রবীন্দ্রনাথ মৈত্রের কথায়: “বাংলা সাহি‍ত‍্যে ‘শনিবারের চিঠি’র আত্মপ্রকাশ একটি স্মরণীয় ঘটনা। প্রথমে সপ্তাহে সপ্তাহে, তাহার পর মাসের পর মাস এই ক্ষুৎপীড়িত বঙ্গদেশে ‘শনিবারের চিঠি’ রসের জোগান দিয়া আসিয়াছে।”
— প্রথম প্রকাশ

‘শনিবারের চিঠি’র জন্মের ইতিহাস যেমনই বিচিত্র, তেমনই বৈচিত্র্যপূর্ণ এই পত্রিকার দীর্ঘস্থায়িত্বের যাত্রাপথও। বাংলাদেশের সাহিত্য, সমাজ ও রাষ্ট্রকে ব‍্যঙ্গ করে প্রতি শনিবারে একটি চটি সাপ্তাহিকপত্র প্রকাশের প্রস্তাব করেছিলেন ‘প্রবাসী’ ও ‘মডার্ন রিভিউ’ পত্রিকার স্বনামধন্য সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের কনিষ্ঠ পুত্র অশোক চট্টোপাধ্যায়। প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়ে তৎকালীন প্রখ‍্যাত চিকিৎসক ডা. সুন্দরীমোহন দাসের কনিষ্ঠ পুত্র যোগানন্দ দাসের সম্পাদনায় ১৩৩১ বঙ্গাব্দের ১০ শ্রাবণ সাপ্তাহিক ‘শনিবারের চিঠি’ প্রথম আত্মপ্রকাশ করে। ডবল-ক্রাউন ষোলো পেজি আকারের মাত্র চব্বিশ পৃষ্ঠার কাগজ। প্রচ্ছদ করেছিলেন ‘কল্লোল’ সম্পাদক দীনেশরঞ্জন দাস। ছবিটি ছিল চাবুক প্রহাররত এক বীরপুরুষের মূর্তি, সবুজ কালিতে ছাপা।

Shonibar chithi

‘শনিবারের চিঠি’ মুদ্রিত হত প্রথম দিকে ‘প্রবাসী’ প্রেস থেকেই। প্রকাশকের ঠিকানা ছিল যোগানন্দ দাসের বাড়ির ঠিকানা। প্রতি সংখ‍্যার মূল্য এক আনা। বার্ষিক সডাক তিন টাকা। রঙ্গ-ব‍্যঙ্গ পরিপূর্ণ পত্রিকাটিতে সেই সময়ে যারা লেখক ছিলেন, তাঁরা কেউই স্বনামে লিখতেন না। অশোক চট্টোপাধ্যায়, শান্তা দেবী, যোগানন্দ দাস, মোহিতলাল মজুমদার, সজনীকান্ত দাস, হেমন্ত চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ কবি-অধ‍্যাপক-সাহিত‍্যিকরাই এসব ছদ্মনামে লিখতেন।

এছাড়াও লেখক তালিকায় ছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়, সুশীলকুমার দে, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, নীরদ চন্দ্র চৌধুরী, কালিদাস নাগ, সুবিমল রায়, পুলিনবিহারী দাস প্রমুখ স্বনামের সাহিত‍্যিকরাও।
সাপ্তাহিক ‘শনিবারের চিঠি’র অষ্টম সংখ্যায় ২৮ ভাদ্র ১৩৩১ সালে, প্রকাশিত হয় সজনীকান্ত দাসের প্রথম মুদ্রিত কবিতা— ‘ভাবকুমার প্রধান’।

Sajanikanta Das

যোগানন্দ দাসের সম্পাদনায় সাপ্তাহিক শনিবারের চিঠি প্রকাশিত হয় ১৩৩১ বঙ্গাব্দের ১০ শ্রাবণ। ১১ সংখ্যা ১৮ আশ্বিন ১৩৩১ থেকে প্রকৃতপক্ষে সজনীকান্তই শনিবারের চিঠি’র পরিচালন-ভার এবং সর্বপ্রকার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
পরবর্তী ১৩৩৩ সালে তিনটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়, সহকারী-সম্পাদক ছিলেন সজনীকান্ত দাস।
১৩৩৪ সালের ভাদ্র মাসে মাসিক আকারে শনিবারের চিঠি নব পর্যায় প্রকাশিত হয়।
সজনীকান্ত নব পর্যায়ের শনিবারের চিঠি ২য় বর্ষ, ২য় সংখ্যা থেকে সম্পাদকরূপে অবতীর্ণ হন।
সজনীকান্ত ছাড়াও ‘শনিবারের চিঠি’র সম্পাদক রূপে আমার পাই নীরদ চন্দ্র চৌধুরী ও পরিমল গোস্বামীর নাম। সজনীকান্তের মৃত্যুর পর পুত্র রঞ্জনকুমার দাস ও চিরন্তন মুখ‍্যোপাধ‍্যায় যুগ্মভাবে কিছুকাল পত্রিকাটি সম্পাদনা করেন।
২০১২ সাল থেকে সজনীকান্ত দৈহিত্রী সাগর মিত্র পত্রিকাটির সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

বাংলা সাহিত্যে, বা বলা ভালো বাংলা সাহিত্য সমালোচনার ধারায় ‘শনিবারের চিঠি’র অবদান নেহাত কম নয়। ঐতিহ্যময় এই পত্রিকাটির প্রাক শতবর্ষ উপলক্ষ্যে আয়োজন করা হয়েছে একটি স্মরণসন্ধ্যা— ‘নিভৃত প্রাণের দেবতা’। আগামী ২২ জুন বৃহস্পতিবার বিড়লা আকাদেমি অফ আর্ট অ্যান্ড কালচার সভাগৃহে একটি মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্মরণ করা হবে বাংলা সাহিত্যের সেই স্বর্ণযুগকে। সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী শ্রী যোগেন চৌধুরী। উপস্থিত থাকবেন কণ্ঠশিল্পী চিত্রলেখা চৌধুরী, লেখক শ্রী সব্যসাচী সেনগুপ্ত সহ বহু বিশিষ্ট অতিথি। সমগ্র অনুষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন শ্রী অরিজিৎ মৈত্র এবং বর্তমান সম্পাদিকা শ্রীমতী সাগর মিত্র। 

Invitation
banglalive logo

মৌলিক‚ ভিন্নধর্মী ও সময়োপযোগী - এমনই নানা স্বাদের নিবন্ধ পরিবেশনের চেষ্টায় আমরা। প্রতিবেদন বিষয়ে আপনাদের মতামত জানান 'কমেন্ট' বক্সে | নিয়মিত আপডেট পেতে ফলো করুন - https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *