রবিরাগে— পঞ্চম পর্ব: ‘বসন্ত পঞ্চমের রাগে’

প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখা উচিৎ, যাকে বলছি আদি বসন্ত, সেই রাগই দাক্ষিণাত্যে বসন্ত বলে পরিচিত। উত্তর ভারতে শুদ্ধ সোহিনী বলে একটি রাগ রয়েছে, খুব যে গাওয়া বা বাজানো হয়, এমন নয়। রবীন্দ্রনাথের ‘প্রথম আদি তব শক্তি’ গানটি ওই রাগেই বাঁধা। গানটি বাইজু বাওরার একটি ধ্রুপদ থেকে প্রতিগৃহীত।
রবীন্দ্রগানে রাগসঙ্গীতের, বিশেষত বসন্ত পঞ্চম রাগের প্রয়োগ নিয়ে লিখলেন সুভদ্রকল্যাণ…
রবিরাগে- চতুর্থ পর্ব: রবীন্দ্রনাথ ও মাইহার

মাজ-খাম্বাজের উৎস যাই হোক, আলাউদ্দিনের ঘরের শিষ্যরাই যে তা বাজিয়ে তার প্রচার করেছেন, এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। প্রশ্ন ওঠে, রবীন্দ্রনাথ এ রাগের সন্ধান পেয়েছিলেন কীভাবে! এই প্রশ্ন ওঠা অসমীচীন নয়, কারণ ‘আজি যত তারা তব আকাশে’ গানটি রচিত হয়েছিল মাইহার ঘরানার প্রধান দুই প্রতিনিধি, আলি আকবর খাঁ ও রবিশঙ্করের জন্মের প্রায় পনেরো বছর আগে এবং রবীন্দ্রনাথ প্রয়াত হয়েছেন ওঁরা জনসমক্ষে বাজানো শুরু করার অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই। আলাউদ্দিন খাঁ নিজে এই রাগ বাজিয়ে রেকর্ড করেছিলেন, বা কোনও অধিবেশনে বাজিয়েছিলেন, এমন খবর আমার কাছে নেই। সুতরাং এক্ষেত্রে আলাউদ্দিনের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের আলাপই রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে মাজ-খাম্বাজের পরিচয় ঘটিয়েছিল, এমন ভাবা হয়ত খুব অন্যায় নয়। এত কিছু সত্ত্বেও একটা বড়রকম খটকা থেকেই যায়, কারণ— রবীন্দ্রনাথ যখন ‘আজি যত তারা তব আকাশে’ রচনা করেন, অর্থাৎ ১৯০৪ সালে, বা তারও অনেক আগে যখন ‘বাল্মীকি প্রতিভা’র জন্য রচনা করেন ‘ব্যাকুল হয়ে বনে বনে’, তখনও আলাউদ্দিনের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সাক্ষাৎ হয়নি।
রবীন্দ্রগানে রাগসঙ্গীতের, বিশেষত খাম্বাজ রাগের প্রয়োগ নিয়ে লিখলেন সুভদ্রকল্যাণ…
রবিরাগে- তৃতীয় পর্ব: মাজ-খাম্বাজ কথা

‘আজি যত তারা তব আকাশে’ গানটি সরোদ-শিল্পী বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত মাজ-খাম্বাজের গতের ছকে ফেলে বাজিয়েছিলেন। তাঁর বাজনায় আলি আকবর খাঁ, রবিশঙ্কর, অন্নপূর্ণা দেবী, এঁদের সবার ছায়া থাকা সত্ত্বেও প্রকটতর হয়ে উঠেছিল রবীন্দ্রনাথের চিন্তনে যেভাবে মাজ-খাম্বাজ ধরা দিয়েছিল, তার ছায়া। বস্তুত, বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের বাজনা থেকেই রবীন্দ্র-ভাবনায় মাজ-খাম্বাজ কেমন ছিল, তা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা তৈরি করা যায়।
রবীন্দ্রগানে রাগসঙ্গীতের, বিশেষত খাম্বাজ রাগের প্রয়োগ নিয়ে লিখলেন সুভদ্রকল্যাণ…
রবিরাগে- দ্বিতীয় পর্ব: রবীন্দ্র-ভাবনায় খাম্বাজ

মল্লারে সাধারণত কোমল ধৈবতের স্থান না থাকলেও, মীরাবাঈয়ের মল্লারে কোমল ধৈবত খুবই স্পষ্ট। বলা বাহুল্য, রবীন্দ্রনাথ সাহানা মল্লার বা মীরাবাঈয়ের মল্লারের প্রতি দায়বদ্ধ ছিলেন না; তাঁর দায়বদ্ধতা গানের বক্তব্যের প্রতি, এবং সেই বক্তব্য প্রকাশের উপযুক্ত সুরের চলনের প্রতি, তাই কোমল ধৈবতযুক্ত মল্লারের এই রূপ রবীন্দ্রনাথের ভাবনার স্বাতন্ত্র বহন করে। হয়ত সেই জন্যই সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর চেয়েছিলেন, এই রাগের নাম হোক রবিমল্লার।
রবীন্দ্রগানে রাগসঙ্গীতের, বিশেষত খাম্বাজ রাগের প্রয়োগ নিয়ে লিখলেন সুভদ্রকল্যাণ…
রবিরাগে- প্রথম পর্ব: এক সংলাপের সূচনা

রাগসঙ্গীতশিল্পীদের বিরাগ রবীন্দ্রনাথ বা তাঁর সৃষ্টির প্রতি নয়, রবীন্দ্র-গান কীভাবে পরিবেশিত হয়, তার প্রতি। আগেই বলেছি, স্রষ্টা রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর সৃষ্টি এক্ষেত্রে কার্যত নিরুপায়। যাঁরা রবীন্দ্র-গান গান, তাঁদের অনেকেরই মূল উদ্দেশ্য সঙ্গীতচর্চা, না সামাজিক স্বীকৃতি লাভ, তাই নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। তাই তাঁরা গান গাইলে রবীন্দ্র-গানের সাঙ্গিতিক দিকগুলি যে উপেক্ষিতই রাখেন, সে কথা অনুধাবন করতে কষ্ট হয় না।
শুরু হল রবীন্দ্র-গান নিয়ে সুভদ্রকল্যাণের নতুন কলম ‘রবিরাগে’, আজ প্রথম পর্ব…
পণ্ডিত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ও আধুনিক তবলাবাদন

অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউ কেড়ে নিয়েছে সংস্কৃতিজগতের বহু অমূল্য রত্নকে। এবার তৃতীয় ঢেউ আসার আগেই কোভিডের কাছে আত্মসমর্পণ করলেন বিশিষ্ট তবলিয়া পণ্ডিত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অকালপ্রয়াণে ফের স্বজনহারানোর ব্যথা সঙ্গীতের দুনিয়ায়।
আলি আকবরনামা

সুরসম্রাট উস্তাদ আলি আকবর খান। তাঁর সরোদের মূর্ছনা আক্ষরিক অর্থেই সম্মোহিত করতে পারত শ্রোতাদের তাঁর আঙুলের জাদুমন্ত্রবলে। আজ তাঁর ৯৯তম জন্মদিবসে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাচ্ছেন তবলিয়া সুভদ্রকল্যাণ।
সত্যজিতের সুরধুনী

সত্যজিৎ মনে করতেন, দৃশ্যের বা শটের গভীরতা দর্শকের কাছে পোঁছে দিতে গেলে আবহসঙ্গীতের ব্যবহার আবশ্যক। আবহ যোগ না করলে দর্শকের সেই বিশেষ দৃশ্যটির ভেতরকার অর্থ বুঝে উঠতে অসুবিধে হবে। আবার এও ঠিক, অভিনেতা যদি অভিনয়ে সেটা ফুটিয়ে তুলতে অক্ষম হন, তখন হাজার আবহসঙ্গীত দিলেও কাঙ্খিত অভাবটা রয়েই যাবে। কখনওই সংলাপ ছাড়িয়ে আবহ শোনা যাওয়াটা বাঞ্ছনীয় নয়।