আগের পর্বের লিংক: [] [] [] [] [] [] [] [] [] [১০] [১১]

শীতকালটা খুবই বিচ্ছিরি কাটল। একেই ঝোড়ো আবহাওয়া, তার সঙ্গে আবার দোসর হল শিলাবৃষ্টি আর তুষারপাত। সেই জমাট বরফ ফেব্রুয়ারিতেও গলল না। জন্তুরা হাওয়া কলটাকে ফের গড়ে তোলার কাজে নিজেদের জানপ্রাণ লড়িয়ে দিল। তারা ভালোমতোই জানে যে বাইরের দুনিয়াটা তাদের সমস্ত কাজকর্মের উপর কড়া নজর রেখে চলেছে। হাওয়া কল যদি সময়ে শেষ না হয় তা হলে হিংসুটে মানুষগুলো যুদ্ধজয়ের উল্লাসে একেবারে ফেটে পড়বে।

 অ্যানিম্যাল ফার্মের উপর মানুষদের বিদ্বেষ এমন মাত্রায় পৌঁছে গেছে যে তারা বিশ্বাসই করতে চায় না হাওয়া কলটা স্নোবল ভেঙেছে। তারা বলে দেয়ালগুলো খুব পাতলা ছিল বলেই নাকি হাওয়া কলটা ভেঙে পড়েছে। কিন্তু জন্তুরা ভালোই জানে যে আসল ব্যাপারটা মোটেই তা নয়। তবুও ঠিক করা হল এবার হাওয়া কলের দেয়াল আগের মতো আঠেরো ইঞ্চি রাখা হবে না। তার বদলে তিন ফুট পুরু করা হবে। অর্থাৎ এবার আরও বেশি পরিমাণে পাথর লাগবে। কিন্তু পাথরের খাদটা দীর্ঘ সময় ধরে বরফে ঢেকে থাকায় তেমন কিছুই করা গেল না। শুকনো আবহাওয়া আর হাড়-কাঁপানো ঠান্ডায় সবাই কাজ করার চেষ্টা করল বটে কিন্তু সে এক অমানুষিক পরিশ্রমের ব্যাপার। জন্তুরা আস্তে-আস্তে আগের সেই উৎসাহ হারিয়ে ফেলে হতোদ্যম হয়ে পড়তে লাগল। তাদের সবসময়ই বড্ড ঠান্ডা লাগে আর খালি খিদে পায়। 

দেখা গেল কেবলমাত্র বক্সার আর ক্লোভারই খুব একটা ভেঙে পড়েনি। ওদিকে স্কুইলার মাঝে মাঝেই কাজের আনন্দ আর শ্রমের মর্যাদা নিয়ে দুরন্ত সব বক্তৃতা দিয়ে যায়। তবে তার বক্তৃতার চেয়েও জন্তুরা অনেক বেশি অনুপ্রাণিত হয় বক্সারকে দেখে আর তার সেই অব্যর্থ নীতিবাক্য ‘আমাকে আরও বেশি পরিশ্রম করতে হবে’— শুনে। জানুয়ারি মাসে খাবারের অভাব দেখা দিল। জন্তুদের মাথাপিছু যে শস্য বরাদ্দ ছিল তার পরিমাণ অনেকটা কমিয়ে দেওয়া হল। ঘোষণা করা হল যে, তার বদলে কিছু বাড়তি আলু বরাদ্দ করে এই ঘাটতি পূরণ করে দেয়া হবে। কিন্তু দেখা গেল ভালো করে ঢেকে না রাখায় বেশিরভাগ আলুই ঠান্ডায় জমে নষ্ট হয়ে গেছে। সামান্য সংখ্যক আলুই খাদ্যযোগ্য, বাকি প্রায় সবই কেমন যেন নরম হয়ে গিয়ে ফ্যাকাশে মেরে গেছে। এরপর কিছুদিন ভুষি আর শাক খেয়ে কাটল। অনাহারে থাকার দিন যে এবার শুরু হতে চলেছে তা আর বলে দিতে হয় না।

কিন্তু খামারের এই দুর্দশার কথা তো আর বাইরে ফাঁস হতে দেয়া চলে না। এমনিতেই হাওয়া কল ভেঙে পড়ায় মানুষেরা একেবারে উদ্বাহু হয়ে নেত্য জুড়েছে। নানা রকমের নতুন নতুন গুজব ছড়াচ্ছে অ্যানিম্যাল ফার্মের নামে। অ্যানিম্যাল ফার্মের জন্তুরা নাকি দুর্ভিক্ষে আর বিভিন্ন রোগে ভুগে-ভুগে মারা যাচ্ছে— এ কথা আবার রটতে শুরু করেছে। শুধু তা-ই নয়, তারা নাকি নিজেদের মধ্যে লাগাতার মারামারি করে চলেছে এবং স্বজাতির মাংস খাচ্ছে। এমনকি বাচ্চারাও পর্যন্ত নিস্তার পাচ্ছে না।

খাদ্যভাণ্ডারের করুণ অবস্থার কথা বাইরে প্রকাশ পেলে তার ফল যে মোটেই সুখের হবে না, তা নেপোলিয়ন ভালোমতোই জানে। তাই সে ঠিক করল হুইম্পারকে কাজে লাগিয়ে এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ উল্টো মত প্রচার করবে বাইরের দুনিয়ায়। 

অ্যানিম্যাল ফার্মের উপর মানুষদের বিদ্বেষ এমন মাত্রায় পৌঁছে গেছে যে তারা বিশ্বাসই করতে চায় না হাওয়া কলটা স্নোবল ভেঙেছে। তারা বলে দেয়ালগুলো খুব পাতলা ছিল বলেই নাকি হাওয়া কলটা ভেঙে পড়েছে। কিন্তু জন্তুরা ভালোই জানে যে আসল ব্যাপারটা মোটেই তা নয়। তবুও ঠিক করা হল এবার হাওয়া কলের দেয়াল আগের মতো আঠেরো ইঞ্চি রাখা হবে না। তার বদলে তিন ফুট পুরু করা হবে।

এতদিন পর্যন্ত হুইম্পারের সাপ্তাহিক উপস্থিতির সঙ্গে খামারের বাকি জন্তুদের তেমন কোনও লেনদেন ছিল না। এবার কিছু জন্তুকে বেছে নেয়া হল, যাদের অধিকাংশই ভেড়া। এদের কাজ হল হুইম্পার যখন ফার্মে আসবে তখন তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলা যে, খাবারের বরাদ্দ বেড়ে গেছে। এরই সঙ্গে নেপোলিয়নের নির্দেশে ভাঁড়ার ঘরের প্রায় খালি হয়ে আসা শস্যপাত্রগুলোকে বালি দিয়ে ভর্তি করে দিয়ে শুধু ওপরের অংশটুকুতে শস্য সাজিয়ে রাখা হল। পরে একদিন কোনও এক ছুতোয় হুইম্পারকে নিয়ে যাওয়া হল ভাঁড়ার ঘরে। সে তো ভর্তি-ভর্তি শস্যপাত্র দেখে দিব্যি ধোঁকা খেয়ে বাইরে বলে বেড়াতে লাগল যে অ্যানিম্যাল ফার্মে খাবারের কোনও অভাব নেই।

এত কাণ্ড সত্ত্বেও জানুয়ারির শেষ দিকে অবস্থাটা এমন হয়ে দাঁড়াল যে বাইরের কোথাও থেকে খাবার-দাবার সংগ্রহ করার বন্দোবস্ত না করলে আর মোটেই চলছে না। আজকাল নেপোলিয়ন সবার সামনে খুব একটা বেরোয় না। বেশিরভাগ সময়টা ফার্ম হাউসেই কাটায়। সে-বাড়ির প্রতিটি দরজায় পাহারায় থাকে হিংস্র কুকুরগুলো। কখনও সখনও সে বাড়ির বাইরে বেরোয় বটে, তবে সেটাও খুব আনুষ্ঠানিকভাবে। ছ’-ছ’টা কুকুর সব সময় তাকে ঘিরে রাখে। কেউ নেপোলিয়নের খুব কাছাকাছি যেতে চাইলেই গর্জে উঠে তাকে ভাগিয়ে দেয়। নেপোলিয়ন এখন তো রবিবারের সকালগুলোতেও বেরোয় না। কোনও একটা শুয়োরের মাধ্যমে নিজের নির্দেশ জারি করে। বেশিরভাগ সময়ে এই কাজটা করে স্কুইলার।

এক রবিবার সকালে স্কুইলার এসে ঘোষণা করল, যে-সব মুরগির আবার ডিম পাড়ার সময় হয়ে গেছে তাদের সব ডিম জমা দিতে হবে। হুইম্পারের মাধ্যমে নেপোলিয়ন সপ্তাহে চারশো ডিম বিক্রি করার একটা চুক্তি করেছে। সেই ডিম বিক্রির টাকায় যে পরিমাণ শস্য আর আটা কেনা হবে তাতে আগামী গ্রীষ্ম পর্যন্ত চলে যাবে। তারপর পরিস্থিতিও অনেক সহজ হয়ে আসবে। মুরগিরা তো এ কথা শোনামাত্র ভয়ঙ্কর চিৎকার করে প্রতিবাদ জুড়ে দিল। এমন কোনও ত্যাগ যে ওদের স্বীকার করতে হতে পারে, তার আভাস ওরা আগে পেয়েছিল, তবে সত্যি সত্যিই যে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হবে তা বিশ্বাস করেনি। ওরা সবেমাত্র বসন্তকালীন তা দেওয়ার জন্য ডিমগুলোকে তৈরি করছিল। সুতরাং তুমুল বিক্ষোভ শুরু হল। এই সময় তাদের ডিম নিয়ে নেয়া মানে হত্যাকাণ্ডের সামিল।

revolting hens animal farm ralph steadman
মুরগিরা নেপোলিয়নের ইচ্ছেয় জল ঢেলে দিতে কোমর বেঁধে নামল।

জোন্স-কে তাড়িয়ে দেবার পর এই প্রথমবার এমন একটা ব্যাপার ঘটল যাকে কিছুটা বিদ্রোহই বলা চলে। তিনটে অল্পবয়সি কালো মিনরকা মুরগির নেতৃত্বে বাকি মুরগিরা নেপোলিয়নের ইচ্ছেয় জল ঢেলে দিতে কোমর বেঁধে নামল। ওরা উড়ে উড়ে কড়ি বরগার ওপর গিয়ে ডিম পাড়ার চেষ্টা করল, কিন্তু তাতে লাভ কিছুই হল না। সব ডিম নীচে পড়ে ফেটে চৌচির হয়ে গেল। নেপোলিয়ন ব্যবস্থা নিল অত্যন্ত দ্রুত, এবং সে-ব্যবস্থা অত্যন্ত নিষ্ঠুর ব্যবস্থা। সে মুরগিদের খাবারের বরাদ্দ বন্ধ করে দিল এবং হুকুম জারি করল যদি কেউ মুরগিদের এক দানাও খাবার দেয় তা হলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে। এই নির্দেশ ঠিক মতো মেনে চলা হচ্ছে কিনা, তা দেখার জন্য কুকুরগুলো কড়া নজর রেখে চলল। টানা পাঁচদিন ধরে নিজেদের গোঁ বজায় রাখার পর মুরগির দল আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হল। তারা নিজেদের ডিম পাড়ার বাক্সে গিয়ে বসল। ইতিমধ্যে ন’টা মুরগি মারা গেছে। তাদের ফুলবাগানে কবর দেওয়া হল। বলা হল এই মুরগিগুলো সব কক্কাইডায়োসিস রোগে মরেছে। হুইম্পার এ সবের কিছুই জানতে পারল না। সমস্ত ডিম যথাসময়ে সরবরাহ করা হল। মুদিখানার ভ্যানগাড়ি সপ্তাহে একদিন করে এসে সেই ডিম নিয়ে যেতে লাগল।

এর মধ্যে স্নোবল-এর আর কোনও পাত্তা পাওয়া যায়নি। এ রকম একটা কথা রটেছে যে সে নাকি ফক্সউড বা পিঞ্চফিল্ড এই দুটোর মধ্যে যে কোনও একটা প্রতিবেশী ফার্মে লুকিয়ে আছে। নেপোলিয়ন এতদিনে পাশের ফার্ম দুটোর সঙ্গে সম্পর্কের বেশ খানিকটা উন্নতি ঘটিয়েছে আগের চেয়ে। বছর দশেক আগে বিচ গাছের একটা ছোট বন সাফ করা হয়েছিল। তা এখনও স্তূপ হয়ে রয়েছে উঠোনে। এত বছর ধরে রোদে জলে সেই কাঠ বেশ পাকাপোক্ত হয়েছে। হুইম্পার নেপোলিয়নকে সেই কাঠ বেচে দেওয়ার পরামর্শ দিল। মিস্টার পিলকিংটন আর মিস্টার ফ্রেডরিক দু’জনেরই বেশ আগ্রহ আছে সেই কাঠ কেনার ব্যাপারে। কিন্তু নেপোলিয়ন সমানে ইতস্তত করছে। কিছুতেই মনস্থির করতে পারছে না দু’জনের মধ্যে শেষমেষ কাকে এই কাঠ বিক্রি করবে। অদ্ভুত ব্যাপার, যখনই সে ফ্রেডরিকের সঙ্গে রফায় আসতে চায় তখনই শোনা যায় স্নোবল নাকি ফক্সউডে লুকিয়ে আছে। আবার সে যখনই পিলকিংটন-এর দিকে কিছুটা ঝোঁকে অমনি শোনা যায় স্নোবল লুকিয়ে আছে পিঞ্চফিল্ডে।

এক রবিবার সকালে স্কুইলার এসে ঘোষণা করল, যে-সব মুরগির আবার ডিম পাড়ার সময় হয়ে গেছে তাদের সব ডিম জমা দিতে হবে। হুইম্পারের মাধ্যমে নেপোলিয়ন সপ্তাহে চারশো ডিম বিক্রি করার একটা চুক্তি করেছে। সেই ডিম বিক্রির টাকায় যে পরিমাণ শস্য আর আটা কেনা হবে তাতে আগামী গ্রীষ্ম পর্যন্ত চলে যাবে। তারপর পরিস্থিতিও অনেক সহজ হয়ে আসবে। মুরগিরা তো এ কথা শোনামাত্র ভয়ঙ্কর চিৎকার করে প্রতিবাদ জুড়ে দিল।

বসন্তের শুরুতে হঠাৎই এক নতুন উৎপাত আরম্ভ হল। জানা গেল স্নোবল নাকি প্রায়ই রাত্তিরবেলা চুপিসাড়ে খামারে হানা দিচ্ছে। এ খবরে জন্তুরা এতই অস্থির হয়ে পড়ল, যে তাদের রাতের ঘুম উড়ে গেল। অন্ধকারে গা ঢাকা দিয়ে সে যত রকমের কুকর্ম আছে করে যায়। কখনও শস্য চুরি করে, কখনও দুধের বালতি উল্টে দিয়ে যায়, কখনও বাক্সভর্তি ডিম ভেঙে রাখে, কখনও বীজ লাগানো খেত পা দিয়ে পিষে নষ্ট করে, আবার কখনও ফল গাছের বাকল কামড়ে ছিঁড়ে দিয়ে যায়। ধীরে-ধীরে এমন অবস্থা হল, যা কিছু গন্ডগোল হচ্ছে তা-ই গিয়ে চাপছে স্নোবল-এর ঘাড়ে। যদি কোনও জানালা ভেঙে যায় বা নর্দমার মুখ আটকে যায়, যে-কেউ নিশ্চিত হয়ে বলে দেবে স্নোবল রাত্তিরবেলা এসে এসব করে গেছে। সুতরাং ভাঁড়ার ঘরের চাবিটা যে দিন হারিয়ে গেল সে দিন সবাই একবাক্যে বিশ্বাস করে নিল যে স্নোবল কোনওভাবে সেই চাবিটা হাতিয়ে নিয়ে কুয়োর মধ্যে ফেলে দিয়ে গেছে। আজব ব্যাপার, সেই হারানো চাবি যখন একটা আটার বস্তার তলায় খুঁজে পাওয়া গেল তখনও কিন্তু জন্তুদের সেই বিশ্বাসে কোনও বদল দেখা গেল না। সব গোরুরা একযোগে জানাল তারা যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন স্নোবল চুপিচুপি গোয়াল ঘরে ঢুকে তাদের দুধ দুইয়ে নেয়। ইঁদুরগুলো গত শীতে ভয়ানক জ্বালাতন করেছিল। শোনা যাচ্ছে তাদের সঙ্গেও না কি স্নোবল-এর সাঁট আছে।

নেপোলিয়ন ঘোষণা করল, স্নোবলের এইসব কার্যকলাপের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা দরকার। সুতরাং একদিন সে বেরোল খামারবাড়ির প্রতিটি কোণ খুঁটিয়ে দেখতে। তাকে ঘিরে রইল তার কুকুরের দল। বাকি জন্তুরা সম্মানজনক দূরত্ব রেখে তাকে অনুসরণ করল। নেপোলিয়ন দু’পা করে হাঁটছে আর মাটি শুঁকে শুঁকে দেখছে। সে নাকি গন্ধ শুঁকেই চিনে নিতে পারবে কোনটা স্নোবল-এর পায়ের ছাপ। গোলাঘর, গোয়াল, মুরগির খুপরি, সবজি বাগান— নেপোলিয়ন খামারের প্রায় প্রতিটি কোনায় স্নোবল-এর চিহ্ন আবিষ্কার করল। নিজের ছুঁচলো নাক মাটিতে ঠেকিয়ে গভীরভাবে শুঁকে সে বজ্রকণ্ঠে হুঙ্কার দিয়ে উঠল, “স্নোবল এখানে এসেছিল। দিব্যি বুঝতে পারছি এ তারই গন্ধ।” ওদিকে ‘স্নোবল’ শব্দটা শুনলেই কুকুরগুলো দাঁত খিঁচিয়ে এমন গর্জন করে ওঠে যে সব জন্তুর রক্ত জমে হিম হয়ে যায়। 

জন্তুরা পুরোপুরি সন্ত্রস্ত হয়ে উঠেছে। ওদের সবসময় মনে হচ্ছে স্নোবল যেন কোনও এক অদৃশ্য অপশক্তি, যা তাদের চারপাশের বাতাসে মিশে রয়েছে আর রাজ্যের বিপদ ডেকে এনে তাদের ভয় দেখাচ্ছে। সন্ধেবেলা স্কুইলার তাদের সবাইকে একজোট করে আতঙ্কিত মুখে জানাল যে, কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে তার বক্তব্য আছে। উত্তেজিত হয়ে কয়েকটা ছোটো লম্ফ দিয়ে সে বলে উঠল: 

“কমরেডস, অত্যন্ত ভয়ঙ্কর একটা ব্যাপার জানা গেছে। স্নোবল নিজেকে পিঞ্চফিল্ডের ফ্রেডরিক-এর কাছে একরকম বিক্রিই করে দিয়েছে আর সেই ফ্রেডরিক নাকি এখন আমাদের উপর হামলা করে খামার কেড়ে নেয়ার ফন্দি আঁটছে। সে যখন আক্রমণ করবে তখন স্লোবলই তাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে আসবে। শুধু তা-ই নয়, আরও খারাপ খবর আছে। আমরা তো ভেবেছিলাম স্নোবল বিদ্রোহ করেছিল তার আত্মগর্ব আর উচ্চাকাঙ্ক্ষার বশে। কিন্তু কমরেডস, আমাদের সে ধারণা ভুল ছিল। তোমরা জানো আসল কারণটা কী? স্নোবল প্রথম থেকেই জোন্স-এর দলে ছিল। সব সময়ই সে জোন্সের গুপ্তচর হিসেবে কাজ করেছে। এখান থেকে পালিয়ে যাবার সময় স্নোবল যে সব নথিপত্র ফেলে গিয়েছিল সেগুলো আমরা খুঁজে পেয়েছি। সে-সব কাগজপত্রেই তার অপকর্মের সমস্ত প্রমাণ রয়েছে। আমার কাছে তো এখন পুরো ব্যাপারটাই দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। কমরেডস, তোমাদের কি মনে নেই সে কেমনভাবে গোয়ালঘরের যুদ্ধে হারিয়ে আমাদের সর্বনাশ করার চেষ্টায় ছিল! আমাদের কপাল ভালো যে তার সে চেষ্টা সফল হয়নি।”

ছবি সৌজন্য: অর্ক পৈতণ্ডী এবং Designyoutrust

Arka Paitandi

অর্ক পৈতণ্ডীর জন্ম ১৯৮৫-তে বীরভূমের সিউড়িতে। পড়াশোনা, বেড়ে ওঠা বোলপুর, শান্তিনিকেতনে। বিজ্ঞানের স্নাতক। পেশাদার শিল্পী। 'মায়াকানন' পত্রিকা ও প্রকাশনার প্রতিষ্ঠাতা ও কর্ণধার। অবসরে লেখালিখি করেন। অলঙ্করণ শুরু ষোলো বছর বয়সে শুকতারা পত্রিকায়। পরবর্তীকালে আনন্দমেলা, সন্দেশ, এবেলা, এই সময়, উনিশ-কুড়ির মতো একাধিক পত্রপত্রিকার জন্য ছবি এঁকেছেন। কমিক্স আঁকার জন্য ২০১৪ সালে নারায়ণ দেবনাথ পুরস্কার পেয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *