সুরেশ:- ঠিক। তার কারণ সোসাইটিতে একেকজনকে নিয়ে পারসেপশন একেকরকম। তোকে আমার কথা বলি? ভিকি, তুই কপাল, অভিশাপ এসব নিয়ে একটু আগে কথা বলছিলি বলে আমার কথা তোকে বলছি। মানুষের সবথেকে বড় অভিশাপ কী জানিস? তা হল, সে যদি কমবয়স থেকে জেনে যায় সে আর পাঁচজনের থেকে ডিফারেন্ট। অন্যরকম। না না, আমি ভাল–মন্দ, মহৎ-নীচ এইধরনের কোনও গুণবাচক প্যারামিটারের কথা বলছি না। আমার থেকে অনেক বেশি ভাল, অনেক বেশি মহৎ, অনেক বেশি যোগ্য মানুষ আমি বেঁচে থাকতে জীবনে অনেক দেখেছি। আমি বলছি আলাদা, ডিফারেন্ট। তার অভিশাপ হচ্ছে শুধু এই কারণে তো বটেই, এমনকি অকারণেও তার পেছনে সোসাইটির একটা অংশ লেগে যায়, এমনকি ভালবেসেও তাকে তারা খুন করতে চলে আসতে পারে।
ভিকি:- ভালবেসে খুন করতে আসে? কি বলছেন? সুরেশভাই?
সুরেশ:- আসে, ভিকি আসে। এখন ধর্, এই যে ইন্দীবরজি বা ধর জাফর, আমি বিশ্বাস করি এদের তোর মতো সরল বা বাচ্চাদের মতো মন না হলেও, এরাও কিন্তু বরাবর আর পাঁচজনের থেকে ডিফারেন্ট। এখন, ওদের যদি আলাদা করে জিজ্ঞেস করিস, দেখবি ওরাও ওদের অভিজ্ঞতা থেকে বলবে, অকারণে কিছু লোকে জীবনে ওদের পেছনে লেগেছে। খ্যাতি পাওয়ার পর বলছি না। আগে থেকেই লেগেছে। প্রফেশনাল রাইভ্যালরি না থাকা সত্ত্বেও লেগেছে।
ভিকি:- সে তো কিছু মানুষের স্বভাব ওরকম থাকেই।
সুরেশ:- তারপরেও ইন্দীবরজি বা জাফর এরা টপে চলে গেল, কী করে? আমার থেকে কি ওরা সবসময় ভালো অভিনয় করে? আমি তা মনে করি না। কিন্তু ওরা যে অ্যাডভান্টেজটা পেল, তা হল ওদের চেহারা। আর আমি বেঁটেখাটো গুজ্জু। অল্প কালো, অল্প নাদুসনুদুস ভুঁড়ি, বেসিক্যালি ইনট্রোভার্ট। আমাদের তো ভিলেন, কমেডিয়ান বা ক্যারেকটার রোল করা ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু যা পার্ট করেছি, আমি তাতেই দর্শকদের বুঝিয়েছি, আবার বলি ভালমন্দ নয়, বুঝিয়েছি আমি আর পাঁচজনের থেকে ডিফারেন্ট। আলাদা। এদিকে কিছু মানুষ কমবয়স থেকে বন্দুক, ছুরি হাতে আমাকে খুঁজে যাচ্ছে। খুঁজেই যাচ্ছে। এখন, আমার যদি সাকিব খানের মতো নুইসেন্স ভ্যালু তৈরি করার ক্ষমতা থাকতো বা তোর মতো পাল্টা হাত চালানোর, তাহলে একরকম হত। কিন্তু তোর ভেতর যেমন একটা বাচ্চা ছেলে সবসময় বেঁচেছে, আমার ভেতরেও সবসময় একটা ভদ্রলোক টিঁকে থেকেছে। জন্তুদের সঙ্গে লড়ার সময়ও, ওই ভদ্রতাকে আমি পুরোপুরি বিসর্জন দিতে পারিনি। অনেকটা ছুঁড়ে ফেলেছি, কিন্তু পুরোপুরি পারিনি। তাহলে জীবনে আত্মরক্ষা তুমি কী করে করবে? আমাদের দেশে সবথেকে শর্টকার্ট বর্মের নাম ওই রাজনীতি। রাজনীতির জন্য যাঁরা জীবন পুরো উৎসর্গ করেন, তাঁদের কথা আলাদা। সে লোকও আমি জীবনে দেখেছি। আবার আমার অভিনেতা বন্ধু দিবাকর শেঠের মতো পলিটিশিয়ানও তো আছে, যারা ওই পাওয়ার গেমের সাপলুডোতে সারাক্ষণ বাঁচেন। এসবের মধ্যে তাই ঢুকে পড়তে পারলে সাময়িকভাবে হলেও ওই খুনেগুলোকে সদর দরজার বাইরে হঠাৎ করে আটকে দেওয়া যায়। তাদের থতমত খাইয়ে দেওয়া যায়। তারা তখন পাঁচিলের চারপাশে ঘোরে, ভাবে ‘কবে এ মাল লালবাত্তি আর পুলিশ প্রহরা থেকে বেরোবে। ততক্ষণ ছুরিতে শান দিয়ে যাই, বেরোলেই টুঁটির কাছে ভোজালি ধরব’।
সুন্দর….