আয়ুষ চতুর্বেদীর বক্তৃতা ভাইরাল হয়েছে। বারাণসীর এই স্কুলের ছাত্রকে গান্ধীজি সম্পর্কে বলতে বলা হয়েছিল গত ৯ সেপ্টেম্বর তার স্কুলের একটি অনুষ্ঠানে। সেখানে সে অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় কিছু কথা বলেছে, যা আজকের ভারতের পক্ষে খুব জরুরি। গান্ধীজির অহিংস অসহযোগের নীতি কতটা সার্থক ছিল, তাঁর ধর্মচেতনা এবং ধার্মিকতা কেন অন্য ধর্মের মানুষের ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়নি, সেই বিষয়ে খুব জোর দিয়ে নিজের বক্তব্য পেশ করেছে আয়ুষ। সংবাদমাধ্যমে এবং তার চেয়ে অনেক বেশি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় তার বক্তৃতার ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়েছে, নিঃসেন্দহে আরও অনেক প্রচারিত হবে। প্রশংসার পাশাপাশি নিন্দা সমালোচনার ঝড়ও উঠবে সম্ভবত। তার পর দু’দিনের মধ্যে অন্য জিনিস ভাইরাল হবে, আয়ুষকে সবাই ভুলে যাবে, তার কথাগুলো ভুলে যাবে আরও তাড়াতাড়ি, আরও সম্পূর্ণ করে। আজকাল সেটাই দস্তুর।
অথচ ক্লাস ইলেভেনের এই কিশোর যা বলেছে এবং যে ভাবে বলেছে, দুটোই মনে রাখা দরকার। প্রথমত, যে ভাবে সে কথাগুলো বলেছে সেটা বিশেষ ভাবে শিক্ষণীয়। এখন চিৎকারের যুগ। যে কোনও কথা চিৎকার করে বলতে পারলেই যেন কথাটার গুরুত্ব প্রমাণিত হয়, তার সত্যতাও। অথচ আয়ুষ একটুও চিৎকার করেনি। তার কথায়, কণ্ঠস্বরে যে জোর ছিল সেটা তার বিশ্বাসের জোর, নৈতিক অবস্থানের জোর। আর তাই, গলার শিরা না ফুলিয়ে, রক্তচক্ষু না দেখিয়ে, মুষ্টিবদ্ধ হাত আকাশে আন্দোলিত না করে সে তার কথা বলেছে, শান্ত কিন্তু দৃঢ় ভাবে। এটা বিশেষ করে সেখা দরকার তার সমবয়সিদের, এবং তার অনুজদেরও। কারণ ওই বয়েসের শেখাটাই পরবর্তী জীবনে খুব বড় প্রভাব ফেলে, আমাদের অনেক অভ্যেসই আমাদের স্কুলজীবনে তৈরি হয়।
দ্বিতীয় যে ব্যাপারটা আয়ুষের কাছে শেখার, তা হল পড়াশোনা সম্পর্কে তার মতামত। সে বলেছে, সারাক্ষণ হ্যারি পটার আর চেতন ভগত না পড়ে আমরা যদি গান্ধীজির লেখাও মন দিয়ে পড়ি, তা হলে অনেক উপকার হয়। আশঙ্কা হয়, তার এই কথাকে অনেকেই এই অর্থে নেবেন যে, সে হ্যারি পটার আর চেতন ভগতের লেখা পড়তে বারণ করেছে। কিন্তু তা সে করেনি। তার বক্তব্যের ঠিক অর্থ একটাই: শুধুমাত্র এক ধরনের লেখা না পড়ে (বা এক ধরনের ছবি না দেখে) জানার দিগন্তটাকে ছড়িয়ে দিতে হবে এবং সেই প্রসারিত ভুবনে গান্ধীজির মতো মানুষের লেখা পড়া ও বোঝা খুবই প্রয়োজনীয়। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় এই নানা ধরনের পড়ার ব্যাপারটা আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। আমাদের কাজের পড়া ভয়ানক ভাবে কেরিয়ারসর্বস্ব, আর কাজের বাইরের পড়া বা সিনেমা দেখা আরও ভয়ানক ভাবে বাজারসর্বস্ব— বাজারে যা চলে আমরা সবাই কেবল তা-ই পড়ি, তা-ই দেখি। তাতে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয় এই যে, আমরা কোনও বিষয়ে তলিয়ে ভাবতে শিখি না, গড্ডলিকাপ্রবাহে গা ভাসাই। নিজস্ব চিন্তা এবং ধারণা তৈরি হয় না আমাদের। আর তার ফলে আমরা কেবলই গলা চড়াতে থাকি। ভাবি, গলার জোর যত, যুক্তির জোরও তত। আসলে ভেতরে ভেতরে আমরা ভয় পাই— পাছে গলা নামালে লোকে কথা না শোনে। চিৎকার করাটা আসলে ভয়ের লক্ষণ।
নিজস্ব চিন্তা এবং সেই চিন্তার ওপর প্রতিষ্ঠিত বিশ্বাস সত্যিকারের সাহস দেয়। আয়ুষ সেই সাহসের পরিচয় দিয়েছে। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এ রকম একটা স্রোতের বিরোধী বক্তৃতা দিতে তার ভয় করেনি? কিশোরের সংক্ষিপ্ত উত্তর: দেখ লেঙ্গে জো হোগা।
সঞ্চারী মুখোপাধ্যায় হাসিখুশি, এমনকী যখন সেই মোড-এ থাকেন না, নিজেকে ঠেলে হিঁচড়ে হিহিহোহো’তেই ল্যান্ড করানোর চেষ্টা করেন। জাপটে ভালবাসেন আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, সিরিয়াল, গান, রাস্তায় নেড়িবাচ্চার লটরপটর কান। পড়াশোনার সময় ফিল্ড করেছেন, হাতুড়ি দিয়ে পাথর ভেঙেছেন, গ্রামবাসীদের তাড়া খেয়েছেন, এক বার পাহাড় থেকে অনেকটা হড়কে পড়ে মুচ্ছো গেছিলেন, উঠে দেখেন, কবর! এক বার ম্যানেজমেন্ট কোর্সের অঙ্গ হিসেবে চিন গেছিলেন, রাত্তির দুটোয় সাংহাইয়ের রাস্তায় হারিয়ে গিয়েও কাঁদেননি। ফিউজ সারাতে পারেন, পাখার কার্বন বদলাতে পারেন, কাগজের চোঙ পাকিয়ে গাড়িতে পেট্রল ঢালতে পারেন, চিনেবাদাম ছুড়ে দিয়ে মুখে নিপুণ লুফতে পারেন। ব্যাডমিন্টন খেলার ইচ্ছে খুব, কিন্তু জায়গা ও র্যাকেট নেই। অরোরা বোরিয়ালিস যারা দেখেছে, তাদের একাগ্র ভাবে হিংসে করেন। দেশের বাড়িটা উনি বড় হওয়ার পর ছোট হয়ে গেছে বলে, আর আমির খান এক বার কার্টুন এঁকে দিয়েছিলেন— সে কাগজ হারিয়ে গেছে বলে, জেনুইন কষ্ট পান। এক বার ঈগলের রাজকীয় উড়ান আগাগোড়া খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন।