন কবিতাটি অনুবাদ করে ওনাকে পাঠিয়েছিলাম। জবাবই দিলেন না। অবশ্য কোনও দুঃখই দীর্গস্থায়ী হয় না। তাই ওনাকে ভুলে গেলাম। তোমার চমৎকার লেখাটা পড়ে মনে পড়ল ওনার কথা। ১৯-এর ঘরের নামতার মত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *