ভূতের গল্প| গল্প আবার কী? ‘ভূত’ মানে তো অতীত; মানে যা ‘ছিল’| আর ছিল যখন, তা তো আর গল্প নয়; ষোলো আনাই সত্যি| তাই আমার এই লেখাজোকায় যারা আসা যাওয়া করবে, তারা আছে এবং ছিল| মানে মানুষ এবং ভূত|

ভূত নিয়ে সবচেয়ে মুশকিলের ব্যাপার হল, তাদের আমরা দেখতে পাই না| যত বোকা বোকা কথা! আমরা কি ঠাকুর দেবতাদের দেখতে পাই? ঠান্ডা-গরম দেখতে পাই? ফুর্তি, দুঃখ দেখতে পাই? ভূতও ঠিক তেমনই| তারা তখনই দেখা দেয় বা অনুভবে আসে, যখন কেউ তাদের ভালোবাসে বা ভয় পায়| সোনাইয়ের কাছেও সেভাবেই পেঁচো এসেছিল| প্রাণের বন্ধুও হয়েছিল| তবে সোনাই স্পষ্ট করে সেটা  বুঝতে পারেনি|

সোনাই আসলে একটা পুঁচকি মেয়ে| বছর পাঁচেক বয়স| খানিক একাবোকা গোছের| সাধারণত বাড়িতে আর পাঁচটা ছেলেপুলে থাকলে দিব্যি খেলাধুলো ক’রে, মারপিট ক’রে, নিজেদের মধ্যে গুলতানি ক’রে বড়ো হয়ে যায়| সোনাইয়ের সেই উপায় ছিল না| তার ভাই-বোন নেই, বাড়িতে মানুষ বলতে দাদু-ঠাম্মি আর বাবা-মা| তার ওপর আবার জন্মে ইস্তক বিচ্ছিরি বিচ্ছিরি  অসুখবিসুখ লেগেই থাকে| সেই কারণে তার বেশি হুটোপুটি করা বারণ|

এই বাড়িটা ভাড়া বাড়ি| একতলা| সামনের দিকটায় মস্ত বড়ো লাল-কালো সিমেন্টের চৌখুপি কাটা বারান্দা| রোজ বিকেলবেলায় একা একা সেফটিপিনের গোছা দিয়ে সেখানে  লাফিয়ে লাফিয়ে এক্কাদোক্কা খেলে সোনাই| আর দুপুরে চুপিচুপি যায় পেছন দিকের বাগানে| সেখানেই পেঁচো তাকে প্রথম দেখেছিল| ‘পেঁচো’ নামটা শুনে নাক সিঁটকানোর কোনও কারণ নেই| ভূতেদের গুষ্টিতে অমন ডাকনাম-ভালোনাম থাকে না| তারা কি ইস্কুল-কলেজে যায়, নাকি চাকরিবাকরি করে?

পেঁচোদের আস্তানা এই পেছনের বাগানেই| সে বেচারির অবস্থাও অনেকটা  সোনাইয়েরই মতো| সারাক্ষণ শুধু বড়োদের সঙ্গেই ওঠা-বসা! তাও তো সোনাই পাড়ারই একটা ইস্কুলে যায়! ভূতের ছানাদের তো পাঠশালাও নেই! ওই মুখে মুখেই যেটুকু শেখা! নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বলতে শব্দগুলোর মানে জেনে নেওয়া| পেঁচোর এমনিতে ভারি মিশুকে স্বভাব| সোনাইকে সেই প্রথমদিন থেকেই ভারী পছন্দ হয়েছে তার| যতক্ষণ সোনাই বাগানে থাকে, খুকিটার সঙ্গে লেপটে থাকে সে| ভূতেদের লেপটে থাকার মানে জানা আছে তো? সুড়সুড়ি-পিঁপড়েদের মতো| আছে তো নিশ্চয়ই, আবার নেইও বটে! মানে পিঁপড়ে-জীবন, কিন্তু কামড়ানির অভ্যেস নেই| সঙ্গে লেগে থাকল, কখনও তাতে গায়ে একটু শিরশিরানি হল; চামড়াটা একটু চুলকে নিলে বা আঙুল দিয়ে ঝেড়ে নিলে অস্বস্তিটা তখনকার মতো চলে গেল… সেইরকম আর কী!

পেঁচো খুবই বায়না ধরেছিল, সে সোনাইয়ের সঙ্গে খেলা করবে| তাতে জোর ধমক খেয়েছে তার দাদুর কাছ থেকে| দাদু হল গে’ এ তল্লাটের ডাকসাইটে বেম্মদত্যি| মানুষের সমাজে চেনা বামুনের যেমন পৈতে লাগে না, ভূতসমাজেও চেনা বেম্মদত্যির পৈতে লাগে না| অবিশ্যি লাগলে অসুবিধেও ছিল| শূন্যে, কোথাও কিচ্ছুটি নেই, একগাছি ক্ষারে-মাজা পৈতে ঝুলে আছে, ব্যাপারটা একটু কেমন কেমন না? ভূতরাও আসলে জামাকাপড় পরে কিন্তু; তবে বাতাসের জামা| তাই চোখে দেখা যায় না| সে জামা বানায় দর্জি-ভূত গুলু ওস্তাগর|

এই বাড়ির যিনি আদত মালিক, সেই বুড়োকত্তা ছিলেন পেঁচোর দাদুর খাস যজমান| তা বয়সকালে দু’জনেই অক্কা পেলেন; তারপর বুড়োকত্তা পুরুত-দাদুকে বাগানের বিরাট বেলগাছটায় থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন| বংশ পরম্পরায় এ বাগানে শুধু পেঁচোদের পরিবারই থাকতে পারবে| অত অবাক হওয়ার কিছুই নেই, তখনকার দিনে যজমানরা বাড়ির বাঁধা পুরুতঠাকুরদের ভগবানের মতোই ভয়ভক্তি করত| সেই থেকে এখানে পেঁচোদের পুরো গুষ্টি থাকে| 

 

আরও পড়ুন: এককের গল্প – নাইটো

 

হ্যাঁ, যা বলছিলাম| পেঁচো তো বেজায় বকুনি খেল দাদুর কাছে| দাদু বলে দিলেন, ‘ওসব চলবে না| ওরা আলাদা, আমরা আলাদা| মানুষরা আমাদের দেখলে ভয় পায় বড্ড| দেখলে ঠিক নয়, মানে না দেখলে| তবে হ্যাঁ, তুই বাচ্চা মেয়েটার সঙ্গে সঙ্গে থাকিস| বাগানে এলোমেলো ঘুরে বেড়ায়, আপনমনে বকবক করে, পাঁচিলের ফোকরটায় যখন তখন পা রেখে ওদিকপানে ঝোঁকে… ওর ওপরে নজর রাখবি| কখনও যদি বুঝতে পারিস, ও বিপদে পড়েছে, সঙ্গে সঙ্গে  আমাদের কাউকে না কাউকে ডাকবি| আমরা ঠিক ব্যবস্থা করব যাতে মেয়েটা নিরাপদে থাকে| যতই হোক, এ বাগান আমাদের| এখানে ভালোমন্দ কিছু ঘটে গেলে বুড়োকত্তা মনে দুঃখ পাবেন|’ 

পেঁচো তখনও ঘ্যানঘ্যান করেই যাচ্ছিল, ‘ও দাদু, খুকির যে খুব ভূত দেখার শখ! বিশেষ করে দাদু-ভূত| খালি বলে, “বেম্মদত্যি কই?” দাদু বলল, ‘ও নিয়ে চিন্তা নেই| আমাদের নিয়ে মানুষ এত হাবিজাবি গপ্পো বানিয়েছে না! আসলে তো কেউই জানে না আমাদের সম্বন্ধে! যে যা পারছে গালগপ্পো চালিয়ে যাচ্ছে! মানুষ নিজেদেরই সাজিয়েগুছিয়ে ভূত বানিয়ে গপ্পো লেখে! দেখিস, কেউ না কেউ ঠিক ভুজুংভাজুং দিয়ে কচি মেয়েটাকে আজগুবি কোনও ভূত দেখিয়ে ভয় পাইয়ে দেবে| তুই বাপু একটু নজর রাখিস | মেয়েটার ভয়ের চোটে জ্বরজারি না হয়ে যায়!’

রোজ বিকেলবেলায় একা একা সেফটিপিনের গোছা দিয়ে সেখানে  লাফিয়ে লাফিয়ে এক্কাদোক্কা খেলে সোনাই| আর দুপুরে চুপিচুপি যায় পেছন দিকের বাগানে| সেখানেই পেঁচো তাকে প্রথম দেখেছিল| ‘পেঁচো’ নামটা শুনে নাক সিঁটকানোর কোনও কারণ নেই| ভূতেদের গুষ্টিতে অমন ডাকনাম-ভালোনাম থাকে না|

সোনাইয়ের তেমন বন্ধুবান্ধব নেই বলে ফি রবিবার সকাল হলেই তাকে তার দাদু দিয়ে আসেন পাশের পাড়ায়| ওখানে সুজাতা নামের একটি মেয়ে ছোটো ছোটো ছেলেপুলেদের আঁকা শেখায়| সোনাইয়ের অবিশ্যি আঁকাআঁকিতে তেমন উৎসাহ নেই| সে নাক উঁচিয়ে রাখে পাশের রান্নাঘরের দিকে, যেখানে রোববার রোববার ভারী ভালো ভালো খাবারদাবারের গন্ধ বেরোয়| লুচিভাজার, চিংড়ি মাছ ভাজার, পাঁঠার মাংস কষার গন্ধ| এইসব খাওয়া তো সোনাইয়ের বারণ! বাড়িতে তার জন্য বরাদ্দ ট্যালটেলে মাছের ঝোল, মুরগির স্টু, শুক্তো… মানে যত হাবিজাবি অখাদ্য! সে টেরও পায় না, পেঁচো রকমারি বাতাস-জামা আর হাফ-পেন্টুল পরে সারাক্ষণ একেবারে পাশটিতে দাঁড়িয়ে বা বসে থাকে|  সোনাইয়ের মন খারাপ হলে পেঁচোও ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস ফ্যালে আর সোনাইয়ের মনে হয় ঠিক যেন তার গায়ে কেউ হালকা করে ফুঁ দিল|

সেদিন ক্লাসে আর কেউ আসেনি| সকাল থেকে বৃষ্টি পড়ছিল| বাড়িতে ঘ্যানঘ্যান করছিল বলে দাদু কোনওরকমে ছাতা মাথায় দিয়ে সোনাইকে আঁকার ক্লাসে পৌঁছে দিয়েছেন| সুজাতা বলল, ‘আজ আঁকা থাক| এমন বাদলার দিন, বাইরেটা কালো হয়ে আছে, ঘরের ভেতরে ঝুঁঝকো আঁধার| আজ বরং ভূতের গল্প শোনো, সোনাই|’ সোনাই তো তাতে খুব রাজি| পেঁচো হেসেই আকুল| মানুষরা পারেও বটে বানিয়ে বানিয়ে আষাঢ়ে যত গল্প ফাঁদতে!

সুজাতার দাদার ছেলে টিটো মহা দুষ্টু| বছর বারো বয়স| সারাক্ষণ এর ওর পেছনে লাগছে আর হুজ্জুতি করছে| আর এই সোনাইটাও হয়েছে তেমনি হাঁদা! টিটো হাত-পা নেড়ে যা যা গুলতাপ্পি দেয়, হাঁ করে গেলে| ভূতের গল্প বলে যেই সুজাতা একটু অন্য ঘরে গেছে, টিটো অমনি বলল,

‘জানিস সোনাই, পিসিমণি আঁকা শিখেছে একজন বেম্মদত্যির কাছে| গুনে গুনে এক গণ্ডা সোনার মোহর  দক্ষিণা দিয়ে| ওঁর নাম বংশীবদন বাঁড়ুজ্যে| এই দ্যাখ, আমি নামটা বলেই কেমন কপালে হাত ঠেকিয়ে নমো করছি! তুইও কর! উনি আবার এইরকম বাদলার দিনে নিয়ম করে আসেন দাদুর সঙ্গে আড্ডা মারতে| বৃষ্টি পড়লেই আমাদের বাড়িতে খিচুড়ি আর ইলিশমাছ ভাজা হয় কিনা! ওঁর নেমন্তন্ন থাকে| আজকেও এসেছেন| অনেক দূরে থাকেন| সেই মোড়ের মাথায় যে মস্ত বটগাছটা আছে, তার মগডালে| বিশাল বাড়ি, বড়ো বড়ো ঘর|  চারদিক খোলা, দেওয়াল নেই, ছাদ নেই| মগডালেই গ্যারেজ, সেখানে একটা সোনালি ঈগল থাকে| ওটাও ভূত, মার্সিডিজ গাড়ির| এখন ঈগলটা অবিশ্যি বংশীদাদুকে পিঠ থেকে নামিয়ে দিয়ে আমাদের ছাদে বসে বিশ্রাম নিচ্ছে| বংশীদাদুর সঙ্গে আলাপ করবি নাকি?’

Baby Ghost
পেঁচো বেম্মদত্যি দাদুকে বলল, ‘জানো তো দাদু, টিটো ছেলেটা সাঙ্ঘাতিক!’

উত্তেজনায় চোখ দুটো গুল্লি গুল্লি হয়ে গেছে সোনাইয়ের| সে যেই না টিটোর পিছু পিছু দাদুর একটেরে ঘরটায় গিয়ে ঢুকেছে, অমনি দপ করে বিজলিবাতি নিভে গেল| লোডশেডিং| ঘরটা ডুবে গেল গা-ছমছমে ময়লাটে অন্ধকারে| সোনাই দেখল দাদুর মুখোমুখি বসে আছেন একজন বেজায় সিড়িঙ্গে লম্বা, ধবধবে ফর্সা, সুন্দরপানা বুড়ো| পরনে কোঁচাদোলানো ধুতি আর নকশাকরা পাঞ্জাবি; মাথাভর্তি ফুরফুরে রেশমি পাকা চুল| জানলা দিয়ে বৃষ্টির ছাঁট আসছিল বলে খড়খড়িগুলো ভেজিয়ে রাখা|

ফিসফিসিয়ে সোনাই জানতে চাইল, বেম্মদত্যি বংশীদাদু বাড়িতে ঢুকলেন কেমন করে ? কড়া নেড়ে, নাকি ঘণ্টি বাজিয়ে?’ চোখ মটকে টিটো বলল, ওঁর কী আর মানুষের শরীর রে? ওই ফাঁকফোকর দিয়েই আর কী!চাপা গলায় সোনাই বলল, টিটোদাদা, আদা দেওয়া চা খাচ্ছেন বংশীদাদু কেমন সুড়ুৎ সুড়ুৎ করে| প্লেটে অত্তগুলো বেগুনি, আবার চারটে সিঙাড়াও| ও বাবা, টপাটপ টপাটপ রসগোল্লাও খাচ্ছেন! হ্যাঁ গো, এরপর আবার খিচুড়ি-ইলিশমাছ ভাজা! একবার মরে গিয়ে ভূত হয়ে যেতে পারলে বুঝি আর কক্ষনো পেট কামড়ায় না?’

ভূত দেখার আশায় আর বেদম কৌতূহলে অস্থির হয়ে সোনাই যেই একটু কাছ ঘেঁষে দাঁড়িয়েছে, অমনি পান খাওয়া দাঁতে ফিক করে হাসলেন নতুন দাদু, ও  মা, ভারী মিষ্টি মেয়ে তো! ও খুকি, নাম কী তোমার? একদিন যাবে নাকি আমার বাড়িতে? আমার নাতি আছে, তোমারই বয়সী| ভালোনাম খুব শক্ত বটে; কিন্তু ডাকনামটা ভারী সোজা| শ্রীমান ভোম্বলচন্দ্র| দিব্যি বন্ধু হতে পারবে তোমরা| এই নাও খুকি, ল্যাবেঞ্চুস খাও| কাঁচা আমের আছে, লেবুরও আছে|’ 

পাঞ্জাবির পকেট থেকে একমুঠো সবুজ আর হলুদ ল্যাবেঞ্চুস বার করলেন বংশীবদন| তারপর যেই না টুকুস করে সোনাইয়ের গাল টিপে আদর করে তাকে ল্যাবেঞ্চুস দিতে গেছেন…. ব্যস! ভয়ে আঁতকে উঠে হেঁচকি তুলে কেঁদেই ফেলল সোনাই| ভূতরা কি তবে ছেলেধরাও হয়? তড়িঘড়ি চেয়ার থেকে উঠে এসে তাকে টপ করে কোলে তুলে নিলেন টিটোর দাদু রাজেনবাবু| মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন, ‘ও দিদিভাই, এ তো আর একটা দাদু গো তোমার! আমার ছেলেবেলার বন্ধু বংশী| এই নতুন দাদু তোমার দাদুকেও চেনেন তো! দু’জনে একই আপিসে চাকরি করতেন যে! ওরে বংশী, এই  খুকি তোদের আপিসের সেই মোহিতবাবুর নাতনি!’ 

সকাল থেকে বৃষ্টি পড়ছিল| বাড়িতে ঘ্যানঘ্যান করছিল বলে দাদু কোনওরকমে ছাতা মাথায় দিয়ে সোনাইকে আঁকার ক্লাসে পৌঁছে দিয়েছেন| সুজাতা বলল, ‘আজ আঁকা থাক| এমন বাদলার দিন, বাইরেটা কালো হয়ে আছে, ঘরের ভেতরে ঝুঁঝকো আঁধার| আজ বরং ভূতের গল্প শোনো, সোনাই|’ সোনাই তো তাতে খুব রাজি| পেঁচো হেসেই আকুল| মানুষরা পারেও বটে বানিয়ে বানিয়ে আষাঢ়ে যত গল্প ফাঁদতে!

সোনাই ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল, কোন ফাঁকে যেন টিটোদাদা কেটে পড়েছে! এদিকে পেঁচো তো সোনাইয়ের গায়ে লেপটে থেকে সবটাই নিজের চোখে দেখেছে! কী দুষ্টু ছেলে ওই টিটো! সোনাইকে গুচ্ছের আজেবাজে মিছে কথা বলেছে! জ্যান্ত মানুষটাকে নামধাম বদলে ভূত বানিয়ে দিল! একদিন বাগে পেলে এমন ভয় দেখাবে ওকে পেঁচো, যে  পিলে চমকে যাবে!

Grandfather grandson
পেঁচো বলল, তুমি তো আমার সোনা দাদু!

বাড়ি ফিরে পেঁচো তার বেম্মদত্যি দাদুকে বলল, ‘জানো তো দাদু, টিটো ছেলেটা ভারী সাঙ্ঘাতিক! আমার বন্ধু সোনাইকে কেমন উলটোপালটা বোঝালো বাড়িতে ডেকে এনে! ওই বুড়োটা নাকি তোমার মতোই বেম্মদত্যি ভূত! অমন পান-জর্দা খাওয়া বিচ্ছিরি লালচে দাঁত; আবার কী শব্দ করে করে চায়ে চুমুক দিচ্ছিল! বুড়ো মানুষের লোভে পড়ে হামহাম করে অতগুলো তেলেভাজা, রসগোল্লা একসঙ্গে  খাওয়া কি ভালো? নির্ঘাত অম্বল হয়ে যাবে! কেমন বিদঘুটে ঢেঁকুর তুলছিল সমানে! তুমি তো আমার সোনা দাদু! নিমের দাঁতন দিয়ে মেজে মেজে দাঁত কেমন ফর্সা ধবধব করছে, রাতে শরীর ভালো থাকবে বলে শুধু একটু দুধ-খই আর দুটো করে মর্তমান কলা খেয়ে থাকো। ভোরবেলা আর নিশুতিরাতে নিয়ম করে হাঁটাহাঁটি কর। আমার দাদু কক্ষনো অমন বুড়ো আর বিচ্ছিরিমতো হ্যাংলা হতেই পারে না!’

সত্যিকারের বেম্মদত্যি তখন তাঁর সত্যিকারের নাতি, তাঁর চোখের মণি পেঁচোকে জড়িয়ে ধরে চিবুকে টুকুস করে চুমু খেয়ে বললেন, ‘দেখলে তো দাদুভাই! সত্যি ভূতের কথাই বলো, অথবা গপ্পো …আসলে কেউই জানে না, কেউই বোঝে না ! সকলে নিজেদেরকেই ভূত বানিয়ে মিছিমিছি যা খুশি তাই ভাবে, বলে আর লেখে!’

 

*ছবি সৌজন্য: kaalerkontho, vectorstock, graphicriver

ইলেকট্রনিক্সের ছাত্রী ঈশানী রায়চৌধুরী তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ভাষান্তরের কাজে যুক্ত। নিজস্ব লেখালেখির মাধ্যম হিসেবে সবচেয়ে পছন্দ রম্য গদ্য আর ছোট গল্প | আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, ফ্রিডা কাহলো, খলিল জিব্রান, আর কে নারায়ণ প্রমুখ লেখকদের কাজ ভাষান্তর করেছেন। 'কৃষ্ণচূড়া আর পুটুস ফুল', 'আবছা অ্য়ালবাম', 'বাবু-টাবুর মা', ওঁর কয়েকটি প্রকাশিত বই।

4 Responses

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *