চার পুরুষের শরবত!

old drinking jars

এখানেই প্রথম গোলাপের পাপড়ি দেওয়া শরবত খেলাম, বাড়িরই এক মুসলিম পরিচারক- ‘শরবতিয়াঁ’র বানানো। এই বাড়িতে কাঠের ‘আইস বক্সে’ বরফকুচিও থাকতো। যে চায় সে নেবে। বাড়িতেই বানানো, সবুজ, হলুদ আর রানি রংয়ের সিরাপ, লম্বা গলা বোতলে থরে থরে রাখা। চিনির সিরায় সিরাপ মিশিয়ে একটু নেড়ে ঠান্ডা জল মেশানো। অপূর্ব পোরসেলিন গ্লাসে পরিবেশন। ট্রেতে খান ছ’য়েক গ্লাস সাজিয়ে ‘শরবতিয়াঁ’ হল ঘরে ঢুকলেই আমরা গন্ধ পেতাম। এরা ‘গর্মি’ লাগলেই ‘নিম্বু পানি’ আর ‘জলজিরা’ খেত।

আইঢাই: ‘হাড় ভাঙা বিশ্রাম’

Illustration by Mandar Mukherjee

দিনে বারো ঘণ্টা খেটে যার রোজগার খুব বেশি হলে মাসে তিরিশ থেকে পঁয়ত্রিশ, সে কী করে চালাবে? তার তো সবেতন ছুটি নয় এবং ওয়ার্ক ফ্রম হোম-এও তো ওর চলবে না। আমারই যেন মাথায় হাত।…

প্রান্তবাসী মনোরোগীদের ‘আইসোলেশন’

mandar mukhopadhyay Illustration

গত আঠারো বছর ধরে আমি যুক্ত এই সংস্থাটির সঙ্গে। নানা অসুবিধে, ঝড়বৃষ্টি, সাইক্লোন বা প্রিয় প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক আঙ্কল জনের মৃত্যু- কোনও অবস্থাতেই অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করা হয়নি কোনও থেরাপি ইউনিট। কর্মকর্তারাই সামলেছেন সব সঙ্কট। এই প্রথম জারি হল এক যুদ্ধকালীন নিষেধ। আপাতত বন্ধ আমাদের শনিবারের ক্লাস- এস্থেটিক থেরাপি ইউনিটও। আবাসিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার কথা ভেবেই। কারণ আমরা, যারা না-আবাসিক এবং বাইরে থেকে যাই, তারা তো না জেনেই বাহক হতে পারি ওই মারণ ভাইরাসের! একজনের বহন তখন শতজনের ত্রাসের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। সে সঙ্কট সামলানোই যে এক নিদারুণ সঙ্কট হয়ে দেখা দেবে।

আইঢাই: ফাঁক ফোকর

Illustration by Debasis Deb

ফাঁদ যেমন অনেক রকম হয়, ফাঁকও ঠিক তাই। গলে পালানো বা গলিয়ে দেবার জম্পেশ সব ব্যবস্থা। এই যেমন চালুনি, সাঞ্চা বা ছুঁচ। এসব ইচ্ছে করে রাখা ফাঁক, কাজের সুবিধের জন্যে। যেমন এক ফাঁকে রোদে মেলা কাপড়গুলো তুলে রাখা, বা টুক করে পুকুরে গিয়ে তিন ডুবে স্নান সারা, বা আচারের শিশিগুলোর এ পিঠটা ঘুরিয়ে রোদ্দুরে ওপিঠ করে দেওয়া; এই মোচাক’টা কেটে রাখি, বা সরষেগুলো ঝেড়ে রাখি বা ছোট্ট করে পান সেজে, এক খিলি গালে ঠুসি। এসব ফাঁকে ছাড় চলবে। কারণ তা কাজেরই আগু বা পিছু।

আজগুবি চাল বেঠিক বেতাল

Illustration for Leela Majumdar Special Feature লীলা মজুমদার

আমি লীলা মজুমদারকে আবিষ্কার করলাম, ‘আর কোনোখানে’ বইটি পড়ে। ‘তুঙ্গভদ্রার তীরে’ শেষ হল না, মন ঘুরে বেড়াতে লাগল শিলং পাহাড়ের এক অপরিচিত বালিকার পায়ে পায়ে, ঠিক যেন আমার খড়দা ছেড়ে কলকাতায় আসার একরাশ মনখারাপে, আলুর ঝালুর গপ্পো। এরপর তো কলেজ। ‘স্বপন বুড়ো’, ‘মৌমাছি’, ‘জীবন সর্দার’ ছাপিয়ে, মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ, তারাশঙ্কর। আর গোগ্রাসে নভেল গেলার সময়ে এসে গেল, ইংরেজি বইগুলোও। তখন বুঝলাম, কিশোরী বেলায় যা কিছু নভেল বাংলা অনুবাদে পড়েছি, তার মধ্যে কয়েকটির অনুবাদকও এই লীলা মজুমদার।

আই ঢাই: আরও যা যা হতো

Debashis Deb illustration

রান্না ছাড়াও আরও কত কী যে এই রান্নাঘরে হতো তা বলতেই না দিন কাবার  হয়ে যায়! সকালের ঝোঁকে রান্নার ঝকর ঝকর কিছুটা সামলে গেলে, মানে কর্তাদের আপিস, ছোটদের ইস্কুল কলেজ আর বাকিদের জল খাবার পর্ব শেষ হলেই কাজে কিছুটা ঢিলে পড়তো।

আই ঢাই: হেঁসেল ভ্রমণ

না ছিল নেট সংযোগ , না ছোট ছোট পরিবার। তাই বাড়ি ছেড়ে কোথাও গিয়ে থাকা মানেই অন্তত একমাস আর তা চেনা গণ্ডির চৌহদ্দিতে। রেল কম ঝমাঝম – রাতের ঘুমে গায়ে মাথায় কয়লার গুঁড়ো মেখে ভোর রাতে নামা। তারপর গরুর গাড়িতে বোঁচকা-বুঁচকি সমেত, মাঠ ও মাটির রাস্তা পেরিয়ে একতলা বাড়িটি। এর প্রস্তুতি সাংঘাতিক। এ তো আর সেই ‘উঠলো বাই তো কটক যাই’ নয়, রীতিমতো বাঁধা এবং ছাঁদা করে লটবহর এমনকি পারলে দাঁড়ের টিউ-টি সমেত।

আইঢাই: মাঁছ…কঁই…!

শাশুড়ির অসুখ শুনে জামাই চলেছে ভিন গাঁয়ে তাঁকে দেখতে। মেয়ে তার বরটিকে বার বার করে বলে দিয়েছে, পা চালিয়ে বেলাবেলি চলে যেও বাপু। জলার ধারে, বনে বাদাড়ে মায়ের কুঁড়েটি। দিনের আলো নিবলেই তেনারা কিন্তু এসে পড়েন। তো, জামাই পা চালিয়েই এসেছে। পথে একটু চিঁড়ে মাখা খেয়ে গাছের ছায়ায় জিরোতে গিয়েই চোখ দু’খান একটু যা লেগে […]